विवेचन सारांश
অশ্বত্থ গাছ - দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তার ধাম
১৫তম অধ্যায়ের নাম পুরুষোত্তম যোগ। দীপ প্রজ্জ্বলন ও প্রার্থনার মাধ্যমে, গুরুদেবকে প্রণাম জানিয়ে আজকের বিবেচন শুরু হল। 'লার্ন গীতা' নামক এই যাত্রা শুরু হয়েছিল দ্বাদশ অধ্যায় দিয়ে, যেখানে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের লক্ষণ বর্ণনা করেছেন।
ভগবদ্গীতার মাহাত্ম্য
আমরা সৌভাগ্যবান যে আমাদের এই যাত্রার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব গীতার শিক্ষা জীবনে প্রয়োগ করা।
আদি শঙ্করাচার্য নিজের ভাষ্যে যেমন বলেছেন -
यमेवैष वृणुते तेन लभ्यस्तस्यैष ~ আমরা নিজেদের জীবনের পথনির্দেশক নই, ভগবানের ইচ্ছাতেই সব হয়।
আমরা জানি, বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন। অর্জুনের উদাহরণই ধরি, যাকে গীতার প্রথম অধ্যায়ে ধর্মসংকটে দেখানো হয়েছে। ধৰ্ম রক্ষা করতে গেলে তাকে পরিবার ও গুরুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে হবে।
অর্জুন উওয়াচ
দৃষ্ট্বেমং (ম্) স্বজনং(ঙ্) কৃষ্ণ, য়ুয়ুত্সুং (ম্) সমুপস্থিতম্॥1.28॥
সীদন্তি মম গাত্রাণী, মুখং (ঞ্) চ পরিশুষ্যতি।
বেপথুশ্চ শরীরে মে, রোমহর্ষশ্চ জায়তে॥1.29॥
গাণ্ডীবং(ম্) স্রংসতে হস্তাত্, ত্বক্চৈব পরিদহ্যতে।
ন চ শক্নোম্যবস্থাতুং(ম্), ভ্রমতীব চ মে মনঃ৷৷1.30৷|
প্রথম অধ্যায়ের এই শ্লোকে অর্জুনের কষ্ট দেখানো হয়েছে যেখানে উনি বলছেন - আমার মুখ শুকিয়ে গেছে, শরীর কাঁপছে, গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। হাত থেকে গাণ্ডীব পরে যাচ্ছে, ত্বক জ্বালা করছে। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, চিন্তাও করতে পারছি না।
কার্পণ্যদোষোপহতস্বভাবঃ পৃচ্ছামি ত্বাং ধর্মসংমূঢ়চেতাঃ ।
যচ্ছ্রেয়ঃ স্যান্নিশ্চিতং ব্রূহি তন্মে শিষ্যস্তেহহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্ ॥2.7॥
পরের অধ্যায়ের ৭ম শ্লোকে অর্জুন ভগবানকে বলেন তার মার্গদর্শন করতে যাতে তিনি নিজের মঙ্গলের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। "আমি কাপুরুষতায় ও মোহে আচ্ছন্ন। আমি কর্তব্যের সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম। আমি আপনার কাছে এসেছি। আমি তোমার শিষ্য। আমায় বলো কি আমার জন্য মঙ্গল।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের সপ্তম শ্লোকে অর্জুন ভগবানকে বিনতি করে বলছেন, আমি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি এবং সেই দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি এবং আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়েছি ৷এই অবস্থায় আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর, তা আমাকে বলুন। এখন আমি আপনার শিষ্য এবং সর্বতোভাবে আপনার শরণাগত ৷ দয়া করে আপনি আমাকে নির্দেশ দিন।
অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে ।
গতাসূনগতাসূংশ্চ নানুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ॥2.11॥
অর্জুনকে মার্গদর্শন করতে ভগবান ভগবদ্গীতার বাণী বললেন, দ্বিতীয় অধ্যায়ের একাদশতম শ্লোক থেকে বাস্তবের প্রকৃতি দিয়ে।
ভগবান বললেন - তুমি বিজ্ঞের মতো কথা বলছো, কিন্তু যা নিয়ে দুঃখ করছো, তা দুঃখের যোগ্য নয়। জ্ঞানী মানুষজন জীবিত বা মৃত কারো জন্যই দুঃখ করেন না।
পরম পূজ্য স্বামীজি বলেছেন যে যদি বেদ শ্রুতি (যা শ্রুত) হয়, তাহলে গীতা হল ভগবানের বাণী। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা গীতার দ্বারা চালিত। কারণ গীতার বাণীকে অনুসরণ করলে ভগবানকে অনুসরণ করা হয়।
পুরুষোত্তম যোগ
১৫ অধ্যায়ে পুরুষোত্তম যোগের বর্ণনা আছে যাতে ভগবান নিজের পুরুষোত্তম স্বরূপের কথা বলেছেন(এখানে পুরুষোত্তমের অর্থ ব্রহ্ম, যেমন বেদে বর্ণিত যার অব্যাপ্তের থেকে উৎপত্তি বা সে নিজেই অব্যাপ্ত) ।উনি সংসারের সম্পর্কে কি বুঝিয়েছেন যাতে অর্জুন সেটাকে বুঝে তার থেকে অনাসক্ত হতে পারে।
এই অধ্যায়ে এই সকল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে -
পরম পূজ্য স্বামীজি বলেছেন যে যদি বেদ শ্রুতি (যা শ্রুত) হয়, তাহলে গীতা হল ভগবানের বাণী। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা গীতার দ্বারা চালিত। কারণ গীতার বাণীকে অনুসরণ করলে ভগবানকে অনুসরণ করা হয়।
পুরুষোত্তম যোগ
১৫ অধ্যায়ে পুরুষোত্তম যোগের বর্ণনা আছে যাতে ভগবান নিজের পুরুষোত্তম স্বরূপের কথা বলেছেন(এখানে পুরুষোত্তমের অর্থ ব্রহ্ম, যেমন বেদে বর্ণিত যার অব্যাপ্তের থেকে উৎপত্তি বা সে নিজেই অব্যাপ্ত) ।উনি সংসারের সম্পর্কে কি বুঝিয়েছেন যাতে অর্জুন সেটাকে বুঝে তার থেকে অনাসক্ত হতে পারে।
এই অধ্যায়ে এই সকল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে -
- সংসারের স্বরূপ (চর-অচর সংসারের বর্ণনা), সংসার বৃক্ষ
- পরমাত্মার বাসস্থান - পরম ধাম
- পরমাত্মার স্বরূপ
- জীবাত্মা, সংসার আর ভবনের মধ্যে সম্পর্ক
- পরমেশ্বর প্রাপ্তি
- সৃষ্টির স্বরূপ
- কর্ম ও কর্মফল
১৫ অধ্যায়ের প্রথমার্ধে ভগবান সংসার বৃক্ষের স্বরূপ যা হিন্দু ধর্মের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, একাধিক শাস্ত্রে বর্ণিত, তার বর্ণনা করেছেন।
এই অধ্যায়ের প্রথম দুটি শ্লোকে সংসাররূপী বৃক্ষের ( সৃষ্টির চরাচর ভাগ) কথা বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে।
এই অধ্যায়ের প্রথম দুটি শ্লোকে সংসাররূপী বৃক্ষের ( সৃষ্টির চরাচর ভাগ) কথা বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে।
15.1
শ্রীভগবানুবাচ
ঊর্ধ্বমূলমধঃ(শ্) শাখম্, অশ্বত্থং(ম্) প্রাহুরব্যয়ম্।
ছন্দাংসি য়স্য পর্ণানি, য়স্তং(ব্ঁ) বেদ স বেদবিৎ॥15.1॥
শ্রীভগবান বললেন –ঊর্ধ্বে মূলযুক্ত এবং নিম্নে শাখাবিশিষ্ট যে জগৎরূপ অশ্বত্থবৃক্ষকে (প্রবাহরূপে) অব্যয় বলা হয় এবং বেদ যার পল্লবলসমূহ, সেই জগৎবৃক্ষকে যিনি জানেন, তিনিই বেদবিৎ।
প্রথম ২ শ্লোকে আমরা দুটি বিষয়ে জানতে পারি -
- সংসারবৃক্ষ (জীবনের বৃক্ষ)
- ৩ গুণের ভূমিকা (সত্ত্ব, রজস, তামস)
https://drive.google.com/file/d/1DomvUB99szcepk0rl5kICQW0V7sP5wJ0/view?usp=drivesdk
সংসার ও সংসারবৃক্ষের প্রকৃতি -
জগতের সংস্কৃত শব্দ সংসারের সংজ্ঞা সংসারতীতি সংসারঃ - যা ক্রমাগত বদলাচ্ছে।
জগতের সংস্কৃত শব্দ সংসারের সংজ্ঞা সংসারতীতি সংসারঃ - যা ক্রমাগত বদলাচ্ছে।
এখানে সংসারের প্রকৃতিকে সংসারবৃক্ষ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, চিরন্তন অশ্বত্থ গাছ, যার শিকড় ওপরে, ডাল নিচে। অশ্বত্থ মানে যা চিরপরিবর্তনশীল, যা ক্রমাগত বদলাচ্ছে।
সংসারবৃক্ষ: অশ্বত্থ
জীবন বৃক্ষকে অনেক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। ভগবান নিজে তার কথা ভগবদ্গীতায় বলেছেন।
ভগবান বলেছেন সংসার এক উল্টো গাছের মতো - যার শিকড় ওপরে, ডালপালা, পাতা নিচে।
The Saṃsāravṛkṣa is described as:
The Saṃsāravṛkṣa is described as:
- ঊর্ধ্বমূলম্ (শিকড় ওপরে)
- অধঃ শাখম্ (ডালপালা নিচে)
- অশ্বত্থং প্রাহুরব্যয়ম্ (ক্রমাগত বিবর্তিত)
- পর্ণানি (পাতা)
- প্রবালাঃ (কুঁড়ি)
ঊর্ধ্বমূলম্ (শিকড় ওপরে)
তার শিকড়ে কোনো ভিত নেই, কিন্তু তা দাঁড়িয়ে আছে। তার উৎস ভগবান, যিনি বৃক্ষকে পুস্ট ও চালিত রেখেছেন।
অধঃ শাখম্ (ডালপালা নিচে)
ডালপালা কর্মফলের প্রতীক। তা নিচের দিকে মুখ করে মানে মানুষ সংসারে আবদ্ধ তার কর্মের দ্বারা।
অশ্বত্থং (ক্রমাগত বিবর্তিত) প্রাহুরব্যয়ম্ (যা ধ্বংশ করা যায়না)
যে গাছকে ভগবান অশ্বত্থ বলেছেন (অ- না, শ্ব - আগামীকাল, থ-থাকে) । আদি শঙ্করাচার্য এই নামের মানে বলেছেন যা 'কাল একই থাকে না' যেমন এই বিশ্ব যার ধ্বংস নেই কিন্তু তা ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে।
পর্ণানি (পাতা)
এর পাতাগুলি ছন্দ। ছন্দের তিনটি আলাদা অর্থ আছে - কাব্য (ছন্দ শাস্ত্র), জ্ঞান ও বেদ। এখানে তার মানে জ্ঞান বা বেদ দুটোই হতে পারে। যে এই সংসারবৃক্ষকে জানে, তাকে বলে বেদবিৎ।
প্রবালাঃ (কুঁড়ি)
যে ভাবে জল গাছের সেচন করে, তিনটি গুণ এই প্রকৃতির জড় জগতকে সেচন করে। এই তিনটি গুণের দ্বারা তৈরি ইন্দ্রিয় এই সংসার বৃক্ষের কুঁড়ি, যা ফুটে আরো বিস্তৃত হয়।এই কুঁড়ি ফুটে নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়।
এই ভাবে অশ্বত্থ গাছের পাতা আত্মার জাগতিক অস্তিত্ব বজায় রাখে আর জন্মমৃত্যুর চক্রে চালিত করতে থাকে। এটা ক্রমাগত হওয়ার জন্য আত্মা শুরু বা শেষের উপলব্ধি করতে পারে না।
তাই এই সংসারবৃক্ষ অব্যয় বা জন্ম মৃত্যু চক্র অবিচ্ছিন্ন।
এই ভাবে অশ্বত্থ গাছের পাতা আত্মার জাগতিক অস্তিত্ব বজায় রাখে আর জন্মমৃত্যুর চক্রে চালিত করতে থাকে। এটা ক্রমাগত হওয়ার জন্য আত্মা শুরু বা শেষের উপলব্ধি করতে পারে না।
তাই এই সংসারবৃক্ষ অব্যয় বা জন্ম মৃত্যু চক্র অবিচ্ছিন্ন।
অধশ্চোর্ধ্বং(ম্) প্রসৃতাস্তস্য শাখা,
গুণপ্রবৃদ্ধা বিষয়প্রবালাঃ।
অধশ্চ মূলান্যনুসন্ততানি,
কর্মানুবন্ধীনি মনুষ্যলোকে।।2।।
ওই জগৎ-বৃক্ষের গুণাদির (সত্ত্ব, রজঃ ও তমো) সাহায্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও বিষয়রূপ পল্লববিশিষ্ট শাখাগুলি নীচে, মধ্যভাগে ও ঊর্ধ্বে সর্বত্র বিস্তৃত। মনুষ্যলোকে কর্মানুসারে বন্ধনকারী মূল নিম্নে ও ঊর্ধ্বভাগে সর্বলোকে পরিব্যাপ্ত হয়ে চলেছে।
প্রকৃতির গুণসমূহ
সত্ত্বগুণ, রজোগুণ এবং তমোগুণ
এই অশ্বত্থ বৃক্ষটি তিনটি গুণ (জাগতিক বা পার্থিব প্রবৃত্তি) দ্বারা পুষ্ট হয় যথা সত্ত্ব (শুদ্ধ, পবিত্র), রজ (ক্রিয়াশীলতা), এবং তম (অন্ধকার, বিনাশ)। সমস্ত প্রাণী এই তিনটি গুণ ধারণ করে। আমাদের প্রবৃত্তিতে যে গুণটি অন্য দুটি গুণের তুলনায় অধিক মাত্রায় থাকে, সেই গুণটিই প্রভাবশালী হয়৷
.
সত্ত্বগুণ, রজোগুণ এবং তমোগুণ
এই অশ্বত্থ বৃক্ষটি তিনটি গুণ (জাগতিক বা পার্থিব প্রবৃত্তি) দ্বারা পুষ্ট হয় যথা সত্ত্ব (শুদ্ধ, পবিত্র), রজ (ক্রিয়াশীলতা), এবং তম (অন্ধকার, বিনাশ)। সমস্ত প্রাণী এই তিনটি গুণ ধারণ করে। আমাদের প্রবৃত্তিতে যে গুণটি অন্য দুটি গুণের তুলনায় অধিক মাত্রায় থাকে, সেই গুণটিই প্রভাবশালী হয়৷
.
সত্ত্বগুণ
সত্ত্বগুণ শুদ্ধতা, জ্ঞান এবং সমন্বয়ের প্রতীক। এটি মঙ্গলকারী, আনন্দ, সন্তোষ এবং তৃপ্তির বৈশিষ্ট্য। মোক্ষলাভ করার জন্য, মানুষ নিজের সত্ত্বগুণ বাড়াতে চায়৷
মনে এবং শরীরে রজোগুণ এবং তমোগুণ হ্রাস করে সত্ত্বগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। সাত্ত্বিক খাদ্য ভোজন করে বা যোগ অনুশীলন করে এবং একটি অহিংস জীবনযাপনের মাধ্যমে, নিজেকে প্রফুল্লচিত্ত লোকেদের সংসর্গে থেকে এবং এমন কার্যে নিজেকে নিবিষ্ট করে যা আপনাকে এবং অন্যদের আনন্দ প্রদান করে।
রজোগুণ
রজোগুণ
রজোগুণ আবেগ, কর্ম, শক্তি এবং গতির প্রতীক। রজোগুণকে আসক্তি, কামনা, আশা এবং আকাঙ্ক্ষা চিহ্নিত করা হয় ৷
যোগ অনুশীলন, ধ্যান, খাদ্য এবং জীবনযাত্রায় কিছু সাধারণ পরিবর্তনের মাধ্যমে রজোগুণ হ্রাস করা যায়।
যোগ অনুশীলন, ধ্যান, খাদ্য এবং জীবনযাত্রায় কিছু সাধারণ পরিবর্তনের মাধ্যমে রজোগুণ হ্রাস করা যায়।
তমোগুণ
তমোগুণ অশুদ্ধতা, আলস্য এবং অন্ধকারের প্রতীক৷ এটিকে অজ্ঞতার পরিণতি বলা হয় এবং এই গুণটি মানুষকে আধ্যাত্মিক পথে অগ্রসর হতে বাধা দেয় ৷
মন এবং শরীরে তামসিক তত্ত্বগুলি হ্রাস করার জন্য, তামসিক খাবার (যেমন মদিরা, মাংস, প্রসেস্ড খাবার) বা অনিয়মিততা (যেমন অতিরিক্ত খাওয়া, অতিরিক্ত ঘুম) এড়িয়ে চলা উচিত।
আমাদের সত্ত্বগুণ বৃদ্ধি করতে হবে এবং সচেতন প্রচেষ্টার মাধ্যমে তম থেকে রজ এবং রজ থেকে সত্ত্বগুণের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কাঙ্খিত গুণ কীভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে, এই নিয়ে ১৭তম অধ্যায়ে আরও বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
কর্ম এবং কর্মফল
গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রসিদ্ধ ৪৭তম শ্লোকটিকে 'কর্মণ্যেऽবাধিকারস্তে, মা ফলেষু কদাচন', অধিকাংশ সময় ভুল ব্যাখ্যা করা হয় যে কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই কর্ম সম্পাদন করা উচিত।
প্রকৃতপক্ষে, এই শ্লোকটির অর্থ হল আমাদের কেবলমাত্র কর্ম সম্পাদন করার অধিকার আছে কিন্তু কর্মের ফলের ওপর কোনো অধিকার নেই। এইভাবে, অতীত ও বর্তমানের কর্মের ভিত্তিতে আমরা কর্মফল প্রাপ্ত করি, 'যেমন বপন করি তেমনই ফল আমরা পাবো ' - as we sow so shall we reap
সমস্ত কর্মফল হলো ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহের (৫টি ইন্দ্রিয় ও মন) উপভোগ করার ফল। এই ইন্দ্রিয়গুলি ৩টি গুণের দ্বারা পুষ্ট হয় যার ফলে আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয় যেগুলিকে গাছে নবগঠিত একটি কুঁড়ি বা শাখা প্রশাখার বিস্তার হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে৷
মানুষের রূপকে অশ্বত্থ গাছের অনুরূপ বলা যেতে পারে। মানব রূপে জীব কর্ম সম্পাদন করেন, যা হলো বৃক্ষকাণ্ড, এবং এর শাখাগুলি ঊর্ধ্বমুখী এবং নিম্নমুখী (অধঃ) উভয় দিকেই প্রসারিত হয়। অতীত এবং বর্তমান কালে জীব কি প্রকার কর্মে স্বয়ংকে নিবিষ্ট করেছিল সেই ভিত্তিতেই তার পুনর্জন্ম হয়৷
যদি সে একটি ধর্মনিষ্ঠ জীবন অতিবাহিত করে, তবে পুনর্জন্মের সময়, সে ঊর্ধ্বগামী শাখায় চলে যায় যেখানে গন্ধর্ব, দেবতা ইত্যাদি উচ্চ প্রজাতি সমূহের বাসস্থান স্থিত রয়েছে ৷ যদি কোনো জীবাত্মা অশুভ কর্মে লিপ্ত ছিল, তবে পরবর্তী জন্মে, সে নিম্নমুখী শাখায় অধঃপতিত হয়, যেখানে মনুষ্য, পশু-পাখি ইত্যাদি প্রাণীসমূহের বাসস্থান অবস্থিত।
যেমন অশ্বত্থ গাছের কুঁড়িগুলি গাছের ডালপালার মধ্যে অঙ্কুরিত হয়, ঠিক তেমনিই ইন্দ্রিয়গুলি মানুষের মধ্যে আসক্তির প্রবণতা দেয়, বস্তুগত আনন্দের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। এই আকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণের জন্যই সকল জীব কর্ম সম্পাদন করে।
যে প্রকারে বৃক্ষের ডালপালা বেড়ে ওঠে, সেই প্রকারে মানুষের মনে আশা- আকাঙ্ক্ষাগুলি ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকে, সীমাহীন ভাবে প্রসারিত হতে থাকে। অবশেষে, জীব বস্তুগত আসক্তির বন্ধনে আরও জড়িয়ে পড়ে।
এই তিনটি গুণই (জাগতিক প্রবৃত্তি) হল আসক্তি বৃদ্ধির মূল উৎস এবং এই অসীম সংসারে জীবাত্মার সংসারের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ার কারণ; যদিও আশা-আকাঙ্ক্ষাই এই সংসাররূপী বৃক্ষের সাথে আবদ্ধ হওয়ার মূল কারণ।
ন রূপমস্যেহ তথোপলভ্যতে,
নান্তো ন চাদির্ন চ সংপ্রতিষ্ঠা।
অশ্বত্থমেনং(ম্) সুবিরূঢমূলম্,
অসঙ্গশস্ত্রেণ দৃঢেন ছিত্ত্বা।।3।।
এই সংসার-বৃক্ষের যেমন রূপ দেখা যায়, বিচার করলে তেমন উপলব্ধ হয় না; কারণ এর আদি-অন্ত বা স্থিতি কিছুই নেই। তাই এই সদৃঢ়মূল জগৎ-সংসাররূপ অশ্বত্থবৃক্ষকে দৃঢ় অনাসক্তিরূপ শস্ত্রের দ্বারা ছেদন করে।
সংসারবৃক্ষের প্রকৃতি
এই নশ্বর ভূবনে, বৃক্ষের স্বরূপ বা মূল রূপ পরিপূর্ণ রূপে বোঝা যায় না কারণ এই বৃক্ষের কোনো সীমা পরিসীমা নেই, এটি অনন্ত কারণ এর কোনো আরম্ভ নেই , এটি অনাদি।এর কোনো অধস্তন বা অবলম্বন নেই।
আত্মা বিশ্মরণশীল তার সৃষ্টির থেকে এবং এটির স্থিতি চিরন্তন।এটি নিজেকে সনাক্ত করতে পারে তার শারীরিক অবস্থানের এবং বস্তুগত সুখের অনুসন্ধানে জীব নানারকম কর্মে লিপ্ত হয়ে যায়। কখনো কখনো নিজের বস্তুগত ইচ্ছা পরিতৃপ্তির জন্য জেনেশুনে বা না জেনে অনেক খারাপ কর্মে নিয়োজিত হয়ে পড়ে।এতে আত্মার যাত্রা নিম্নমুখী হয়ে যায়। এবং এতে আত্মার পূনর্জন্ম নিম্ন যোণিতে বা অধঃ প্রান্তে হয়।
আবার কখনো জীব এই সংসার রূপী বৃক্ষের পত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয় যেসবে নানারকম বেদের ধার্মিক আচার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এতে অনেক ধার্মিক গুণাবলীর অধিকারী হয় জীব।বস্তুসুখের প্রবনতায় জীব এই প্রকার নানারকম ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লিপ্ত হয়ে থাকে।
এই ধর্মীয় গুণাবলীর সাহায্যে জীব স্বর্গীয় আবাসের উর্ধ্বতন স্তরে পৌঁছাতে পারে কিন্তু একবার এই গুণাবলীর পূন্য ফল শেষ হয়ে যায় আবার তাদের নিচের স্তরে পাঠিয়ে দেয়া হয়,এই চক্র ক্রমাগত চলতে থাকে।
এইভাবে জীব উর্ধ্বতন স্তরে জন্ম নিতে পারে নিজের সৎ কর্মের কারণে --- জীবাত্মা মানব জীবন পেতে পারে ভালো খারাপ দুই কর্মের মিলিত প্রভাবে কিন্তু জীব খারাপ স্তরে জন্ম নিতে পারে জীবের খারাপ কর্মফলের জন্য।
সংসারের বিভিন্ন প্রকারের আবাস স্থল
বাহ্যজগতে ১৪ টি ভুবন ও লোক আছে। তাদের কর্ম অনুযায়ী, আত্মা এক লোক বা ভুবনের থেকে আরেক ভুবন বা লোকে বিচরণ করে।এই নশ্বর ভূবনে, বৃক্ষের স্বরূপ বা মূল রূপ পরিপূর্ণ রূপে বোঝা যায় না কারণ এই বৃক্ষের কোনো সীমা পরিসীমা নেই, এটি অনন্ত কারণ এর কোনো আরম্ভ নেই , এটি অনাদি।এর কোনো অধস্তন বা অবলম্বন নেই।
আত্মা বিশ্মরণশীল তার সৃষ্টির থেকে এবং এটির স্থিতি চিরন্তন।এটি নিজেকে সনাক্ত করতে পারে তার শারীরিক অবস্থানের এবং বস্তুগত সুখের অনুসন্ধানে জীব নানারকম কর্মে লিপ্ত হয়ে যায়। কখনো কখনো নিজের বস্তুগত ইচ্ছা পরিতৃপ্তির জন্য জেনেশুনে বা না জেনে অনেক খারাপ কর্মে নিয়োজিত হয়ে পড়ে।এতে আত্মার যাত্রা নিম্নমুখী হয়ে যায়। এবং এতে আত্মার পূনর্জন্ম নিম্ন যোণিতে বা অধঃ প্রান্তে হয়।
আবার কখনো জীব এই সংসার রূপী বৃক্ষের পত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয় যেসবে নানারকম বেদের ধার্মিক আচার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এতে অনেক ধার্মিক গুণাবলীর অধিকারী হয় জীব।বস্তুসুখের প্রবনতায় জীব এই প্রকার নানারকম ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লিপ্ত হয়ে থাকে।
এই ধর্মীয় গুণাবলীর সাহায্যে জীব স্বর্গীয় আবাসের উর্ধ্বতন স্তরে পৌঁছাতে পারে কিন্তু একবার এই গুণাবলীর পূন্য ফল শেষ হয়ে যায় আবার তাদের নিচের স্তরে পাঠিয়ে দেয়া হয়,এই চক্র ক্রমাগত চলতে থাকে।
এইভাবে জীব উর্ধ্বতন স্তরে জন্ম নিতে পারে নিজের সৎ কর্মের কারণে --- জীবাত্মা মানব জীবন পেতে পারে ভালো খারাপ দুই কর্মের মিলিত প্রভাবে কিন্তু জীব খারাপ স্তরে জন্ম নিতে পারে জীবের খারাপ কর্মফলের জন্য।
সংসারের বিভিন্ন প্রকারের আবাস স্থল
ভুবন
হিন্দু বিশ্বতত্ত্বে ১৪ টি ভূবন (চতুর্দশ
ভুবন) -এর বিবরণ রয়েছে। প্রথম আটটিতে মানুষের চেয়ে উচ্চ স্তরের প্রাণীরা বাস করে, নবমে মানুষ, দশে চতুষ্পদ প্রাণীরা, একাদশে পক্ষী, দ্বাদশে সরীসৃপ, ত্রয়োদশে পতঙ্গ, শেষ ও চতুর্দশে গাছপালা।
লোক
শাস্ত্রে চতুর্দশ লোকেরও বর্ণনা আছে। ওপরে সাতটিকে ব্যাহৃতি বলা হয়, আর নিচের সাতটিকে পাতাল।
- সত্য লোক (বা ‘ব্রহ্মা লোক’): ব্রহ্মার ধাম
- তপলোক: মুনিদের ধাম
- জনলোক: চতুর্কুমারের ধাম
- মহর্লোক: অন্য মুনিদের ধাম
- স্বর্গলোক: দেবতাদের ধাম
- ভুবর্লোক: ভূতপ্রেতদের ধাম
- ভূলোক: পৃথিবী
- অতল লোক: মায়ার পুত্র বলের দ্বারা শাসিত
- বিতল লোক: শিবের গণের ধাম
- সুতল লোক: বালী ও বামন অবতারের ধাম
- তলাতল লোক: ময়ের ধাম
- মহাতাল লোক: নাগ লোক
- রসাতল লোক: শেষনাগের ধাম
- পাতাল লোক: নাগ ও অন্য প্রাণীদের ধাম
পরমেশ্বর লাভ
জন্মমৃত্যুর চক্র যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, এবং চলতেও থাকবে। যেহেতু সংসার বৃক্ষ মাপা সম্ভব না (immeasurable) এবং অনন্ত, ভিত্তিহীন কিন্তু দৃঢ়ভাবে স্থাপিত, তাই এই বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় অনাসক্তি - detachment.
অনাসক্তি অভ্যাস
জীবাত্মার অশেষ কষ্টের মুক্তি আছে অসঙ্গ-এ, অর্থাৎ অনাসক্তিতে। অনাসক্তি হলো কুঠার প্রকৃতির, যা তিনটি গুণ দ্বারা পুষ্ট কামের শিকড়কে ছিন্নভিন্ন করতে পারে। ভগবান বলেছেন যে এই কুঠার আমাদের অস্ত্র হতে পারে যদি আমাদের আত্মজ্ঞান থাকে।
এই সংসারে থাকাকালীন পরমধাম লাভের জন্য কি করবেন?
একটি মাত্র লক্ষ্যে স্থির থেকে কি করে অনাসক্তি অনুভব করা যায় তা নিয়ে এই সুন্দর গল্প আছে।
অনাসক্তি এবং মোক্ষের পথ সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পেতে, একবার শুকদেব মিথিলা নগরে উপস্থিত হন। রাজা জনক প্রজ্ঞা ও ধার্মিকতার জন্য অতি পরিচিত ছিলেন বলে তাকে রাজঋষিও বলা হত।
শিক্ষার জন্য তিনি শুকদেবকে তার হাতে কানায় কানায় তেল ভর্তি একটি পাত্র ধরে, উৎসবের সময় শহরের একটি প্রদক্ষিণ বা পরিক্রমা করার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। সেখানে শুকদেবকে সতর্ক করা হয়েছিল যে পাত্র থেকে তেল এক ফোঁটাও যেন ছিটকে না যায়।
পরিক্রমা শেষ করে ফেরার সময় রাজা জনক তাকে মিথিলার দৃশ্য নিয়ে প্রশ্ন করতে শুকদেব কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বললেন যে তিনি তেলের পাত্র লক্ষ করতে ব্যস্ত ছিলেন; অন্য কোথাও দেখার চিন্তাই করেননি।
শুনে রাজা জনক হাসলেন এবং কিছু উপদেশ দিলেন। মোক্ষের পথে চলার জন্য, এবং পরমেশ্বরের সাথে মিলনের লক্ষ্যে তিনি যেন এই বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে মনোনিবেশ করেন। এর ফলে তাকে ইন্দ্রিয় এবং কর্মফলের কারণে সৃষ্ট কোনও বিভ্রান্তি এই সংসারের পথে বাধা দেবে না।
এইভাবে,জীব সৃষ্টির প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেখানে কেউ মূল জ্ঞান লাভ করলে, আর তারা কখনই এই অস্থায়ী জড় জগতে ফিরে আসবে না।
ততঃ(ফ্) পদং(ন্)তৎপরিমর্গিতব্যং(য়্ঁ),
য়স্মিন্গতা ন নিবর্তন্তি ভূয়ঃ।
তমেব চাদ্যং(ম্) পুরুষং(ম্) প্রপদ্যে,
য়তঃ(ফ্) প্রবৃত্তিঃ(ফ্) প্রসৃতা পুরাণী॥15.4॥
তারপর সেই পরমপদ পরমাত্মা, যাঁকে প্রাপ্ত হলে মানুষ আর ইহ জগতে ফিরে আসে না এবং যাঁর হতে অনাদিকাল থেকে এই সৃষ্টি বিস্তারলাভ করেছে—‘আমি সেই আদি পুরুষ পরমাত্মার শরণ গ্রহণ করি' এই বলে তাঁর অন্বেষণ করতে হয়।
পরমাত্মা প্রাপ্তি
একাগ্র ভাবে মনোনিবেশ এবং ভক্তিভাব
বৈরাগ্যরূপী কুঠার দিয়ে সংসার বৃক্ষের শিকড়কে কেটে ফেলতে হবে এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপটি হলো, ভগবান (পুরুষোত্তম, যাকে বিভিন্ন গ্রন্থে আদিপুরুষ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে), তাঁর প্রতি একান্তচিত্তে মনোনিবেশ করা। তিঁনিই সৃষ্টির উৎস এবং তিঁনিই সৃষ্টি।
মনুষ্যকে বুঝতে হবে যে সংসাররূপী বৃক্ষের মোহ রূপী ক্ষণস্থায়ী মূলের সন্ধান করতে হলে তাকে অবশ্যই ভগবানের আশ্রয়ে যেতে হবে এবং ভক্তিভরে তাঁর উপাসনা করতে হবে। তাঁর কাছ থেকেই এই যে জড় জগৎ, যার কোনো আদি নেই, এ ভগবানের দ্বারাই বিস্তৃত হয়েছে, তাই ভক্তি সহকারে তাঁকে অন্বেষণ করাই একমাত্র কর্তব্য৷
জীবাত্মা যখন তাঁর কাছে পৌঁছায়, তখন সে এই জড়-জগতের বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সংসাররূপী ভবসাগর থেকে চিরতরে মুক্ত হয়ে যায় ।
তাই মনুষ্যের, সেই পরমধামে (পরমেশ্বরের চূড়ান্ত নিবাস) পৌঁছানোই, একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।
নির্মানমোহা জিতসঙ্গদোষা,
অধ্যাত্মনিত্যা বিনিবৃত্তকামাঃ।
দ্বন্দ্বৈর্বিমুক্তাঃ(স্) সুখদুঃখসংজ্ঞৈ,
র্গচ্ছন্ত্যমূঢাঃ(ফ্) পদমব্যয়ং(ন্) তত্।।5।।
যাঁরা অভিমান ও মোহবর্জিত হয়েছেন, যাঁরা সাংসারিক আসক্তিজনিত দোষগুলি জয় করেছেন, যাঁরা নিত্য পরমাত্মতত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত, যাঁরা (স্বদৃষ্টিতে) সমস্ত কামনারহিত হয়েছেন, যাঁরা সুখ-দুঃখরূপ দ্বন্দ্ব হতে মুক্ত, এরূপ (উচ্চ স্থিতিসম্পন্ন) মোহরহিত সাধক ভক্তগণ সেই অবিনাশী পরমপদ পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হন ।
ভগবদ্প্রাপ্তি
এই শ্লোকে যোগেশ্বর ভগবান বলেছেন সংসারবৃক্ষের শিকড়ের যে মূল, সেই পরমাত্মার কাছে আত্মসমর্পণ কি করে করতে হয়।
তাঁকে পেতে যা যা গুণ প্রয়োজন -
মন ও ইন্দ্রিয়কে বশ করার জন্য অভ্যাস করে যেতে হবে।
নির্মানমোহা
অহংকার ও মোহ থেকে মুক্ত। প্রথম ধাপ অজ্ঞতা থেকে উৎপন্ন অহংকারকে ত্যাগ করা। জীবাত্মার ভ্রম হয় যে সেই সব ধন সম্পত্তির মালিক, এই ভেবে আরও ধন অর্জন করতে চায়।
তাদের মনে অহংকারের আচ্ছাদন পড়ে যায় , এবং তারা ভাবে সবই তাদের আমোদের জন্য। তারা ভগবানকে সব কিছুর অধীশ্বর বলে মানেনা । তার তাঁর ইচ্ছায় সমর্পণও করতে পারে না।
জিতসঙ্গদোষা
'আমি' ও 'আমার' ভাব যখন কমে আসে, তখনই অন্বেষক তার আসক্তি খুঁজে তা দূর করতে পারে।
অধ্যাত্মনিত্যা
সর্বদা ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা অনুশীলন করা এবং 'সৎ, চিৎ, আনন্দ রূপ'-এ তাঁর সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত। নিজেকে তাঁর অংশ মনে করলে কামনা, ক্রোধ, লোভ, হিংসা ও অহঙ্কারের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
বিনিবৃত্তকামাঃ
যে তার সমস্ত কামকে জয় করেছে।
দ্বন্দ্বৈর্বিমুক্তাঃ
সমস্ত দ্বৈততা থেকে মুক্ত - বিপরীত তত্ত্ব যেমন ভাল-মন্দ; লাভ-ক্ষতি; সুখ-দুঃখ; আনন্দ ও বেদনা; ধর্ম ও অধর্ম, ইত্যাদি।
অবিচল চেষ্টার দ্বারা যার এই সকল গুণ বিকশিত হয়, সে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সফল হয়, পরম সত্ত্বাকে প্রাপ্ত করে এবং তাঁর শাশ্বত ধামে প্রবেশ করে।
এই শ্লোকে যোগেশ্বর ভগবান বলেছেন সংসারবৃক্ষের শিকড়ের যে মূল, সেই পরমাত্মার কাছে আত্মসমর্পণ কি করে করতে হয়।
তাঁকে পেতে যা যা গুণ প্রয়োজন -
মন ও ইন্দ্রিয়কে বশ করার জন্য অভ্যাস করে যেতে হবে।
নির্মানমোহা
অহংকার ও মোহ থেকে মুক্ত। প্রথম ধাপ অজ্ঞতা থেকে উৎপন্ন অহংকারকে ত্যাগ করা। জীবাত্মার ভ্রম হয় যে সেই সব ধন সম্পত্তির মালিক, এই ভেবে আরও ধন অর্জন করতে চায়।
তাদের মনে অহংকারের আচ্ছাদন পড়ে যায় , এবং তারা ভাবে সবই তাদের আমোদের জন্য। তারা ভগবানকে সব কিছুর অধীশ্বর বলে মানেনা । তার তাঁর ইচ্ছায় সমর্পণও করতে পারে না।
জিতসঙ্গদোষা
'আমি' ও 'আমার' ভাব যখন কমে আসে, তখনই অন্বেষক তার আসক্তি খুঁজে তা দূর করতে পারে।
অধ্যাত্মনিত্যা
সর্বদা ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা অনুশীলন করা এবং 'সৎ, চিৎ, আনন্দ রূপ'-এ তাঁর সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত। নিজেকে তাঁর অংশ মনে করলে কামনা, ক্রোধ, লোভ, হিংসা ও অহঙ্কারের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
বিনিবৃত্তকামাঃ
যে তার সমস্ত কামকে জয় করেছে।
দ্বন্দ্বৈর্বিমুক্তাঃ
সমস্ত দ্বৈততা থেকে মুক্ত - বিপরীত তত্ত্ব যেমন ভাল-মন্দ; লাভ-ক্ষতি; সুখ-দুঃখ; আনন্দ ও বেদনা; ধর্ম ও অধর্ম, ইত্যাদি।
অবিচল চেষ্টার দ্বারা যার এই সকল গুণ বিকশিত হয়, সে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সফল হয়, পরম সত্ত্বাকে প্রাপ্ত করে এবং তাঁর শাশ্বত ধামে প্রবেশ করে।
ন তদ্ভাসয়তে সূর্যো, ন শশাঙ্কো ন পাবকঃ
য়দ্গত্বা ন নিবর্তন্তে, তদ্ধাম পরমং(ম্) মম॥6॥
সেই পরমপদকে সূর্য, চন্দ্র বা অগ্নি প্রকাশিত করতে পারে না এবং যাকে প্রাপ্ত হলে জীব আর এই সংসারে ফিরে আসে না, সেইটিই আমার পরম ধাম।
পরম ধাম: পরমাত্মার চির আবাস
আত্মা পরমাত্মার একটি অংশ। আত্মার লক্ষ্য পরম ধামে পৌঁছে, পরমাত্মায় বিলীন হওয়া। আর এই সংসারে না ফেরা।
আত্মা পরমাত্মার একটি অংশ। আত্মার লক্ষ্য পরম ধামে পৌঁছে, পরমাত্মায় বিলীন হওয়া। আর এই সংসারে না ফেরা।
এই পরম ধাম বর্ণিত হয়েছে নিজ আলোয় আলোকিত হিসেবে, সূর্য চন্দ্র ও অগ্নি ছাড়াই। সেই উৎসের নাম চেতন তত্ত্ব।
উপনিষদেও পরম ধামের বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে -
কঠোপনিষদের ২য় অধ্যায়ের পঞ্চদশতম শ্লোক বা মুণ্ডকোপনিষদের ২য় অধ্যায়ের একাদশতম শ্লোক অনুযায়ী -
न तत्र सूर्यो भाति न चन्द्रतारकं नेमा विद्युतो भान्ति कुतोऽयमग्निः।
तमेव भान्तमनुभाति सर्वं तस्य भासा सर्वमिदं विभाति ॥
तमेव भान्तमनुभाति सर्वं तस्य भासा सर्वमिदं विभाति ॥
যদি এই সম্পর্ক, যা সব দুঃখের কারণ, ত্যাগ করা যায় তাহলে মানুষ আর জন্মমৃত্যুর চক্রে, সংসারের চক্রে পড়বে না। এটাই মোক্ষ।
এটাই ঈশ্বরের ধাম, আত্মোপলব্ধি স্থান, মোক্ষ ধাম। এটা যার জ্ঞাত, সে বলতে পারে -
অহম্ ব্রহ্মাস্মি (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১.৪.১০, যজুর বেদ)
সেই অবস্থায় পৌঁছে মোক্ষপ্রাপ্ত ব্যক্তি আর অজ্ঞতার স্থিতিতে ফিরে আসে না। শরীর, মন, বুদ্ধি ও সংসারের সাথে কোনো মোহ বাঁধন তৈরী হয় না।
দ্বৈত্ব, বিপরীত তত্ত্ব, দ্বন্দ্ব সবই এই জগৎ। মোক্ষপ্রাপ্ত মানুষকে সুখদুঃখ, আনন্দ-যন্ত্রণা, শত্রু-মিত্র কিছুই ভোলাতে পারে না।
এই স্থিতিই মোক্ষ। একে সৎ-চিৎ-আনন্দ (শান্তি, জ্ঞান ও চিরন্তনতায় পূর্ণ) বলা হয়।
মমৈবাংশো জীবলোকে, জীবভূতঃ(স্) সনাতনঃ
মনঃ(ষ্) ষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি, প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি॥7॥
এই জগতে আমারই সনাতন অংশ জীবরূপে অবস্থিত; কিন্তু সে প্রকৃতিতে অবস্থিত হয়ে মন ও পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে আকর্ষিত করে (নিজের বলে মেনে নেয়)।
জীবাত্মা, পরমাত্মা এবং সংসারের মধ্যে সম্পর্ক
পূর্ববর্তী শ্লোকে যোগেশ্বর (শ্রীভগবান) বুঝিয়েছিলেন যে, আত্মতত্ত্বে নিষ্ঠাবান সংসারী জীব যারা শ্রীভগবানের অব্যয়যোগ তথা তত্ত্বত তাঁকে জেনেছেন এবং তাঁর পরমধামে গমন করেছেন সেই সাধকগণ এই পার্থিব জগতে কখনও প্রত্যাবর্তন করেন না।আর, এই শ্লোকে বলা হচ্ছে যারা জড় জগতে অর্থাৎ এই সংসারে অবস্থান করছেন তারাও পরমাত্মারই অংশ।
আমাদের ধর্মগ্রন্থের শব্দাবলী বোঝার সময় একজনকে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।
উদাহরণ
তাঁর পরমধামকে (বাসস্থানকে) সনাতন হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে অর্থাৎ যা চিরন্তন এবং যা’র উৎস অজানা; যদিও যা পুরাতন হয়, তা বহু প্রাচীন হলেও তার উৎস জানা থাকে।
ভগবান বলেছেন যে জীবাত্মা তাঁরই অংশ। অজ্ঞতার কারণে সে (জীবাত্মা) নিজেকে প্রকৃতির সাথে আবদ্ধ বলে মনে করে। প্রকৃতির সাথে পরিচয়ের মাধ্যমেই সে পঞ্চেন্দ্রিয় এবং মনকে বিকশিত করে।
জীব তার প্রকৃত স্বরূপ যা অসীম, এ সম্পর্কে অবিদিত থাকার জন্য তার সীমাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে স্বার্থপর আশা ও আকাঙ্ক্ষা লালন করে। সেই কারণেই তার প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ এবং সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতে হয়। প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় উপায়গুলি হলো মন এবং পঞ্চেন্দ্রিয়। অতএব, জীবাত্মা প্রকৃতির এই মন সহ ছয়টি ইন্দ্রিয়কে নিজের দিকে আকর্ষণ করে বা টানে।
প্রকৃতির সাথে তার পরিচয়ের কারণে, জীবাত্মাকে কর্তা বলা হয়—যিনি ভোগ করেন। যখন ইন্দ্রিয় ও মনের এই সীমাবদ্ধ ক্ষমতাগুলি দূর হয়ে যায়, তখন জীবাত্মা পরমাত্মার সাথে এক হয়ে যায়।
শরীরং(য়্ঁ) য়দবাপ্নোতি, য়চ্চাপ্যুৎক্রামতীশ্বরঃ।
গৃহীত্বৈতানি সংয়াতি, বায়ুর্গন্ধানিবাশয়াৎ॥15.8॥
বায়ু যেমন গন্ধের স্থান থেকে গন্ধ গ্রহণ করে নিয়ে যায়, তেমনই শরীরের অধিপতি জীবাত্মাও একটি দেহ পরিত্যাগ করার কালে মন সহ ইন্দ্রিয়াদিকে সঙ্গে নিয়ে অন্য দেহকে আশ্রয় করে।
জীবাত্মার স্বরূপ
আত্মার গতিপথ নিয়ে এই শ্লোকে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের বাইশতম শ্লোকে ভগবান আত্মার আর শরীরের প্রকৃতির কথা বলেন -
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি ।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ॥২.২২॥
নরগণ যে প্রকারে জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র ধারণ করে, আত্মাও শরীরের মৃত্যুতে জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর গ্রহণ করে।পরমেশ্বর আত্মার স্বরূপ আর প্রারব্ধ (কর্ম ও কর্মফল) বর্ণনা করেছেন। আত্মা শুদ্ধ, লৌকিক গুণে প্রভাবিত হয় না। আত্মা শরীর ত্যাগ করলে নতুন শরীর পায়।
আত্মাকে লৌকিক বুদ্ধি দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়, কারণ পরমাত্মা অলৌকিক বুদ্ধি ব্যবহার করেছেন জীবাত্মাকে গড়তে। আত্মার যখন দেহান্তর হয় তখন আত্মা শুধু কর্মফল নিয়ে যায়, আত্মার কর্মের প্রতি কোনো আসক্তি থাকে না। যেমন হাওয়া ফুলের সুবাস বয়ে নিয়ে যায়, কিন্তু সুবাসের প্রতি তার কোনো আসক্তি নেই।নবম শ্লোক থেকে পরমাত্মার প্রকৃতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং কিভাবে তা স্থূল জগতের সাথে সুক্ষ্ম জগৎকে সংযুক্ত করেছে সেই তথ্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমরা পরের বিবেচনে এই নিয়ে আলোচনা করবো।
হরি নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে এই সুন্দর বিবেচনটি সমাপন হলো ।