विवेचन सारांश
অর্জুনের ধর্মসঙ্কট ও ভগবানের সমাধান
গুরু বন্দনা, প্রার্থনা, দীপ প্রজ্জ্বলনের পর আজকের বিবেচন সত্র আরম্ভ হল।
আপনারা ৪র্থ স্তরে পৌঁছে গেছেন। আপনারা এক মহৎ এবং কঠিন কার্য সম্পন্ন করেছেন। ১২টি অধ্যায় পাঠ করতে শিখে গিয়েছেন। এখন আপনারা আগামী ৬টি অধ্যায়ের পাঠ শিক্ষার মার্গে চলেছেন।
শুরুর দিকে যুদ্ধ করার জন্য অর্জুন খুব উৎসুক ছিলেন । যুদ্ধ আরম্ভ ঘোষণা করতে শাঁখও বাজিয়েছিলেন -
পাঞ্চজন্যং হৃষিকেশো দেবদত্তং ধনঞ্জয়।
তারপর বললেন,
সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে রথং স্থাপয় মেচ্যুত।
ভগবান সবই জানতেন যে এর পরে কি হবে। তিনি অনেক জায়গায় রথ দাঁড় করাতে পারতেন, কিন্তু অন্য কারো সামনে রথ না থামিয়ে তিনি এমন জায়গায় থামালেন যেখানে অর্জুনের সমক্ষ্যে শ্বেত বস্ত্রধারী শুভ্র কেশ যুক্ত কুরুবৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম ছিলেন।
ভীষ্ম অর্জুনকে খুবই স্নেহ করতেন। অর্জুনও ততটাই ভীষ্মকে শ্রদ্ধা করতেন। ছোটবেলা থেকে ভীষ্মের কোলে পিঠে তিনি মানুষ হয়েছেন। ভীষ্মের ওপর বাণ চালাবার কথা মাথায় আসতেই তিনি যুদ্ধের ইচ্ছে হারিয়ে ফেললেন। তার ওপর চোখ সরাতেই পাশে দেখলেন আচার্য দ্রোণকে। বাল্যকাল থেকে তিনি দ্রোণের শিক্ষায় শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর হয়েছেন। তিনি দ্রোণাচার্যের সর্বপ্রিয় শিষ্য ছিলেন। তিনি কি করে দ্রোণাচার্যের ওপর তীর নিক্ষেপ করবেন?
অর্জুন আশপাশে অপেক্ষারত সেনা বাহিনীকে নিরীক্ষণ করতে গিয়ে দেখলেন, সেখানে তাঁর ভাইরা, কাকারা, মামারা, শ্বশুররা, শ্যালকরা, বন্ধুবান্ধবরা আছেন। এনাদের ওপর বাণ চালাতে হবে, কারণ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। কুরুক্ষেত্রে এখন জীবন মৃত্যু দুটোই উপস্থিত। কেউ বাঁচবে, কেউ মরবে, কেউ জিতবে বা কেউ হারবে - কিন্তু এর অন্যথা হবে না। যুদ্ধ হলে কত বোন বিধবা হবে, কত ভাই মারা যাবে, কুলের নাশ হবে। কূলের নাশ হলে, কূলের কোনো পুরুষ জীবিত থাকবে না, কূলস্ত্রীদের অত্যাচার সহ্য করতে হবে। পিণ্ডদান করতে আগামী প্রজন্মে কেউ থাকবে না। এই সব ভেবে অর্জুনের চোখ থেকে জল গড়াতে শুরু করলো।
সঞ্জয় বর্ণনা করলেন -
আপনারা ৪র্থ স্তরে পৌঁছে গেছেন। আপনারা এক মহৎ এবং কঠিন কার্য সম্পন্ন করেছেন। ১২টি অধ্যায় পাঠ করতে শিখে গিয়েছেন। এখন আপনারা আগামী ৬টি অধ্যায়ের পাঠ শিক্ষার মার্গে চলেছেন।
শুরুর দিকে যুদ্ধ করার জন্য অর্জুন খুব উৎসুক ছিলেন । যুদ্ধ আরম্ভ ঘোষণা করতে শাঁখও বাজিয়েছিলেন -
পাঞ্চজন্যং হৃষিকেশো দেবদত্তং ধনঞ্জয়।
তারপর বললেন,
সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে রথং স্থাপয় মেচ্যুত।
ভগবান সবই জানতেন যে এর পরে কি হবে। তিনি অনেক জায়গায় রথ দাঁড় করাতে পারতেন, কিন্তু অন্য কারো সামনে রথ না থামিয়ে তিনি এমন জায়গায় থামালেন যেখানে অর্জুনের সমক্ষ্যে শ্বেত বস্ত্রধারী শুভ্র কেশ যুক্ত কুরুবৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম ছিলেন।
ভীষ্ম অর্জুনকে খুবই স্নেহ করতেন। অর্জুনও ততটাই ভীষ্মকে শ্রদ্ধা করতেন। ছোটবেলা থেকে ভীষ্মের কোলে পিঠে তিনি মানুষ হয়েছেন। ভীষ্মের ওপর বাণ চালাবার কথা মাথায় আসতেই তিনি যুদ্ধের ইচ্ছে হারিয়ে ফেললেন। তার ওপর চোখ সরাতেই পাশে দেখলেন আচার্য দ্রোণকে। বাল্যকাল থেকে তিনি দ্রোণের শিক্ষায় শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর হয়েছেন। তিনি দ্রোণাচার্যের সর্বপ্রিয় শিষ্য ছিলেন। তিনি কি করে দ্রোণাচার্যের ওপর তীর নিক্ষেপ করবেন?
অর্জুন আশপাশে অপেক্ষারত সেনা বাহিনীকে নিরীক্ষণ করতে গিয়ে দেখলেন, সেখানে তাঁর ভাইরা, কাকারা, মামারা, শ্বশুররা, শ্যালকরা, বন্ধুবান্ধবরা আছেন। এনাদের ওপর বাণ চালাতে হবে, কারণ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। কুরুক্ষেত্রে এখন জীবন মৃত্যু দুটোই উপস্থিত। কেউ বাঁচবে, কেউ মরবে, কেউ জিতবে বা কেউ হারবে - কিন্তু এর অন্যথা হবে না। যুদ্ধ হলে কত বোন বিধবা হবে, কত ভাই মারা যাবে, কুলের নাশ হবে। কূলের নাশ হলে, কূলের কোনো পুরুষ জীবিত থাকবে না, কূলস্ত্রীদের অত্যাচার সহ্য করতে হবে। পিণ্ডদান করতে আগামী প্রজন্মে কেউ থাকবে না। এই সব ভেবে অর্জুনের চোখ থেকে জল গড়াতে শুরু করলো।
সঞ্জয় বর্ণনা করলেন -
2.1
সঞ্জয় উবাচ
তং(ন্) তথা কৃপয়াবিষ্টম্, অশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্।
বিষীদন্তমিদং(ব্ঁ) বাক্য়ম্ ,উবাচ মধুসূদনঃ॥2.1॥
সঞ্জয় বললেন, কাপুরুষতায় আবিষ্ট , বিষাদমগ্ন এবং অশ্রুপূর্ণ অবরুদ্ধ-নেত্র অর্জুনকে ভগবান এই বাক্যগুলি (পরের শ্লোকে) বললেন ৷
অর্জুন এবার ভীরু হয়ে গেলেন। দুঃখী হলেন। অশ্রুর কারণে দৃষ্টি ক্ষীণ হলো। এখানে অর্জুনকে ভীরু বলা হচ্ছে, অর্জুন কিন্তু আদপে ভীতু নন। এর আগে অনেকবার উনি কৌরবদের হারিয়েছেন।
পাণ্ডবরা যখন দ্রৌপদীর সাথে ১২ বছর বনবাসে ছিলেন, সেই সময় একদিন দুর্যোধনের স্ত্রী ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। দুর্যোধনের মনে হলো এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাক। স্ত্রীকেও খুশি করা হোক আর পাণ্ডবদেরও একটু উত্যক্ত করা যাক। ওখানে পাণ্ডবরা পর্ণকুটিরে বাস করে, পোশাক বলতে বাঘ ছাল। কৌরব স্ত্রীদের পোশাক গয়না দেখিয়ে দ্রৌপদীকেও ঈর্ষান্বিত করা যাবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। তিনি স্ত্রীকে জানিয়ে দিলেন যে তারা ঘুরতে যাবেন, শুধু দুজনেই না, ১০০ ভাইরা, তাদের স্ত্রীরা এবং কর্ণ ও তার স্ত্রীকে নিয়ে সবাই মিলে ঘুরতে যাবেন।
দুর্যোধনের পরামর্শে সকল কৌরব, কৌরববধূরা, কর্ণ ও তার স্ত্রী সুন্দর গয়নায় আর পোশাকে সেজে, সুসজ্জিত রথে বনের দিকে যাত্রা করলেন।
কিন্তু খারাপ ভাবনার ফল খারাপই হয়।
রাস্তায় একটি গন্ধর্ব দল পড়লো। তাদের মনে হলো যদি এদের দামি পোশাক, দামি গয়না, সুন্দর রথ আমাদের হতো তাহলে খুব ভালো হত। খুব ভয়াবহ যুদ্ধ হলো। যুদ্ধের পর সকল কৌরবদের দড়ি দিয়ে বাঁধা হলো । কৌরব পত্নীদের আর কর্ণপত্নীকে তারা একটি রথে করে গন্ধর্ব নগরীর দিকে নিয়ে চললো।
কোনোভাবে এই খবর ধর্মরাজের কানে গিয়ে পৌঁছলো। তিনি ভীম আর অর্জুনকে আদেশ দিলেন কৌরবদের ছাড়িয়ে আনতে। "যারা আমাদের এত অপমান করেছে, এত ছল করেছে, যারা দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে উদ্যত হয়েছিল, তারা আর যাই হোক আমাদের ভাই নয়। তাদের প্রতি আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই।"
দুজনেই অরাজি হতে তিনি পুনরায় বলেন - যা হয়েছে তা ঘরের ব্যাপার। বাইরের লোকের জন্য "বয়ম্ পঞ্চাধিকম্ শতম্" - আমরা একশো পাঁচ জন ভাই। তোমাদের রাজার আদেশ এখনই গিয়ে কৌরবদের ছাড়িয়ে নিয়ে এসো। অনিচ্ছা সত্বেও ভীম ও অর্জুন গেলেন এবং খুবই সহজে গন্ধর্বদের পরাজিত করে কৌরবদের বাঁধন মুক্ত করলেন।
এ তো হলো শুধু কৌরবদের কথা। কিন্তু এখন তো অর্জুনের সমক্ষ্যে ভীষ্ম -দ্রোণাচার্য প্রভৃতি আছেন, তাই হয়তো আপনি ভাবছেন যে অর্জুন ভয় পাচ্ছেন। না, অর্জুন ভীষ্ম -দ্রোণ সমেত কৌরব বাহিনীকে আগেও হারিয়েছেন।
অজ্ঞাতবাসের সময়ের কথা। দ্রৌপদীর দিকে কুনজর দেওয়ার জন্য ভীমের হাতে কীচক বধ হয়েছিল। ভীমের হাতে কীচকের এই পরিণতি দেখে কীচকের ১০০ অনুগত যোদ্ধা (যারা অনুকীচক নাম পরিচিত) কীচকের অন্তেঃষ্টির সময়ে দ্রৌপদীকে জোর করে ধরে নিয়ে তার চিতার সাথে বেঁধে পুড়িয়ে ফেলতে চাইলো। অর্জুন এই খবর পেয়ে শ্মশান ঘাটের দিকে ছুটলেন। তাঁর বাণের আঘাতে অনুকীচকরা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো আর দ্রৌপদী রক্ষা পেলেন।
এই খবর যখন হস্তিনাপুরে এসে পৌঁছাল তখন কারোরই বুঝতে বাকি রইল না যে পাণ্ডবরা কোথায় অজ্ঞাতবাসে আছেন। তখন কৌরবরা তাদের বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে বিরাটরাজ্য আক্রমণ করতে এলো। বিরাটরাজ তখন অন্য প্রান্তে অন্য আরেকটা যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন। অগত্যা বিরাটের পুত্র উত্তরের উপর কৌরবদের প্রতিহত করার দ্বায়িত্ব এসে পড়ে। সে ছিল নিতান্তই বালক। বৃহন্নলাবেশী অর্জুন তাকে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কৌরবদের প্রতিহত করতে যান।
কৌরবদের বিশাল বাহিনী দেখে অর্জুন উত্তরকে বলেন, তুমি বৃথা ভয় পেয়ো না, আমি একাই এদের জন্য যথেষ্ট। তবু উত্তর ভয় পেয়ে পলায়ন করার চেষ্টা করলে, বৃহন্নলা তাকে জোর করে ধরে এনে সারথির আসনে বাঁধলেন। নিজে রথে চড়ে উনি বিশাল কৌরববাহিনীর সম্মুখে এলেন। এসেই প্রথমেই মোহিনী অস্ত্র চালিয়ে কৌরব সেনাকে মোহিত করে দিলেন। যে যেখানে ছিলেন নিজের নিজের রথে ঘুমিয়ে পড়লেন, ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন। সেই সুযোগে বৃহন্নলা উত্তরকে বললেন সকল যোদ্ধার উত্তরীয় খুলে নিয়ে এস। শুধু দুইজন শ্বেতকেশযুক্ত যোদ্ধা পাবে, তাদের কিছু করবে না। ওনারা আমার পূজনীয়। উত্তরীয় অর্থাৎ ওপরের বস্ত্র। সেটা খুলে নেওয়া কোনো পুরুষের চূড়ান্ত অপমান বলে মনে করা হতো।
উত্তর তখন বৃহন্নলাকে জিজ্ঞেস করলেন - ওনারা আপনার পূজ্য? আপনি কে? তখন অর্জুন নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, কাল অজ্ঞাতবাসের শেষ দিন। কাল অবধি এনারা ঘুমাবেন। তখন কৌরবরা আমাদের আর ধরতে পারবেন না।
পরেরদিন সকালে উঠে কৌরবরা বিরাটনগরে এসে পাণ্ডবদের পুনঃ অজ্ঞাতবাসে যাওয়ার কথা বলে। তখন শাস্ত্রজ্ঞরা বললেন যে গতকাল সূর্যাস্থের সাথে অজ্ঞাতবাসকাল সমাপ্ত হয়ে গেছে।
তাই অর্জুন ভীষ্ম ও দ্রোণের সমক্ষ্যে একাধিকবার যুদ্ধ করেছেন। আজ তার সাথে সেনাদল আছে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ আছেন, তাও অর্জুন ভয় পেলেন। এই ভীরুতা পরিস্থিতিগত। কারণ তিনি জানেন, আজ মোহিনী অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ জেতা যাবে না। আজ অন্তিম যুদ্ধ লড়তে হবে। আজ বিজয় বা জীবন বেছে নিতে হবে, নাহলে হার বা মৃত্যু। পরিবার পরিজনদের মৃত্যু দেখা অর্জুনের জন্য কষ্টকর ছিল। আপনজনের মৃত্যুর কথা ভেবে শোক করা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। এরূপ অশ্রুপূর্ণ বিষাদ কৃত অর্জুনকে মধুসূদন বললেন -
পাণ্ডবরা যখন দ্রৌপদীর সাথে ১২ বছর বনবাসে ছিলেন, সেই সময় একদিন দুর্যোধনের স্ত্রী ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। দুর্যোধনের মনে হলো এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাক। স্ত্রীকেও খুশি করা হোক আর পাণ্ডবদেরও একটু উত্যক্ত করা যাক। ওখানে পাণ্ডবরা পর্ণকুটিরে বাস করে, পোশাক বলতে বাঘ ছাল। কৌরব স্ত্রীদের পোশাক গয়না দেখিয়ে দ্রৌপদীকেও ঈর্ষান্বিত করা যাবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। তিনি স্ত্রীকে জানিয়ে দিলেন যে তারা ঘুরতে যাবেন, শুধু দুজনেই না, ১০০ ভাইরা, তাদের স্ত্রীরা এবং কর্ণ ও তার স্ত্রীকে নিয়ে সবাই মিলে ঘুরতে যাবেন।
দুর্যোধনের পরামর্শে সকল কৌরব, কৌরববধূরা, কর্ণ ও তার স্ত্রী সুন্দর গয়নায় আর পোশাকে সেজে, সুসজ্জিত রথে বনের দিকে যাত্রা করলেন।
কিন্তু খারাপ ভাবনার ফল খারাপই হয়।
রাস্তায় একটি গন্ধর্ব দল পড়লো। তাদের মনে হলো যদি এদের দামি পোশাক, দামি গয়না, সুন্দর রথ আমাদের হতো তাহলে খুব ভালো হত। খুব ভয়াবহ যুদ্ধ হলো। যুদ্ধের পর সকল কৌরবদের দড়ি দিয়ে বাঁধা হলো । কৌরব পত্নীদের আর কর্ণপত্নীকে তারা একটি রথে করে গন্ধর্ব নগরীর দিকে নিয়ে চললো।
কোনোভাবে এই খবর ধর্মরাজের কানে গিয়ে পৌঁছলো। তিনি ভীম আর অর্জুনকে আদেশ দিলেন কৌরবদের ছাড়িয়ে আনতে। "যারা আমাদের এত অপমান করেছে, এত ছল করেছে, যারা দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে উদ্যত হয়েছিল, তারা আর যাই হোক আমাদের ভাই নয়। তাদের প্রতি আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই।"
দুজনেই অরাজি হতে তিনি পুনরায় বলেন - যা হয়েছে তা ঘরের ব্যাপার। বাইরের লোকের জন্য "বয়ম্ পঞ্চাধিকম্ শতম্" - আমরা একশো পাঁচ জন ভাই। তোমাদের রাজার আদেশ এখনই গিয়ে কৌরবদের ছাড়িয়ে নিয়ে এসো। অনিচ্ছা সত্বেও ভীম ও অর্জুন গেলেন এবং খুবই সহজে গন্ধর্বদের পরাজিত করে কৌরবদের বাঁধন মুক্ত করলেন।
এ তো হলো শুধু কৌরবদের কথা। কিন্তু এখন তো অর্জুনের সমক্ষ্যে ভীষ্ম -দ্রোণাচার্য প্রভৃতি আছেন, তাই হয়তো আপনি ভাবছেন যে অর্জুন ভয় পাচ্ছেন। না, অর্জুন ভীষ্ম -দ্রোণ সমেত কৌরব বাহিনীকে আগেও হারিয়েছেন।
অজ্ঞাতবাসের সময়ের কথা। দ্রৌপদীর দিকে কুনজর দেওয়ার জন্য ভীমের হাতে কীচক বধ হয়েছিল। ভীমের হাতে কীচকের এই পরিণতি দেখে কীচকের ১০০ অনুগত যোদ্ধা (যারা অনুকীচক নাম পরিচিত) কীচকের অন্তেঃষ্টির সময়ে দ্রৌপদীকে জোর করে ধরে নিয়ে তার চিতার সাথে বেঁধে পুড়িয়ে ফেলতে চাইলো। অর্জুন এই খবর পেয়ে শ্মশান ঘাটের দিকে ছুটলেন। তাঁর বাণের আঘাতে অনুকীচকরা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো আর দ্রৌপদী রক্ষা পেলেন।
এই খবর যখন হস্তিনাপুরে এসে পৌঁছাল তখন কারোরই বুঝতে বাকি রইল না যে পাণ্ডবরা কোথায় অজ্ঞাতবাসে আছেন। তখন কৌরবরা তাদের বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে বিরাটরাজ্য আক্রমণ করতে এলো। বিরাটরাজ তখন অন্য প্রান্তে অন্য আরেকটা যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন। অগত্যা বিরাটের পুত্র উত্তরের উপর কৌরবদের প্রতিহত করার দ্বায়িত্ব এসে পড়ে। সে ছিল নিতান্তই বালক। বৃহন্নলাবেশী অর্জুন তাকে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কৌরবদের প্রতিহত করতে যান।
কৌরবদের বিশাল বাহিনী দেখে অর্জুন উত্তরকে বলেন, তুমি বৃথা ভয় পেয়ো না, আমি একাই এদের জন্য যথেষ্ট। তবু উত্তর ভয় পেয়ে পলায়ন করার চেষ্টা করলে, বৃহন্নলা তাকে জোর করে ধরে এনে সারথির আসনে বাঁধলেন। নিজে রথে চড়ে উনি বিশাল কৌরববাহিনীর সম্মুখে এলেন। এসেই প্রথমেই মোহিনী অস্ত্র চালিয়ে কৌরব সেনাকে মোহিত করে দিলেন। যে যেখানে ছিলেন নিজের নিজের রথে ঘুমিয়ে পড়লেন, ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন। সেই সুযোগে বৃহন্নলা উত্তরকে বললেন সকল যোদ্ধার উত্তরীয় খুলে নিয়ে এস। শুধু দুইজন শ্বেতকেশযুক্ত যোদ্ধা পাবে, তাদের কিছু করবে না। ওনারা আমার পূজনীয়। উত্তরীয় অর্থাৎ ওপরের বস্ত্র। সেটা খুলে নেওয়া কোনো পুরুষের চূড়ান্ত অপমান বলে মনে করা হতো।
উত্তর তখন বৃহন্নলাকে জিজ্ঞেস করলেন - ওনারা আপনার পূজ্য? আপনি কে? তখন অর্জুন নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, কাল অজ্ঞাতবাসের শেষ দিন। কাল অবধি এনারা ঘুমাবেন। তখন কৌরবরা আমাদের আর ধরতে পারবেন না।
পরেরদিন সকালে উঠে কৌরবরা বিরাটনগরে এসে পাণ্ডবদের পুনঃ অজ্ঞাতবাসে যাওয়ার কথা বলে। তখন শাস্ত্রজ্ঞরা বললেন যে গতকাল সূর্যাস্থের সাথে অজ্ঞাতবাসকাল সমাপ্ত হয়ে গেছে।
তাই অর্জুন ভীষ্ম ও দ্রোণের সমক্ষ্যে একাধিকবার যুদ্ধ করেছেন। আজ তার সাথে সেনাদল আছে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ আছেন, তাও অর্জুন ভয় পেলেন। এই ভীরুতা পরিস্থিতিগত। কারণ তিনি জানেন, আজ মোহিনী অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ জেতা যাবে না। আজ অন্তিম যুদ্ধ লড়তে হবে। আজ বিজয় বা জীবন বেছে নিতে হবে, নাহলে হার বা মৃত্যু। পরিবার পরিজনদের মৃত্যু দেখা অর্জুনের জন্য কষ্টকর ছিল। আপনজনের মৃত্যুর কথা ভেবে শোক করা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। এরূপ অশ্রুপূর্ণ বিষাদ কৃত অর্জুনকে মধুসূদন বললেন -
শ্রীভগবানুবাচ
কুতস্ত্বা কশ্মলমিদং(ব্ঁ), বিষমে সমুপস্থিতম্।
অনার্য়জুষ্টমস্বর্গ্য়ম্ অকীর্তিকরমর্জুন॥2.2॥
শ্রী ভগবান বললেন, হে অর্জুন! এই বিষম সময়ে তোমার এই কাপুরুষতা কোথা থেকে এলো, যা কোন শ্রেষ্ঠ পুরুষের হয় না, যাতে স্বর্গলাভ হয়না, যা কীর্তিমান করে না ৷
এই বিষম পরিস্থিতিতে কাপুরুষের মতো ভয় কেন পাচ্ছ এবং বিষাদগ্রস্থ কেন হয়ে পড়ছো ? এমন করলে তুমি স্বর্গে যেতে অক্ষম হবে। স্বর্গলাভ তো খুব ছোট ব্যাপার। এই ধরনের কাপুরুষের ন্যায় আচরণ করলে স্বর্গের উপরে যে সিঁড়ি (লোক) আছে , সেখানেও পৌঁছাতে পারবে না। এই ভাবে তুমি স্বর্গ পর্যন্তও পৌঁছাবে না। হে আর্য! এই ভীরুতা তোমার মধ্যে কোথা থেকে এসেছে?
অর্জুন যিনি বীর, যোদ্ধা, ক্ষত্রিয়, তিনি নিজের গাণ্ডীব ত্যাগ করে রথের নিচে বসে আছেন। তিনি আত্মহত্যার জন্য রাজি হয়েছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করার জন্যও রাজী হয়েছিলেন, এমনকি যুদ্ধ ছেড়ে সন্ন্যাস নিতেও রাজি হয়ে গেছিলেন। প্রথম অধ্যায়ে এর বর্ণনা আছে, অর্জুন উদভ্রান্তের মতো বলেছিলেন ,আমি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাচ্ছি, আমি এই যুদ্ধ করছি না, আমি মরে গেলে ভালো, অন্তত অন্য সবাই তো বেঁচে থাকবে। আমি মারা গেলে যদি সকলের কল্যাণ হয় তবে আমার মরে যাওয়াই উত্তম।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন মনের মধ্যে যদি আত্মহত্যার বিচার আসে, তবে স্বর্গ প্রাপ্ত করা যায় না। কাপুরুষতার মাধ্যমে স্বর্গ লাভ করা সম্ভব নয়, তাতে তোমার অপযশ হবে এবং যদি বিজয় প্রাপ্ত কর, তাহলে তুমি পরম গতি ও খ্যাতি লাভ করবে। যুদ্ধক্ষেত্রে যদি তুমি নিহতও হও, তবুও তুমি স্বর্গলাভ করবে ও সবাই তোমার যশ-কীর্তির কথা বলবে।
বীর তানাজী যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন কিন্তু ধরাশায়ী হয়েছিলেন,তখন শিবাজী বলেছিলেন যে গড় (দুর্গ) তো জয় করে নিয়েছি কিন্তু তার সেবক চলে গেছে তাই তানাজীকে তিনি সিংহ উপাধি দিয়েছিলেন এবং সেইমত কেল্লার নাম সিংহ গড় রাখা হয়েছিলো। পুনে শহরের পাশেই এই সিংহ গড় অবস্থিত যেখানে তানাজী যুদ্ধে বলিদান দিয়েছিলেন।
ভগবান বলছেন যে যুধ্যক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করলে যশ -কীর্তি হয় এবং যে যুদ্ধ থেকে পলায়ন করে তার অপযশ হয়, যখন ইতিহাস লেখা হবে, তাতে তোমার অপকীর্তির কথা লেখা হবে এবং ভবিষ্যতে মানুষ তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলবে।
অর্জুন যিনি বীর, যোদ্ধা, ক্ষত্রিয়, তিনি নিজের গাণ্ডীব ত্যাগ করে রথের নিচে বসে আছেন। তিনি আত্মহত্যার জন্য রাজি হয়েছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করার জন্যও রাজী হয়েছিলেন, এমনকি যুদ্ধ ছেড়ে সন্ন্যাস নিতেও রাজি হয়ে গেছিলেন। প্রথম অধ্যায়ে এর বর্ণনা আছে, অর্জুন উদভ্রান্তের মতো বলেছিলেন ,আমি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাচ্ছি, আমি এই যুদ্ধ করছি না, আমি মরে গেলে ভালো, অন্তত অন্য সবাই তো বেঁচে থাকবে। আমি মারা গেলে যদি সকলের কল্যাণ হয় তবে আমার মরে যাওয়াই উত্তম।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন মনের মধ্যে যদি আত্মহত্যার বিচার আসে, তবে স্বর্গ প্রাপ্ত করা যায় না। কাপুরুষতার মাধ্যমে স্বর্গ লাভ করা সম্ভব নয়, তাতে তোমার অপযশ হবে এবং যদি বিজয় প্রাপ্ত কর, তাহলে তুমি পরম গতি ও খ্যাতি লাভ করবে। যুদ্ধক্ষেত্রে যদি তুমি নিহতও হও, তবুও তুমি স্বর্গলাভ করবে ও সবাই তোমার যশ-কীর্তির কথা বলবে।
বীর তানাজী যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন কিন্তু ধরাশায়ী হয়েছিলেন,তখন শিবাজী বলেছিলেন যে গড় (দুর্গ) তো জয় করে নিয়েছি কিন্তু তার সেবক চলে গেছে তাই তানাজীকে তিনি সিংহ উপাধি দিয়েছিলেন এবং সেইমত কেল্লার নাম সিংহ গড় রাখা হয়েছিলো। পুনে শহরের পাশেই এই সিংহ গড় অবস্থিত যেখানে তানাজী যুদ্ধে বলিদান দিয়েছিলেন।
ভগবান বলছেন যে যুধ্যক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করলে যশ -কীর্তি হয় এবং যে যুদ্ধ থেকে পলায়ন করে তার অপযশ হয়, যখন ইতিহাস লেখা হবে, তাতে তোমার অপকীর্তির কথা লেখা হবে এবং ভবিষ্যতে মানুষ তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলবে।
ক্লৈব্য়ং(ম্) মা স্ম গমঃ(ফ্) পার্থ, নৈতত্ত্বয়্য়ুপপদ্য়তে
ক্ষুদ্রং(ম্) হৃদয়দৌর্বল্য়ং(ন্),ত্য়কেত্বাত্তিষ্ঠ পরন্তপ॥3॥
হে পৃথা নন্দন অর্জুন! এই নপুংসকতা আশ্রয় কোরো না , এ তোমার উচিত নয় ৷ হে পরন্তপ! এই তুচ্ছ হৃদয় -দৌর্বল্য ত্যাগ করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও ৷
হে পৃথা নন্দন ! তুমি এরকম নপুংসকতার আশ্রয়ে কেন নিয়েছো ? এ তোমার উচিত নয়। এ তোমায় শোভা পায় না। তুমি তপস্বী। তপস্যা দ্বারা তুমি ধনুর্বীর হয়েছো।
তাই এই ভাবনা ত্যাগ করে ওঠো, যুদ্ধ করো।
দেখে মনে হয় ভগবান এখানে অত্যন্ত ক্রোধিত ছিলেন এবং না হওয়ারও কোনো কারণ নেই। উনি অর্জুনের প্রার্থনায় এই যুদ্ধে এসেছেন।
যুদ্ধের আগে যখন অর্জুন ও দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণের কাছে গিয়েছিলেন সাহায্য চাইতে, দাম্ভিক দুর্যোধন ঘুমন্ত শ্রীকৃষ্ণের মাথার কাছে গিয়ে বসেছিলেন, আর অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের পায়ের কাছে। ঘুম ভাঙতেই কৃষ্ণ অর্জুনকে দেখে জিজ্ঞেস করেন - বলো পার্থ তোমার কি চাই?
দুর্যোধন তো খুব রেগে গেলেন, বললেন আমি তো আগে এসেছি। কৃষ্ণ বললেন তাতে কি? আমি তো অর্জুনকে আগে দেখেছি। শ্রীকৃষ্ণ বললেন একদিকে আমি একা, আমি শস্ত্র ধারণ করবো না আর একদিকে আমার নারায়ণী সেনা। তোমরা বেছে নাও। দুর্যোধন ভাবলেন কৃষ্ণকে নিয়ে কি হবে, তার চেয়ে বরং নারায়ণী সেনা কাজে লাগবে। কিন্তু প্রথমে অর্জুন নির্বাচন করার সুযোগ পাবে। তাই দুর্যোধনের কিছুটা ভয়ে ভয়ে ছিলেন ।
কিন্তু অর্জুন না ভেবেই বললেন, আমি শুধুমাত্র কৃষ্ণকেই নিজের দলে চাই। তাই কৌরব বাহিনী পেলো নারায়ণী সেনা। সব জিনিস যদি ঠিকঠাক এগোত তাহলে মহাভারতের যুদ্ধের ১৮টি অক্ষৌহিণী সেনা ৯-৯ করে পাণ্ডব ও কৌরবদের মধ্যে সমান ভাগ হতো। কিন্তু কৌরবরা এখানে পেল ১১ অক্ষৌহিণী নারায়ণী সেনা। আর এক অক্ষৌহিণী সেনা ছিল মাদ্র রাজের, কৌরবরা যাকে ছল করে শপথ করিয়েছিলেন যে তিনি তাদের পক্ষে লড়বেন। সেই কাহিনী আর একদিনের জন্য থাক।
তিনি পাণ্ডবদের জন্য এত করার পর, অর্জুন যুদ্ধ ভূমিতে এসে বলছেন -
গাণ্ডীবং সংসতে হস্তাত্ত্বক চৈব পরিদহ্যতে।
ন চ শক্নোऽমবস্থাতুম্ ভ্রমতীব চ মে মনঃ।।
তাই এই ভাবনা ত্যাগ করে ওঠো, যুদ্ধ করো।
দেখে মনে হয় ভগবান এখানে অত্যন্ত ক্রোধিত ছিলেন এবং না হওয়ারও কোনো কারণ নেই। উনি অর্জুনের প্রার্থনায় এই যুদ্ধে এসেছেন।
যুদ্ধের আগে যখন অর্জুন ও দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণের কাছে গিয়েছিলেন সাহায্য চাইতে, দাম্ভিক দুর্যোধন ঘুমন্ত শ্রীকৃষ্ণের মাথার কাছে গিয়ে বসেছিলেন, আর অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের পায়ের কাছে। ঘুম ভাঙতেই কৃষ্ণ অর্জুনকে দেখে জিজ্ঞেস করেন - বলো পার্থ তোমার কি চাই?
দুর্যোধন তো খুব রেগে গেলেন, বললেন আমি তো আগে এসেছি। কৃষ্ণ বললেন তাতে কি? আমি তো অর্জুনকে আগে দেখেছি। শ্রীকৃষ্ণ বললেন একদিকে আমি একা, আমি শস্ত্র ধারণ করবো না আর একদিকে আমার নারায়ণী সেনা। তোমরা বেছে নাও। দুর্যোধন ভাবলেন কৃষ্ণকে নিয়ে কি হবে, তার চেয়ে বরং নারায়ণী সেনা কাজে লাগবে। কিন্তু প্রথমে অর্জুন নির্বাচন করার সুযোগ পাবে। তাই দুর্যোধনের কিছুটা ভয়ে ভয়ে ছিলেন ।
কিন্তু অর্জুন না ভেবেই বললেন, আমি শুধুমাত্র কৃষ্ণকেই নিজের দলে চাই। তাই কৌরব বাহিনী পেলো নারায়ণী সেনা। সব জিনিস যদি ঠিকঠাক এগোত তাহলে মহাভারতের যুদ্ধের ১৮টি অক্ষৌহিণী সেনা ৯-৯ করে পাণ্ডব ও কৌরবদের মধ্যে সমান ভাগ হতো। কিন্তু কৌরবরা এখানে পেল ১১ অক্ষৌহিণী নারায়ণী সেনা। আর এক অক্ষৌহিণী সেনা ছিল মাদ্র রাজের, কৌরবরা যাকে ছল করে শপথ করিয়েছিলেন যে তিনি তাদের পক্ষে লড়বেন। সেই কাহিনী আর একদিনের জন্য থাক।
তিনি পাণ্ডবদের জন্য এত করার পর, অর্জুন যুদ্ধ ভূমিতে এসে বলছেন -
গাণ্ডীবং সংসতে হস্তাত্ত্বক চৈব পরিদহ্যতে।
ন চ শক্নোऽমবস্থাতুম্ ভ্রমতীব চ মে মনঃ।।
অর্জুন উবাচ
কথং(ম্) ভীষ্মমহং(ম্) সঙ্খ্য়ে, দ্রোণং(ঞ্) চ মধুসূদন
ইষুভিঃ( ফ্) প্রতিয়োত্স্য়ামি পূজার্হাবরিসূদন॥4॥
অর্জুন বললেন- হে মধুসুদন! রণভূমিতে ভীষ্ম এবং দ্রোণের সঙ্গে বাণ দ্বারা আমি কি করে যুদ্ধ করব? কারণ হে অরিসূদন, এরা দুজনেই আমার পূজানীয় ৷
এখানে অর্জুন নিজের অবস্থার কথা বোঝাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন - কার ওপর বাণ চালাতে বলছেন আপনি? এঁনারা আমার পূজ্য। নিজের পিতামহের ওপর বাণ চালাবো ? না গুরুর ওপর বাণ চালাবো?
গুরু আর পিতামহের রক্তে আমার হাত রক্তাক্ত হবে। আপনি আমাকে এরকম পাপ করার উৎসাহ কেন দিচ্ছেন ?
গুরু আর পিতামহের রক্তে আমার হাত রক্তাক্ত হবে। আপনি আমাকে এরকম পাপ করার উৎসাহ কেন দিচ্ছেন ?
গুরূনহত্বা হি মহানুভাবান্,
শ্রেয়ো ভোক্তুং(ম্) ভৈক্ষ্য়মপীহ লোকে
হত্বার্থকামাংস্তু গুরূনিহৈব,
ভুঞ্জীয় ভোগান্রুধিরপ্রদিগ্ধান্॥5
মহানুভব গুরুজনদিগকে বধ করা অপেক্ষা ইহলোকে ভিক্ষা গ্রহণ ই আমি শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি ৷ কারণ গুরুজনদের বধ করে এই শোনিত সিক্ত ধনসম্পতিই ও রাজ্যই তো ভোগ করতে হবে!
গুরু হত্যা করার চেয়ে আমি ভিক্ষার দান ভক্ষণ করা শ্রেয় মনে করি। প্রতিনিয়ত এই পাপবোধ থাকবে যে আমি নিজের পিতামহ আর গুরুর হত্যা করে এই রাজ্য ভোগ করছি । কি দরকার সেই বিজয়ের যা রাতে শান্তিতে আমায় ঘুমাতেও দেবে না?
ন চৈতদ্বিদ্মঃ(খ্) কতরন্নো গরীয়ো,
য়দ্বা জয়েম য়দি বা নো জয়েয়ুঃ
য়ানেব হত্বা ন জিজীবিষাম:(স্),
তেsবস্থিতাঃ(ফ্) প্রমুখে ধার্তরাষ্ট্রাঃ॥6॥
আমরা সঠিকভাবে জানি না যে যুদ্ধ করা বা না করা কোনটা আমাদের পক্ষে শ্রেয়় ৷ আমরা এও জানি না লে আমরা জয়লাভ করব না ওরা জয় লাভ করবে ৷ যে ধৃতরাষ্ট্রের আত্মীয় স্বজনদের বধ করে আমরা শুধু জয়লাভ কেন, বাঁচতেও চাই না , আজ তারাই আমাদের সামনে উপস্থিত ৷
আমি এখন এটা বুঝতে পারছি না যুদ্ধ করা বা না করা, কোনটা ভালো? এদের মেরে আমি বাঁচতে চাই না, যদিও এরাই আমার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। এই অন্যায় করার জন্য আমায় বাধ্য করবেন না।
কার্পণ্য়দোষোপহতস্বভাবঃ(ফ্),
পৃচ্ছামি ত্বাং(ন্) ধর্মসম্মূঢ়চেতাঃ
য়চ্ছ্রেয়(স্) স্য়ান্নিশ্চিতং(ম্) ব্রুহি তন্মে,
শিষ্য়স্তেsহং(ম্) শাধি মাং(ন্) ত্বাং(ম্) প্রপন্নম্॥7॥
আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি যে, কাপুরুষতা দোষে অভিভূত স্বভাব এবং ধর্ম বিষয়ে বিমূঢ় চিত্ত কোনটি আমার পক্ষে শ্রেয় তাহা নিশ্চিত রূপে আমায় বলুন৷ আমি আপনার শিষ্য , শরণাগত আমায় আপনি শিক্ষা দান করুন৷
এটা ভগবদ্গীতার সব চেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ শ্লোক। যদি অর্জুন এই কথা না বলতেন, তাহলে হয়তো ভগবান কখনোই ভগবদ্গীতা বলতেন না।
অর্জুন ভগবানের শরণে এসে বললেন যে আমি আপনার সকল কথা মানতে রাজী , কিন্তু কেন এরূপ করতে বলছেন সেটা তো বোঝান।
আমি কার্পণ্য দোষে দোষী - আমার মধ্যে কর্তব্যবোধ উৎপন্ন হয়েছে। ধর্মজ্ঞান লোপ পেয়েছে। আমি আপনার শিষ্য, আপনার শরণে, আমাকে যা শ্রেয়ঃ সেই শিক্ষা দিন।
এখানে অর্জুন নতমস্তক। খুব সুন্দর শব্দ। মস্তকে বুদ্ধি থাকে। সেই বুদ্ধি অর্পণ করলেন, আমার বুদ্ধি আমার বিবেক তোমার চরণে অর্পণ করলাম। তাই তো আমরা গুরু, মা বাবার সামনে নতমস্তক হই।
১৫ অধ্যায়ে মনে করুন -
ময়ি এব মন আধৎস্ব ময়ি বুদ্ধিং নিবেশয়।
নিবসিষ্যসি ময়্যেব অত ঊর্ধ্বং ন সংশয়ঃ।।
এখানে অর্জুন নিজের বুদ্ধি অর্পণ করলেন। এতক্ষণ নিজের বুদ্ধি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, পণ্ডিতদের মতো বলছিলেন - আমার বোনেরা বিধবা হবে, বৌদিরা বিধবা হবে, বংশ শেষ হয়ে যাবে, পিণ্ডদান করার কেউ থাকবে না।
এখানে অর্জুন শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন। ভগবানকে বলেছেন আমায় শিক্ষা দাও, আমায় তোমার শরণে আনো।
অর্জুন ভগবানের শরণে এসে বললেন যে আমি আপনার সকল কথা মানতে রাজী , কিন্তু কেন এরূপ করতে বলছেন সেটা তো বোঝান।
আমি কার্পণ্য দোষে দোষী - আমার মধ্যে কর্তব্যবোধ উৎপন্ন হয়েছে। ধর্মজ্ঞান লোপ পেয়েছে। আমি আপনার শিষ্য, আপনার শরণে, আমাকে যা শ্রেয়ঃ সেই শিক্ষা দিন।
এখানে অর্জুন নতমস্তক। খুব সুন্দর শব্দ। মস্তকে বুদ্ধি থাকে। সেই বুদ্ধি অর্পণ করলেন, আমার বুদ্ধি আমার বিবেক তোমার চরণে অর্পণ করলাম। তাই তো আমরা গুরু, মা বাবার সামনে নতমস্তক হই।
১৫ অধ্যায়ে মনে করুন -
ময়ি এব মন আধৎস্ব ময়ি বুদ্ধিং নিবেশয়।
নিবসিষ্যসি ময়্যেব অত ঊর্ধ্বং ন সংশয়ঃ।।
এখানে অর্জুন নিজের বুদ্ধি অর্পণ করলেন। এতক্ষণ নিজের বুদ্ধি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, পণ্ডিতদের মতো বলছিলেন - আমার বোনেরা বিধবা হবে, বৌদিরা বিধবা হবে, বংশ শেষ হয়ে যাবে, পিণ্ডদান করার কেউ থাকবে না।
এখানে অর্জুন শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন। ভগবানকে বলেছেন আমায় শিক্ষা দাও, আমায় তোমার শরণে আনো।
ন হি প্রপশ্য়ামি মমাপনুদ্য়াদ্
য়চ্ছোকমুচ্ছোষণমিন্দ্রিয়াণাম্
অবাপ্য় ভূমাবসপত্নমৃদ্ধং(ম্)
রাজ্য়ং(ম্) সুরাণামপি চাধিপত্য়ম্॥8॥
পৃথিবীতে ধনধান্যসমৃদ্ধ নিষ্কন্টক রাজ্য এবং স্বর্গে দেবতাগণের আধিপত্য যদি পাওয়া যায়, তাহলেও আমার ইন্দ্রিয়সমূহের সন্তাপক শোক দূরীভূত হবে বলে আমার মনে হয় না।
অর্জুনের মনে এখনো প্রশ্ন আছে - এদের মেরে আমি সুখলাভ তো করবো, কিন্তু আনন্দিত হতে পারবো কি? আমি দ্বিধায় আছি, দ্বন্দ্বে আছি। আমায় মার্গ দর্শন করুন। বলে অর্জুন ভগবানের চরণে ঝুঁকলেন। নতমস্তকের অনেক শক্তি।
মহাভারতের যুদ্ধেরই একটি সুন্দর কাহিনী আছে। যুদ্ধের আগে যুধিষ্ঠির নিজের পাদুকা খুলে রথ থেকে নামলেন। তারপর সোজা হেটে কৌরবপক্ষের দিকে এগিয়ে গেলেন। সবাই আশ্চর্য। রাজার অপর পক্ষের কাছে হেঁটে যাওয়া মানে হার স্বীকার করতে যাওয়া। সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। যুধিষ্ঠির সোজা গিয়ে দাঁড়ালেন ভীষ্মের রথের সামনে। গিয়ে বললেন - আপনি কুরু বংশের প্রবীণতম। আপনার অনুমতি বিনা এ যুদ্ধ হতে পারে না। আপনি আমায় অনুমতি দিন, ও আশীর্বাদ করুন। এই বলে তিনি ভীষ্মকে প্রণাম করলেন। যুধিষ্ঠির ছোট হিসেবে তাঁর কর্তব্য করেছেন - কাজে প্রবৃত্ত হওয়ার আগে গুরুজনের আশীর্বাদ চেয়েছেন।
ভীষ্মের গুরুজনের ন্যায় কর্তব্য করা উচিৎ - তাই তিনি যুধিষ্ঠিরের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন "বিজয়ী ভব"। কুরু বংশের ভবিষ্যৎ ওখানেই লেখা হয়ে গেলো, যা আমাদের কারোরই অজানা নয়।
এর অর্থ কি দাঁড়ায়? পিতা-মাতা, গুরুজন, গুরু এঁদের সামনে নতমস্তক হওয়ার সামর্থ্য সকলের হয় না। যদি ভগবানের সামনে আপনি নতমস্তক হন, ভগবান নিশ্চিতই প্রসন্ন হবেন।
মহাভারতের যুদ্ধেরই একটি সুন্দর কাহিনী আছে। যুদ্ধের আগে যুধিষ্ঠির নিজের পাদুকা খুলে রথ থেকে নামলেন। তারপর সোজা হেটে কৌরবপক্ষের দিকে এগিয়ে গেলেন। সবাই আশ্চর্য। রাজার অপর পক্ষের কাছে হেঁটে যাওয়া মানে হার স্বীকার করতে যাওয়া। সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। যুধিষ্ঠির সোজা গিয়ে দাঁড়ালেন ভীষ্মের রথের সামনে। গিয়ে বললেন - আপনি কুরু বংশের প্রবীণতম। আপনার অনুমতি বিনা এ যুদ্ধ হতে পারে না। আপনি আমায় অনুমতি দিন, ও আশীর্বাদ করুন। এই বলে তিনি ভীষ্মকে প্রণাম করলেন। যুধিষ্ঠির ছোট হিসেবে তাঁর কর্তব্য করেছেন - কাজে প্রবৃত্ত হওয়ার আগে গুরুজনের আশীর্বাদ চেয়েছেন।
ভীষ্মের গুরুজনের ন্যায় কর্তব্য করা উচিৎ - তাই তিনি যুধিষ্ঠিরের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন "বিজয়ী ভব"। কুরু বংশের ভবিষ্যৎ ওখানেই লেখা হয়ে গেলো, যা আমাদের কারোরই অজানা নয়।
এর অর্থ কি দাঁড়ায়? পিতা-মাতা, গুরুজন, গুরু এঁদের সামনে নতমস্তক হওয়ার সামর্থ্য সকলের হয় না। যদি ভগবানের সামনে আপনি নতমস্তক হন, ভগবান নিশ্চিতই প্রসন্ন হবেন।
সঞ্জয় উবাচ
এবমুক্ত্বা হৃষীকেশং(ঙ্), গুড়াকেশঃ(ফ্) পরন্তপ
ন য়োত্স্য় ইতি গোবিন্দম্ , উক্ত্বা তূষ্নীং(ম্) বভূব হ॥9॥
সঞ্জয় বললেন –হে শত্রুতাপন ধৃতরাষ্ট্র ! এই কথা বলে নিদ্রাজয়ী অর্জুন ভগবান গোবিন্দকে ‘আমি যুদ্ধ করব না' স্পষ্টভাবে জানিয়ে চুপ করে গেলেন ৷
empty
তমুবাচ হৃষীকেশঃ(ফ্), প্রহসন্নিব ভারত।
সেনয়োরুভয়োর্মধ্য়ে বিষীদন্তমিদং(ব্ঁ) বচঃ॥2.10॥
হে ভরতবংশোদ্ভব ধৃতরাষ্ট্র ! দুই পক্ষের সেনার মধ্যহলে বিষাদমগ্ন সেই অর্জুনকে ভগবান হৃষীকেশ স্মিতহাস্যে এই (পরবর্তী শ্লোকে বলা) কথা বললেন ৷
সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকে বলছেন যে অর্জুন, যিনি নিদ্রাকে জয় করেছিলেন, তিনিই ভগবানকে 'আমি যুদ্ধ করব না' বলে চুপ করে বসে রইলেন। যুদ্ধক্ষেত্রের দুপক্ষের সেনাবাহিনীর মাঝখানে অর্জুনকে বিষাদগ্রস্থ হয়ে বসে পড়তে দেখে ভগবান হাসতে লাগলেন। ভগবান অর্জুনের সাথে স্মিতহাস্যে কথোপকথন করছিলেন, তাই তার সমস্ত কথার অর্থ বদলে গিয়েছিলো। যদি এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে হেসে নপুংসক বলে বা তিরস্কার করে, তবে অন্যজনের মনে ক্ষোভ রাখা উচিত নয়।
ভগবানের হাসিও এত পবিত্র এবং সুন্দর। একটি ভজন গাওয়া হয়েছে :-
অধরম মধুরম বদনম মধুরম……
https://drive.google.com/file/d/1QPGKXcQ94ETMRYeoAK0GWvSVJ4dAfjQP/view?usp=share_link
নাম সংকীর্তনের ও হনুমান চালিসা পাঠের মাধ্যমে আজকের বিবেচন সম্পূর্ণ হলো।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রশ্নকর্তা - রাঘব দাদা
প্রশ্ন - এই অধ্যায়ের নাম সাংখ্য যোগ কেন?
উত্তর - সাংখ্য মানে সংখ্যা। সংখ্যা শাস্ত্র থেকেই এই শাস্ত্রটি বিকশিত করা হয়েছিলো। আমাদের ধর্মে, পরম্পরায় সাংখ্যশাস্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র । এই শাস্ত্রটি একপ্রকারে নির্গুণ উপাসনার সাথে সম্পর্কিত।।
এক হয় সগুণ পূজা, যেখানে মূর্তি দেখা যায়। মূর্তিকেই আমরা ভগবান জ্ঞান করি। এক হয় নির্গুণ পূজা যেখানে পূজারী সমগ্র সৃষ্টিতে ভগবানের উপস্থিতি মেনে নিয়ে পূজা করেন। শুধু মূর্তিই না, পঞ্চ মহাভূতেও ভগবান আছেন। সকল বিশ্ব, সকল ব্রহ্মাণ্ডে ভগবান আছেন। আমি নিজেও ভগবান, নিজের মধ্যে আমি ভগবানের অংশ ধারণ করে আছি। তাই আমি অমর। যখন শরীর প্রাণ ত্যাগ করে, তখন শুধু শরীর পরিবর্তন হয়। আত্মা অমর, কারণ সে ভগবানের অংশ, সেটা কখনো শেষ হয় না। এই শাস্ত্রকে সাংখ্য শাস্ত্র বলা হয়। কপিলমুনি এই শাস্ত্র নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। বিশ্বে যত শাস্ত্র আছে, সবার উল্লেখ বেদে কোথাও না কোথাও আছে। বেদব্যাস জী কোনো নতুন শাস্ত্র লেখেননি। উনি শুধুমাত্র এই শাস্ত্রগুলির সম্পাদনা করেছেন। তিঁনি সাতশোটি শ্লোককে সংকলন করে ভগবদ্গীতার রূপ দিয়েছেন।
সেই শাস্ত্রের মধ্যে এক শাস্ত্র সাংখ্য শাস্ত্র, যা সংখ্যা সম্বন্ধীয়। কিন্তু নির্গুণ নিরাকারের ভক্তিকেও সংখ্যা শাস্ত্র বলে। এই অধ্যায়ে আত্মার অমরত্বের কথা বলা হয়েছে। তাই এই অধ্যায়ের নাম সাংখ্যযোগ।
প্রশ্নকর্তা: বৃন্দা জী
প্রশ্ন: অক্ষৌহিণী সেনাবাহিনী ব্যাপারে বিস্তারিত বলুন?
উত্তর: মহাভারতের যুদ্ধে 18টি অক্ষৌহিনী সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করেছিলো।(অক্ষৌহিনী হলো দুই লক্ষাধিক সৈন্য) 18টি অক্ষৌহিনীর মধ্যে 11টি কৌরবদের সাথে এবং 7টি পান্ডবদের সাথে ছিল। শ্রীকৃষ্ণের অক্ষৌহিনী সেনাবাহিনী এবং মদ্র নরেশের (নকুল ও সহদেবের মামা) অক্ষৌহিনী সেনাবাহিনী কৌরবদের সাথে ছিল। দুর্যোধন প্রতারণা করে মদ্র নরেশের সেনা বাহিনীকে নিজের পক্ষে করে নিয়েছিলেন। যদিও কৃষ্ণের অক্ষৌহিনী সেনাবাহিনী (নারায়ণী সেনা) কৌরবদের সাথে ছিলেন কিন্তু তারা পাণ্ডবদের পক্ষেই ছিলেন কারণ ভগবান কৃষ্ণ পাণ্ডবদের সাথে ছিলেন। একইভাবে মদ্র নরেশের সেনাও তার ভাগিনেয়দের (পাণ্ডবদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি। তাই কার্যকরভাবে কৌরবদের পক্ষে 9টি অক্ষৌণী সেনাবাহিনী ছিল এবং পাণ্ডবের পক্ষে 9টি অক্ষৌহিণী সেনাবাহিনী ছিল।.
সমাপন প্রার্থনার মাধ্যমে আজকের বিবেচন সত্র সমাপ্ত হলো।
ভগবানের হাসিও এত পবিত্র এবং সুন্দর। একটি ভজন গাওয়া হয়েছে :-
অধরম মধুরম বদনম মধুরম……
https://drive.google.com/file/d/1QPGKXcQ94ETMRYeoAK0GWvSVJ4dAfjQP/view?usp=share_link
নাম সংকীর্তনের ও হনুমান চালিসা পাঠের মাধ্যমে আজকের বিবেচন সম্পূর্ণ হলো।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রশ্নকর্তা - রাঘব দাদা
প্রশ্ন - এই অধ্যায়ের নাম সাংখ্য যোগ কেন?
উত্তর - সাংখ্য মানে সংখ্যা। সংখ্যা শাস্ত্র থেকেই এই শাস্ত্রটি বিকশিত করা হয়েছিলো। আমাদের ধর্মে, পরম্পরায় সাংখ্যশাস্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র । এই শাস্ত্রটি একপ্রকারে নির্গুণ উপাসনার সাথে সম্পর্কিত।।
এক হয় সগুণ পূজা, যেখানে মূর্তি দেখা যায়। মূর্তিকেই আমরা ভগবান জ্ঞান করি। এক হয় নির্গুণ পূজা যেখানে পূজারী সমগ্র সৃষ্টিতে ভগবানের উপস্থিতি মেনে নিয়ে পূজা করেন। শুধু মূর্তিই না, পঞ্চ মহাভূতেও ভগবান আছেন। সকল বিশ্ব, সকল ব্রহ্মাণ্ডে ভগবান আছেন। আমি নিজেও ভগবান, নিজের মধ্যে আমি ভগবানের অংশ ধারণ করে আছি। তাই আমি অমর। যখন শরীর প্রাণ ত্যাগ করে, তখন শুধু শরীর পরিবর্তন হয়। আত্মা অমর, কারণ সে ভগবানের অংশ, সেটা কখনো শেষ হয় না। এই শাস্ত্রকে সাংখ্য শাস্ত্র বলা হয়। কপিলমুনি এই শাস্ত্র নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। বিশ্বে যত শাস্ত্র আছে, সবার উল্লেখ বেদে কোথাও না কোথাও আছে। বেদব্যাস জী কোনো নতুন শাস্ত্র লেখেননি। উনি শুধুমাত্র এই শাস্ত্রগুলির সম্পাদনা করেছেন। তিঁনি সাতশোটি শ্লোককে সংকলন করে ভগবদ্গীতার রূপ দিয়েছেন।
সেই শাস্ত্রের মধ্যে এক শাস্ত্র সাংখ্য শাস্ত্র, যা সংখ্যা সম্বন্ধীয়। কিন্তু নির্গুণ নিরাকারের ভক্তিকেও সংখ্যা শাস্ত্র বলে। এই অধ্যায়ে আত্মার অমরত্বের কথা বলা হয়েছে। তাই এই অধ্যায়ের নাম সাংখ্যযোগ।
প্রশ্নকর্তা: বৃন্দা জী
প্রশ্ন: অক্ষৌহিণী সেনাবাহিনী ব্যাপারে বিস্তারিত বলুন?
উত্তর: মহাভারতের যুদ্ধে 18টি অক্ষৌহিনী সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করেছিলো।(অক্ষৌহিনী হলো দুই লক্ষাধিক সৈন্য) 18টি অক্ষৌহিনীর মধ্যে 11টি কৌরবদের সাথে এবং 7টি পান্ডবদের সাথে ছিল। শ্রীকৃষ্ণের অক্ষৌহিনী সেনাবাহিনী এবং মদ্র নরেশের (নকুল ও সহদেবের মামা) অক্ষৌহিনী সেনাবাহিনী কৌরবদের সাথে ছিল। দুর্যোধন প্রতারণা করে মদ্র নরেশের সেনা বাহিনীকে নিজের পক্ষে করে নিয়েছিলেন। যদিও কৃষ্ণের অক্ষৌহিনী সেনাবাহিনী (নারায়ণী সেনা) কৌরবদের সাথে ছিলেন কিন্তু তারা পাণ্ডবদের পক্ষেই ছিলেন কারণ ভগবান কৃষ্ণ পাণ্ডবদের সাথে ছিলেন। একইভাবে মদ্র নরেশের সেনাও তার ভাগিনেয়দের (পাণ্ডবদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি। তাই কার্যকরভাবে কৌরবদের পক্ষে 9টি অক্ষৌণী সেনাবাহিনী ছিল এবং পাণ্ডবের পক্ষে 9টি অক্ষৌহিণী সেনাবাহিনী ছিল।.
সমাপন প্রার্থনার মাধ্যমে আজকের বিবেচন সত্র সমাপ্ত হলো।