विवेचन सारांश
শ্রেষ্ঠ বিদ্যা এবং সর্বাধিক গোপন যোগ

ID: 4652
Bangla - বাংলা
শনিবার, 06 এপ্রিল 2024
অধ্যায় 9: রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগ
1/3 (শ্লোক 1-5)
ব্যাখ্যাকার: গীতা প্রবীণ মাননীয়া কবিতা বর্মা মহাশয়া


অধিবেশন শুরু হয় জগৎগুরু ভগবান শ্রী কৃষ্ণেকে প্রার্থনা জানিয়ে ও শুভ দীপ প্রজ্বলন করে।

এরপর গুরু, মহর্ষি বেদব্যাসজি এবং গীতা মাতার কাছে প্রার্থনা করা হয়।

সদাশিব সমারম্ভম্ শঙ্করাচার্য় মধ্যমম্
অস্মদ্ আচার্য় পর্য়ন্তম্ বন্দে গুরু পরম্পরাম্


ॐ পার্থায় প্রতিবোধিতাং(ম্) ভগবতা নারায়ণেন স্বয়ং(ম্)
ব্যাসেন​ গ্রথিতাং(ম্) পুরাণমুনিনা মধ্যেমহাভারতম্।
অদ্বৈতামৃতবার্ষিণীং(ম্) ভগবতীমষ্টাদশাধ্যায়িনী-
মম্ব​ ত্বামনুসন্দধামি ভগবদ্গীতে ভবদ্বেষিণীম্ ॥


ভগবদ্গীতার নবম অধ্যায়টি বিশেষ, কারণ এটি এই পবিত্র গ্রন্থের আঠারোটি অধ্যায়ের মাঝখানে রয়েছে। রাজা বিদ্যা মানে রাজকীয় জ্ঞান এবং রাজা গুহ্য সবচেয়ে গোপনীয় জ্ঞানকে ইঙ্গিত করে।
এই অধ্যায়ে ভগবান অর্জুনকে সবচেয়ে গোপনীয় জ্ঞান প্রকাশ করবেন। জ্ঞানেশ্বর মহারাজের লেখা জ্ঞানেশ্বরীতেও এটা তুলে ধরা হয়েছে যে, রাজা বিদ্যা রাজা গুহ্য যোগ হল ভগবদ্গীতার মধ্য এবং কেন্দ্রীয় অধ্যায়।

এই অধ্যায়ে জ্ঞান যোগ, ভক্তি যোগ এবং কর্ম যোগ সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। ঈশ্বর অধ্যায় শুরু করেন জ্ঞান যোগ দিয়ে, যেখানে তিনি পরম জ্ঞানের বর্ণনা করেছেন।


9.1

শ্রীভগবানুবাচ

ইদং(ন্) তু তে গুহ্যতমং(ম্), প্রবক্ষ্যাম্যনসূয়বে।
জ্ঞানং(ব্ঁ) বিজ্ঞানসহিতং(য়্ঁ), যজ্জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসেऽশুভাৎ॥9.1॥

শ্রীভগবান বললেন—এই অতি গুহ্য জ্ঞান-বিজ্ঞান দোষদৃষ্টিবর্জিত তোমাকে আমি পুনরায় জানাচ্ছি, যা জ্ঞাত হলে তুমি অশুভ থেকে অর্থাৎ জন্ম-মরণরূপ সংসার থেকে মুক্তিলাভ করবে ৷

'ইদম্' বলতে 'এই' (এই প্রসঙ্গে জ্ঞান) বোঝায়। এখানে ভগবান পূর্ববর্তী অধ্যায়ে অর্জুনকে যে জ্ঞান প্রদান করতে শুরু করেছিলেন তার উল্লেখ করেছেন। গুহ্যতমং বলতে ভগবান 'সবচেয়ে গোপন' বোঝাতে চেয়েছেন। এই জ্ঞান আমাদের সকলের কাছে থাকা অন্যান্য জাগতিক জ্ঞান ও বিজ্ঞানের তুলনায় আরো বেশী গোপনীয়। যে ব্যক্তি এই জ্ঞান অর্জন করে সে নিজেই জ্ঞানে পরিণত হয়। তিনি 'ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মৈব ভবতি' হয়ে যান (ব্রহ্মকে জানেন ব্রহ্ম নিজেই)। এই অধ্যায়ে ভগবান অর্জুনকে বিশদ ভাবে বুঝিয়েছেন কীভাবে একজন সচ্চিদানন্দ রূপ পরমাত্মা হতে পারেন। ভগবান বিশ্বাস করেন যে অর্জুনের এই জ্ঞান লাভের অধিকার আছে কারণ অর্জুন অনুসূয় অর্থাৎ এমন একজন ব্যক্তি যিনি অন্যের দোষ দেখতে পান না এবং তিনি ঈর্ষাকে জয় করেছেন। অর্জুন কোনো পরিস্থিতেই ঈর্ষান্বিত হননা।

যদিও কৌরবরা পাণ্ডবদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে, তাদের অপরিমেয় কষ্টের মধ্যে ফেলেছে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে, অর্জুন তাদের স্বজনম্ অর্থাৎ 'আমার নিজের লোক' হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি শ্রী কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্বজনম্ হি কথম্ হত্বা সুখিনঃ স্যাম মাধব’, অর্থাৎ আমি কিভাবে আমার নিজের আত্মীয়পরিজনকে হত্যা করবো। অর্জুন মানসিক ভাবে কোনোমতেই আত্মীয়দের সাথে যুদ্ধ করতে বা তাদের হত্যা করতে প্রস্তুত নয়।

আমরা অনেক সময়ে ভুল ভাবে শোনা কথা তৎক্ষণাৎ বিশ্বাস করে ফেলি। আমরা পুরো ঘটনা না জেনেশুনে কোনো মানুষ বা ঘটনার প্রতি বিচারপ্রবণ হয়ে পড়ি, শুধুমাত্র কিছু অবান্তর শোনা কথার উপর ভিত্তি করে।

যেমন অনেকেই শ্রীরামকে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে শম্বুক মুনিকে শূদ্র বর্ণের হওয়ার কারণে হত্যা করার জন্য দায়ী করেন। রামায়ণে শম্বুক মুনির ঘটনার আগে সবরী ঘটনা এবং নিষাদরাজের ঘটনা আছে, যেখানে শ্রীরাম অকল্পনীয় মমতা ও ভালবাসা প্রদর্শন করেছেন। এইটা মেনে নেওয়া কঠিন যে, যাঁর সমস্ত জীবের প্রতি এত সহানুভূতি, সেই শ্রীরাম হঠাৎ শম্বুক মুনিকে শুধু তার শূদ্র বর্ণের হওয়ার কারণে হত্যা করবেন। কেউ রামায়ণ পড়লেই বুঝবেন কারণটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। শ্রীরাম শম্বুক মুনিকে হত্যা করেছিলেন কারণ শম্বুক মুনি তপস্যা করছিল, যাতে তিনি তার নশ্বর দেহ নিয়ে স্বর্গে যাওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন, যা প্রাকৃতিক নিয়মের সম্পূর্ণ বিরোধী। প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কর্ম সাধারণভাবে জীবের ক্ষতি করে এবং কষ্টের কারণ হতে পারে।তাই শম্বুক মুনিকে হত্যা করা ছাড়া শ্রীরামের কাছে আর অন্য কোন উপায় ছিল না।

আমাদের সবার স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের ক্ষমতা রাখা উচিত। যদিও বা আমাদের অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে হয়, সেই ব্যক্তি যেন একজন বিশেষজ্ঞ হোন। শ্রী ভগবান স্পষ্টভাবে বলেছেন আমাদের জীবনে পথপ্রদর্শনের জন্য এই বিশেষজ্ঞ হচ্ছে আমাদের শাস্ত্র বা এমন কোনো ব্যক্তি যিনি উচ্চতর চিন্তার অধিকারী এবং একজন পণ্ডিত। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্যের দোষ না খুঁজে তাদের মধ্যে ভালো বৈশিষ্টকে খোঁজা । আমাদের অবশ্যই ভুললে চলবে না যে আমাদের নিজেদের মধ্যে প্রচুর দোষ ত্রুটি আছে, যা অনেকসময় অন্যরা মার্জনা করে দেন।

ঈশ্বর বলেছেন যে আমরা এই অতি গোপন জ্ঞান তখনই অর্জন করতে পারি যখন আমরা অর্জুনের মতো অনুসূয় (হিংসা ও বিদ্বেষহীন) হতে পারি। যতক্ষণ না আমরা এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট অর্জন করতে পারছি, ততক্ষন আমরা এই জ্ঞান প্রাপ্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবো না।

পরম পূজনীয় গোবিন্দ দেব গিরি জী মহারাজ বলেছেন, গীতা পড়ুন, পড়ান, জীবনে আনুন। তিনি আমাদের গীতা শিখতে, গীতা শেখাতে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে আমাদের জীবনযাত্রায় গীতাকে আত্মস্থ করার পরামর্শ দিয়েছেন। যখন কেউ এটি করতে সক্ষম হয়, তখন সে সমস্ত বিকার (ত্রুটি) কাটিয়ে উঠে পরম জ্ঞান অর্জন করার জন্য যে প্রুস্তুতি দরকার, তার জন্য সক্ষম হয়।

ঈশ্বর অর্জুনকে জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য বোঝান। জ্ঞান তাত্ত্বিক শিক্ষাকে বোঝায় আর বিজ্ঞান বোঝায় অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা।ধরুন, আমরা যখন গীতা পড়ি, তখন আমরা ভগবান দ্বারা প্রদত্ত তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করি। কিন্তু যখন আমরা আমাদের সাধনার মাধ্যমে, গীতায় বিহিত পদ্ধতিতে আমাদের জীবনযাপন শুরু করি, তখন আমরা বিজ্ঞান বা অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা অর্জন করি। জ্ঞান হলো আমাদের অর্জিত তাত্ত্বিক শিক্ষা আর বিজ্ঞান হলো এই অর্জিত শিক্ষা বা জ্ঞান আমাদের বাস্তবিক জীবন ক্রিয়ায় ব্যবহার করা।

উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তির কথা বলা যাক, যাকে একটি নতুন মিষ্টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মিষ্টির স্বাদ সম্পর্কে তাকে অনেক ব্যাখ্যা বিবরণ প্রদান করতে পারি, কিন্তু সেই মিষ্টির আসল স্বাদ সেই ব্যক্তিটি তখনি পাবে যখন সে ওই মিষ্টির একটি টুকরো আস্বাদন করবে। কোন বিশদ বিবরণ তাকে মিষ্টির স্বাদের সেই অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারবে না, যা ওই এক টুকরো মিষ্টি খাওয়া করবে।

একইভাবে, পরম জ্ঞান তাত্ত্বিকভাবে সম্পূর্ণ বোঝা সম্ভবপর নয়। তাকে পুরোপুরি বুঝতে হলে আমাদের তাকে অনুভব করতে হবে, তার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।

ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ঊনত্রিশ শ্লোকে ভগবান বলেছেন,

আশ্চর্য়বৎপশ্যতি কশ্চিদেনমাশ্চর্য়বদ্বদতি তথৈব চান্যঃ।
আশ্চর্য়বচ্চৈনমন্যঃ শৃণোতি শ্রুত্বাপ্যেনং বেদ ন চৈব কশ্চিৎ ॥ 29 ॥

যেখানে তিঁনি ব্যাখ্যা করেছেন যে ভগবদ্গীতায় প্রদত্ত জ্ঞান তিনিই প্রদান করতে পারেন যিনি সেই জ্ঞান এর বিস্ময়কর অনুভূতি অনুভব করেছেন। আর যিনি এই জ্ঞান গ্রহণ করতে সক্ষম হোন, তিনিও সেই জ্ঞান লাভের বিস্ময়ে বিভোর থাকেন।

ভগবদ্গীতা থেকে পাওয়া জ্ঞান একজনকে ভগবানের কাছাকাছি নিয়ে আসে। তাকে আধ্যাত্মিক পথে চলে মোক্ষ অর্জন করতে সাহায্য করে। সে সংসারচক্র অর্থাৎ সংসার বা জাগতিক আসক্তি এবং সংশ্লিষ্ট বেদনা ও দুঃখ থেকে চিরন্তন মুক্তি পেতে সক্ষম হয়। এই জগতে এমন কেউ নেই যে এই পার্থিব দুঃখ যন্ত্রনা থেকে মুক্ত। এমনকি মানবদেহে শ্রীরাম এবং শ্রীকৃষ্ণকেও এই দুঃখ বেদনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।

তাই এই জ্ঞান, যা সেই জাগতিক দুঃখ বেদনা থেকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, তা অতিবিশিষ্ট।

9.2

রাজবিদ্যা রাজগুহ্যং(ম্), পবিত্রমিদমুত্তমম্
প্রত্যক্ষাবগমং(ন্) ধর্ম্যং(ম্), সুসুখং(ঙ) কর্তুমব্যয়ম্।।2।।

এই জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্থাৎ সমগ্ররূপ সমস্ত বিদ্যা এবং সমস্ত গোপনীয়তার রাজা অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ। এটি অত্যন্ত পবিত্র ও সর্বোৎকৃষ্ট এবং এর ফলও প্রত্যক্ষ। এটি ধর্মময়, অবিনাশী এবং সহজসাধ্য অর্থাৎ এটি লাভ করা অত্যন্ত সহজ ৷

এই শ্লোকের শুরুতে ভগবান পরম জ্ঞানকে মহিমান্বিত করেছেন। এই জ্ঞান (তাত্ত্বিক এবং অভিজ্ঞতামূলক উভয়েরই) একটি পরম পবিত্র অতি গোপনীয় এবং রাজকীয় জ্ঞান।

এই জ্ঞানকে সর্বোত্তম বলা হয়েছে কারণ যে ব্যক্তি এই জ্ঞান উপলব্ধি করেছেন, তিনি সর্বজ্ঞ বলে বিবেচিত হোন। এই পরম জ্ঞান অর্জনের পরে, অন্যান্য সমস্ত জ্ঞান অপ্রাসঙ্গিক, মায়াময় এবং অস্থায়ী বলে মনে হয়। এই জ্ঞান মানুষকে অন্তরের প্রসন্নতা প্রদান করে। 

চান্দোগ্য উপনিষদে একটি শ্লোক আছে ‘য়েনাশ্রুততং শ্রুতং ভবতি’ যার অর্থ যা জানার পর সব কিছু জেনে যাবে, অন্যান্য জ্ঞান নিষ্ফল মনে হয়। ধরুন, এক ব্যক্তি একটি দুঃস্বপ্ন দেখলো এবং সেই স্বপ্নের উৎস সন্ধান করতে লাগলো। কিন্তু জেগে ওঠার পর সেই ব্যক্তি কি আর সেই সন্ধান চালিয়ে যাবে? অবশ্যই না! সে অনুসন্ধান করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কারণ সে জানে স্বপ্ন ছিল একটি বিভ্রম বা মায়া এবং সেই হেতু অবাস্তব।

একই ভাবে, একবার কেউ সর্বোত্তম জ্ঞান অর্জন করে ফেললে, সে অন্য ধরনের জ্ঞানের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়বে।

মানুষ দুঃখ ও বেদনার শিকার হয়, কারণ তার অজ্ঞতা তাকে বিশ্বাস করায় যে তার আসল সুখ পার্থিব আনন্দ থেকে আসে, কিন্তু প্রকৃত সুখ আসে মানুষের নিজের অন্তর্নিহিত গুণ থেকে।

আসুন আমরা এটা একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝবার চেষ্টা করি। একটি বিদ্যুৎচালিত পাখা বনবন করে ঘুরে আমাদের ঠান্ডা বাতাস প্রদান করে। আমরা অনুমান করি যে সেই পাখা আমাদের শীতল বাতাস দেওয়ার জন্য দায়ী। কিন্তু একটি পাখা নিজে থেকে ঘুরতে পারে না। পাখার মধ্যে চলমান বিদ্যুৎ, পাখাকে ঘোড়ায় এবং তাতে বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে আমাদের কাছে আসে।

একই ভাবে, আমরা ভুলবশত বিশ্বাস করি যে আমাদের সুখ পার্থিব আনন্দ থেকে আসে, কিন্তু প্রকৃত সুখ আসলে আমাদের নিজেদের অন্তর্নিহিত গুণ (যেমন এখানে বিদ্যুৎ) থেকে আসে। সংসার বা জাগতিক বিষয়বস্তু আমাদেরকে দুঃখ এবং বেদনা প্রদান করে কিন্তু ধ্যান এবং গীতা পাঠের মাধ্যমে আমাদের নিজের আত্মার সাথে বন্ধন হয়, যা আমাদের শান্তি এবং প্রসন্নতা প্রদান করে।

পঞ্চদশ অধ্যায়ের সপ্তম শ্লোকে, ঈশ্বর বলেছেন মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ অর্থাৎ সকল জীবই পরমাত্মার অংশ।

পরমাত্মা যদি আনন্দস্বরূপ (সুখের প্রতীক) হন তবে আমরাও আনন্দস্বরূপ। শাস্ত্র অনুসারে, বায়ু, জল এবং অগ্নির শোধনকারী ক্ষমতা আছে। কিন্তু তা অস্থায়ী এবং শুদ্ধিকরণের পরে পুনরায় তা অশুদ্ধ হয় যায়। এই ঐশ্বরিক জ্ঞান হল চূড়ান্ত এবং স্থায়ী শুদ্ধকারী। এই জ্ঞান শুদ্ধতম শোধনকারী কারণ এতে সমস্ত বিকার বা ত্রুটি ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে।

ঈশ্বর আমাদের কাছে প্রকাশ করেন যে আমরা সকলেই একাধিক জীবনের মধ্য দিয়ে এসেছি এবং প্রতিটি জীবনে আমরা আমাদের কর্মফল সঞ্চয় করেছি, যার মধ্যে কিছু ভাল এবং কিছু ভাল নয়। প্রভু আমাদের এই সমস্ত পূর্বজন্মের জীবন সম্পর্কে অবগত। এই ঐশ্বরিক জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে, আমাদের পূর্বের সমস্ত কর্মফল বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং আমরা আমাদের পূর্বের কর্ম এবং তার পরিণতি অর্থাৎ জাগতিক আসক্তি থেকে মুক্তি পাই। 

হিংসা ও দ্বেষভাব হবার সাথে সাথে এই গোপন জ্ঞান লাভের আরেকটি শর্ত হল অতীতের ধর্ম ত্যাগ করা। ভগবদ্গীতায় ধর্ম শব্দটি অনেকবার ব্যবহৃত হয়েছে এবং তার অর্থ প্রাসঙ্গিক ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে, ভগবান যখন ধর্ম বলেছেন তখন তিনি ভাল কর্ম এবং মন্দ কর্ম উভয়কেই নির্দেশ করেছেন। তিনি মানুষকে বলেছেন প্রভুর কাছে নিশর্ত আত্মসমর্পণ করতে। তবে এই জ্ঞান শুধুমাত্র পবিত্র বই পড়ে অর্জন করা যাবে না কারণ এটি স্বজ্ঞাত জ্ঞান।

গীতা পরিবারের প্রশিক্ষকরা যখন ক্লাসে গীতা শেখান, তারা তখন এই প্রক্রিয়ায় আসলে সাধনা (অনুশীলন) করেন। এটি তাদের চিত্তকে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং তাদের মন পরম জ্ঞান লাভ করার ও বোঝার যোগ্য হয়ে ওঠে। মন একবার সাধনার মাধ্যমে জ্ঞান লাভের যোগ্য হয়ে গেলে, সেই ব্যক্তির জীবনে গীতা এবং তাতে প্রদত্ত জ্ঞান চলে আসে। আমাদের পরম পূজ্য স্বামীজির বর্ণনা অনুসারে, এই অবস্থায় পৌঁছানোর একমাত্র পথ হল কর্ম যোগ। এই পথ অবলম্বন করলে, মানুষ পরম জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়।

আমাদের ভারতবর্ষের অনেক সাধুমহাত্মাগণ, যেমন মীরাবাঈ, কবীর এবং আরও অনেকে কোনো স্কুল বা কলেজে পড়েননি। তারপরও তাদের কবিতা বেদান্তের নীতিতে পরিপূর্ণ। প্রচলিত সাক্ষরতা তাদের না থাকলেও তারা বেদান্ত সম্পর্কে এত গভীর জ্ঞান কীভাবে লাভ করলেন? তারা তাদের অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা এই জ্ঞান অর্জন করেছেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে বেদের নীতিগুলি আসলে মানুষের দ্বারা লিখিত নয়। তা মহাবিশ্বে শুরু থেকেই বিদ্যমান। আমাদের মুনি-ঋষিরা শুদ্ধ মনে তাদের ধ্যান এবং সাধনার মাধ্যমে বিশ্বজগত থেকে এই জ্ঞান সংগ্রহ করেছেন। তারা তাদের সাধনার মাধ্যমে বিশুদ্ধ চিত্ত লাভ করেছেন এবং বিকারের (কাম, ক্রোধ, লোভ অহংকার, ভ্রম এবং ঈর্ষা) উপর বিজয় অর্জন করেছেন।

যে কর্ম অন্যের ক্ষতি করে না এবং ঈশ্বর কে প্রসন্ন করে, সেই কর্মের মাধ্যমে মানুষ সহজেই ধর্ম লাভ করতে পারে। কোন কঠোর তপস্যা করার চেয়ে ভগবানের প্রতি সেবার মনোভাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম ও অধর্মের মধ্যে পার্থক্য বোঝা সহজ নয়। কখনও কখনও সত্য অধর্ম হয়ে উঠতে পারে এবং মিথ্যা ধর্মে পরিণত হতে পারে।

মহাভারতে, একজন ঋষির গল্প আছে যিনি কখনও মিথ্যা কথা বলবেন না বলে সংকল্প করেছিলেন। একদিন কিছু গ্রামবাসী, যাদের ভয়ঙ্কর ডাকাত দল তাড়া করছিলো, সেই ঋষির কাছে আসে। তারা ঋষিকে অনুরোধ করে যেন তিনি ডাকাতদল কে তাদের অবস্থান না জানান। এই বলে সেই গ্রামবাসীরা কিছু গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরে। কিছুক্ষণ পর সেখানে ডাকাতদল এসে পৌঁছয়ে এবং ঋষিকে গ্রামবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। কখনই মিথ্যা না বলার সিদ্ধান্তে অটল, ঋষি ডাকাতদের বলে দেন গ্রামবাসীরা কোথায় লুকিয়ে আছে। ঋষির এই সত্য,মানুষের রক্তপাত এবং মৃত্যুর কারণ হয় দাঁড়ায়ে।

অবশেষে ঋষি মারা যান এবং তার নরকবাস হয়। তিনি এতে অত্যন্ত বিস্মিত হোন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে তিনি সর্বদা সত্যের পথে জীবনযাপন করায় তার স্বর্গলাভ সুনিশ্চিত। তখন ঈশ্বর তাকে বোঝান যে, তিনি যদিও ধার্মিক ও সত্যের জীবনযাপন করেছিলেন, কিন্তু তার সত্য অন্যদের বেদনা ও ক্ষতির কারণ হয়ে ছিল, এবং এই কারণেই তার নরকবাস।

মিথ্যা ধর্মে পরিণত হয়েছিল যখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়ে যুধিষ্টির অশ্বত্থামার কথা বলেছিলেন।

একবার প্রাপ্ত পরম জ্ঞান চিরকাল সাধকের কাছে থাকে। রাজবিদ্যারাজগুহ্য যোগের জ্ঞান একবার অর্জিত হলে তা অস্থায়ী অন্যান্য জ্ঞানের মত বিলুপ্ত হয় যায়না। এমনকি ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও, এই জ্ঞান তার আত্মা ধারণ করে রাখে।

9.3

অশ্রদ্দধানাঃ(ফ্) পুরুষা, ধর্মস্যাস্য পরন্তপ
অপ্রাপ্য মাং(ন্) নিবর্তন্তে, মৃত্যুসংসারবর্ত্মনি।।3।।

হে পরন্তপ ! এই ধর্মের মহিমার প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিরা আমাকে প্রাপ্ত না হয়ে মৃত্যুরূপ সংসারপথে চলতে থাকে অর্থাৎ বারংবার জন্মায় ও মৃত্যুবরণ করে ৷

এই শ্লোকে ভগবান অর্জুনকে বলেন যে যারা ধর্মে বিশ্বাস রাখে না, তারা ঈশ্বরের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় এবং জন্ম ও মৃত্যুর চক্রাকারে আটকা পড়ে থাকে। দ্বাদশ অধ্যায়ে, ভগবান জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে বিশ্বাসীদের উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নবম অধ্যায়ে তিনি বলেছেন যে যারা তাঁর ধর্ম জ্ঞানে বিশ্বাস করে না তারা জন্ম মৃত্যু চক্রের ফাঁদে আটকে থাকবে। আমাদের জাগতিক আসক্তি, আমাদেরকে সুখ দিতে পারে কিন্তু তা হয় ক্ষণস্থায়ী এবং শেষ পর্যন্ত দুঃখের দিকে নিয়ে যায়। চিরন্তন সুখ পাওয়ার একমাত্র উপায় হল তা অন্তর থেকে অর্জন করা। এটি তখনই ঘটবে যখন একজন তার নিজের আত্মার সাথে এবং ফলস্বরুপে পরমাত্মার সাথে একাত্ম হতে পারে।

গীতা পরিবারের সেবীরা সেবা প্রদানের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন কারণ তাঁরা এই কাজকে শ্রীকৃষ্ণের জন্য পবিত্র কাজ করা মনে করেন, ঈশ্বরের প্রদত্ত জ্ঞান লোকের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে তাঁরা অভ্যন্তরীণ তৃপ্তি, শান্তি এবং সুখ অনুভব করেন।

মনের শান্তি সুখের পূর্বশর্ত। স্বামীজী বলেছেন, এই শান্তি আসে সাধনা, নিঃস্বার্থ সেবা এবং স্বাধ্যায় (শাস্ত্রের স্ব-অধ্যয়ন) আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিয়ে আসতে পারলে। যখন আমরা আমাদের জীবনে এই তিনটির ভারসাম্য খুঁজে পাই, তখনই আমরা অভ্যন্তরীণ সুখ অর্জন করতে সক্ষম হই।

9.4

ময়া ততমিদং(ম্) সর্বং(ঞ), জগদব্যক্তমূর্তিনা
মৎস্থানি সর্বভূতানি, ন চাহং(ন্) তেষ্ববস্থিতঃ।।4।।

সমস্ত জগতে আমি অব্যক্তস্বরূপে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছি। সমস্ত প্রাণী আমাতে অবস্থিত। কিন্তু আমি সে সবে অবস্থিত নই এবং ওই প্রাণীরাও আমাতে অবস্থান করে না ৷

ঈশ্বর বলছেন, ‘এই সমগ্র বিশ্বজগৎ আমার দ্বারা অব্যক্ত দেবত্বরূপে বিরাজমান, কিন্তু, সত্যি বলতে, আমি তাদের মধ্যে উপস্থিত নই’।

শ্রী ভগবান বলেছেন যে সমগ্র বিশ্ব তাঁর উপস্থিতিতে পরিব্যাপ্ত। কিন্তু সর্বব্যাপী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে দেখা বা অনুভব করা যায় না। তিনি সর্বত্র এবং সমস্ত প্রাণীর মধ্যে থাকা সত্ত্বেও, প্রাণীরা নশ্বর কিন্তু তিঁনি অবিনশ্বর, চিরন্তন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি।

একটি জল ভরা পাত্রের কথা ভাবা যাক। যদি কেউ পাত্রটিকে নাড়ায় তাতে তরঙ্গ দেখা যাবে। এটা বলাই যেতে পারে তরঙ্গের মধ্যে জল আছে কারণ তা জল থেকেই উৎপন্ন হচ্ছে। এবং এও বললে ভুল হবে না যে জলের ওপর তরঙ্গ আছে। এই উদাহরণটি প্রসারিত করে আমরা বলতে পারি সংসার হল তরঙ্গ যা জলস্বরূপ পরমাত্মার ওপর নির্ভরশীল।

9.5

ন চ মৎস্থানি ভূতানি, পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্
ভূতভৃন্ন চ ভূতস্থো, মমাত্মা ভূতভাবনঃ।।5।।

আমার এই ঐশ্বরিক যোগ (সামর্থ্য) দর্শন কর। সকল প্রাণীর উৎপাদক এবং তাদের ধারক ও পোষক হলেও আমার স্বরূপ ওইসব প্রাণীতে অবস্থিত নয় ৷

ভগবান বলছেন ঐ সমস্ত প্রাণী আমার মধ্যে থাকে না; কিন্তু আমার ঐশ্বরিক যোগের বিস্ময়কর শক্তি দেখো; যদিও আমি সত্তার ধারক এবং স্রষ্টা, কিন্তু আমি বাস্তবে সেই প্রাণীর মধ্যে বাস করি না। আবার তিঁনি এও  বলেছেন যে সমস্ত জীব তাঁর মধ্যে বাস করলেও তিনি তাদের দ্বারা বা তাদের বস্তুগত প্রকৃতির দ্বারা প্রাভাবিত হন না।

পাত্রে জল এবং তরঙ্গের উদাহরণে ফিরে যাওয়া যাক। জলের ওপরে তরঙ্গের উপস্থিতি, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের উপর সংসারের উপস্থিতির অনুরূপ। যখন পাত্রটি স্থির থাকে, তখন কোনো তরঙ্গ দখা যায় না, দেখা যায় শুধু জল। তরঙ্গ তাই ক্ষণস্থায়ী এবং ধ্বংসাত্মক। তারা ক্রমাগত সৃষ্ট এবং ধ্বংস হচ্ছে। যা স্থায়ী তা হল জল যা বিদ্যমান থাকে তরঙ্গের উপস্থিতি নির্বিশেষে। একইভাবে, ভগবান শাশ্বত এবং এই জাগতিক সংসারের ধারক। তিনি সকল জীবের স্রষ্টা ও লালনকর্তা, কিন্তু তিনি তাদের মধ্যে বাস করেন না।

তরঙ্গের মতো সংসারও একটি মায়া। যা প্রকৃত এবং সত্য তা হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। অজ্ঞজনের জন্য তিঁনিই সকল প্রাণীর পরম আশ্রয়।

এরই সাথে নবম অধ্যায়ের বিবেচনা সভার এই পর্ব শেষ হয়। এর পর সাধকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়ে এবং সর্বশেষে ভগবানের কাছে প্রার্থনা এবং হনুমান চালিসা পাঠের মাধ্যমে সভা সমাপ্ত হয়।


:: প্রশ্নোত্তর পর্ব ::

রেখা দিদি

প্রশ্ন: অন্য লোক কি বলছে তার দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত না হওয়া যায়? 
উত্তর: আমরা যদি সেবা, সাধনা এবং স্বাধ্যায়ে (শাস্ত্র পাঠ) নিমগ্ন হই, তবে অন্যরা আমাদের সম্পর্কে কী ভাবে এবং বলে তা সমন্ধে ভাবার সময় আমরা পাব না। তাছাড়া এই ধরনের কথাবার্তা উপেক্ষা করতে পারলে ভালো।


শশী দিদি

প্রশ্ন: আমরা কিভাবে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছতে পারি?
উত্তর: আমাদের সাধনা করতে হবে এবং আমাদের বিকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যখন আমরা তা করতে পারি, তখন আমাদের মন শুদ্ধ হয় এবং আমরা পরম জ্ঞান লাভের যোগ্যতা অর্জন করি। একবার এটি পেয়ে গেলে আমরা পরমাত্মার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে পারি। সুতরাং, প্রথম ধাপ হল সাধনা করা এবং আমাদের কামঃ, ক্রোধঃ, লোভঃ, মদঃ, মোহঃ এবং মাৎসরঃ-এর উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়া।


দীপক ভালেরাও দাদা 

প্রশ্ন: গীতা শেখার ৩টি দিক আছে – উচ্চারণ, আবৃত্তি এবং অর্থ। কোনটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত?
উত্তর: প্রথমে আবৃত্তি শেখার চেষ্টা করুন, তারপর মুখস্থ করুন। এর মাধ্যমে জীবনে গীতা বোঝার এবং অনুসরণ করার যোগ্যতা আসবে। গীতা মুখস্থ না করা পর্যন্ত, তার শিক্ষা পুরোপুরি ভাবে উপলব্ধি করা যাবে না।এর ফলে গীতা পঠনপাঠনের ওপর আত্মবিশ্বাসী হওয়া যাবে না, এবং বিভিন্ন অধ্যায়ে বাণীগুলোর মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করতে অসুবিধা হবে।


ডাঃ উষা হোলানি দিদি

প্রশ্ন: আমরা যখন আমাদের জাগতিক আকর্ষণের সাথে এতটাই যুক্ত, তখন কীভাবে আমরা সেবা, সৎসঙ্গ ইত্যাদির সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি?
উত্তর: প্রথমত, আমাদের নিজস্ব প্রয়োজন বুঝতে হবে। আমাদের নিত্যকর্ম করা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তারপর আমাদের কাছে যে অবসর সময় থাকে, দেখতে হবে তা আমরা কীভাবে কাটাচ্ছি। সেই সময়টা আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে না সৎসঙ্গ বা সেবায় ব্যাহিত করছি। এই ধরনের বিষয়ে পথ প্রদর্শন করার জন্য একজন গুরু থাকা আবশ্যক।


শ্যামলা রাজারাম দিদি

প্রশ্ন: ঈশ্বর যখন সকলকে সৃষ্টি করেছেন এবং সকলের মধ্যে বাস করেন তখন মানুষ কেন ভিন্ন?
উত্তর: প্রথমত, মহাবিশ্ব ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট নয়, প্রকৃতি অর্থাৎ মায়ার দ্বারা সৃষ্ট। ভগবান সকলের মধ্যে অবস্থান করেন ঠিকই, কিন্তু তিঁনি তা অদৃশ্য রূপে করেন। বিভিন্ন ব্যক্তি যা করেন তা তিনি তার গুণ অনুসারে করেন, যা আমরা সপ্তদশ অধ্যায়ে শিখেছি।


ইয়াশিকা দিদি

প্রশ্ন: যদি ঈশ্বর প্রকৃতির চেয়ে বেশি শক্তিশালী, তাহলে তিঁনি প্রকৃতিকে বদলাতে পারেন না কেন?
উত্তর: ভগবান নিশ্চই পারেন, কিন্তু এখানে তিনি শ্রীকৃষ্ণের রূপে আছেন, যিনি একজন নশ্বর সত্তা এবং তাই পরিবর্তন করবেন না।


অনুপ মজুমদার দাদা

প্রশ্ন: জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রজ্ঞানের মধ্যে কি সম্পর্ক ? আমরা কিভাবে এক থেকে পরের দিকে যেতে পারি?
উত্তর: তিনটিরই আলাদা প্রেক্ষাপট রয়েছে এবং তাই অর্থ সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে। জ্ঞান হল তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং বিজ্ঞান হল অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞান। অন্যদিকে প্রজ্ঞান বুদ্ধির বা আত্মজ্ঞানের প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়।