विवेचन सारांश
সত্য ও অসত্য বিচার জ্ঞান ই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান
সনাতন ধর্মের পুণ্য পরম্পরা অনুসারে মঙ্গলাচরণ, হনুমান চালিসা পাঠ, দীপ প্রজ্জ্বলন, শ্রীকৃষ্ণ বন্দনা এবং গুরু প্রণাম করে বিবেচন সত্র আরম্ভ হল। আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যের কারণে এবং শ্রীভগবানের কৃপায় শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠের সাথে যুক্ত হতে পেরেছি এবং একেবারে শেষ স্তরে পৌঁছে গেছি।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা তুল্য কল্যাণকারী আর কোন গ্রন্থ নেই। শত শত বছর ধরে বহু মহাপুরুষেরা এই কথা স্বীকার করেছেন।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার প্রথম অধ্যায় অর্জুনবিষাদযোগ এ অর্জুনের বিষন্নতার বর্ণনা আছে। মান্য করা হয় যে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সপ্তম শ্লোক থেকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা আরম্ভ হয়েছে, মহর্ষি আদি শঙ্করাচার্যের মতে দ্বিতীয় অধ্যায়ের এগারো নম্বর শ্লোক থেকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শুরু হয়েছে । প্রশ্ন আসতে পারে... তাহলে গীতায় সাতশো শ্লোক আছে না নেই ? আসলে এটা বুঝতে হবে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সাত নম্বর শ্লোক অবধি গীতার প্রসঙ্গ। আট নম্বর থেকে দশ অবধি সন্দর্ভ এবং এগারো নম্বর শ্লোক থেকে গীতার অর্থ শুরু হয়েছে।
অর্জুন বিষাদে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন, ধৃতরাষ্ট্র ও বিষন্ন ছিলেন। কিন্তু দুজনের বিষাদ ভিন্ন ধরনের। আবার শোক, মোহ এবং ভয় এই তিনটি শব্দ আলাদা হলেও বোঝার ক্ষেত্রে একই লাগে। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা ভয় এর ব্যাপারে বলেন -- আগে ঘটে গেছে এমন ঘটনা, যা আমাদের মনকে ব্যথিত করেছে -- তা ই হলো শোক, বর্তমানে যা ব্যথিত করে -- তা হলো মোহ এবং ভবিষ্যতের চিন্তা, যা মনকে উদবিগ্ন করে, তা থেকে ভয় জন্ম নেয়।
অর্জুন দ্বিতীয় অধ্যায়ে সপ্তম শ্লোকে ভগবান কে গুরু মেনে মিনতি করেছেন -- আমার জন্য যেটা শ্রেয়, যা কল্যাণকর... তা ই বলুন।
অনেক মানুষই নিজেকে অর্জুনের সাথে মেলানোর চেষ্টা করে। অর্জুনের মতো হতে হলে তাঁর মতো যোগ্যতার প্রয়োজন। তিনি পরমেশ্বরের কাছে শুধু নিজের জন্য যা উত্তম তাই মিনতি করেননি, বরং যা উত্তম, তার জ্ঞান প্রাপ্ত করতে চেয়েছেন। প্রেয় এবং শ্রেয়র মধ্যে শ্রেয় কি তা খুঁজে নেওয়া ই অর্জুনের সমতুল্য করতে পারে।
এগারো নম্বর শ্লোকে শ্রী ভগবান বলেছেন --
এই শ্লোকে প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ শব্দটিকে শ্রীভগবান প্রাধান্য দিয়েছেন । আজকের যুগে আমরা গুগল থেকে অনেক কিছু সম্বন্ধে জানতে পারি। কিন্তু এইসব তথ্য আমাদের কাজে লাগবে না... যতক্ষণ না তা আমরা প্রয়োগ করতে পারি। এটা বোঝার জন্য একটা সুন্দর গল্প বলা যায় ।
কোন এক গ্রামে একজন একটা কারখানা করবেন বলে মনে করলেন। তিনি তার ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন আর্কিটেকচার পড়তে। ভেবেছিলেন, ছেলে এসে সেই কারখানা চালাবে। ছেলে শুধু পড়া করেছে, কিন্তু ব্যবহারিক জ্ঞান পায়নি। ইতিমধ্যে ভদ্রলোক বিদেশ থেকে একটি ভারী মেশিন আনিয়েছেন কারখানার জন্য। তাঁর ছেলে ফিরে এসে সেই কারখানা দেখে খুবই অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এদিকে সেই মেশিন বসানোর জন্য মাটিতে বিশাল গর্ত তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মেশিন টা সেই গর্তে প্রতিস্থাপিত করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। কিছুতেই সেখানে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ক্রেনের সাহায্যেও সেটা করা যাচ্ছে না। ছেলেটি তার বিদেশের সব বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করেও এর কোন সমাধান পাওয়া গেল না। কিন্তু স্থানীয় একজন শ্রমিক এটা লক্ষ্য করে তাকে জানালো যে সে এর সমাধান করতে পারবে। শুধু জিজ্ঞাসা করল... যদি মেশিনের কিছু অংশ কিছুক্ষণ জলের মধ্যে থাকে, তাহলে কি ক্ষতি হতে পারে ? তারপর সে তার কৌশলের কথা বলল... যদি গর্তটা বরফ দিয়ে ভর্তি করা হয়, তাহলে মেশিন টা তার উপর রাখা সুবিধা হবে। বরফ গলতে থাকবে এবং মেশিন টা আস্তে আস্তে ওই গর্তে ঢুকে যাবে। পরে পাম্প করে জল টা বার করে দিলেই হবে। যুবক টি এই অশিক্ষিত শ্রমিকের বুদ্ধির তারিফ করতে বাধ্য হলো। এটাই হলো কার্যকরী শিক্ষা।
এই কাহিনী থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ওই যুবকের জ্ঞান বইয়ের মধ্যে সীমিত, কিন্তু ওই শ্রমিকের ব্যবহারিক জ্ঞান বইয়ের জ্ঞানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ক্রেন আবিষ্কারের আগেও নির্মাণ কাজ করা হতো ব্যবহারিক জ্ঞান দ্বারা।
যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনের মন শোক, মোহ এবং ভয়ে পূর্ণ ছিল। শোক এজন্য যে বংশ মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে পারে, মোহ ছিল স্বজনহারা হওয়ার আর ভবিষ্যতে বর্ণসংকর তৈরি হবে এই ছিল ভয়।
শ্রী ভগবান অর্জুন কে বোঝালেন.... কোন পণ্ডিত ব্যক্তি তোমার মতো এইসব চিন্তা করেন না। শ্রী ভগবান অর্জুন কে বোঝাতে চেয়েছেন, যে পণ্ডিত, সে কখনও কারও চলে যাওয়ায় শোক করেন না।
ভগবান বুদ্ধের জীবন কালে যুক্ত একটি সুন্দর ঘটনা আছে। একজন মহিলা তাঁর মৃত সন্তান কে নিয়ে ভীষণ ব্যথিত চিত্তে বুদ্ধের কাছে এলেন এবং অনুরোধ করতে থাকলেন তাঁর পুত্র কে জীবন দান করার জন্য। দুঃখে নিমজ্জিত সেই মা কে বুদ্ধ বললেন যে তিনি অবশ্যই তাঁর সন্তান কে জীবন দেবেন, এবং তার জন্য সেই মা কে পাঁচ মুঠো চাল ভিক্ষা করে আনতে হবে এমন পাঁচটি বাড়ি থেকে, যেখানে কখনও মৃত্যু প্রবেশ করেনি। মহিলা মহা উৎসাহে দৌড়ে গেলেন কাছের গ্রামে। প্রতিটি ঘরে গিয়ে চাল ভিক্ষা করলেন। কিন্তু, এমন একটা ও ঘর নেই, যেখানে কখনো মৃত্যু আসেনি। তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে তথাগত কেন এরূপ কথা বললেন। তিনি অত্যন্ত ধীরস্থির ভাবে বুদ্ধের কাছে ফিরে এসে তাঁর চরণে আশ্রয় নিলেন। বুদ্ধদেব তাঁকে বোঝালেন যে জন্ম নিয়েছে, তার মৃত্যুও সুনিশ্চিত। মৃত্যু শুধু শরীরের হয়। আত্মা তো সর্বদাই বিদ্যমান।
শ্রীকৃষ্ণ ও আপন বাক পটুত্ব দ্বারা অর্জুন কে বুঝিয়েছেন যে এরকম কোন কাল নেই যেখানে তুমি, আমি বা রাজা রা ছিল না। আবার ভবিষ্যতে এমন কোন কাল থাকতে পারে না যেখানে তুমি, আমি বা ওই রাজারা থাকবে না। জ্ঞানী মানুষ মৃত্যু দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তারা জানে... আজ নয় তো কাল আমাকে ও চলে যেতে হবে। সুতরাং, শোক বা চিন্তা কিসের জন্য । এ তো একটা নিরন্তর চক্র -- কৌমার্য, যৌবন, জরা তথা মৃত্যু।
আদি শঙ্করাচার্য বলেছেন --
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা তুল্য কল্যাণকারী আর কোন গ্রন্থ নেই। শত শত বছর ধরে বহু মহাপুরুষেরা এই কথা স্বীকার করেছেন।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার প্রথম অধ্যায় অর্জুনবিষাদযোগ এ অর্জুনের বিষন্নতার বর্ণনা আছে। মান্য করা হয় যে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সপ্তম শ্লোক থেকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা আরম্ভ হয়েছে, মহর্ষি আদি শঙ্করাচার্যের মতে দ্বিতীয় অধ্যায়ের এগারো নম্বর শ্লোক থেকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শুরু হয়েছে । প্রশ্ন আসতে পারে... তাহলে গীতায় সাতশো শ্লোক আছে না নেই ? আসলে এটা বুঝতে হবে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সাত নম্বর শ্লোক অবধি গীতার প্রসঙ্গ। আট নম্বর থেকে দশ অবধি সন্দর্ভ এবং এগারো নম্বর শ্লোক থেকে গীতার অর্থ শুরু হয়েছে।
অর্জুন বিষাদে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন, ধৃতরাষ্ট্র ও বিষন্ন ছিলেন। কিন্তু দুজনের বিষাদ ভিন্ন ধরনের। আবার শোক, মোহ এবং ভয় এই তিনটি শব্দ আলাদা হলেও বোঝার ক্ষেত্রে একই লাগে। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা ভয় এর ব্যাপারে বলেন -- আগে ঘটে গেছে এমন ঘটনা, যা আমাদের মনকে ব্যথিত করেছে -- তা ই হলো শোক, বর্তমানে যা ব্যথিত করে -- তা হলো মোহ এবং ভবিষ্যতের চিন্তা, যা মনকে উদবিগ্ন করে, তা থেকে ভয় জন্ম নেয়।
অর্জুন দ্বিতীয় অধ্যায়ে সপ্তম শ্লোকে ভগবান কে গুরু মেনে মিনতি করেছেন -- আমার জন্য যেটা শ্রেয়, যা কল্যাণকর... তা ই বলুন।
কার্পণ্যদোষোপহতস্বভাবঃ(ফ্), পৃচ্ছামি ত্বাং(ন্) ধর্মসম্মূঢচেতাঃ।
য়চ্ছ্রেয়(স্) স্যান্নিশ্চিতং(ম্) ব্রূহি তন্মে,শিষ্যস্তেऽহং(ম্) শাধি মাং(ন্) ত্বাং(ম্) প্রপন্নম্॥২.৭॥
য়চ্ছ্রেয়(স্) স্যান্নিশ্চিতং(ম্) ব্রূহি তন্মে,শিষ্যস্তেऽহং(ম্) শাধি মাং(ন্) ত্বাং(ম্) প্রপন্নম্॥২.৭॥
অনেক মানুষই নিজেকে অর্জুনের সাথে মেলানোর চেষ্টা করে। অর্জুনের মতো হতে হলে তাঁর মতো যোগ্যতার প্রয়োজন। তিনি পরমেশ্বরের কাছে শুধু নিজের জন্য যা উত্তম তাই মিনতি করেননি, বরং যা উত্তম, তার জ্ঞান প্রাপ্ত করতে চেয়েছেন। প্রেয় এবং শ্রেয়র মধ্যে শ্রেয় কি তা খুঁজে নেওয়া ই অর্জুনের সমতুল্য করতে পারে।
এগারো নম্বর শ্লোকে শ্রী ভগবান বলেছেন --
অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং, প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে।
গতাসূনগতাসূংশ্চ, নানুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ।। (২/১১)
গতাসূনগতাসূংশ্চ, নানুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ।। (২/১১)
এই শ্লোকে প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ শব্দটিকে শ্রীভগবান প্রাধান্য দিয়েছেন । আজকের যুগে আমরা গুগল থেকে অনেক কিছু সম্বন্ধে জানতে পারি। কিন্তু এইসব তথ্য আমাদের কাজে লাগবে না... যতক্ষণ না তা আমরা প্রয়োগ করতে পারি। এটা বোঝার জন্য একটা সুন্দর গল্প বলা যায় ।
কোন এক গ্রামে একজন একটা কারখানা করবেন বলে মনে করলেন। তিনি তার ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন আর্কিটেকচার পড়তে। ভেবেছিলেন, ছেলে এসে সেই কারখানা চালাবে। ছেলে শুধু পড়া করেছে, কিন্তু ব্যবহারিক জ্ঞান পায়নি। ইতিমধ্যে ভদ্রলোক বিদেশ থেকে একটি ভারী মেশিন আনিয়েছেন কারখানার জন্য। তাঁর ছেলে ফিরে এসে সেই কারখানা দেখে খুবই অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এদিকে সেই মেশিন বসানোর জন্য মাটিতে বিশাল গর্ত তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মেশিন টা সেই গর্তে প্রতিস্থাপিত করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। কিছুতেই সেখানে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ক্রেনের সাহায্যেও সেটা করা যাচ্ছে না। ছেলেটি তার বিদেশের সব বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করেও এর কোন সমাধান পাওয়া গেল না। কিন্তু স্থানীয় একজন শ্রমিক এটা লক্ষ্য করে তাকে জানালো যে সে এর সমাধান করতে পারবে। শুধু জিজ্ঞাসা করল... যদি মেশিনের কিছু অংশ কিছুক্ষণ জলের মধ্যে থাকে, তাহলে কি ক্ষতি হতে পারে ? তারপর সে তার কৌশলের কথা বলল... যদি গর্তটা বরফ দিয়ে ভর্তি করা হয়, তাহলে মেশিন টা তার উপর রাখা সুবিধা হবে। বরফ গলতে থাকবে এবং মেশিন টা আস্তে আস্তে ওই গর্তে ঢুকে যাবে। পরে পাম্প করে জল টা বার করে দিলেই হবে। যুবক টি এই অশিক্ষিত শ্রমিকের বুদ্ধির তারিফ করতে বাধ্য হলো। এটাই হলো কার্যকরী শিক্ষা।
এই কাহিনী থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ওই যুবকের জ্ঞান বইয়ের মধ্যে সীমিত, কিন্তু ওই শ্রমিকের ব্যবহারিক জ্ঞান বইয়ের জ্ঞানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ক্রেন আবিষ্কারের আগেও নির্মাণ কাজ করা হতো ব্যবহারিক জ্ঞান দ্বারা।
যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনের মন শোক, মোহ এবং ভয়ে পূর্ণ ছিল। শোক এজন্য যে বংশ মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে পারে, মোহ ছিল স্বজনহারা হওয়ার আর ভবিষ্যতে বর্ণসংকর তৈরি হবে এই ছিল ভয়।
শ্রী ভগবান অর্জুন কে বোঝালেন.... কোন পণ্ডিত ব্যক্তি তোমার মতো এইসব চিন্তা করেন না। শ্রী ভগবান অর্জুন কে বোঝাতে চেয়েছেন, যে পণ্ডিত, সে কখনও কারও চলে যাওয়ায় শোক করেন না।
ন ত্বেবাহং জাতুনাসং, ন ত্বং নেমেজনাধিপাঃ।
ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ, সর্বে বয়মতঃ পরম্।। (২/১২)
ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ, সর্বে বয়মতঃ পরম্।। (২/১২)
ভগবান বুদ্ধের জীবন কালে যুক্ত একটি সুন্দর ঘটনা আছে। একজন মহিলা তাঁর মৃত সন্তান কে নিয়ে ভীষণ ব্যথিত চিত্তে বুদ্ধের কাছে এলেন এবং অনুরোধ করতে থাকলেন তাঁর পুত্র কে জীবন দান করার জন্য। দুঃখে নিমজ্জিত সেই মা কে বুদ্ধ বললেন যে তিনি অবশ্যই তাঁর সন্তান কে জীবন দেবেন, এবং তার জন্য সেই মা কে পাঁচ মুঠো চাল ভিক্ষা করে আনতে হবে এমন পাঁচটি বাড়ি থেকে, যেখানে কখনও মৃত্যু প্রবেশ করেনি। মহিলা মহা উৎসাহে দৌড়ে গেলেন কাছের গ্রামে। প্রতিটি ঘরে গিয়ে চাল ভিক্ষা করলেন। কিন্তু, এমন একটা ও ঘর নেই, যেখানে কখনো মৃত্যু আসেনি। তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে তথাগত কেন এরূপ কথা বললেন। তিনি অত্যন্ত ধীরস্থির ভাবে বুদ্ধের কাছে ফিরে এসে তাঁর চরণে আশ্রয় নিলেন। বুদ্ধদেব তাঁকে বোঝালেন যে জন্ম নিয়েছে, তার মৃত্যুও সুনিশ্চিত। মৃত্যু শুধু শরীরের হয়। আত্মা তো সর্বদাই বিদ্যমান।
শ্রীকৃষ্ণ ও আপন বাক পটুত্ব দ্বারা অর্জুন কে বুঝিয়েছেন যে এরকম কোন কাল নেই যেখানে তুমি, আমি বা রাজা রা ছিল না। আবার ভবিষ্যতে এমন কোন কাল থাকতে পারে না যেখানে তুমি, আমি বা ওই রাজারা থাকবে না। জ্ঞানী মানুষ মৃত্যু দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তারা জানে... আজ নয় তো কাল আমাকে ও চলে যেতে হবে। সুতরাং, শোক বা চিন্তা কিসের জন্য । এ তো একটা নিরন্তর চক্র -- কৌমার্য, যৌবন, জরা তথা মৃত্যু।
আদি শঙ্করাচার্য বলেছেন --
পুনরপি জননং পুনরপি মরণং, পুনরপি জননী জঠরে শয়নম্।
কোটি কোটি বছর ধরে এই নিয়ম ই চলছে --2.14
মাত্রাস্পর্শাস্তু কৌন্তেয়,শীতোষ্ণসুখদুঃখদাঃ
আগমাপায়িনোऽনিত্য়া:(স্), তাংস্তিতিক্ষস্ব ভারত॥14॥
হে কুন্তীনন্দন ! ইন্দ্রিয়গুলির দ্বারা যার জ্ঞান হয় সেইসকল জড়বস্তু শীত (অনুকূল) এবং উষ্ণ (প্রতিকূল) ভাবনানুযায়ী সুখ ও দুঃখ প্রদান করে। সেগুলি উৎপত্তি ও বিনাশশীল, সুতরাং তা অনিত্য। তাই হে ভরতবংশোদ্ভব অর্জুন, তুমি এগুলিকে সহ্য করো
বহু মহাপুরুষ গণের মতে এই শ্লোক এক বিস্তারিত তথ্য সমৃদ্ধ।
মাত্রাস্পর্শাস্তু - শ্রী ভগবান অর্জুন কে বলেছেন -- পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা পাঁচটি বিষয় উপলব্ধি করার সঙ্গে পাঁচটি বিষয় কে স্পর্শ ও করে। ত্বক দ্বারা স্পর্শের কথা আমরা বুঝি; কিন্তু চোখ দিয়ে কি স্পর্শ করা যায় ? এটা অনুভব করা যায় জ্বলন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে। ওয়েল্ডিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে চোখে স্ফুলিঙ্গের ছিটা লেগে এই অনুভব হতে পারে। কান দিয়ে আমরা শুনি, কিন্তু যদি কানের পাশেই কেউ খুব জোরে চিৎকার করে, কানের পর্দায় অসহ্য যন্ত্রণা হয়। নাক দিয়ে সুগন্ধি ঘ্রাণ নিতে ভালো লাগে কিন্তু সেই সুগন্ধি যদি অতিরিক্ত হয়, তা অসহ্য হয়ে যায়। জিভের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ... খাবারে সঠিক পরিমাণ নুন বা মিষ্টি বা অন্যান্য স্বাদ ভালো লাগে। কিন্তু সেগুলো কম বা বেশি হলেই তা জিভে বিস্বাদ লাগে।
পরিবেশে গরম বা ঠাণ্ডা একটা মাত্রা পর্যন্ত সহ্য করা যায়, খুব গরম বা ঠান্ডা হলে অসহনীয় মনে হয়।
সকলেই সর্বদা রূপবান বা সদা গুণবান, কেউ বা সদা বলবান হয়ে থাকতে চায়... কিন্তু, তা কি কখনো সম্ভব ?
শীতোষ্ণসুখদুঃখ - এটাও একটি সংকেত । শীতোষ্ণ হলো আধি আর সুখ-দুঃখের অর্থ হলো ব্যাধি। এই সবই হলো কষ্টের মূল।
আমেরিকার বৈজ্ঞানিকরা তিব্বতি লামাদের নিয়ে একটি তথ্যপূর্ণ আলোচনা ডিসকভারি চ্যানেলে প্রচার করেছেন । প্রতিকূল (-১৫°) তাপমাত্রায় লামারা পাতলা একটা চাদর গায়ে দিয়ে ধ্যান করেন, এবং এটাই তাদের রীতি। সেখানে সদ্যোজাত শিশুকে বরফ গলা জলে স্নান করানো হয়। অনেক শিশুই এর ফলে মারা যায়। তিব্বতি সমাজ এটা মেনে নেয়, যে সেই শিশুরা ঠাণ্ডা সহ্য করতে সক্ষম নয়, এবং এটাই তাদের পরিনতি। যে শিশু এটা সহ্য করে নেয় সে জীবনে আর ঠাণ্ডার কারণে অসুস্থ হবে না, মূলত সহ্য ক্ষমতা মাত্রা তৈরী করে দেয়।
শ্রী ভগবান এখানে শীত-উষ্ণের কথা বলেছেন। শীত, মানে অনুকূল... উষ্ণ অর্থাৎ প্রতিকূল। শান্ত মানুষ কে ঠাণ্ডা মানুষ বলা হয় এবং যে প্রতি কথাতেই রেগে যায় তাকে গরম বলা হয়। কিন্তু দুটো পরিবেশ বা মানুষ নিত্য বদলে যায়৷ কিছুই দীর্ঘস্থায়ী নয়। আমরা সবাই চাই যে সর্বদাই অনুকূল অবস্থা থাকুক, আর এটা হয় না বলে আমরা ব্যথিত হই।
মোল্লা নাসিরউদ্দিন কোথাও যাচ্ছিলেন... রাস্তায় কোথা থেকে কিছু ঝগড়ার আওয়াজ পেয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন দুজন লোক... কিছু পরে বুঝতে পারলেন একজন আত্মহত্যা করতে চাইছে এবং অন্যজন তাকে বাধা দিচ্ছে। আরও কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি বুঝলেন দুঃখী লোকটি আসলে তার বউকে খুবই ভয় পায়। বউ তাকে পাঁচশো টাকা দিয়েছিল রেশন আনার জন্য। সে একশো টাকার রেশন নিয়েছে কিন্তু বাকি টাকা হারিয়ে ফেলেছে। এই অবস্থায় সে তার বউয়ের সামনে যেতে পারবে না, তাই সে আত্মহত্যা করতে চাইছে। নাসিরুদ্দিন তার বন্ধুকে বললেন... তোমার বন্ধু কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসবে... বলেই নাসিরুদ্দিন সেই দুঃখী ব্যক্তির হাত থেকে রেশনের ঝোলা টা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন। সেই ব্যক্তি "আমার ঝোলা -- আমার ঝোলা" বলে তার পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগলো, এবং তার পিছনে তার বন্ধুও দৌড়াতে থাকে। কিছুদূর এগিয়ে রাস্তার এক ধারে ঝোলা ফেলে দিয়ে নাসিরুদ্দিন একটু দূরে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রইলেন। সেই দুঃখী মানুষ তখন ঝোলা টা পেয়ে আনন্দে হেসে উঠলো। তার বন্ধু অবাক হয়ে গেল। পরে নাসিরুদ্দিন কে জিজ্ঞাসা করল -- এটা কি করে সম্ভব হলো .... মোল্লা বললেন যে তার দুঃখের পরিভাষা বদলে দিতেই তার দুঃখ সুখ হয়ে গেল। সে চারশো টাকার লোকসান ভুলে গেল একশো টাকার লোকসান বাঁচিয়ে।
এইভাবে আমরাও আমাদের প্রেক্ষাপটে সুখ-দুঃখের ব্যাখ্যা করি... কিন্তু এসব কিছুই সত্যি নয়।
তাংস্তিতিক্ষস্ব - তিতিক্ষা শব্দের অর্থ হলো সহিষ্ণুতা। কিন্তু, জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে এর অর্থ শুধু সহনশীলতা নয়, যতক্ষণ না সহিষ্ণুতার মধ্যে সহজতা আসে ততক্ষণ তা তিতিক্ষা নয়। যেমন মা তাঁর সন্তান কে বড়ো করার জন্য কত সহজে নিজের রাতের ঘুম, দিনের শান্তিও ত্যাগ করে দেন...
যেমন নামজাদা ক্রিকেটার রা -- যারা ইতিমধ্যেই অনেক রোজগার করেছেন... তা সত্ত্বেও প্রচণ্ড গরমেও তারা প্রতিদিন খেলার অভ্যাস করেন আরও উন্নত মানের খেলা প্রদর্শন করার জন্য -- এটাও তিতিক্ষার গুণ।
যখন তিতিক্ষার ভিতর স্বাভাবিকতা এসে যাবে, তখন আর কিছুর প্রভাব পড়বে না। শুধুমাত্র সুস্থ থাকার জন্য যতটুকু খাবার প্রয়োজন, ততটুকুই খাওয়া হয় -- সেটাই তিতিক্ষা। যদি জগতের সব কিছু আমাদের সুখ-দুঃখের কেন্দ্র মনে করি, তাহলে কখনও কষ্টের শেষ হবে না। নিজের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে ফেলতে পারলেই দুঃখ ও সুখের হিসাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
জগতের সবকিছুই যখন পরিবর্তন হয়ে চলেছে,এমনকি সময় ও... তাহলে কোন কিছু আমার নিজের বলে থাকে কি করে ? ছয় মাসের সাফল্য কে ও মানুষ সারাজীবনের ভিত্তি বলে মনে করে।
সবকিছু মাত্রা এবং তিতিক্ষার মাপকাঠিতে যাচাই করে নিতে হয়।
আমাদের পরম্পরায় উপবাস, মৌন থাকা ইত্যাদি রীতি হলো তিতিক্ষা জাগ্রত করার অভ্যাস।
মন ও শরীর কে দৃঢ় এবং শক্তিশালী করার জন্য তিতিক্ষা অভ্যাসের প্রয়োজন আছে। গরম সহ্য করা ( খুব গরমেও কিছুক্ষণ পাখা বা এসি বন্ধ রেখে) , ঠিক সময়ে খাবার বা জল না পেয়ে ও বিচলিত না হওয়া।
বিবেক চূড়ামণি তে আদি শঙ্করাচার্য জ্ঞানের চারটি স্তম্ভের কথা বলেছেন --
অর্জুনেরও মনে হয়েছিল -- এটা কি করা সম্ভব ? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাই এরপরে বলেছেন ---
মাত্রাস্পর্শাস্তু - শ্রী ভগবান অর্জুন কে বলেছেন -- পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা পাঁচটি বিষয় উপলব্ধি করার সঙ্গে পাঁচটি বিষয় কে স্পর্শ ও করে। ত্বক দ্বারা স্পর্শের কথা আমরা বুঝি; কিন্তু চোখ দিয়ে কি স্পর্শ করা যায় ? এটা অনুভব করা যায় জ্বলন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে। ওয়েল্ডিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে চোখে স্ফুলিঙ্গের ছিটা লেগে এই অনুভব হতে পারে। কান দিয়ে আমরা শুনি, কিন্তু যদি কানের পাশেই কেউ খুব জোরে চিৎকার করে, কানের পর্দায় অসহ্য যন্ত্রণা হয়। নাক দিয়ে সুগন্ধি ঘ্রাণ নিতে ভালো লাগে কিন্তু সেই সুগন্ধি যদি অতিরিক্ত হয়, তা অসহ্য হয়ে যায়। জিভের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ... খাবারে সঠিক পরিমাণ নুন বা মিষ্টি বা অন্যান্য স্বাদ ভালো লাগে। কিন্তু সেগুলো কম বা বেশি হলেই তা জিভে বিস্বাদ লাগে।
পরিবেশে গরম বা ঠাণ্ডা একটা মাত্রা পর্যন্ত সহ্য করা যায়, খুব গরম বা ঠান্ডা হলে অসহনীয় মনে হয়।
সকলেই সর্বদা রূপবান বা সদা গুণবান, কেউ বা সদা বলবান হয়ে থাকতে চায়... কিন্তু, তা কি কখনো সম্ভব ?
শীতোষ্ণসুখদুঃখ - এটাও একটি সংকেত । শীতোষ্ণ হলো আধি আর সুখ-দুঃখের অর্থ হলো ব্যাধি। এই সবই হলো কষ্টের মূল।
আমেরিকার বৈজ্ঞানিকরা তিব্বতি লামাদের নিয়ে একটি তথ্যপূর্ণ আলোচনা ডিসকভারি চ্যানেলে প্রচার করেছেন । প্রতিকূল (-১৫°) তাপমাত্রায় লামারা পাতলা একটা চাদর গায়ে দিয়ে ধ্যান করেন, এবং এটাই তাদের রীতি। সেখানে সদ্যোজাত শিশুকে বরফ গলা জলে স্নান করানো হয়। অনেক শিশুই এর ফলে মারা যায়। তিব্বতি সমাজ এটা মেনে নেয়, যে সেই শিশুরা ঠাণ্ডা সহ্য করতে সক্ষম নয়, এবং এটাই তাদের পরিনতি। যে শিশু এটা সহ্য করে নেয় সে জীবনে আর ঠাণ্ডার কারণে অসুস্থ হবে না, মূলত সহ্য ক্ষমতা মাত্রা তৈরী করে দেয়।
শ্রী ভগবান এখানে শীত-উষ্ণের কথা বলেছেন। শীত, মানে অনুকূল... উষ্ণ অর্থাৎ প্রতিকূল। শান্ত মানুষ কে ঠাণ্ডা মানুষ বলা হয় এবং যে প্রতি কথাতেই রেগে যায় তাকে গরম বলা হয়। কিন্তু দুটো পরিবেশ বা মানুষ নিত্য বদলে যায়৷ কিছুই দীর্ঘস্থায়ী নয়। আমরা সবাই চাই যে সর্বদাই অনুকূল অবস্থা থাকুক, আর এটা হয় না বলে আমরা ব্যথিত হই।
মোল্লা নাসিরউদ্দিন কোথাও যাচ্ছিলেন... রাস্তায় কোথা থেকে কিছু ঝগড়ার আওয়াজ পেয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন দুজন লোক... কিছু পরে বুঝতে পারলেন একজন আত্মহত্যা করতে চাইছে এবং অন্যজন তাকে বাধা দিচ্ছে। আরও কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি বুঝলেন দুঃখী লোকটি আসলে তার বউকে খুবই ভয় পায়। বউ তাকে পাঁচশো টাকা দিয়েছিল রেশন আনার জন্য। সে একশো টাকার রেশন নিয়েছে কিন্তু বাকি টাকা হারিয়ে ফেলেছে। এই অবস্থায় সে তার বউয়ের সামনে যেতে পারবে না, তাই সে আত্মহত্যা করতে চাইছে। নাসিরুদ্দিন তার বন্ধুকে বললেন... তোমার বন্ধু কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসবে... বলেই নাসিরুদ্দিন সেই দুঃখী ব্যক্তির হাত থেকে রেশনের ঝোলা টা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন। সেই ব্যক্তি "আমার ঝোলা -- আমার ঝোলা" বলে তার পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগলো, এবং তার পিছনে তার বন্ধুও দৌড়াতে থাকে। কিছুদূর এগিয়ে রাস্তার এক ধারে ঝোলা ফেলে দিয়ে নাসিরুদ্দিন একটু দূরে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রইলেন। সেই দুঃখী মানুষ তখন ঝোলা টা পেয়ে আনন্দে হেসে উঠলো। তার বন্ধু অবাক হয়ে গেল। পরে নাসিরুদ্দিন কে জিজ্ঞাসা করল -- এটা কি করে সম্ভব হলো .... মোল্লা বললেন যে তার দুঃখের পরিভাষা বদলে দিতেই তার দুঃখ সুখ হয়ে গেল। সে চারশো টাকার লোকসান ভুলে গেল একশো টাকার লোকসান বাঁচিয়ে।
এইভাবে আমরাও আমাদের প্রেক্ষাপটে সুখ-দুঃখের ব্যাখ্যা করি... কিন্তু এসব কিছুই সত্যি নয়।
তাংস্তিতিক্ষস্ব - তিতিক্ষা শব্দের অর্থ হলো সহিষ্ণুতা। কিন্তু, জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে এর অর্থ শুধু সহনশীলতা নয়, যতক্ষণ না সহিষ্ণুতার মধ্যে সহজতা আসে ততক্ষণ তা তিতিক্ষা নয়। যেমন মা তাঁর সন্তান কে বড়ো করার জন্য কত সহজে নিজের রাতের ঘুম, দিনের শান্তিও ত্যাগ করে দেন...
যেমন নামজাদা ক্রিকেটার রা -- যারা ইতিমধ্যেই অনেক রোজগার করেছেন... তা সত্ত্বেও প্রচণ্ড গরমেও তারা প্রতিদিন খেলার অভ্যাস করেন আরও উন্নত মানের খেলা প্রদর্শন করার জন্য -- এটাও তিতিক্ষার গুণ।
যখন তিতিক্ষার ভিতর স্বাভাবিকতা এসে যাবে, তখন আর কিছুর প্রভাব পড়বে না। শুধুমাত্র সুস্থ থাকার জন্য যতটুকু খাবার প্রয়োজন, ততটুকুই খাওয়া হয় -- সেটাই তিতিক্ষা। যদি জগতের সব কিছু আমাদের সুখ-দুঃখের কেন্দ্র মনে করি, তাহলে কখনও কষ্টের শেষ হবে না। নিজের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে ফেলতে পারলেই দুঃখ ও সুখের হিসাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
জগতের সবকিছুই যখন পরিবর্তন হয়ে চলেছে,এমনকি সময় ও... তাহলে কোন কিছু আমার নিজের বলে থাকে কি করে ? ছয় মাসের সাফল্য কে ও মানুষ সারাজীবনের ভিত্তি বলে মনে করে।
সবকিছু মাত্রা এবং তিতিক্ষার মাপকাঠিতে যাচাই করে নিতে হয়।
আমাদের পরম্পরায় উপবাস, মৌন থাকা ইত্যাদি রীতি হলো তিতিক্ষা জাগ্রত করার অভ্যাস।
মন ও শরীর কে দৃঢ় এবং শক্তিশালী করার জন্য তিতিক্ষা অভ্যাসের প্রয়োজন আছে। গরম সহ্য করা ( খুব গরমেও কিছুক্ষণ পাখা বা এসি বন্ধ রেখে) , ঠিক সময়ে খাবার বা জল না পেয়ে ও বিচলিত না হওয়া।
বিবেক চূড়ামণি তে আদি শঙ্করাচার্য জ্ঞানের চারটি স্তম্ভের কথা বলেছেন --
- বিবেক
- বৈরাগ্য
- ষট্সম্পত্তি (শম্, দম্, উপরতি, তিতিক্ষা, শ্রদ্ধা ও সমাধান)
- মোক্ষ
অর্জুনেরও মনে হয়েছিল -- এটা কি করা সম্ভব ? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাই এরপরে বলেছেন ---
য়ং(ম্) হি ন ব্য়থয়ন্ত্য়েতে, পুরুষং(ম্) পুরুষর্ষভ
সমদুঃখসুখং(ন্) ধীরং(ম্), সোऽমৃতত্বায় কল্পতে॥15॥
হে পুরুষশ্রেষ্ঠ অর্জুন ! সুখ-দুঃখে সমভাবে হিত যে ধীর ব্যক্তিকে এই বিষয়স্পর্শজনিত সুখ-দুঃখ বিচলিত করে না, তিনি অমৃতত্ব লাভে সমর্থ হন অর্থাৎ তিনি অমর হন।
নাসতো বিদ্য়তে ভাবো, নাভাবো বিদ্য়তে সতঃ
উভয়োরপি দৃষ্টোऽন্ত:(স্),ত্বনয়োস্তত্ত্বদর্শিভিঃ॥16॥
অসৎ বস্তুর ভাব (অস্তিত্ব) নেই এবং সৎ বস্তুর অনস্তিত্ব নেই। তত্ত্বদর্শী মহাপুরুষগণ এই দুটিরই পরিণতি অর্থাৎ এ দুটিকে তত্ত্বত দেখেছেন অর্থাৎ অনুভব করেছেন
জ্ঞান মার্গের উৎকৃষ্টতম ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই শ্লোকে। মূল কথা হলো -- অসত্য কখনো স্থায়ী হতে পারে না এবং যেটা এক মূহুর্তও নেই এমন হয় না -- তাই সত্য।
মানব শরীর প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে -- তাই এ অসৎ। আর যার বদল হয় না , -- যেমন - আত্মতত্ত্ব --- জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত , এমনকি মৃত্যুর পরেও যা স্থায়ী, তা পরমাত্মার অংশ -- তা অবিনশ্বর, অক্ষয়, শাশ্বত ।
ইংরেজিতে একটা প্রবচন আছে --
Death is a change of name, dress and address ..
মৃত্যু মানে হলো নাম, পোশাক ও ঠিকানার পরিবর্তন ।
আমার আকার, রূপ, রঙ, ঠিকানা সব কিছু বদলে গেলেও -- আমি তো সেই অবিনাশী, শাশ্বত সত্য।... এই যে বোধ -- এর নামই মোক্ষ। সব কিছু বদলে যাওয়ার পরেও যে বুঝতে পারে -- আমি তো একই থেকে যাবো -- সে হলো তত্ত্বদর্শিভিঃ।
মানব শরীর প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে -- তাই এ অসৎ। আর যার বদল হয় না , -- যেমন - আত্মতত্ত্ব --- জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত , এমনকি মৃত্যুর পরেও যা স্থায়ী, তা পরমাত্মার অংশ -- তা অবিনশ্বর, অক্ষয়, শাশ্বত ।
ইংরেজিতে একটা প্রবচন আছে --
Death is a change of name, dress and address ..
মৃত্যু মানে হলো নাম, পোশাক ও ঠিকানার পরিবর্তন ।
আমার আকার, রূপ, রঙ, ঠিকানা সব কিছু বদলে গেলেও -- আমি তো সেই অবিনাশী, শাশ্বত সত্য।... এই যে বোধ -- এর নামই মোক্ষ। সব কিছু বদলে যাওয়ার পরেও যে বুঝতে পারে -- আমি তো একই থেকে যাবো -- সে হলো তত্ত্বদর্শিভিঃ।
অবিনাশি তু তদ্বিদ্ধি, য়েন সর্বমিদং(ন্) ততম্
বিনাশমব্য়য়স্য়াস্য়, ন কশ্চিত্কর্তুমর্হতি॥17॥
তাঁকেই অবিনাশী বলে জানবে যাঁর দ্বারা এই সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। এই অবিনাশীর বিনাশ করতে কেউই সক্ষম নয়।
অন্তবন্ত ইমে দেহা, নিত্য়স্য়োক্তাঃ(শ্) শরীরিণঃ
অনাশিনোऽপ্রমেয়স্য়, তস্মাদ্য়ুধ্য়স্ব ভারত॥18॥
অবিনশ্বর, অপ্রমেয়, নিত্যস্বরূপ জীবাত্মার এই সকল শরীরকে বিনাশশীল বলা হয়েছে। তাই হে ভরতবংশীয় অর্জুন! তুমি যুদ্ধ করো।
য় এনং(ব্ঁ) বেত্তি হন্তারং(য়্ঁ), য়শ্চৈনং(ম্) মন্য়তে হতম্ ।
উভৌ তৌ ন বিজানীতো, নায়ং(ম্) হন্তি ন হন্য়তে॥2.19॥
যিনি এই আত্মাকে হত্যাকারী মনে করেন অথবা যিনি এঁকে নিহত বলে মনে করেন তাঁরা উভয়েই আত্মার প্রকৃত স্বরূপ জানেন না; কারণ এই আত্মা প্রকৃতপক্ষে কাউকে হত্যা করেন না এবং কারো দ্বারা হতও হন না।
ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্,
নায়ং(ম্) ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ
অজো নিত্য়ঃ(শ্) শাশ্বতোऽয়ং(ম্) পুরাণো,
ন হন্য়তে হন্য়মানে শরীরে ॥20॥
এই আত্মা কখনও জন্মান না বা মরেনও না এবং আত্মার অস্তিত্ব উৎপত্তিসাপেক্ষ নয়, কারণ আত্মা জন্মরহিত, নিত্য, সনাতন এবং পুরাতন; শরীর বিনষ্ট হলেও আত্মা বিনষ্ট হন না।
শ্রী ভগবান এখানে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করেছেন। আত্মা কখনও জন্মায় না, কখনও মরেও না, না কখনো উৎপন্ন হয়। আত্মা অজাত, নিত্য, সনাতন এবং পুরাতন। শরীরের মৃত্যু হলেও আত্মার মৃত্যু হয় না।
বেদাবিনাশিনং(ন্) নিত্য়ং(য়্ঁ), য় এনমজমব্য়য়ম্।
কথং(ম্) স পুরুষঃ(ফ্) পার্থ, কং(ঙ্) ঘাতয়তি হন্তি কম্॥2.21॥
হে পার্থ! যিনি এই আত্মাকে অবিনাশী, নিত্য, জন্মরহিত এবং অব্যয় বলে জানেন, তিনি কীভাবে কাকেও হত্যা করবেন বা করাবেন?
জীবন এবং চেতনার ছয়টি লক্ষণ আছে। উৎপত্তি, পরিবর্তন, ঘটনা ঘটানো, বংশ বৃদ্ধি করা এবং শেষ হয়ে যাওয়া। আত্মতত্ত্বে এই ছয় লক্ষণ --অতএব তা অক্ষর।
বাসাংসি জীর্ণানি য়থা বিহায়,
নবানি গৃহ্ণাতি নরোऽপরাণি
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা-
ন্য়ন্য়ানি সংয়াতি নবানি দেহী॥22॥
যেমন মানুষ পুরানো বস্ত্র পরিত্যাগ করে অন্য নূতন বস্ত্র গ্রহণ করে, তেমনই জীবাত্মা পুরণো শরীরগুলিকে ত্যাগ করে অন্য নূতন নূতন শরীর গ্রহণ করে।
এটি গীতার সর্বাধিক প্রসিদ্ধ শ্লোকগুলোর মধ্যে অন্যতম। শ্রী ভগবান বলেছেন যেমন মানুষ পুরনো বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে... প্রতিদিন ই আলাদা আলাদা পোশাক খুঁজে নেয় ... তেমনই জীবাত্মা ও সঠিক সময়ে একটি শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করে নেয় ।
শরীর ক্রমশ জীর্ণ হতে থাকে, অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের কার্যশীলতা ক্ষীণ হয়ে যায়। চোখ, কান, হার্ট, ফুসফুস ইত্যাদি অঙ্গ সুচারু ভাবে কাজ করতে পারে না... ডাক্তার বাবুরা শরীর কে চালু রাখবার বিভিন্ন তদবির করেন (যেমন জীর্ণ বস্ত্র ও সূঁচ সুতো দিয়ে সেলাই, রিফু করা হয়) । এইভাবে হয়তো আরও কিছুদিন চালানো যায় --- বস্ত্র তথা শরীরকে। কিন্তু একটা সময় আসে যখন তা ত্যাগ করা ছাড়া আর উপায় থাকে না... এভাবেই এক শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীরে জীবাত্মা প্রবেশ করে ।
হরি শরনম্ সংকীর্তনের সাথে আজকের বিবেচন সত্র সম্পন্ন হলো । এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব আরম্ভ হলো ।
প্রশ্নকর্তা- মাধুরী পরিহার দিদি
প্রশ্ন - ভাগ্য বিষয়ে আপনি কি বলবেন ?
উত্তর - দুই ধরনের প্রারব্ধ হতে পারে -- তীব্র অথবা মধ্যম। মধ্যম প্রারব্ধ তো তীর্থ ভ্রমণ , দান, গীতা পাঠ ইত্যাদি পুণ্য কর্ম দ্বারা কাটানো যায়। কিন্তু, তীব্র প্রারব্ধ কাটানো শক্ত ।
প্রশ্ন - আত্মা তো অজর, অমর। এই জন্মে যদি মূর্খ থেকে যাই, পরের জন্মেও মূর্খ থাকবো?
উত্তর - কর্ম অনুসারে বুদ্ধির প্রখরতা পাওয়া যায়। কেউ কেন সারাজীবন মূর্খ হয়ে থাকবে ? চেষ্টা দ্বারা ধীরে ধীরে উঁচু স্তরে বুদ্ধি নিয়ে যাওয়া যায়। এই জন্মেই বুদ্ধিমান হওয়া যায় ।
প্রশ্নকর্তা - বৃজ মোহন দাদা
প্রশ্ন - অপ্রমেয় শব্দের অর্থ কি ?
উত্তর - অপ্রমেয় হলো সেই বস্তু যার তুলনীয় কিছু নেই ।
প্রশ্ন - কামনা, ইচ্ছা, বাসনা, তৃষ্ণা এবং স্পৃহা --- এদের পার্থক্য কি ?
উত্তর - সর্বপ্রথম মনে চিন্তা আসে। এ থেকে স্পৃহা, স্পৃহা থেকে ইচ্ছা, ইচ্ছা থেকে কর্ম এবং কর্ম থেকে বাসনা । বাসনা অর্থাৎ লালসা । কোন বস্তুত প্রতি লালসা । প্রথমে জিলিপির কথা মনে এলো, তা থেকে জিলিপি খাওয়ার ইচ্ছা জাগলো। জিলিপি খেতে কত ভালো... এটাই স্পৃহা . .. জিলিপি খাবো -- কর্ম হয়ে গেল... আর এখন তো জিলিপি না খেলে হবেই না -- ব্যস! তৃষ্ণা হয়ে গেল ।
প্রশ্নকর্তা - শালিগ্রাম অগ্রওয়াল দাদা
প্রশ্ন - কোথাও কোথাও জীবাত্মা লেখা হয়, আবার কোথাও বা আত্মা লেখা হয় । এই দুইয়ের পার্থক্য কি ?
উত্তর - যখন শরীরের মধ্যে নেই বা শরীর ধারণ করে নি, তখন তা আত্মা। যখন কোন শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা জীবাত্মা। দুটো একই... এজ শরীর থেকে অন্য শরীরে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে তা আত্মা।
প্রশ্নকর্তা - স্মিতা দিদি
প্রশ্ন - আমাদের কর্ম অনুসারে জন্ম হয় এবং আমাদের মানুষ দেহ প্রাপ্ত হয়। কিন্তু গাছপালা, জীব-জন্তুর ক্ষেত্রে কি হয়?
উত্তর - কর্মযোনি শুধুমাত্র মানুষের প্রাপ্ত হয়, বাকি যোনি হলো ভোগ যোনি। আমরা যে প্রকার কর্ম করবো, সেরকম যোনি প্রাপ্ত করবো । অন্তিম সময়ে আমাদের চিন্তা যেমন হবে, পরের জন্মে তেমন যোনি প্রাপ্ত হবে ।
প্রশ্নকর্তা - নীতা সানে দিদি
প্রশ্ন - অনেক শ্লোকে ভারত কথা টি এসেছে। এর অর্থ কি ?
উত্তর - ভারত - অর্থাৎ, ভরত-বংশীয়। অর্জুন এখানে ভরত-বংশীয়।
প্রশ্নকর্তা - রেণু ধওন দিদি
প্রশ্ন - অর্জুনের মনে মোহ উৎপন্ন হয়েছিল যে নিজের পিতামহ এবং গুরু কে হত্য করতে পারবেন না কিন্তু ভীষ্ম বা দ্রোনাচার্যের মনে তো এই ভাব আসেনি৷
উত্তর - মোহ না আসা তো কোন সমস্যা নয়। অর্জুন এর আগে বহু যুদ্ধ করেছেন। ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন হেতু যুদ্ধ করাই অর্জুনের কর্তব্য৷ তিনি জানতেন যে এই যুদ্ধে পিতামহ বা দ্রোনাচার্য নিহত হতে পারেন । ওই দুজন অর্জুন কে অগাধ স্নেহ ও ভালবাসা দিয়েছিলেন... এজন্যই তিনি ওঁদের হত্যা করতে চাইছিলেন না।
শরীর ক্রমশ জীর্ণ হতে থাকে, অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের কার্যশীলতা ক্ষীণ হয়ে যায়। চোখ, কান, হার্ট, ফুসফুস ইত্যাদি অঙ্গ সুচারু ভাবে কাজ করতে পারে না... ডাক্তার বাবুরা শরীর কে চালু রাখবার বিভিন্ন তদবির করেন (যেমন জীর্ণ বস্ত্র ও সূঁচ সুতো দিয়ে সেলাই, রিফু করা হয়) । এইভাবে হয়তো আরও কিছুদিন চালানো যায় --- বস্ত্র তথা শরীরকে। কিন্তু একটা সময় আসে যখন তা ত্যাগ করা ছাড়া আর উপায় থাকে না... এভাবেই এক শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীরে জীবাত্মা প্রবেশ করে ।
হরি শরনম্ সংকীর্তনের সাথে আজকের বিবেচন সত্র সম্পন্ন হলো । এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব আরম্ভ হলো ।
:: প্রশ্নোত্তর পর্ব ::
প্রশ্নকর্তা- মাধুরী পরিহার দিদি
প্রশ্ন - ভাগ্য বিষয়ে আপনি কি বলবেন ?
উত্তর - দুই ধরনের প্রারব্ধ হতে পারে -- তীব্র অথবা মধ্যম। মধ্যম প্রারব্ধ তো তীর্থ ভ্রমণ , দান, গীতা পাঠ ইত্যাদি পুণ্য কর্ম দ্বারা কাটানো যায়। কিন্তু, তীব্র প্রারব্ধ কাটানো শক্ত ।
প্রশ্ন - আত্মা তো অজর, অমর। এই জন্মে যদি মূর্খ থেকে যাই, পরের জন্মেও মূর্খ থাকবো?
উত্তর - কর্ম অনুসারে বুদ্ধির প্রখরতা পাওয়া যায়। কেউ কেন সারাজীবন মূর্খ হয়ে থাকবে ? চেষ্টা দ্বারা ধীরে ধীরে উঁচু স্তরে বুদ্ধি নিয়ে যাওয়া যায়। এই জন্মেই বুদ্ধিমান হওয়া যায় ।
প্রশ্নকর্তা - বৃজ মোহন দাদা
প্রশ্ন - অপ্রমেয় শব্দের অর্থ কি ?
উত্তর - অপ্রমেয় হলো সেই বস্তু যার তুলনীয় কিছু নেই ।
প্রশ্ন - কামনা, ইচ্ছা, বাসনা, তৃষ্ণা এবং স্পৃহা --- এদের পার্থক্য কি ?
উত্তর - সর্বপ্রথম মনে চিন্তা আসে। এ থেকে স্পৃহা, স্পৃহা থেকে ইচ্ছা, ইচ্ছা থেকে কর্ম এবং কর্ম থেকে বাসনা । বাসনা অর্থাৎ লালসা । কোন বস্তুত প্রতি লালসা । প্রথমে জিলিপির কথা মনে এলো, তা থেকে জিলিপি খাওয়ার ইচ্ছা জাগলো। জিলিপি খেতে কত ভালো... এটাই স্পৃহা . .. জিলিপি খাবো -- কর্ম হয়ে গেল... আর এখন তো জিলিপি না খেলে হবেই না -- ব্যস! তৃষ্ণা হয়ে গেল ।
প্রশ্নকর্তা - শালিগ্রাম অগ্রওয়াল দাদা
প্রশ্ন - কোথাও কোথাও জীবাত্মা লেখা হয়, আবার কোথাও বা আত্মা লেখা হয় । এই দুইয়ের পার্থক্য কি ?
উত্তর - যখন শরীরের মধ্যে নেই বা শরীর ধারণ করে নি, তখন তা আত্মা। যখন কোন শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা জীবাত্মা। দুটো একই... এজ শরীর থেকে অন্য শরীরে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে তা আত্মা।
প্রশ্নকর্তা - স্মিতা দিদি
প্রশ্ন - আমাদের কর্ম অনুসারে জন্ম হয় এবং আমাদের মানুষ দেহ প্রাপ্ত হয়। কিন্তু গাছপালা, জীব-জন্তুর ক্ষেত্রে কি হয়?
উত্তর - কর্মযোনি শুধুমাত্র মানুষের প্রাপ্ত হয়, বাকি যোনি হলো ভোগ যোনি। আমরা যে প্রকার কর্ম করবো, সেরকম যোনি প্রাপ্ত করবো । অন্তিম সময়ে আমাদের চিন্তা যেমন হবে, পরের জন্মে তেমন যোনি প্রাপ্ত হবে ।
প্রশ্নকর্তা - নীতা সানে দিদি
প্রশ্ন - অনেক শ্লোকে ভারত কথা টি এসেছে। এর অর্থ কি ?
উত্তর - ভারত - অর্থাৎ, ভরত-বংশীয়। অর্জুন এখানে ভরত-বংশীয়।
প্রশ্নকর্তা - রেণু ধওন দিদি
প্রশ্ন - অর্জুনের মনে মোহ উৎপন্ন হয়েছিল যে নিজের পিতামহ এবং গুরু কে হত্য করতে পারবেন না কিন্তু ভীষ্ম বা দ্রোনাচার্যের মনে তো এই ভাব আসেনি৷
উত্তর - মোহ না আসা তো কোন সমস্যা নয়। অর্জুন এর আগে বহু যুদ্ধ করেছেন। ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন হেতু যুদ্ধ করাই অর্জুনের কর্তব্য৷ তিনি জানতেন যে এই যুদ্ধে পিতামহ বা দ্রোনাচার্য নিহত হতে পারেন । ওই দুজন অর্জুন কে অগাধ স্নেহ ও ভালবাসা দিয়েছিলেন... এজন্যই তিনি ওঁদের হত্যা করতে চাইছিলেন না।