विवेचन सारांश
কর্ম ফল সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা অসম্ভব

ID: 3708
Bangla - বাংলা
শনিবার, 23 সেপ্টেম্বর 2023
অধ্যায় 3: কর্মযোগ
1/5 (শ্লোক 1-8)
ব্যাখ্যাকার: গীতা বিদুষী মাননীয়া বন্দনা বর্ণেকর মহাশয়া


ভগবানকে স্মরণ, প্রদীপ জ্বালানো আর গুরু বন্দনার মাধ্যমে আজকের সত্র আরম্ভ হয়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মহাভারতের যুদ্ধাঙ্গনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গাওয়া এক অনন্য গান।
আপনজনদের ভালোবাসার মোহে আবদ্ধ অর্জুন যুদ্ধ করতে চাননি। নিরুতসাহিত অর্জুন প্রথম অধ্যায়ের শেষে তাঁর গাণ্ডীব ধনুক মাটিতে রেখে বসে পড়েন।

বিসৃজ্য সশরং চাপং শোকসংবিগ্নমানসঃ ।।১.৪৭।।

উনার এই অবস্থা দেখে শ্রীকৃষ্ণ উনাকে উনার এই কাপুরুষতা দেখে তিরস্কার করতে থাকেন।

ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতৎত্বয্যুপপদ্যতে ।
ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ ।।(2.3)

কিন্ত যখন অর্জুন শিষ্যস্তেহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্ ।।(2.7) বলে সম্পুর্ন রূপে শ্রীকৃষ্ণের উপরে সমর্পিত হয়ে যান তো দ্বিতীয় অধ্যায়ের এগার নম্বর শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত অখণ্ড জ্ঞানের ধারা প্রস্ফুটিত হয় যা আজও আমরা মানুষকে নিরুতসাহিত বা মনোবৈজ্ঞানিক চাপ থেকে বাইরে বের করে নিজের কর্তব্য পথে চলতে প্রেরণা দেয়, আমাদের বিষন্ন মন কে প্রসন্ন করে।

শ্রী কৃষ্ণের অর্জুনকে তিরস্কার করা আর রোগীকে ওষুধের কড়আ মাত্রার খোরাক দেওয়ার মতো ছিল। অর্জুন যুদ্ধের পরিণামে ভয়ভীত হচ্ছিলেন। হিংসা, সর্বজন হত্যার পাপ এর কথা ভাবছিলেন। সঞ্জয়ের মাধ্যমে ধৃতরাষ্ট্র অর্জুনকে যে খবর পাঠিয়েছিলেন এই মনের অবস্থা তার পরিনাম ছিল।

শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে দেহের নশ্বরতা বুঝিয়ে বলেন আমরা কেবল দেহ নই, এক আত্মতত্ব যাহা অবিনাশী। যুদ্ধভূমিতে বা এই সৃষ্টিতে যত জীব আছে সেই সবের মধ্যে এক সুক্ষ চৈতন্য তত্ব আছে যা কখনও নষ্ট হয় না। ওই মূল স্বরূপের জ্ঞান বা আত্মজ্ঞানের প্রয়োজন হয় যা জ্ঞান যোগ থেকে প্রাপ্ত করা যায়।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে অন্তিম আঠেরো শ্লোকে ভগবান স্থিতপ্রজ্ঞার বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন, মনে কর ভগবান স্বয়ং নিজের বর্ণনা দিচ্ছেন self portrait. ভগবান জ্ঞানের মহত্ত্ব গান।

আত্মজ্ঞান বা মূল স্বরূপের বোধ হওয়াই জীবনের অন্তিম গন্তব্য। অর্জুন এবার দ্বিধায় পড়ে যান। যদি এটাই মানুষের লক্ষ্য হয় তো এই যুদ্ধের মতো ঘোর কর্ম কেন করে? যুদ্ধ কেন তাঁর কর্তব্য কর্ম আর কি করে হলো। অর্জুন যুদ্ধ পরিত্যাগ করতে চান, কিন্তু উনি কি সেই জ্ঞানের চরম অবস্থায় পৌঁছেছেন?

ভগবান এখানে এই কথা বলতে চান যে সেই অন্তিম গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছানোর অনেক পথ আছে যার বর্ণনা ভগবদ্গীতায় কর্মযোগ, আত্মসংযম যোগ, জ্ঞান সন্যাস ইত্যাদির মাধ্যমে করা হয়েছে। যোগ এর অর্থ যুক্ত হওয়া , সেই মূলস্বরূপ বা আত্ব তত্ত্বের সাথে যুক্ত হওয়া।

এই অধ্যায়কে কর্ম যোগ বলা হয়।কর্মে দ্বারা ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়া, তাঁর সাথে একাকার হয়ে যাওয়া, আত্মতত্ত্ব থেকে নিজের গবেষণা নিত্য বাড়ানো আর এক গভীর অটুট সম্বন্ধ স্হাপন করাই কর্ম যোগ। আত্মতত্ত্ব প্রাপ্তির জন্য কর্ম করা সুন্দর দিশা দেখানোর এই অধ্যায়, যা ব্যাবহারিক ও।

আমেরিকার সেনেটে এই অধ্যায় বাজান হয়ে ছিল। এই অধ্যায়ে আর এর পরবর্তী তিনটি অধ্যায় কে লোকমান্য তিলক মহাশয় অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ বলেছেন। এই তিনটি অধ্যায় এর উপরে মাণ্ডলের কারাগারে তিলক মহাশয় গীতা রহস্য নামক গ্রন্থ রচনা করেন। উনি কর্মযোগ কে ভগবদ্গীতার অপূর্বতা বলা হয়।

শ্রী কৃষ্ণ এক দিকে তো জ্ঞান মার্গের শ্রেষ্টতা বর্ণনা করেন আর অপর দিকে অর্জুনকে যুদ্ধ ভূমিও ছাড়তে দেননি, এই জন্যই অর্জুন দ্বিধায় পড়ে যান আর ভগবান কে প্রশ্ন করেন আর এই প্রশ্ন দিয়েই তৃতীয় অধ্যায় শুরু হয়।


3.1

অর্জুন উবাচ

জ্যায়সী চেৎ কর্মণস্তে, মতা বুদ্ধির্জনার্দন।
তৎকিং(ঙ) কর্মণি ঘোরে মাং(ন্), নিয়োজয়সি কেশব॥1॥

অর্জুন বললেন, হে জনার্দন : যদি আপনি কর্ম থেকে বুদ্ধিকে (জ্ঞান) শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন, তাহলে হে কেশব! আমাকে এই ঘোর কর্মে কেন নিযুক্ত করছেন ৷

বিবেচন:-  কেবল প্রবচন নয় সে এক সংবাদ। নিজের প্রশ্ন অর্জুন ভগবানের সামনে প্রস্তুত করেন যার সমাধান শ্রীকৃষ্ণ করেন।
আর কখনও কখনও উনি অর্জনের উপরে খুসি হয়ে তাঁর না জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের ও উত্তর দেন।
বেদের সার মহাভারত হলে ভগবদ্গীতা মহাভারতের সার, এর 700 শ্লোকের মাধ্যমে ভগবান কলসিতে সাগর ভরে দিয়েছেন। 
অর্জুন কৃষ্ণকে 'জনার্দন' বলে সম্বোধন করেন তার অর্থ ভক্তদের রক্ষা কর্তা আর তার ইচ্ছা সকল পূর্ণ কর্তা। 
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কর্তব্য কর্ম বোঝাতে গিয়ে দ্বিতীয় অধ্যায়ে যাহা 'সূত্র অধ্যায় ' ও বলা হয়, জ্ঞানের বোধদয় করান। অবিনাশী আত্ম তত্বের নির্ণয় করেন।

নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ ।
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ ।।২.২৩।।


অর্জুন জিজ্ঞাসা করেন যদি কর্মের থেকে জ্ঞান শ্রেষ্ট হয় তবে তারা কর্তব্য কর্ম কেন করবে? যুদ্ধ করে পাপের ভাগীদার কেন হবে? মানুষের স্বভাব হল কারোর উপদেশেও নিজের লাভ দেখা। যুদ্ধের জন্য পাঠিয়ে কৃষ্ণ অর্জুনের বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

তস্মাদুত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ ।।২.৩৭ | |

শ্রীকৃষ্ণ চাইতেন না যে অর্জুন যুদ্ধ ভূমি ছেড়ে পিঠ বাঁচিয়ে পালায় আর ইতিহাসে তিনি পলাতকের রূপে পরিচিত হন। 
অর্জুন এখন এটা মানছেন যে মানুষের সব পরিকল্পনা ভগবানই করেন আর তার কর্তব্য কর্ম উনিই নির্ধারন করেন। কিন্ত অর্জুনের এটাই অসংগত মনে হয় যে আত্মজ্ঞান বোধ যদি বড় হয় তবে যুদ্ধ কেন বন্ধ করা যেতে পারে না? অর্জুন মানেন যে জ্ঞান আর কর্ম এক সাথে সাথে চলতে পারে না আমরা মানুষ হয়ে তাই মানি। এই দুটি আলাদা যা এক করা যায় না। 
এই অধ্যায়ে ভগবান বিভ্রান্তি দূর করে জ্ঞান ও কর্ম কে একত্র করতে চেয়েছেন।

3.2

ব্যামিশ্রেণেব বাক্যেন, বুদ্ধিং(ম্) মোহয়সীব মে।
তদেকং(ব্ঁ) বদ নিশ্চিত্য , য়েন শ্রেয়োऽহমাপ্নুয়াম্॥3.2॥

আপনি আপনার এই বিমিশ্র বচন দ্বারা কেন আমার বুদ্ধিকে মোহিত করছেন ? সুতরাং আপনি নিশ্চিত করে আমায় এমন কথা বলুন যার দ্বারা আমি কল্যাণ লাভ করতে সক্ষম হই ৷

বিবেচন:- অর্জুনের সংশয় বাড়তে থাকে,  চলার দিশা অস্পষ্ট। এখন উনি কৃষ্ণকে বলছেন যে তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না, কখনও আপনি জ্ঞানকে শ্রেষ্ঠ বলেন আবার কখনও কর্তব্য কে! একটি নিশ্চিত দিশা দেখান যা আমার কল্যাণকর হয়! অর্জুন আর ভগবানের মধ্যে তিনটি সুন্দর সম্পর্ক আছে।
সখা ভক্তি :- এটা মানসিক সম্পর্ক শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনের সখা, বন্ধু ,প্রেম আর তিরস্কার করতে পারেন।
দৈহিক:- অর্জুন কৃষ্ণের পিসি কুন্তীর পুত্র, এমনিতে দুজনে ভাই হন।
গুরু শিষ্যের সম্পর্ক:-  শিষ্যস্তেহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্
এই কথা বলতে বলতে অর্জুন সম্পুর্ণ ভাবে শ্রী  কৃষ্ণের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলেন।
সম্পুর্ন সমর্পণের মাধ্যমেই শিষ্যের কল্যাণ হয়।
গুরু স্বামী শ্রী সুসত্যমিত্রানন্দজী ( গুরু শ্রী গোবিন্দ দেব গিরি জী র গুরু) বলেন যে संसार में सम्पन्नता और विपन्नता तो दिखती है परन्तु प्रपन्नता या शरणागति अभाव में ही दिखती है। 

গুরুও শিষ্যকে তখনই উপদেশ দেন যখন শিষ্য সম্পুর্ণ সমর্পিত ভাবে গুরু কে ডাকেন। শিষ্যের দুইটি অর্থ আছে संशनात् शिष्य: गुरु से ज्ञान प्राप्त कर अपने संशयों का समाधान करने वाला शासनात् शिष्य: (যে গুরুর শাসন মেনে চলে, তাঁর আজ্ঞা মেনে চলে। )
যখন অর্জুন শিষ্যত্বের এই দুই অর্থের সত্যতা প্রমাণ করেন, তখন শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত অখণ্ড জ্ঞান প্রস্ফুটিত হয়। কিন্ত অর্জুনের মনে ভয় হয় যে ভগবান তো জ্ঞানের দিশা দেখাতে থাকেন আর কর্তব্য কর্ম ও করতে বলতে থাকেন, এই দুই পরস্পর বিরোধী কথায় উনার কল্যানের পথ প্রশস্ত হয়নি। এইজন্য তিনি কৃষ্ণের কাছে নির্দিষ্ট একটি দিশা দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন।
শ্রেয় আর প্রেয়:- শ্রেয় অর্থাৎ কল্যাণ প্রেয় মানে প্রিয়,  আমার কি প্রিয় এটা কাওকে জিজ্ঞাসা করতে হয় না, নিজের নিজেই বোঝা যায়। কিন্ত যেটা প্রিয় সেটা কল্যাণকর ও হবে এটা জরুরী নয়। যেমন ছাত্র ছাত্রীর টি ভি আর সোসালমিডিয়া খুব প্রিয় কিন্ত এর জন্য পরীক্ষার সময় মন বসেনা, এইসব ওদের ক্ষতিই করে। 
সেইরকম ডায়বিটিসের রোগীর জন্য মিষ্টি প্রিয় হতে পারে কিন্তু কল্যাণকর নয়। 

আমাদের শ্রেয় বা কল্যাণ কিসে সেটা জানার জন্য আমাদেরকে কোন শুভাকাঙ্ক্ষী বা গুরু বা মাতা পিতার কাছে তার উপদেশ নিতে হয়। এইজন্য অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের কাছে নিজের কল্যাণের দিশা জানতে চাইছেন, উনি আর ভ্রমে পড়তে চান না। সে এখন শরণাগত আর শরণাগতকে বিভ্রান্ত করা যায় না। এই কথা অর্জুন নিশ্চিত ভাবে বলছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণ আর অর্জুনের সম্পর্ক ছিল  অটুট আর গভীর। এই কথাটা মহাভারতের একটি প্রসঙ্গ থেকে বোঝা যেতে পারে। যখন যুদ্ধ সেনা তৈরি আর পাণ্ডবগন বনে ছিলেন তখন, ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের মাধ্যমে অর্জুনকে একটি খবর পাঠান। সঞ্জয় ফিরতেই ধৃতরাষ্ট্র কৃষ্ণের ব্যাপারে জানতে চান সঞ্জয় বলেন যে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন এর পা টিপে দিচ্ছিলেন, উনি কেঁপে উঠলেন আর বললেন কৌরব যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না। 
অর্জুন কৃষ্ণকে নিজের সখা মানতেন, উনার সাথে খেলা করা, খাবার খাওয়া, কখনও জিদ করতেন তো কখনও রেগে যেতেন। শ্রীকৃষ্ণ উনার পাও টিপে দিতেন। শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দেখার সাথে সাথেই অর্জুন উনার মহত্ত্বতা চিনতে পারেন আর উনাকে সখা ভেবে মা কিছু করেছেন সেগুলো ভেবে উনার খুব গ্লানি হয়, এগার অধ্যায়ে উনি এরজন্যে শ্রীকৃষ্ণের কাছে ক্ষমাও চান। শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনের রন্ধে রন্ধে ছিলেন। বলা হয় যে অর্জুনের প্রশ্বাসের মধ্যে  কৃষ্ণ কৃষ্ণ আওয়াজ আসতো। এরকম প্রিয় সম্পর্ক হবার জন্য অর্জুন কৃষ্ণকে তিরস্কার ও করতে পারতেন। 
धर्म नामक गाड़ी के दो पहिए होते हैं : अभ्युदय और  नि:श्रेयस।

অভ্যুদয় শারীরিক উন্নতি আর নিঃশ্রেয়স আধ্যাত্মিক উন্নতি যা থেকে পরম শান্তি বা জ্ঞান অর্জন হয়। গাড়ি ঠিক চলার জন্যে দুটি চাকা একসাথে চলার প্রয়োজন। নিঃশ্রেয়সের পথে চললে অভ্যুদয় পিছনে পড়ে থাকে আর যদি কেবল শারীরিক সুখের পিছনে ধাবিত হলে নৈতিক পথ হারিয়ে যায়, আত্ম তত্বের প্রাপ্তি হয় না। অর্জুনের সারথী শ্রীকৃষ্ণ হওয়া সত্ত্বেও উনার জীবনের অন্তিম কল্যাণ হয় নি তো এরকম জীবনের প্রয়োজন কি? কারন রাজ্য ভোগ আর সমৃদ্ধিই সব কিছু হতে পারে না।

तैसे राज्यभोगसमृद्धि । उज्जीवन नोहे जीव बुद्धि।
एथ जिव्हाळा कृपानिधि । कारुण्य तुझें ॥ ६८ ॥

ইচ্ছা ও তিন প্রকার হয় 
- পুত্রেষ্ণা  ঘর-বাইরে, সম্পর্ক আর সমৃদ্ধির আশা 
- বিত্তেষ্ণা ধনের আশা আর  
- লোকেষ্ণা সমাজে প্রতিষ্ঠা আর প্রসিদ্ধির আশা ।

অর্জুনের মনে হতো যে যদি পরমাত্মতত্ত্বের দিকে যেতে হয় তাহলে সব ইচ্ছের বাইরে গিয়ে জ্ঞানের পথে চলতে হবে।
অর্জুনের এই মনোভাবকে শ্রী জ্ঞানেশ্বর মহারাজ অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বলেছেন:- 
मी आधींचि कांहीं नेणें । वरी कवळिलों मोहें येणें ।
श्रीकृष्णा विवेकु याकारणें । पुसिला तुज ॥ १० ॥

জ্ঞানেশ্বর মহারাজ অর্জুনের মনের অবস্থা বর্ণনা করে বলেছেন যে অর্জুন প্রথমেই দ্বিধাগ্রস্ত তার উপরে উনি মোহবন্ধনে বদ্ধ ছিলেন এই জন্য তিনি শ্রীকৃষ্ণ কে প্রশ্ন করছেন। শ্রী জ্ঞানেশ্বরীতে আবার 
অর্জুনের দ্বিধার কথা বলা হয়েছে:- 

तंव तुझी एकेक नवाई । एथ उपदेशामाजीं गोवाई ।
तरी अनुसरलिया काई । ऐसें कीजे ॥ ११ ॥

অর্জুন শ্রীকৃষ্ণ কে বলছেন যে ऐसा एक मार्ग बताइए जिस का वे अनुसरण कर सकें। 

শ্রী জ্ঞানেশ্বর মহারাজ নেবাসের মন্দিরে বসে নয় হাজার ওভি মহান 
জ্ঞানেশ্বরী রচনা করেছেন যা ভগবদ্গীতার সার। যখন আমরা 
অর্জুনের মনের অবস্থা বুঝব আর জানব যে কখন ভগবান আমাদেরকে ওই গভীর সিদ্ধান্ত বলছেন, তখনই ভগবদ্গীতার গভীরতা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হতে পারবে, আর ধীরে ধীরে রহস্য প্রকাশ হতে থাকবে। শ্রী গোবিন্দ দেব গিরি মহারাজের বার্তা। গীতা পড়ুন, পড়ান, জীবনে আনুন সম্পূর্ণ ভাবে সফল হবে।

যদি ভগবান অর্জুনকে যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে যাবার অনুমতি দিতেন তাহলে কি হতো? এটা বিবেচনা করার বিষয়। অর্জুন জ্ঞান অর্জনের জন্য চলে গেলে কি উনার মন এক নিবিষ্ট হতে পারতো? সশরীরে উনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে থাকতেন না ঠিকই কিন্তু উনার মন ওখানেই পড়ে থাকত। উনাকে ছাড়া উনার ভাইয়ের কি যুদ্ধে জয়ী হতে পারতেন? তিনি ক্ষত্রীয় ছিলেন, যুদ্ধের পরিনামে ভয় ও পাচ্ছিলেন , কিন্তু উনার মন যুদ্ধ ভূমিতেই থাকত, উনি এখন জ্ঞান অর্জন এর জন্য তৈরী ছিলেন না। আর শ্রীকৃষ্ণ চাইতেন না যে অর্জুনের উপরে পিছন ফিরে যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করার দোষ পড়ে।

3.3

শ্রীভগবানুবাচ

লোকেsস্মিন্ দ্বিবিধা নিষ্ঠা, পুরা প্রোক্তা ময়ানঘ।
জ্ঞানযোগেন সাংখ্যানাং(ঙ), কর্মযোগেন যোগিনাম্॥3॥

শ্রীভগবান বললেন–হে অনঘ অর্জুন! এই মনুষ্যলোকে দুই প্রকারের নিষ্ঠা আছে, একথা আমি আগেই বলেছি। জ্ঞানীদের নিষ্ঠা জ্ঞানযোগের দ্বারা এবং যোগীদের নিষ্ঠা কর্মযোগের দ্বারা ঘটে৷

বিবেচন:- ভগবান অর্জুনকে অনঘ বলেন অর্থাৎ নিষ্পাপ। তিনি বলেন হে অনঘ! 
নিষ্ঠা দুই প্রকার:- 

১. সাংখ্যযোগীদের নিষ্ঠা জ্ঞান যোগ থেকে 
২. কর্মযোগিদের নিষ্ঠা কর্ম যোগ থেকে 

এই কথা ভগবান অনেক আগেই বলেছেন, ভগবদ্গীতার পরিপেক্ষিতে দ্বীতিয় অধ্যায়ে আর সৃষ্টির প্রসঙ্গে কল্পের শুরুতে বেদের মাধ্যমে।
দর্শন শাস্ত্র ছয় প্রকার:- 

সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মিমাংসা আর বেদান্ত

কপিল মুনিকে সাংখ্য দর্শনের অগ্রগামী বলা হয়। ভগবদ্গীতার মাধ্যমে আমরা বেদান্ত পড়ছি, যা সাংখ্য দর্শন বা তত্ব দর্শনের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এই অনুসারে সৃষ্টির কাজ প্রকৃতি আর পুরুষ অর্থাৎ জড় আর চেতনের মিলনে হয়। পুরুষ বা চেতন সুক্ষ আর প্রকৃতি জড়।

এখানে আইনস্টাইনের সূত্রের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে E=MC2

একটি লাউডস্পিকার তখনই কাজ করে যখন তাতে সুক্ষ তড়িৎ প্রবাহিত হয়। সৃষ্টির কাজ ও জড় ও চেতনের যোগ সূত্রে সুচারু ভাবে চলে। জড় আর চেতনের সংযোগকে বোঝা আর সেখান থেকে চেতন অর্থাৎ আত্মতত্বকে পৃথক করাই জ্ঞানযোগ। এই পথ জ্ঞানিদের জন্যই, যাহার মধ্যে এই পৃথক করার ক্ষমতা থাকে। তাঁর জীবন জ্ঞান প্রধান।
কর্ম যোগীর জন্য কর্মই প্রধান আর তাহাই পরমাত্মার সাথে সংযোগের পথ। এই কথা অর্জুন বুঝতে পারছিলেন না। জ্ঞান পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য কর্ম প্রযোজন। একটি গন্তব্যতে পৌঁছানোর জন্য অনেক পথ থাকতে পারে, যেমন দিল্লি পৌঁছানোর জন্য অনেক পথ আর উপায় আছে, উড়োজাহাজ, রেল, বাস বা নিজের গাড়ি। যোগ্যতা আর ক্ষমতা অনুযায়ী পথ বেছে নেওয়া হয় সেটা শ্রেয় হয়। আমাদের প্রকৃতি অনুসারে পথ বেছে নেওয়াই কল্যানকর। কর্ম ক্রিয়া প্রধান আর জ্ঞান বিচার প্রধান হয়।

সন্ত জ্ঞানেশ্বর মহারাজ ও এই দুই মার্গের উল্লেখ করেছেন:- 

हे मार्ग जरी दोन्हीं। परि एकवटतीं निदानीं।
जैसी सिद्धसाध्य भोजनीं। तृप्ति एक।।

সিদ্ধ ভোজন অর্থাৎ রান্না করা খাবার, সহজেই পাওয়া যায় কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার যেটা রান্না করা হয় আর তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। দুই রকম ভোজনেই তৃপ্তি হয় আর পেট ভরে। সিদ্ধ ভোজনের জন্য সাধ্য ভোজন রান্না করতে হবে। কর্মযোগ সাধ্য হলে জ্ঞানযোগকে সিদ্ধ ভোজন বলা হয়। 

এটা বোঝার জন্য মহারাষ্ট্রের পরম সন্ত শ্রী গোন্দবলেকর মহারাজের এক প্রসঙ্গের কথা আছে। গোন্দবলেকর মহারাজ এক মন্দির প্রাঙ্গণে তাঁর শিষ্যকে জপ করা শেখাতেন। সেই মন্দিরে নির্মাণ কাজ হচ্ছিল।কিছু মজুর এই শিষ্যকে দেখে তার সুখের জীবনের ব্যাপারে ভাবতে লাগলো। একদিন তার কথা শুনে গোন্দবলেকর মহারাজের খুব দুঃখ হয় আর উনি মজদুরকে বলেন যে উনার আয় থেকে দুই গুন বেশি পয়সা দেবেন কিন্তু উনাকে সারাদিন শিষ্যের সাথে বসে জপ করতে হবে। মজুর খুসিতে মেনে নেয়, কিন্তু কিছুক্ষন বসে বসে বিরক্ত হয়ে নিজের কাজ শুরু করে। বলার তাৎপর্য এই যে আমাদের কর্তব্য কর্ম সেটা করাই সহজ হয় আর মন সংযোগ ও হয়। এইজন্য যদি অর্জুন ও যুদ্ধ ছেড়ে চলে যেতেন তাহলে তাঁর জ্ঞান প্রাপ্তি হতো না কারণ উনার মন উনার কর্তব্য কর্ম যুদ্ধেই থাকত।

3.4

ন কর্মণামনারম্ভান্, নৈষ্কর্ম্যং(ম্) পুরুষোsশ্নুতে।
ন চ সন্ন্যসনাদেব, সিদ্ধিং(ম্) সমাধিগচ্ছতি॥4॥


কর্মারম্ভ না করলে মানুষের নৈষ্কর্ম্য অর্থাৎ যোগনিষ্ঠা সিদ্ধ হয় না এবং শুধুমাত্র কর্ম ত্যাগ করলেই সাংখ্যনিষ্ঠা সিদ্ধ হয় না।

বিবেচন:- কেবল কর্ম ত্যাগ করলে মানুষ কর্ম মুক্ত হতে পারে না। শারীরিক ভাবে কর্ম ত্যাগ হয়ে যায় কিন্তু মন থেকে নয়। 
সন্ত জ্ঞানেশ্বর মহারাজ এটাকে খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন:-

देखैं रथीं आरूढिजे । मग जरी निश्चळा बैसिजे ।
तरी चळु होऊनि हिंडिजे । परतंत्रा ॥ ६० ।।

চলমান গাড়িতে আমরা নিশ্চল বসে থাকলেও আমরা এক যায়গা থেকে আর এক জায়গায় পৌছেই তাই, কারণ গাড়ি তো এগিয়ে ই যেতে থাকে। সৃষ্টির রথে চড়ার সাথে সাথেই আমরা কর্ম চক্রের বন্ধনে এসে যাই। না করা, না পাওয়া, না জানা, কর্ম না করলে এই অবস্থা আসে না। 

কর্মের আচার না করে নিষ্কর্ম হতে পারে না, নিষ্ক্রিয়তা মানে জ্ঞানে ডুবে থাকা, ঐশ্বরিক বুদ্ধি নিয়ে কর্তব্য করার মাধ্যমেই জ্ঞানের পথে চলতে পারা যায়।

3.5



ন হি কশ্চিৎক্ষণমপি, জাতু তিষ্ঠত্যকর্মকৃৎ।
কার্যতে হ্যবশঃ(খ্) কর্ম , সর্বঃ(ফ্) প্রকৃতিজৈর্গুণৈঃ॥5॥

কোন ব্যক্তিই কোন অবস্থায় ক্ষণকালও কর্ম না করে থাকতে পারে না, কারণ প্রকৃতিজাত গুণসমূহের প্রভাবে অবশ হয়ে সকল প্রাণীই কর্ম করতে বাধ্য হয় ৷

 বিবেচন:- কর্মভূমিতে কর্মহীন হয়ে কোন প্রানিই থাকতে পারেন না। সে আমরা কিছু করি আর না করি, আমাদের ইন্দ্রিয় গুলো কাজ করতেই থাকে, তবেই তো আমরা শুনতে, বলতে, দেখতে আর শুঁকতে পারি। বসে থাকাও একটা কাজ। সত্ত্ব, রোজ আর তম এই তিনটি প্রকৃতি জাত গুন আর আমরা তার অধীনে থাকি। কাজ চলতেই থাকে, কাজ শেষ হবার পরও আমাদের মন তাতেই আবদ্ধ থাকে। 

বাহ্যিক কাজ না হলেও শরীরের ভিতরের বিপাক ক্রিয়া চলতেই থাকে, তেমন পাচন ক্রিয়া, হৃদ যন্ত্রের গতি, শ্বাস কার্য ইত্যাদি তখনও চলতে থাকে যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি। এই ক্রিয়াই জীবনকে সম্ভব করে তোলে। 

জ্ঞান অর্জন করা সত্ত্ব গুন, কাজ করা রজ গুন আর কাজে বাধা দেওয়া রজ গুন আর আমরা সবাই এই  গুনের অন্তর্গত।

3.6

কর্মেন্দ্রিয়াণি সংযম্য , য় আস্তে মনসা স্মরন্ ।
ইন্দ্রিয়ার্থান্বিমূঢ়াত্মা , মিথ্যাচারঃ (স্) স উচ্যতে॥6॥

যে কর্মেন্দ্রিয়গুলিকে (সব ইন্দ্রিয়গুলিকে) হঠতাপূর্বক রুদ্ধ করে মন দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলির বিষয় চিন্তা করতে থাকে, সেই মূঢ়মতি ব্যক্তিকে মিথ্যাচারী (মিথ্যা আচরণকারী) বলা হয় ৷

বিবেচন:- জ্ঞানেন্দ্রিয় আর কর্মেন্দ্রিয় সকল সর্বদা কাজ করতে থাকে। অজ্ঞ মানুষ ই ইন্দ্রিয়কে জোর করে আটকে রাখে কিন্তু মনে মনে ইন্দইয়এরই চিন্তা করে, এ কেবল মাত্র লোক দেখানো, ছলনা মাত্র।উপর থেকে নির্ল্তিপ্ত দেখালেও অন্তর থেকে লিপ্ত হয়।

এখানে দুই বন্ধুর জগন্নাথ দেবের দর্শনের প্রসঙ্গ ব্যাক্ত হল। দুই বন্ধু একবার জগন্নাথ দেবের দর্শনের জন্য বেরিয়েছেন। রাস্তায় এক জায়গায় নাচ হচ্ছিল, যা দেখে এক বন্ধু ভেবে থেমে গেল যে জগন্নাথ দেব তো ওখানেই থাকবেন , তাহলে কিছুক্ষন কেনই বা নাচের আনন্দ না নেব, তথচ আর এক বন্ধু দর্শনের জন্য এগিয়ে যায়, কিন্তু তার মন ওই নাচের মধ্যেই আটকে থাকে আর প্রথম বন্ধু জগন্নাথ দেবের ব্যাপারে ভাবতে থাকে।

3.7



যস্ত্বিন্দ্রিয়াণি মনসা, নিয়ম্যারভতেsর্জুন।
কর্মেন্দ্রিয়ৈঃ(খ্) কর্মযোগম্ , অসক্ত:(স্) স বিশিষ্য়তে॥7॥

হে অর্জুন! যে ব্যক্তি মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলি সংযত করে অনাসক্ত হয়ে (নিষ্কামভাবে) কর্মেন্দ্রিয়ের সাহায্যে কর্মযোগ অনুষ্ঠান করেন, তিনিই শ্ৰেষ্ঠ ৷

বিবেচন:- শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন যে হে অর্জুন, যে মানুষ মনের সাহায্যে ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে আর আসক্ত না হয়ে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নিজের কর্মের আচার করেন সেই শ্রেষ্ঠ।

যদি কোন ছেলেকে পড়তে বলা হয় কিন্তু তার মন যদি নিজের বন্ধু বা সোশাল মিডিয়ার দিকে থাকে তাহলে সে যতক্ষণই পড়তে থাকুক কোন লাভই হবেনা এইজন্য বলা হয় - 

work while you work, play while you play,
That's the way to be happy and gay.


লৌকিক  অথবা অলৌকিক লক্ষ প্রাপ্তির জন্য মনের একাগ্রতা প্রযোজন।

3.8

নিয়তং(ঙ)কুরু কর্ম ত্বং(ঙ), কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ।
শরীরযাত্রাপি চ তে, ন প্রসিদ্ধ্যেদকর্মণ:॥8॥

তুমি শাস্ত্রবিধিসম্মত (নির্দিষ্ট) কর্ম করো, কারণ কর্ম না করার থেকে কর্ম করা শ্রেষ্ঠ, কর্ম না করলে তোমার শরীর নির্বাহও হতে পারে না ৷

বিবেচন:- এই সৃষ্টিতে প্রত্যেকটি জীব নির্দিষ্ট কর্ম নিয়ে আসে। প্রত্যেকের কর্ম আর তার ফল নির্ধারিত থাকে, সুতরাং আমাদের নিজের জন্য নির্ধারিত কর্ম করতে থাকা উচিৎ, আর সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে। শরীর চালানোর জন্য কাজ করা প্রয়োজন। এই পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সবাই যদি নিজের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে তাহলে এই সৃষ্টির রূপ অন্যরকম হবে, কিন্তু আমরা মানুষ নিজেদের স্বার্থের জন্য অর্পিত কর্ম ভুলে সৃষ্টির বিনাশ করছি, না বুঝে কর্ম ত্যাগ করে জ্ঞানের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে, এর থেকে না তো কোন জ্ঞান প্রাপ্তি হয় না কোন কল্যাণ হয়।

পরবর্তী শ্লোকে ভগবান অর্জুনকে  যজ্ঞ সঙ্কল্পনার ধারনা দেন। যজ্ঞ মানে সঙ্গঠিত কর্ম, যেখানে প্রত্যেকে নিজ নিজ যোগ্যতা আর ক্ষমতা অনুযায়ী আহুতি দেন। 

গীতা পড়ুন, পড়ান, জীবনে আনুনএটাও একটি মহাযজ্ঞ , যাতে আমরা আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী সেবা বা আহুতি দিচ্ছি। সৃষ্টি আর মানুষ পরস্পর নির্ভরশীল। আমাদের মনে হয় এরকম নয়, কিন্তু আমাদের আশে পাশে যা কিছু আছে তাহা সৃষ্টির তৈরি, আমরা নিজেরা কিছুই তৈরি করতে পারি না। 
যজ্ঞের সঙ্কল্পনা, তাতে নিজের কল্যাণের জন্য মানুষের স্বভাব কেমন হওয়া উচিৎ? 
সেই পথ আর তার জ্ঞানেশ্বরী তে সুন্দর বর্ণনা পরবর্তী সত্র তে করা হবে। 
এর সাথে প্রার্থনার সাথে এই সারগর্বিত বিবেচনের সমাপ্তি হয় আর এর পর প্রশ্ন উত্তর।

প্রশ্ন কর্তা:- সপনা খান্ডেলবাল
প্রশ্ন:- কর্ম করার সময় একাগ্রতার প্রয়োজন। সাথে ঘরের কাজ ও করতে হয় তো কিভাবে করা যায়? 
উত্তর:- যে কাজ ই করবে সেটা পরমাত্মাকে সমর্পণ করে করুন। বিবেচন ও পরমাত্মার জন্যেই শুনছেন।পরমাত্মার সাথে সবসময় সম্পর্ক রাখতে হলে সারাক্ষণ উনার চিন্তা করা উচিত। যেমন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাতা পিতার সাথে বেশি সম্পর্ক থাকে, সেরকম পরমাত্মার সাথেও সবসময় সম্পর্ক ( অবিরত চিন্তন) 
রেখে যেতে হয়।

প্রশ্ন কর্তা:- ইক্ষাকু ওজ্ঞা
প্রশ্ন:- আমাদের রোজ ক্লাশের সময় স্তর বদলানোর পর সেটাই থাকবে নাকি বললে যাবে? 
উত্তর:- আপনার ক্লাশের সময় আপনার নির্বাচিত সময়ই থাকবে।

প্রশ্ন কর্তা:- কীর্তি দীক্ষিত
প্রশ্ন:- জন্মাষ্টমির দিন ঘরে লাড্ডু গোপাল প্রতিষ্ঠা করে কখনও কখনও শয়াণ দিতে ভুলে যাই, মনে দুঃখ হয় কি করা উচিৎ?
উত্তর:- ভগবানের প্রতি ভক্তি সবার উপরে। ভক্তির অনুভূতি প্রধান। এটা স্নেহপূর্ণ ভক্তি। আমি আমার সেরাটা করেছি, কিন্তু পরে কোন খেদ না থাকে, আক্ষেপ না থাকে। নিজের নাতিকে শোয়ানোর সময়ে ও এই ভাব রাখুন যে আমি লাড্ডু গোপালকে শয়াণ দিচ্ছি। ভগবান ভক্তির অনুভূতি দেখেন।