विवेचन सारांश
মোহ বন্ধনে আবদ্ধ অর্জুন
প্রার্থনা, দীপ প্রজ্জ্বলন, মা সরস্বতী, ভগবান বেদব্যাস জি, জ্ঞানেশ্বর মহারাজ, স্বামী গোবিন্দ দেব গিরি জি মহারাজের চরণে প্রণাম করে আজকের বিবেচন সত্রের শুভারম্ভ হয়।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা একটি অনন্য গ্রন্থ যা পাঁচ হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রের সমরাঙ্গনে শ্রী ভগবানের মুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছিল। এই গ্রন্থটি আজও আমাদের মার্গ প্রদর্শন করে। আমরা সর্বদা নিজের জীবনে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে চাই ও কল্যাণ কামনা করি। এই অতুলনীয় গ্রন্থটি আমাদের জীবনে কল্যাণের পথ প্রশস্ত করে। মানব জীবনের কল্যাণ পরমাত্ম তত্ত্ব প্রাপ্তির মাধ্যমেই সম্ভব। জীব, জগৎ ও জগদীশ্বরের পারস্পরিক সম্পর্ক কী? এই সৃষ্টিতে আমার কি ভূমিকা? যদিও মানুষ নিজের জীবনে একাধিক ভূমিকা পালন করে থাকে, কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক ভূমিকাটি বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি কি ভাবে নেবে ?
কিভাবে আমি আমার জীবনকে ঈশ্বরের দিকে পরিচালিত করব যাতে আমার জাগতিক উন্নতিও অব্যাহত থাকে? ধর্মের রথের দুটি চাকা আছে। একটি অভ্যুদয় (জাগতিক উন্নতি) এবং অন্যটি নিঃশ্রেয়স (মোক্ষ লাভ)। জীবনে সুখ-সম্পত্তির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক কল্যাণও হোক। জাগতিক সুখের পিছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের এটা কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আমরা এই দেহের মাধ্যমেই পরমাত্মাকে প্রাপ্ত করতে পারি। সর্বদা নৈতিক আচরণ করা উচিত। নীতিশাস্ত্র কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। শ্রী গুলাবরাও জী মহারাজ বলেছিলেন যে একদিন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সমগ্র বিশ্বের ধর্মগ্রন্থ হয়ে উঠবে এবং সেই দিনটি খুব শীঘ্রই আসবে, এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রতিটি মানুষের কর্মক্ষেত্র হলো তার জীবনের কুরুক্ষেত্র, যেখানে ভিন্ন-ভিন্ন ধারণার সংঘাত ঘটতে থাকে। দুর্যোধন, দুশাসন, পাণ্ডবদের অস্তিত্ব শুধুমাত্র পাঁচ হাজার বছর আগে ছিল না, তারা আজও আমাদের মধ্যেই বাস করেন। বিকারগ্রস্থ প্রবৃত্তি কৌরব সদৃশ এবং দৈবী সম্পদে পরিপূর্ণ প্রবৃত্তি হলো পাণ্ডব সম। এই জগতে প্রতিনিয়ত ভালো এবং মন্দের লড়াই চলছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের কাছে এগারোটি অক্ষৌহিণী সেনা ছিল এবং পাণ্ডবদের কাছে সাতটি অক্ষৌহিণী সেনা ছিল। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার বর্ণনা করার সময় তুকারাম মহারাজ বলেছিলেন-
"रात्री दिवस आम्हां युद्धाचा प्रसंग ।
अंतरबाह्य जग आणि मन।।१।।
দিন-রাত শুধুমাত্র যুদ্ধের প্রসঙ্গ চলতে থাকে। মনের অভ্যন্তরে ও বাহিরে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলছে।
স্বামী বিবেকানন্দ জি বলেছিলেন যে এই জগতে ভাল এবং মন্দ উভয়ই বিদ্যমান, যতক্ষণ এই দুটির মধ্যে ভারসাম্য থাকবে ততক্ষণ এই সৃষ্টি অটুট থাকবে। ভালোর ওপর যদি মন্দ বিজয় প্রাপ্ত করে নেয়, তবে এই সৃষ্টির ধ্বংস নিশ্চিত। অন্যদিকে যদি মন্দের উপর ভালো বিজয় প্রাপ্ত করে নেয়, তাহলে এই সমগ্র সৃষ্টি ঈশ্বরে বিলীন হয়ে যাবে। অতএব, যতক্ষণ উভয় প্রবৃত্তির মধ্যে ভারসাম্য থাকবে, ততক্ষণ এই সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকবে। মানুষের উচিত তার ভুল প্রবৃত্তি ও চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ভালো প্রবৃত্তি ও চিন্তার দিকে অগ্রসর হওয়া।
গুরুদেব বলেছেন যে আপনি যদি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বুঝতে চান তবে আপনার জীবনকে উন্নতির পথে চালিত করে যেতে হবে। আপনি যদি ভগবানের মনে যে গীতা রয়েছে তা বুঝতে চান, তবে মহাভারতের প্রেক্ষাপটে শ্রীমদ্ভগবদগীতার অধ্যয়ন করা উচিত। এটি হলো ভাল এবং মন্দের সংঘর্ষ। মানুষের মধ্যে এই ধরনের প্রবৃত্তি, ভাবনা কিভাবে গড়ে ওঠে? পরিবেশ, সংসর্গ এবং পূর্বজন্মের সংস্কারের প্রভাবে এটি ঘটে।
এক মায়ের দুই ছেলেরও ভিন্ন-ভিন্ন প্রবৃত্তি ও প্রবণতা থাকে, এটা তাদের পূর্বজন্মের সংস্কারের ফল।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের সাথে এগারোটি অক্ষৌহিণী সেনা এবং পান্ডবদের সাথে সাতটি অক্ষৌহিণী সেনা ছিল। এটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে সেই যুদ্ধে মন্দের দিকেই অধিক লোকবল ছিল। একটি অক্ষৌহিণী সেনাবাহিনীতে একুশ হাজার আটশত সত্তরটি রথ, পঁয়ষট্টি হাজার ছয়শত দশটি ঘোড়া, এক লাখ নয় হাজার তিনশত পঞ্চাশ জন পদাতিক সৈন্য এবং একুশ হাজার আটশত সত্তরটি হাতির সমন্বয় ছিল। অর্থাৎ একটি অক্ষৌহিনী বাহিনীতে মোট সংখ্যা দুই লাখ আট হাজার সাতশত ছিল।
কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে উভয় সেনাই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। দুর্যোধন পিতামহ ভীষ্মকে পরোক্ষভাবে বিদ্রুপ করে প্রথমে গুরু দ্রোণের কাছে গেলেন, পিতামহ ভীষ্ম যিনি কৌরবদের সেনাপতি ছিলেন, তিনি দুর্যোধনের মনের চঞ্চলতা বুঝতে পেরে শঙ্খনাদ করলেন। পিতামহ ভীষ্মের শঙ্খ বাজানোর সাথে সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে একযোগে অনেকপ্রকারের রণভেরী এবং রণবাদ্য বাজতে শুরু করে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষণ তীব্র ধ্বনির সৃষ্টি হলো।
অত্যন্ত ভীষণ ধ্বনির সাথে আমাদের নর এবং নারায়ণ সেখানে প্রকট হলেন, অর্জুন এলেন দিব্য রথে চড়ে এবং স্বয়ং ভগবান নারায়ণ তাঁর সারথি রূপে সেখানে উপস্থিত হলেন।
যখন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তখন অর্জুন ও দুর্যোধন, উভয়েই শ্রী কৃষ্ণের কাছে সাহায্য চাইতে গেলেন। অর্জুন কৃষ্ণের পায়ের দিকে বসলেন আর দুর্যোধন মাথার দিকে বসলেন। কৃষ্ণ অর্জুনকে প্রথম সুযোগ দিয়ে তাকে দুটি বিকল্প দিলেন। ভগবান কৃষ্ণ বললেন- একদিকে আমি থাকবো কিন্তু নিরস্ত্র, শস্ত্রও তুলব না এবং অন্যদিকে আমার নারায়ণী সেনা থাকবে, তুমি সিদ্ধান্ত নাও। অর্জুন অবিলম্বে ভগবান কৃষ্ণকে বেছে নিলেন। অর্জুন বললেন আমি এই যুদ্ধে লড়তে সক্ষম, আমিই যুদ্ধ করব কিন্তু আপনি আমার সাথে থাকুন। সেইজন্যেই ভগবান অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন। চারটি সাদা ঘোড়া দ্বারা টানা একটি উত্তম রথে বসে অর্জুন এবং মাধব নিজ নিজ শঙ্খনাদ করলেন।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা একটি অনন্য গ্রন্থ যা পাঁচ হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রের সমরাঙ্গনে শ্রী ভগবানের মুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছিল। এই গ্রন্থটি আজও আমাদের মার্গ প্রদর্শন করে। আমরা সর্বদা নিজের জীবনে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে চাই ও কল্যাণ কামনা করি। এই অতুলনীয় গ্রন্থটি আমাদের জীবনে কল্যাণের পথ প্রশস্ত করে। মানব জীবনের কল্যাণ পরমাত্ম তত্ত্ব প্রাপ্তির মাধ্যমেই সম্ভব। জীব, জগৎ ও জগদীশ্বরের পারস্পরিক সম্পর্ক কী? এই সৃষ্টিতে আমার কি ভূমিকা? যদিও মানুষ নিজের জীবনে একাধিক ভূমিকা পালন করে থাকে, কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক ভূমিকাটি বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি কি ভাবে নেবে ?
কিভাবে আমি আমার জীবনকে ঈশ্বরের দিকে পরিচালিত করব যাতে আমার জাগতিক উন্নতিও অব্যাহত থাকে? ধর্মের রথের দুটি চাকা আছে। একটি অভ্যুদয় (জাগতিক উন্নতি) এবং অন্যটি নিঃশ্রেয়স (মোক্ষ লাভ)। জীবনে সুখ-সম্পত্তির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক কল্যাণও হোক। জাগতিক সুখের পিছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের এটা কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আমরা এই দেহের মাধ্যমেই পরমাত্মাকে প্রাপ্ত করতে পারি। সর্বদা নৈতিক আচরণ করা উচিত। নীতিশাস্ত্র কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। শ্রী গুলাবরাও জী মহারাজ বলেছিলেন যে একদিন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সমগ্র বিশ্বের ধর্মগ্রন্থ হয়ে উঠবে এবং সেই দিনটি খুব শীঘ্রই আসবে, এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রতিটি মানুষের কর্মক্ষেত্র হলো তার জীবনের কুরুক্ষেত্র, যেখানে ভিন্ন-ভিন্ন ধারণার সংঘাত ঘটতে থাকে। দুর্যোধন, দুশাসন, পাণ্ডবদের অস্তিত্ব শুধুমাত্র পাঁচ হাজার বছর আগে ছিল না, তারা আজও আমাদের মধ্যেই বাস করেন। বিকারগ্রস্থ প্রবৃত্তি কৌরব সদৃশ এবং দৈবী সম্পদে পরিপূর্ণ প্রবৃত্তি হলো পাণ্ডব সম। এই জগতে প্রতিনিয়ত ভালো এবং মন্দের লড়াই চলছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের কাছে এগারোটি অক্ষৌহিণী সেনা ছিল এবং পাণ্ডবদের কাছে সাতটি অক্ষৌহিণী সেনা ছিল। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার বর্ণনা করার সময় তুকারাম মহারাজ বলেছিলেন-
"रात्री दिवस आम्हां युद्धाचा प्रसंग ।
अंतरबाह्य जग आणि मन।।१।।
দিন-রাত শুধুমাত্র যুদ্ধের প্রসঙ্গ চলতে থাকে। মনের অভ্যন্তরে ও বাহিরে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলছে।
স্বামী বিবেকানন্দ জি বলেছিলেন যে এই জগতে ভাল এবং মন্দ উভয়ই বিদ্যমান, যতক্ষণ এই দুটির মধ্যে ভারসাম্য থাকবে ততক্ষণ এই সৃষ্টি অটুট থাকবে। ভালোর ওপর যদি মন্দ বিজয় প্রাপ্ত করে নেয়, তবে এই সৃষ্টির ধ্বংস নিশ্চিত। অন্যদিকে যদি মন্দের উপর ভালো বিজয় প্রাপ্ত করে নেয়, তাহলে এই সমগ্র সৃষ্টি ঈশ্বরে বিলীন হয়ে যাবে। অতএব, যতক্ষণ উভয় প্রবৃত্তির মধ্যে ভারসাম্য থাকবে, ততক্ষণ এই সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকবে। মানুষের উচিত তার ভুল প্রবৃত্তি ও চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ভালো প্রবৃত্তি ও চিন্তার দিকে অগ্রসর হওয়া।
গুরুদেব বলেছেন যে আপনি যদি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বুঝতে চান তবে আপনার জীবনকে উন্নতির পথে চালিত করে যেতে হবে। আপনি যদি ভগবানের মনে যে গীতা রয়েছে তা বুঝতে চান, তবে মহাভারতের প্রেক্ষাপটে শ্রীমদ্ভগবদগীতার অধ্যয়ন করা উচিত। এটি হলো ভাল এবং মন্দের সংঘর্ষ। মানুষের মধ্যে এই ধরনের প্রবৃত্তি, ভাবনা কিভাবে গড়ে ওঠে? পরিবেশ, সংসর্গ এবং পূর্বজন্মের সংস্কারের প্রভাবে এটি ঘটে।
এক মায়ের দুই ছেলেরও ভিন্ন-ভিন্ন প্রবৃত্তি ও প্রবণতা থাকে, এটা তাদের পূর্বজন্মের সংস্কারের ফল।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের সাথে এগারোটি অক্ষৌহিণী সেনা এবং পান্ডবদের সাথে সাতটি অক্ষৌহিণী সেনা ছিল। এটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে সেই যুদ্ধে মন্দের দিকেই অধিক লোকবল ছিল। একটি অক্ষৌহিণী সেনাবাহিনীতে একুশ হাজার আটশত সত্তরটি রথ, পঁয়ষট্টি হাজার ছয়শত দশটি ঘোড়া, এক লাখ নয় হাজার তিনশত পঞ্চাশ জন পদাতিক সৈন্য এবং একুশ হাজার আটশত সত্তরটি হাতির সমন্বয় ছিল। অর্থাৎ একটি অক্ষৌহিনী বাহিনীতে মোট সংখ্যা দুই লাখ আট হাজার সাতশত ছিল।
কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে উভয় সেনাই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। দুর্যোধন পিতামহ ভীষ্মকে পরোক্ষভাবে বিদ্রুপ করে প্রথমে গুরু দ্রোণের কাছে গেলেন, পিতামহ ভীষ্ম যিনি কৌরবদের সেনাপতি ছিলেন, তিনি দুর্যোধনের মনের চঞ্চলতা বুঝতে পেরে শঙ্খনাদ করলেন। পিতামহ ভীষ্মের শঙ্খ বাজানোর সাথে সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে একযোগে অনেকপ্রকারের রণভেরী এবং রণবাদ্য বাজতে শুরু করে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষণ তীব্র ধ্বনির সৃষ্টি হলো।
অত্যন্ত ভীষণ ধ্বনির সাথে আমাদের নর এবং নারায়ণ সেখানে প্রকট হলেন, অর্জুন এলেন দিব্য রথে চড়ে এবং স্বয়ং ভগবান নারায়ণ তাঁর সারথি রূপে সেখানে উপস্থিত হলেন।
যখন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তখন অর্জুন ও দুর্যোধন, উভয়েই শ্রী কৃষ্ণের কাছে সাহায্য চাইতে গেলেন। অর্জুন কৃষ্ণের পায়ের দিকে বসলেন আর দুর্যোধন মাথার দিকে বসলেন। কৃষ্ণ অর্জুনকে প্রথম সুযোগ দিয়ে তাকে দুটি বিকল্প দিলেন। ভগবান কৃষ্ণ বললেন- একদিকে আমি থাকবো কিন্তু নিরস্ত্র, শস্ত্রও তুলব না এবং অন্যদিকে আমার নারায়ণী সেনা থাকবে, তুমি সিদ্ধান্ত নাও। অর্জুন অবিলম্বে ভগবান কৃষ্ণকে বেছে নিলেন। অর্জুন বললেন আমি এই যুদ্ধে লড়তে সক্ষম, আমিই যুদ্ধ করব কিন্তু আপনি আমার সাথে থাকুন। সেইজন্যেই ভগবান অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন। চারটি সাদা ঘোড়া দ্বারা টানা একটি উত্তম রথে বসে অর্জুন এবং মাধব নিজ নিজ শঙ্খনাদ করলেন।
1.15
পাঞ্চজন্যং (ম্) হৃষীকেশো, দেবদত্তং(ন্) ধনঞ্জয়ঃ
পৌণ্ড্রং(ন্) দধ্মৌ মহাশঙ্খং(ম্), ভীমকর্মা বৃকোদর:॥15॥
অন্তর্যামী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পাঞ্চজন্য এবং ধনঞ্জয় অর্জুন দেবদত্ত নামক শঙ্খ বাজালেন এবং ভীতি উৎপাদক কর্মকারী বৃকোদর ভীম পৌণ্ড্র নামক মহাশঙ্খ বাজালেন৷
বিবেচন: হৃষিকেশ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের অধিপতি (কর্মেন্দ্রিয় ও জ্ঞানেন্দ্রিয়)। ইন্দ্রিয়ের অধিপতি, যে তাদের নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারণে এই ইন্দ্রিয়গুলি নিজের কার্য করে। সেই হৃষিকেশ তাঁর পাঞ্চজন্য নামক শঙ্খ বাজালেন। অর্জুন যিনি ধনঞ্জয় নামেও পরিচিত কারণ তিনি রাজসূয় যজ্ঞে ধন সংগ্রহ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। অর্জুনের শঙ্খের নাম - দেবদত্ত। তিনি তার শঙ্খ বাজালেন। বৃকোদর অর্থাৎ ভীম, যিনি অত্যন্ত প্রচণ্ড কর্ম সম্পাদনকারী এবং ভোজনপ্রিয়। আমাদের পেটের (উদর) ভেতর একটি অগ্নি আছে, যাকে জঠরাগ্নি বলে। ভীমেরও পেটে বৃক নামক অগ্নি ছিল যার কারণে তার পেটে সর্বদা খিদের প্রাবল্য থাকতো অর্থাৎ তিনি সবসময় ক্ষুধার্ত থাকতেন। এই কারণে ভীমসেন বৃকোদর নামেও পরিচিত ছিলেন, তিনি তার পৌণ্ড্র নামক শঙ্খ বাজিয়েছিলেন।
অনন্তবিজয়ং (ম্) রাজা, কুন্তীপুত্রো যুধিষ্ঠিরঃ
নকুল: (স্) সহদেবশ্চ, সুঘোষমণিপুষ্পকৌ॥16॥
কুম্ভীপুত্র রাজা যুধিষ্ঠির অনন্তবিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন এবং নকুল ও সহদেব সুঘোষ এবং মণিপুষ্পক নামক শঙ্খ বাজালেন ৷
বিবেচন: কুন্তীর পুত্র রাজা যুধিষ্ঠির অনন্তবিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন। নকুল এবং সহদেব ছিলেন মাতা মাদ্রীর পুত্র, যিনি মহারাজ পাণ্ডুর মৃত্যুর পর তার সাথে সহমরণে গিয়েছিলেন। মা কুন্তী সকলের লালনপালন করেছিলেন। সহদেব মাতা কুন্তীর প্রিয় পুত্র ছিলেন। নকুল সুঘোষ নামক শঙ্খ বাজালেন এবং সহদেব মণিপুষ্পক নামক শঙ্খ বাজালেন। এরপর সব রাজারা তাদের শঙ্খ বাজালেন।
কাশ্যশ্চ পরমেষ্বাসঃ (শ্), শিখণ্ডী চ মহারথঃ
ধৃষ্টদ্যুম্নো বিরাটশ্চ, সাত্যকিশ্চাপরাজিতঃ॥17॥
হে রাজন্ ! মহাধনুর্ধর কাশীরাজ, মহারথী শিখণ্ডী, ধৃষ্টদ্যুম্ন, রাজা বিরাট, অজেয় সাত্যকি ৷
দ্রুপদো দ্রৌপদেয়াশ্চ, সর্বশঃ(ফ্) পৃথিবীপতে
সৌভদ্রশ্চ মহাবাহু:(শ্), শঙ্খান্দধ্মুঃ(ফ্) পৃথক্ পৃথক্॥18॥
রাজা দ্ৰুপদ, দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র এবং মহাবীর অভিমন্যু—এঁরা সকলেই পৃথক পৃথক ভাবে নিজ নিজ শঙ্খবাদন করলেন।
বিবেচন: কাশী শহরের রাজা কাশীরাজ, যিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর ছিলেন এবং মহারথী শিখণ্ডী, যিনি পূর্ব জন্মে রাজকুমারী অম্বা ছিলেন। যিনি পিতামহ ভীষ্মকে বধ করতে এ জীবনে শিখণ্ডীর রূপ ধারণ করেছিলেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন, যিনি দ্রৌপদীর ভ্রাতা ছিলেন এবং পাণ্ডবদের সেনাপতি, রাজা বিরাট, যার রাজ্যে পাণ্ডবগণ ছদ্মবেশে অজ্ঞাতবাস করেছিলেন, সাত্যকি, যিনি অর্জুনের শিষ্য ছিলেন, যাকে অর্জুন ধনুর্বিদ্যা শিখিয়েছিলেন, দ্রৌপদীর পিতা রাজা দ্রুপদ এবং দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র - প্রতিবিন্ধ্য, সূতসোম, শ্রুতকর্মা, শতানীক, শ্রুতসেন এবং অর্জুন ও সুভদ্রার পুত্র অভিমন্যুও নিজ নিজ শঙ্খ বাজালেন। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবল ধ্বনি (আওয়াজ) মুখরিত হয়ে উঠলো। এমন আওয়াজ শুনে বীর এবং সাহসী যোদ্ধাগণের মন বীরত্বে ভরে গেল আর যারা কাপুরুষ তাদের মন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠলো।
স ঘোষো ধার্তরাষ্ট্রাণাং (ম্), হৃদয়ানি ব্যদারয়ত্
নভশ্চ পৃথিবীং(ঞ) চৈব, তুমুলো ব্যনুনাদায়ন্ ॥19॥
সেই তুমুল শব্দ আকাশ ও পৃথিবীকে কম্পায়মান করে অর্থাৎ আপনার পক্ষে যুদ্ধে যোগদানকারীদের হৃদয় বিদীর্ণ করল।
বিবেচন: সেই ভয়ঙ্কর শব্দে সমগ্র পৃথিবী ও আকাশ কেঁপে উঠল। এই ভয়ানক শব্দে কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং এই কম্পন সমস্ত আকাশে ছড়িয়ে পড়ল। এই কম্পন সমগ্র বায়ুমণ্ডলে ব্যাপ্ত হয়ে পড়লো। এই ধ্বনি শুনে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র ও কৌরব সেনাদের হৃদয় ভয়ে কেঁপে উঠল। যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুন কেন হতোদ্যম এবং ভগ্নোৎসাহ হয়ে পড়লেন? মানুষ কেন মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের দ্বারা চালিত হয়?
অথ ব্যবস্থিতান্ দৃষ্ট্বা, ধার্তরাষ্ট্রান্কপিধ্বজ:
প্রবৃত্তে শস্ত্রসম্পাতে, ধনুরুদ্যম্য পাণ্ডবঃ॥20॥
হে রাজন ! এরপর অস্ত্র নিক্ষেপের সময় অর্থাৎ যুদ্ধারম্ভের প্রাক্কালে কপিধ্বজ রথারূঢ় অর্জুন যুদ্ধোদ্যত ধৃতরাষ্ট্র-পরিজনদের দেখে ধনুক উত্তোলন করলেন।
হৃষীকেশং(ন্) তদা বাক্যম্, ইদমাহ মহীপতে
অর্জুন উবাচ
সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে, রথং (ম্) স্থাপয় মেsচ্যুত ॥21॥
অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বললেন-হে অচ্যুত ! আমার রথটিকে উভয় সেনার মধ্যে স্থাপন করুন।
বিবেচন: সঞ্জয় মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে মহীপতে বলে সম্বোধন করছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন যে হনুমানজী স্বয়ং অর্জুনের রথের ধ্বজায়(পতাকা) বিরাজমান রয়েছেন। পাণ্ডবদের ব্যূহ রচনা সম্পর্কে বর্ণনা করার সময়, সঞ্জয় আরও বলেছিলেন যে অর্জুন তার ধনুক-বাণগুলি তুলে নিয়েছেন। সঞ্জয়, যিনি মহারাজা ধৃতরাষ্ট্রের সারথি ছিলেন, তাকে স্বয়ং ভগবান বেদ ব্যাস জী এই দিব্যদৃষ্টি প্রদান করেছিলেন। এই দিব্যদৃষ্টির কারণেই সঞ্জয় যুদ্ধক্ষেত্রের সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ দেখে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে বর্ণনা করছিলেন।
অর্জুন তীর-ধনুক তুলে ইন্দ্রিয়ের অধিপতি হৃষিকেশ অর্থাৎ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ মধুসূদন, যিনি তার সারথি ছিলেন, তাঁকে বললেন, হে অচ্যুত! (অচ্যুত অর্থাৎ যিনি সর্বাবস্থায় অবিচল থাকেন) আমার রথ উভয় পক্ষের সেনাবাহিনীর মাঝখানে নিয়ে চলুন। যুধিষ্ঠির, অর্জুন ও নকুল এই যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তারা এই যুদ্ধের বিরোধ করেছিলেন, ভীম নিরপেক্ষ ছিলেন, শুধুমাত্র সহদেব এই যুদ্ধ করার পক্ষে ছিলেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধপ্রাঙ্গণে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার উপদেশ মাত্র পয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে দিয়েছিলেন, যখন অর্জুন নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তার ধনুক এবং তীর নীচে নামিয়ে রেখে দিয়েছিলেন। সেই সময় ভগবান অর্জুনের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করার জন্য তাকে এই জ্ঞান প্রদান করেছিলেন।
ভগবান শ্রী কৃষ্ণ যে ভূমিকাই পালন করতেন, তিনি তা সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে পালন করতেন। সে বনে গরু চরানোই হোক, কংসকে বধ করাই হোক, সতেরোটি যুদ্ধে মহারথীর ন্যায় শত্রুদের পরাস্ত করাই হোক, রাজসূয়যজ্ঞে পাণ্ডবদের পক্ষ থেকে এঁটো থালা তোলাই হোক বা অতিথিদের পা ধুয়ে দেওয়াই হোক। যে কাজের ভারই ভগবানকে দেওয়া হত, ভগবান তা নিবিষ্ট ভাবে সেই কাজটি করতেন। এই সময় যুদ্ধক্ষেত্রে ভগবান অর্জুনের সারথির ভূমিকায় ছিলেন। সন্ধ্যাকালে যখন সন্ধ্যাবন্দনা হতো, সেই সময় তিনি ঘোড়ার সেবা করতেন। ভগবান তার ঘোড়াগুলিকে নদীর তীরে নিয়ে যেতেন, তাদের জল দিতেন, সবুজ ঘাস খাওয়াতেন এবং তাদের ক্ষতগুলিতে ওষুধ প্রয়োগ করতেন এবং তাদের পা টিপে দিতেন কারণ এই সময় ভগবান সারথির ভূমিকা পালন করছিলেন। কৌরবদের সেনাপতি ভীষ্ম পিতামহ যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধের নিয়মকানুন সম্পূর্ণরূপে মেনে চলা হতো।
অর্জুন তীর-ধনুক তুলে ইন্দ্রিয়ের অধিপতি হৃষিকেশ অর্থাৎ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ মধুসূদন, যিনি তার সারথি ছিলেন, তাঁকে বললেন, হে অচ্যুত! (অচ্যুত অর্থাৎ যিনি সর্বাবস্থায় অবিচল থাকেন) আমার রথ উভয় পক্ষের সেনাবাহিনীর মাঝখানে নিয়ে চলুন। যুধিষ্ঠির, অর্জুন ও নকুল এই যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তারা এই যুদ্ধের বিরোধ করেছিলেন, ভীম নিরপেক্ষ ছিলেন, শুধুমাত্র সহদেব এই যুদ্ধ করার পক্ষে ছিলেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধপ্রাঙ্গণে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার উপদেশ মাত্র পয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে দিয়েছিলেন, যখন অর্জুন নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তার ধনুক এবং তীর নীচে নামিয়ে রেখে দিয়েছিলেন। সেই সময় ভগবান অর্জুনের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করার জন্য তাকে এই জ্ঞান প্রদান করেছিলেন।
ভগবান শ্রী কৃষ্ণ যে ভূমিকাই পালন করতেন, তিনি তা সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে পালন করতেন। সে বনে গরু চরানোই হোক, কংসকে বধ করাই হোক, সতেরোটি যুদ্ধে মহারথীর ন্যায় শত্রুদের পরাস্ত করাই হোক, রাজসূয়যজ্ঞে পাণ্ডবদের পক্ষ থেকে এঁটো থালা তোলাই হোক বা অতিথিদের পা ধুয়ে দেওয়াই হোক। যে কাজের ভারই ভগবানকে দেওয়া হত, ভগবান তা নিবিষ্ট ভাবে সেই কাজটি করতেন। এই সময় যুদ্ধক্ষেত্রে ভগবান অর্জুনের সারথির ভূমিকায় ছিলেন। সন্ধ্যাকালে যখন সন্ধ্যাবন্দনা হতো, সেই সময় তিনি ঘোড়ার সেবা করতেন। ভগবান তার ঘোড়াগুলিকে নদীর তীরে নিয়ে যেতেন, তাদের জল দিতেন, সবুজ ঘাস খাওয়াতেন এবং তাদের ক্ষতগুলিতে ওষুধ প্রয়োগ করতেন এবং তাদের পা টিপে দিতেন কারণ এই সময় ভগবান সারথির ভূমিকা পালন করছিলেন। কৌরবদের সেনাপতি ভীষ্ম পিতামহ যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধের নিয়মকানুন সম্পূর্ণরূপে মেনে চলা হতো।
য়াবদেতান্নিরীক্ষেsহং (য়্ঁ), য়োদ্ধুকামানবস্থিতান্।
কৈর্ময়া সহ য়োদ্ধব্যম্, অস্মিন্ রণসমুদ্যমে॥1.22॥
যতক্ষণ না যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থিত এই যুদ্ধাভিলাষী বিপক্ষীয় যোদ্ধাদের ভালো করে দেখি যে, এই মহারণে আমাকে কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে, ততক্ষণ রথটিকে ঐভাবে রাখুন।
বিবেচন: অর্জুন বলেন, হে হৃষিকেশ! আপনি আমার রথ দুই পক্ষের সৈন্যবাহিনীর মাঝখানে নিয়ে চলুন, আমি কার সাথে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি তা নিরীক্ষণ করতে চাই। সেই সময় যুদ্ধের একটা নিয়ম ছিল। রথীর (যোদ্ধা) বিরুদ্ধে রথী, অশ্বারোহীর বিরুদ্ধে অশ্বারোহী এবং মহারথীর বিরুদ্ধে মহারথীই যুদ্ধ করতেন। অর্জুন দেখতে চেয়েছিলেন কারা সেই মহারথী (মহান যোদ্ধা), যাদের সাথে তাকে যুদ্ধ করতে হবে। যে দশ হাজার সৈন্যকে পরাজিত করতে পারে তাকে মহারথী বলা হয় এবং অর্জুন সেই মহারথীদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ মহারথী।
য়োত্স্যমানানবেক্ষেsহং (ম্), য় এতেsত্র সমাগতাঃ
ধার্তরাষ্ট্রস্য দুর্বুদ্ধে:(র্), য়ুদ্ধে প্রিয়চিকীর্ষবঃ॥23॥
দুর্বুদ্ধি দুর্যোধনের হিতাকাঙ্ক্ষী যে সকল রাজন্যবর্গ এখানে সমবেত হয়েছেন, সেই সকল যুদ্ধার্থীদের আমি দেখতে চাই।
বিবেচন: অর্জুন তার সারথি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সাথে কথোপকথনের সময় বললেন যে যারা ষড়যন্ত্র করে অন্যের রাজ্য হস্তগত করেছে, যারা পরস্ত্রীকে সভার মাঝে অপমান করেছে, সেই ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র কৌরবদের সাথে এত লোকবল দেখে আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। অর্জুন ভগবানকে বললেন, যতক্ষণ না আমি সমস্ত রথী-মহারথীদের দেখে না নিই, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার রথ এখানেই স্থিত রাখুন। অর্জুন এই দেখে আশ্চার্যান্বিত হয়ে পড়েছিলেন যে, সংসারে যে মানুষেরা ধর্মের পথে চলেন, তাদের পরাজিত করার জন্য কীভাবে লোকেরা একত্রিত হয় এবং একজোট হয়ে যায়। অর্জুন মনে মনে ভাবছিলেন, অধর্মের পথে থেকে, দ্যূতক্রীড়ার (বাজি রেখে পাশা খেলা) ছলে আমাদের রাজ্য দখল করে নিয়েছে, আমাদের বারো বছর বনবাস এবং এক বছর ছদ্মবেশে কাটাতে বাধ্য করেছে, তারপরও এরা আমাদের রাজ্যও ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেছে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করার পরও দুর্যোধন ও দুঃশাসনের সাথে এত বিশাল সেনা বাহিনী রয়েছে। এটা কি ধরনের বিপর্যয় ? মানুষ অধর্মকে সমর্থন করছে এবং ধর্মের পথকে সমর্থন করতে চায় না। অধর্মের পক্ষে এগারোটি অক্ষৌহিণী বাহিনী এবং ধর্মের পক্ষে সাতটি অক্ষৌহিণী সেনাবাহিনী রয়েছে। সবাই ভুলে গেছে যে পাণ্ডবদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
সঞ্জয় উবাচ
এবমুক্তো হৃষীকেশো, গুডাকেশেন ভারত
সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে, স্থাপয়িত্বা রথোত্তমম্ ॥24॥
সঞ্জয় বললেন—হে ধৃতরাষ্ট্র ! অর্জুন এইরূপ বলায় শ্রীকৃষ্ণ দুই পক্ষের সেনার মধ্যে রথটি স্থাপন করলেন।
ভীষ্মদ্রোণপ্রমুখতঃ(স্), সর্বেষাং(ঞ্) চ মহীক্ষিতাম্
উবাচ পার্থ পশ্যৈতান্, সমবেতান্কুরূনিতি॥25॥
শ্রীকৃষ্ণ ভীষ্ম, দ্রোণ এবং অন্যান্য রাজন্যবর্গের সামনে উত্তম রথটি স্থাপন করে বললেন, হে পার্থ ! যুদ্ধে সমবেত কৌরবদের দেখ।
বিবেচন: এখানে ভগবান অর্জুনকে গুড়াকেশ বলে সম্বোধন করেছেন, গুড়া অর্থাৎ নিদ্রা এবং যার নিদ্রার নিয়ন্ত্রণ আছে তাকে বলা হয় গুড়াকেশ। অর্জুনের নিদ্রার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল, তিনি সারা রাত জেগে ধনুর্বিদ্যা অনুশীলন করতেন। অর্জুন এখন মোহরূপী নিদ্রার আবেশে রয়েছেন, নিজের কর্তব্য ভুলে যেতে চলেছেন। ভগবান, উভয় পক্ষের সেনাবাহিনীর মাঝখানে, পিতামহ ভীষ্ম ও গুরু দ্রোণাচার্যের রথের সামনে অর্জুনের রথ স্থাপন করেন। নয়টি গাড়িতে যতগুলি অস্ত্র রাখা যায়, সেই পরিমাণ অস্ত্র-শস্ত্র অর্জুনের দিব্য রথে ছিল। ভগবান অর্জুনকে বললেন সমস্ত কৌরবদের দিকে তাকিয়ে দেখো। ভগবান অন্তর্যামী, তিনি একজন মনোবিজ্ঞানী, তিনি অর্জুনের মনের সংবেদনশীল বিষয়গুলির ব্যাপারে অবগত ছিলেন ৷
জ্ঞানেশ্বর মহারাজ, অর্জুনের মনোদশার বর্ণন করে বলেছেন যে:
मी पार्थु द्रोणाचा केला, येणें धनुर्वेदु मज दिधला।
तेणें उपकारें काय आभारैला, वधीं तयातें ॥ ३७ ॥
পৃথার পুত্র পার্থকে আচার্য দ্রোণ ধনুর্বিদ্যা শিখিয়েছিলেন। নিজের গুরুকে বধ করে কি আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো, অর্জুনের মনে এই ভাবনা জেগে ওঠে।
অর্জুন, যাকে নরোত্তম বলেও সম্বোধন করা হয়, তার পিতার মৃত্যুর পর মাতা কুন্তী তার পাঁচ পুত্রকে নিয়ে হস্তিনাপুরে চলে আসেন। পিতামহ ভীষ্ম পাণ্ডবদের পিতার ন্যায় স্নেহ করতেন। সেইজন্যেই ভগবান অর্জুনের রথ পিতামহ ভীষ্মের সামনে নিয়ে গেলেন যাতে অর্জুনের মনের সমস্ত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং অনুভূতিগুলি যেন বাইরে এসে যায়। ভগবান চাইছিলেন যে অর্জুনের মনে যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ছে তা যেন শীঘ্রই প্রকাশিত হয়ে যায় যাতে তিঁনি অর্জুনকে সেই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পারেন। ভগবান বললেন পার্থ ! দেখে নাও, কার কার সাথে তোমায় যুদ্ধ করতে হবে।
জ্ঞানেশ্বর মহারাজ, অর্জুনের মনোদশার বর্ণন করে বলেছেন যে:
मी पार्थु द्रोणाचा केला, येणें धनुर्वेदु मज दिधला।
तेणें उपकारें काय आभारैला, वधीं तयातें ॥ ३७ ॥
পৃথার পুত্র পার্থকে আচার্য দ্রোণ ধনুর্বিদ্যা শিখিয়েছিলেন। নিজের গুরুকে বধ করে কি আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো, অর্জুনের মনে এই ভাবনা জেগে ওঠে।
অর্জুন, যাকে নরোত্তম বলেও সম্বোধন করা হয়, তার পিতার মৃত্যুর পর মাতা কুন্তী তার পাঁচ পুত্রকে নিয়ে হস্তিনাপুরে চলে আসেন। পিতামহ ভীষ্ম পাণ্ডবদের পিতার ন্যায় স্নেহ করতেন। সেইজন্যেই ভগবান অর্জুনের রথ পিতামহ ভীষ্মের সামনে নিয়ে গেলেন যাতে অর্জুনের মনের সমস্ত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং অনুভূতিগুলি যেন বাইরে এসে যায়। ভগবান চাইছিলেন যে অর্জুনের মনে যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ছে তা যেন শীঘ্রই প্রকাশিত হয়ে যায় যাতে তিঁনি অর্জুনকে সেই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পারেন। ভগবান বললেন পার্থ ! দেখে নাও, কার কার সাথে তোমায় যুদ্ধ করতে হবে।
তত্রাপশ্যত্স্থিতান্পার্থঃ(ফ্), পিতৃনথ পিতামহান্
আচার্য়ান্মাতুলান্ভ্রাতৃন্, পুত্রান্পৌত্রান্সখীংস্তথা॥26॥
তখন পৃথাপুত্র অর্জুন উভয় সেনাবাহিনীতে অবস্থানকারী পিতৃব্যগণ, পিতামহগণ, আচার্যগণ, মাতুলগণ, ভ্রাতৃগণ, পুত্রগণ, পৌত্রগণ, মিত্রগণ, শ্বশুরগণ এবং সুহৃদগণকে লক্ষ্য করলেন।
শ্বশুরান্সুহৃদশ্চৈব, সেনয়োরুভয়োরপি
তান্সমীক্ষ্য স কৌন্তেয়:(স্), সর্বান্বন্ধূনবস্থিতান্॥27॥
তখন পৃথাপুত্র অর্জুন উভয় সেনাবাহিনীতে অবস্থানকারী পিতৃব্যগণ, পিতামহগণ, আচার্যগণ, মাতুলগণ, ভ্রাতৃগণ, পুত্রগণ, পৌত্রগণ, মিত্রগণ, শ্বশুরগণ এবং সুহৃদগণকে লক্ষ্য করলেন।
বিবেচন: অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে এসে দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে তার পিতৃব্য (কাকা), আচার্য, পিতামহ, মাতুল(মামা), ভ্রাতা, পুত্র, পৌত্র (নাতি), মিত্র, শ্বশুর-গৃহের স্বজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে দেখতে পেলেন। এই সব দেখে অর্জুনের মন বিষন্নতায় ভরে উঠল এবং তার কণ্ঠ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। অর্জুন উভয় সেনাবাহিনীতে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের দেখছিলেন, একটি ভীষণ সংগ্রাম হতে চলেছে। স্বজনদের দেখে অর্জুনের মন বিষাদপূর্ণ ও করুণাসিক্ত হয়ে উঠলো। বীরত্বে ভরা অর্জুনের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। অর্জুন ভগবানকে জিজ্ঞেস করলেন আমরা এ কি করতে যাচ্ছি? রাজ্য লাভের জন্য, জাগতিক সুখ প্রাপ্তির জন্য এত লোকজনকে হত্যা করে কী ভাবে সুখ ভোগ করতে পারবো ? বেদ ব্যাস জী অর্জুনের মনঃস্থিতির আরও বর্ণনা পরবর্তী শ্লোকে করেছেন।
কৃপয়া পরয়াবিষ্টো, বিষীদন্নিদমব্রবীত্
অর্জুন উওয়াচ
দৃষ্ট্বেমং স্বজনং(ঙ্) কৃষ্ণ, য়ুয়ুত্সুং (ম্) সমুপস্থিতম্ ॥28॥
অর্জুন খুবই করুণার্দ্র হয়ে বিষণ্ণ চিত্তে এই কথা বললেন। অর্জুন বললেন -আমার স্বজনদের এই রণাঙ্গনে উপস্থিত দেখে ৷
সীদন্তি মম গাত্রাণী, মুখং (ঞ্) চ পরিশুষ্যতি
বেপথুশ্চ শরীরে মে, রোমহর্ষশ্চ জায়তে ॥29॥
অর্জুন বললেন—হে কৃষ্ণ ! যুদ্ধক্ষেত্রে সমবেত এই যুদ্ধাভিলাষী স্বজনদের দেখে আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গাদি অবসন্ন হচ্ছে, মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে, শরীরে কম্পন ও রোমাঞ্চ হচ্ছে।
গাণ্ডীবং(ম্) স্রংসতে হস্তাত্, ত্বক্চৈব পরিদহ্যতে
ন চ শক্নোম্যবস্থাতুং(ম্), ভ্রমতীব চ মে মনঃ॥30॥
গাণ্ডীব ধনুক হাত থেকে পড়ে যাচ্ছে, ত্বকে খুবই জ্বালাবোধ হচ্ছে, মন যেন ঘুরছে, তাই আমার দাঁড়িয়ে থাকার সামর্থ্যও থাকছে না।
বিবেচন: স্বয়ং অর্জুন এখানে তার মনঃস্থিতি বর্ণনা করছেন। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমার পুত্রগণ এবং পাণ্ডবগণ যুদ্ধক্ষেত্রে কী করছে? কিন্তু এখানে অর্জুন সবাইকে নিজের আপনার জন মনে করছেন এবং এই ভেবেই মনঃকষ্টে ভুগছেন। অর্জুন তার পুরো পরিবারজনকেই স্নেহ করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মীয় -স্বজনদের দেখে অর্জুন বললেন, এদের সবাইকে দেখে আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল হয়ে যাচ্ছে, মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে, আমার সমস্ত শরীর থরথর কাঁপছে, আমার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আমার হাত থেকে গাণ্ডীব খসে পড়ছে ভগবান! আমার ত্বক জ্বলছে, আমার মন উদভ্রান্ত, আমার মাথা অস্থির হয়ে যাচ্ছে, আমার পা টলমল করছে। আমার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও আর নেই।
নিজের পরিবার-স্বজনদের দেখে অর্জুনের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠলো। যুদ্ধ যখন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, শান্তির দূত হয়ে যখন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ হস্তিনাপুরে গিয়েছিলেন, তখন দুর্যোধন বলেছিলেন, পাঁচটা গ্রামের কথা তো দূরের কথা, সূঁচের ডগা সমান জমিও আমি দেব না। এর পর ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের মাধ্যমে পাণ্ডবদের কাছে এই বার্তা পাঠালেন যে, তোমরা পাণ্ডুর পুত্র, তোমরা যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝবে যে যুদ্ধের ফলে কত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, আমার পুত্র এটা বুঝতে অপারগ, আমার পুত্র আমার কথার অবাধ্য, উদ্ধত, জেদী। এই যুদ্ধ হলে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হবে, বিনাশ হবে, তাই তোমরা এই যুদ্ধ করতে রাজি হয়ো না। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র বলতে চেয়েছিলেন যে তোমরা বনবাসেই থাকো, আমরা তোমাদের রাজ্য, রাজপাট কিছুই দেব না এবং অন্যদিকে পাণ্ডবদের যুদ্ধ থেকে বিরত করার চেষ্টাও করছিলেন। এইভাবে ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের মাধ্যমে পাণ্ডবদের মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তাদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা করেন। এর পরিণামস্বরূপ যুদ্ধের আগেই তিনজন পাণ্ডব -যুধিষ্ঠির, অর্জুন ও নকুল যুদ্ধের বিরুদ্ধে মত দেন, ভীম নিরপেক্ষ থাকেন এবং একমাত্র সহদেব যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। ভীমসেন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি দুঃশাসনের উরু ভেঙ্গে তার রক্ত দিয়ে দ্রৌপদীর চুল ধুয়ে দেবেন, কিন্তু এই সময়ে তিনি তার প্রতিজ্ঞাও ভুলে যান। একমাত্র সহদেবই যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, তখন দ্রৌপদী বললেন, তোমরা যুদ্ধ করতে চাও না, করো না। সহদেব অবশ্যই আমার পিতা ও ভাইয়ের সাথে এই যুদ্ধে লড়বে এবং আমার অপমানের প্রতিশোধ নেবে।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এমন কোন গ্রন্থ নয় যা উত্তেজনার সৃষ্টি করে, বরং এটি এমন একটি গ্রন্থ যা কর্তব্যের পথে পরিচালিত করে। একজন ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য তার শত্রুদের বিনাশ করা। যদি আমাদের দেশের সীমান্তে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করে এবং সৈন্যরা তাদের সাথে যুদ্ধ না করে, তবে সেটা হলো কাপুরুষতা।
জ্ঞানেশ্বর মহারাজ এর জন্য অর্জুনের সুন্দর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন:-
तैसे राज्यभोगसमृद्धि, उज्जीवन नोहे जीवबुद्धि।ই
एथ जिव्हाळा कृपानिधि, कारुण्य तुझें ॥ ६८ ॥
হে কৃষ্ণ! তুমি আমার থেকে দূরে চলে যাবে। আমার জীবনের সমস্ত গুণ সঞ্চয় করে আমি তোমাকে পেয়েছি যাতে তুমি আমার জীবনের সাথে যুক্ত থাকো, আমার সখা রূপে থাকো। যতই রাজত্ব, ভোগ ও সমৃদ্ধি অর্জন করে নিই না কেন, তা যথেষ্ট নয়, তা দিয়ে জীবের উন্নয়ন হয় না এবং আত্ম বুদ্ধি জাগ্রত হয় না। তাই হে কৃষ্ণ! আমি যুদ্ধ করতে চাই না।
এর পর অর্জুনের মনোস্থিতি নিয়ে জ্ঞানেশ্বর মহারাজ আরেকটি ভাব প্রকাশ করেন:-
तुझा अंतराय होईल । मग सांगें आमचें काय उरेल ।
तेणें दुःखे हियें फुटेल । तुजवीण कृष्णा ॥ २३४ ॥
অর্থাৎ: হে কৃষ্ণ ! তোমাকে ছাড়া আমার আর কিছুই নেই, তুমি না থাকলে আমার জীবন অন্ধকারময় হয়ে যাবে, দুঃখে আচ্ছন্ন হয়ে যাবে।
যদি একজন মায়ের দুটি পুত্র থাকে, তাদের মধ্যে যদি একটি জেদী ও দুর্বিনীত হয় এবং অন্যটি পুত্রটি যদি আজ্ঞাকারী ও বাধ্য হয়, তবে আজ্ঞাকারী পুত্রকেই বেশি সহ্য করতে হয়। তার কাছ থেকে শুধুমাত্র ভালো আচরণই আশা করা হয়। যে অবিনয়ী এবং অভদ্র আচরণ করে, তার কাছ থেকে ভালো কিছু বা উন্নতির আশা করা যায় না। এভাবে, যে মন্দ তার ধৃষ্টতা বাড়তে থাকে এবং যে ভালো তার ওপর আরো চাপ বাড়ে। এখানেও ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডবদের ওপর একই মানসিক চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিভাবে আমরা নিজের কর্তব্য পথে অবিচল থাকতে পারি, এই গ্রন্থটি আমাদের তাই শেখায়।
এর সাথেই আজকের বিবেচন সত্র সমাপ্ত হলো। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রশ্নকর্তা - ভারত বেদ জী
প্রশ্ন - আমি পুনর্জন্ম সম্পর্কে জানতে চাই। কিভাবে একটি জীবাত্মা তার কর্ম অনুসার অন্য জন্ম লাভ করে? দয়া করে এটি সম্পর্কে বলুন।
উত্তর - আমি আপনাকে এটি সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারব না কারণ আমার এই ব্যাপারে বিশেষ জ্ঞান নেই এবং আমি বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলব না। আমাদের গরুড় পুরাণ ও অন্যান্য পুরাণেও ঋষিরা বর্ণনা করেছেন যে, যে প্রকার কর্ম সম্পাদিত হয়, সেই প্রকারই জন্ম প্রাপ্ত হয়। অষ্টম অধ্যায়ে ভগবান মানুষের জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন। সেই মুহূর্তে আমাদের মনে যে চিন্তা, অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষা থাকে, সেই অনুযায়ী আমরা পরবর্তী জন্ম লাভ করি। ভগবান অর্জুনকে বললেন, তুমি প্রতিনিয়ত আমার ধ্যান করে যাও। তুমি সর্বদা আমার চিন্তন কর, কারণ শেষ মুহূর্ত কখন আসবে তা আমরা জানি না, কিন্তু যখনই আসবে তখন আমিই তোমার চিন্তনে, মননে থাকব এবং তুমি আমাকে প্রাপ্ত করে নেবে ।
মৃত্যুর পর আত্মা যেন সদ্গতি প্রাপ্ত করে, তাই গীতার পাঠ করা হয় কিন্তু আমি আপনাকে এটা বলতে পারবো না যে সেই আত্মা কোন রূপে পুনর্জন্ম নেবে।
প্রশ্নকর্তা - মঞ্জু শ্রীবাস্তব
প্রশ্ন - যুদ্ধক্ষেত্রে শঙ্খ বাজানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। সবাই শঙ্খ বাজালো কিন্তু তারপরও ভগবান কৃষ্ণ অর্জুনের রথ যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তা হলে কি যুদ্ধ শুরু হলো না, দয়া করে ব্যাখ্যা করুন।
উত্তর- যুদ্ধক্ষেত্রে ভগবানের প্রভাব তো ছিলই এবং অর্জুন, যিনি শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর ছিলেন, যখন তিনি ধনুক ও তীর যুদ্ধভূমিতে নামিয়ে রাখলেন, তখন সম্ভবত দুর্যোধনের মনে এই চিন্তা এসেছিল যে যখন অর্জুন তার ধনুক নামিয়ে রেখেছেন, তখন আর যুদ্ধ হবে না। তার মনে হয়েছিল হয়তো পাণ্ডবরা তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করে চলে যাবে, তাই শঙ্খ বাজানোর পরেও কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধ বন্ধ হয়ে থাকে।
প্রশ্নকর্তা - রামকুমার জী
প্রশ্ন - আপনি জ্ঞানেশ্বরী এবং জ্ঞানেশ্বর মহারাজের কথা বললেন, কিন্তু আমার প্রশ্ন এটি কোথায় লেখা আছে, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি?
উত্তর - সাধক জ্ঞানেশ্বর মহারাজের সঞ্জীবন সমাধি, পুনের কাছে আলন্দী নামক স্থানে রয়েছে। বাইশ বছর বয়সে তিনি সঞ্জীবন সমাধিতে প্রবেশ করেন। তিনি মুখপদ্ম দিয়ে যা বলেছেন তাকে জ্ঞানেশ্বরী বলে। তাঁর গুরুর প্রভাবে এই জ্ঞানের প্রসার তাঁর মুখপদ্ম দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অর্জুনের মনের ভাব এবং গুরু-শিষ্য সম্পর্কে একটি খুব সুন্দর বর্ণনা জ্ঞানেশ্বরীতে পাওয়া যায়। একজন শিষ্যের তার গুরুর প্রতি কেমন অনুভূতি থাকা উচিত এবং একজন গুরুর তার শিষ্যের প্রতি কেমন অনুভূতি থাকা উচিত তার একটি খুব সুন্দর বর্ণনা জ্ঞানেশ্বরীতে দেওয়া হয়েছে । গুরুর আশীর্বাদে আমি জ্ঞানেশ্বরী নিয়ে চিন্তন করার চেষ্টা করি। যখনই আপনার মন বিক্ষিপ্ত হয়, ভগবদ্গীতা বা জ্ঞানেশ্বরী পড়ুন। এটি পড়ার পর মন পুরোপুরি শান্ত হয়ে যাবে। জ্ঞানেশ্বর মহারাজ জ্ঞানেশ্বরীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন। এটি একটি অনন্য গ্রন্থ।
প্রশ্নকর্তা- সঞ্জয় জী
প্রশ্ন- মহাভারতের যুদ্ধ ধর্ম ও অধর্মের মধ্যে যুদ্ধ ছিল, তাহলে ভগবানকে কৌরবদের নারায়ণী সেনা কেন দিতে হয়েছিল?
উত্তর- ভগবানকে যে দিতেই হয়েছিল, এমনটা নয়। যখন দুর্যোধন ও অর্জুন দুজনেই শ্রী কৃষ্ণের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন, সেই সময় শ্রী কৃষ্ণ ঘুমিয়ে ছিলেন এবং দুর্যোধন সেখানে প্রথমে পৌঁছেছিলেন এবং তিনি ভগবানের মাথার দিকে বসলেন। অর্জুন সেখানে পরে পৌঁছেছিলেন, তাই তিনি শ্রী কৃষ্ণের পায়ের কাছে বসেছিলেন। নিদ্রাভঙ্গ হলে ভগবান প্রথমে অর্জুনের দিকে তাকালেন। তিঁনি প্রথমে অর্জুনকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি চাও, আমাকে বলো। তিঁনি অর্জুনের সামনে দুটি বিকল্প রেখেছিলেন যে একদিকে তিঁনি স্বয়ং থাকবেন, কিন্তু নিরস্ত্র, অন্যদিকে তাঁর দুর্ধর্ষ নারায়ণীর সেনা। অর্জুন এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে শ্রী কৃষ্ণকেই চেয়ে নিয়েছিলেন। তাই ভগবান অর্জুনের সঙ্গে ছিলেন আর তাঁর নারায়ণী সেনা ছিলো দুর্যোধনের সঙ্গে। যারা ধৰ্ম মানে না, তাদের কিছু দেওয়া উচিত নয়, কিন্তু ভগবানের কাছে যে সাহায্য চায়, ভগবান অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন।
নিজের পরিবার-স্বজনদের দেখে অর্জুনের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠলো। যুদ্ধ যখন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, শান্তির দূত হয়ে যখন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ হস্তিনাপুরে গিয়েছিলেন, তখন দুর্যোধন বলেছিলেন, পাঁচটা গ্রামের কথা তো দূরের কথা, সূঁচের ডগা সমান জমিও আমি দেব না। এর পর ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের মাধ্যমে পাণ্ডবদের কাছে এই বার্তা পাঠালেন যে, তোমরা পাণ্ডুর পুত্র, তোমরা যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝবে যে যুদ্ধের ফলে কত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, আমার পুত্র এটা বুঝতে অপারগ, আমার পুত্র আমার কথার অবাধ্য, উদ্ধত, জেদী। এই যুদ্ধ হলে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হবে, বিনাশ হবে, তাই তোমরা এই যুদ্ধ করতে রাজি হয়ো না। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র বলতে চেয়েছিলেন যে তোমরা বনবাসেই থাকো, আমরা তোমাদের রাজ্য, রাজপাট কিছুই দেব না এবং অন্যদিকে পাণ্ডবদের যুদ্ধ থেকে বিরত করার চেষ্টাও করছিলেন। এইভাবে ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের মাধ্যমে পাণ্ডবদের মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তাদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা করেন। এর পরিণামস্বরূপ যুদ্ধের আগেই তিনজন পাণ্ডব -যুধিষ্ঠির, অর্জুন ও নকুল যুদ্ধের বিরুদ্ধে মত দেন, ভীম নিরপেক্ষ থাকেন এবং একমাত্র সহদেব যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। ভীমসেন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি দুঃশাসনের উরু ভেঙ্গে তার রক্ত দিয়ে দ্রৌপদীর চুল ধুয়ে দেবেন, কিন্তু এই সময়ে তিনি তার প্রতিজ্ঞাও ভুলে যান। একমাত্র সহদেবই যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, তখন দ্রৌপদী বললেন, তোমরা যুদ্ধ করতে চাও না, করো না। সহদেব অবশ্যই আমার পিতা ও ভাইয়ের সাথে এই যুদ্ধে লড়বে এবং আমার অপমানের প্রতিশোধ নেবে।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এমন কোন গ্রন্থ নয় যা উত্তেজনার সৃষ্টি করে, বরং এটি এমন একটি গ্রন্থ যা কর্তব্যের পথে পরিচালিত করে। একজন ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য তার শত্রুদের বিনাশ করা। যদি আমাদের দেশের সীমান্তে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করে এবং সৈন্যরা তাদের সাথে যুদ্ধ না করে, তবে সেটা হলো কাপুরুষতা।
জ্ঞানেশ্বর মহারাজ এর জন্য অর্জুনের সুন্দর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন:-
तैसे राज्यभोगसमृद्धि, उज्जीवन नोहे जीवबुद्धि।ই
एथ जिव्हाळा कृपानिधि, कारुण्य तुझें ॥ ६८ ॥
হে কৃষ্ণ! তুমি আমার থেকে দূরে চলে যাবে। আমার জীবনের সমস্ত গুণ সঞ্চয় করে আমি তোমাকে পেয়েছি যাতে তুমি আমার জীবনের সাথে যুক্ত থাকো, আমার সখা রূপে থাকো। যতই রাজত্ব, ভোগ ও সমৃদ্ধি অর্জন করে নিই না কেন, তা যথেষ্ট নয়, তা দিয়ে জীবের উন্নয়ন হয় না এবং আত্ম বুদ্ধি জাগ্রত হয় না। তাই হে কৃষ্ণ! আমি যুদ্ধ করতে চাই না।
এর পর অর্জুনের মনোস্থিতি নিয়ে জ্ঞানেশ্বর মহারাজ আরেকটি ভাব প্রকাশ করেন:-
तुझा अंतराय होईल । मग सांगें आमचें काय उरेल ।
तेणें दुःखे हियें फुटेल । तुजवीण कृष्णा ॥ २३४ ॥
অর্থাৎ: হে কৃষ্ণ ! তোমাকে ছাড়া আমার আর কিছুই নেই, তুমি না থাকলে আমার জীবন অন্ধকারময় হয়ে যাবে, দুঃখে আচ্ছন্ন হয়ে যাবে।
যদি একজন মায়ের দুটি পুত্র থাকে, তাদের মধ্যে যদি একটি জেদী ও দুর্বিনীত হয় এবং অন্যটি পুত্রটি যদি আজ্ঞাকারী ও বাধ্য হয়, তবে আজ্ঞাকারী পুত্রকেই বেশি সহ্য করতে হয়। তার কাছ থেকে শুধুমাত্র ভালো আচরণই আশা করা হয়। যে অবিনয়ী এবং অভদ্র আচরণ করে, তার কাছ থেকে ভালো কিছু বা উন্নতির আশা করা যায় না। এভাবে, যে মন্দ তার ধৃষ্টতা বাড়তে থাকে এবং যে ভালো তার ওপর আরো চাপ বাড়ে। এখানেও ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডবদের ওপর একই মানসিক চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিভাবে আমরা নিজের কর্তব্য পথে অবিচল থাকতে পারি, এই গ্রন্থটি আমাদের তাই শেখায়।
এর সাথেই আজকের বিবেচন সত্র সমাপ্ত হলো। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রশ্নকর্তা - ভারত বেদ জী
প্রশ্ন - আমি পুনর্জন্ম সম্পর্কে জানতে চাই। কিভাবে একটি জীবাত্মা তার কর্ম অনুসার অন্য জন্ম লাভ করে? দয়া করে এটি সম্পর্কে বলুন।
উত্তর - আমি আপনাকে এটি সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারব না কারণ আমার এই ব্যাপারে বিশেষ জ্ঞান নেই এবং আমি বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলব না। আমাদের গরুড় পুরাণ ও অন্যান্য পুরাণেও ঋষিরা বর্ণনা করেছেন যে, যে প্রকার কর্ম সম্পাদিত হয়, সেই প্রকারই জন্ম প্রাপ্ত হয়। অষ্টম অধ্যায়ে ভগবান মানুষের জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন। সেই মুহূর্তে আমাদের মনে যে চিন্তা, অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষা থাকে, সেই অনুযায়ী আমরা পরবর্তী জন্ম লাভ করি। ভগবান অর্জুনকে বললেন, তুমি প্রতিনিয়ত আমার ধ্যান করে যাও। তুমি সর্বদা আমার চিন্তন কর, কারণ শেষ মুহূর্ত কখন আসবে তা আমরা জানি না, কিন্তু যখনই আসবে তখন আমিই তোমার চিন্তনে, মননে থাকব এবং তুমি আমাকে প্রাপ্ত করে নেবে ।
মৃত্যুর পর আত্মা যেন সদ্গতি প্রাপ্ত করে, তাই গীতার পাঠ করা হয় কিন্তু আমি আপনাকে এটা বলতে পারবো না যে সেই আত্মা কোন রূপে পুনর্জন্ম নেবে।
প্রশ্নকর্তা - মঞ্জু শ্রীবাস্তব
প্রশ্ন - যুদ্ধক্ষেত্রে শঙ্খ বাজানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। সবাই শঙ্খ বাজালো কিন্তু তারপরও ভগবান কৃষ্ণ অর্জুনের রথ যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তা হলে কি যুদ্ধ শুরু হলো না, দয়া করে ব্যাখ্যা করুন।
উত্তর- যুদ্ধক্ষেত্রে ভগবানের প্রভাব তো ছিলই এবং অর্জুন, যিনি শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর ছিলেন, যখন তিনি ধনুক ও তীর যুদ্ধভূমিতে নামিয়ে রাখলেন, তখন সম্ভবত দুর্যোধনের মনে এই চিন্তা এসেছিল যে যখন অর্জুন তার ধনুক নামিয়ে রেখেছেন, তখন আর যুদ্ধ হবে না। তার মনে হয়েছিল হয়তো পাণ্ডবরা তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করে চলে যাবে, তাই শঙ্খ বাজানোর পরেও কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধ বন্ধ হয়ে থাকে।
প্রশ্নকর্তা - রামকুমার জী
প্রশ্ন - আপনি জ্ঞানেশ্বরী এবং জ্ঞানেশ্বর মহারাজের কথা বললেন, কিন্তু আমার প্রশ্ন এটি কোথায় লেখা আছে, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি?
উত্তর - সাধক জ্ঞানেশ্বর মহারাজের সঞ্জীবন সমাধি, পুনের কাছে আলন্দী নামক স্থানে রয়েছে। বাইশ বছর বয়সে তিনি সঞ্জীবন সমাধিতে প্রবেশ করেন। তিনি মুখপদ্ম দিয়ে যা বলেছেন তাকে জ্ঞানেশ্বরী বলে। তাঁর গুরুর প্রভাবে এই জ্ঞানের প্রসার তাঁর মুখপদ্ম দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অর্জুনের মনের ভাব এবং গুরু-শিষ্য সম্পর্কে একটি খুব সুন্দর বর্ণনা জ্ঞানেশ্বরীতে পাওয়া যায়। একজন শিষ্যের তার গুরুর প্রতি কেমন অনুভূতি থাকা উচিত এবং একজন গুরুর তার শিষ্যের প্রতি কেমন অনুভূতি থাকা উচিত তার একটি খুব সুন্দর বর্ণনা জ্ঞানেশ্বরীতে দেওয়া হয়েছে । গুরুর আশীর্বাদে আমি জ্ঞানেশ্বরী নিয়ে চিন্তন করার চেষ্টা করি। যখনই আপনার মন বিক্ষিপ্ত হয়, ভগবদ্গীতা বা জ্ঞানেশ্বরী পড়ুন। এটি পড়ার পর মন পুরোপুরি শান্ত হয়ে যাবে। জ্ঞানেশ্বর মহারাজ জ্ঞানেশ্বরীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন। এটি একটি অনন্য গ্রন্থ।
প্রশ্নকর্তা- সঞ্জয় জী
প্রশ্ন- মহাভারতের যুদ্ধ ধর্ম ও অধর্মের মধ্যে যুদ্ধ ছিল, তাহলে ভগবানকে কৌরবদের নারায়ণী সেনা কেন দিতে হয়েছিল?
উত্তর- ভগবানকে যে দিতেই হয়েছিল, এমনটা নয়। যখন দুর্যোধন ও অর্জুন দুজনেই শ্রী কৃষ্ণের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন, সেই সময় শ্রী কৃষ্ণ ঘুমিয়ে ছিলেন এবং দুর্যোধন সেখানে প্রথমে পৌঁছেছিলেন এবং তিনি ভগবানের মাথার দিকে বসলেন। অর্জুন সেখানে পরে পৌঁছেছিলেন, তাই তিনি শ্রী কৃষ্ণের পায়ের কাছে বসেছিলেন। নিদ্রাভঙ্গ হলে ভগবান প্রথমে অর্জুনের দিকে তাকালেন। তিঁনি প্রথমে অর্জুনকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি চাও, আমাকে বলো। তিঁনি অর্জুনের সামনে দুটি বিকল্প রেখেছিলেন যে একদিকে তিঁনি স্বয়ং থাকবেন, কিন্তু নিরস্ত্র, অন্যদিকে তাঁর দুর্ধর্ষ নারায়ণীর সেনা। অর্জুন এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে শ্রী কৃষ্ণকেই চেয়ে নিয়েছিলেন। তাই ভগবান অর্জুনের সঙ্গে ছিলেন আর তাঁর নারায়ণী সেনা ছিলো দুর্যোধনের সঙ্গে। যারা ধৰ্ম মানে না, তাদের কিছু দেওয়া উচিত নয়, কিন্তু ভগবানের কাছে যে সাহায্য চায়, ভগবান অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন।