विवेचन सारांश
‌।। শ্রেষ্ঠ ভক্তের লক্ষণ সমূহ।।

ID: 5049
बंगाली - বাংলা
রবিবার, 23 জুন 2024
অধ্যায় 12: ভক্তিযোগ
2/2 (শ্লোক 12-20)
ব্যাখ্যাকার: গীতা প্ৰবীণ জ্যোতি জী শুক্লা


    সুমধুর প্রার্থনা, হনুমান চালিসা পাঠ, এবং দীপ প্রজ্জ্বলনের সাথে বাচ্চাদের জন্য আয়োজিত বিশেষ বিবেচন সত্রের শুভারম্ভ হলো ।

    আগের সত্রে আমরা দেখেছি যে অর্জুন কিছু প্রশ্ন রেখেছেন শ্রী ভগবানের কাছে । জিজ্ঞাসা করেছেন -- সগুণ উপাসক -- অর্থাৎ, যে ভক্তরা মন্দিরে গিয়ে উপাসনা করেন এবং নির্গুণ উপাসক -- মানে, যারা তপস্যা করেন, মনে মনে ভগবানের চিন্তন করেন --- এই দুই ধরনের উপাসকের মধ্যে কারা বেশি ভালো ? শ্রী ভগবান এর উত্তর দিয়েছেন -- আজকের বিবেচন সত্রে আমরা দেখবো ; শ্রী ভগবান শ্রেষ্ঠ ভক্তের উনচল্লিশ টি লক্ষণ বলেছেন ; মানে, তিনি উনচল্লিশ টি প্রশ্নপত্র তৈরি করে দিয়েছেন এবং আমরা দেখবো এর মধ্যে আমরা কোথায় নিজেকে খুঁজে পেতে পারি।

12.12

শ্রেয়ো হি জ্ঞানমভ্যাসাজ্, জ্ঞানাদ্ধ্যানং(ব্ঁ) বিশিষ্যতে।
ধ্যানাত্কর্মফলত্যাগঃ(স্),ত্যাগাচ্ছান্তিরনন্তরম্।।12.12।।

অভ্যাসের থেকে শাস্ত্রজ্ঞান শ্রেষ্ঠ, শাস্ত্রজ্ঞান থেকে ধ্যান শ্রেষ্ঠ, ধ্যানের থেকে সমস্ত কর্মফল ত্যাগ শ্রেষ্ঠ। কারণ কর্মফল ত্যাগের সাহায্যে অচিরাৎ পরম শান্তি লাভ হয়।

এখানে শ্রীভগবান বলেছেন -- অভ্যাসের চেয়ে জ্ঞান শ্রেষ্ঠ, জ্ঞানের চেয়ে ধ্যান শ্রেষ্ঠ, আবার ধ্যানের চেয়ে কর্মফল ত্যাগ করা শ্রেষ্ঠ । সরল ভাবে বলা যায়... যখন আমরা কিছু পড়ি, আমরা তার মানে না বুঝেই তা মনে রাখার চেষ্টা করি। উদাহরণ স্বরূপ - ধরা যাক, কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফল কি হবে তা আমরা জানি না । পরিবর্তে আমরা যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চাই যে এই বিক্রিয়ায় কি হচ্ছে । এইভাবে, অভ্যাসের চেয়ে জ্ঞান শ্রেষ্ঠ। অভ্যাস করা ভালো, কিন্তু তার প্র‍্যাক্টিক্যাল জ্ঞান আরও ভালো,তখন তা মনে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায় ।
  এরপর শ্রীভগবান বলেছেন - জ্ঞানের চেয়ে ধ্যান শ্রেষ্ঠ । অর্থাৎ, আমরা যা পড়েছি -- তা আমাদের স্মরণে আছে কি না। যদি স্মরণে থাকে, তার মানে আমরা সেটা খুব একাগ্রতা (ধ্যান) দিয়ে পড়েছি। সুতরাং, জ্ঞানের চেয়ে ধ্যান বেশি ভালো । এবার বলেছেন... ধ্যানের চেয়ে কর্মফল ত্যাগ শ্রেষ্ঠ --- এর মানে হলো -- আমরা কোন বিষয় তৈরি করার সময় ভাবতে থাকি -- এই সাবজেক্টে ৮০℅,বা ৮৫℅ পাবো তো..?? লক্ষ্য নির্ধারণ করা ভালো, কিন্তু তার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। বরং নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে খুব ভালো করে পড়া উচিত । রেজাল্টের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।

    তেরো নম্বর শ্লোক থেকে শ্রীভগবান ভক্তের উনচল্লিশ টি লক্ষণের বিষয়ে বলা শুরু করেছেন ।

12.13

অদ্বেষ্টা সর্বভূতানাং(ম্), মৈত্রঃ(খ্) করুণ এব চ
নির্মমো নিরহঙ্কারঃ(স্) , সমদুঃখসুখঃ ক্ষমী।।13।।

কোন প্রাণীর প্রতি দ্বেষভাব না পোষণ করে, সকলের জন্য মৈত্রী ভাব, করুণা, দয়া, মমতা রহিত, অহঙ্কার বর্জিত সুখ দুঃখে সমান ভাব রাখা।

শ্রী ভগবান বলেছেন শ্রেষ্ঠ ভক্তের প্রথম লক্ষণ হলো দ্বেষ না করা । দ্বেষ মানে... মন থেকে কাউকে খারাপ ভাবা উচিত নয় ।

    শ্রেষ্ঠ ভক্তের দ্বিতীয় লক্ষণ হলো -- সকলের সাথে মিত্রতা। যেমন অনেক সময় এমন হয়, ক্লাসে কয়েকটি গ্রুপ হয়ে যায়, একটা গ্রুপের ছাত্র হয়তো অন্য গ্রুপের ছাত্রদের সাথে ঝগড়া করে, মারামারি করে অথবা কথাবার্তা ও বন্ধ করে দেয় । এই ধরনের কাজ করা উচিৎ নয় , বরং, সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হয় ।

    শ্রেষ্ঠ ভক্তের তৃতীয় লক্ষণ হলো করুণা বা দয়া । সকলের প্রতি আমাদের দয়ার ভাব রাখতে হবে । একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি -- যদি আমরা বুঝতে পারি কোন পশু ক্ষুধার্ত বা পিপাসিত, তাহলে তাকে খাবার বা জল দেওয়া উচিত। কিছু বাচ্চা আছে, যারা কুকুর দেখলেই ঢিল ছুঁড়ে মারে.... এতে তো সেই কুকুর টা আহত হতে পারে । তাই, কোন পশু বা পাখিকে আঘাত করতে নেই । কখনও কখনও ছোট ভাইবোনদের পড়াতে গিয়ে বড়ো দাদা দিদিরা মারে --- এটাও করা উচিৎ নয়।

    শ্রেষ্ঠ ভক্তের চতুর্থ লক্ষণ হলো -- নির্মম, অর্থাৎ আমি বা আমার এই ভাবনা না থাকা। "এটা আমার, ওটা আমার" এই ভাব থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া৷ যদি আমার ভাই বা বোন আমার পোশাক পরতে চায়, তাকে খুশী মনে দেওয়া উচিত। যদি ক্লাসে কেউ পেন্সিল আনতে ভুলে যায়, নিজের বাড়তি পেন্সিল তাকে দিতে হয় , কেউ ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে তাকে সাহায্য করে দেওয়া, এগুলো হলো নির্মমতা।

    শ্রেষ্ঠ ভক্তের পঞ্চম লক্ষণ হলো নিরহঙ্কারী হওয়া। মানে, অহংকার বিমুক্ত হওয়া। যেমন পরীক্ষায় প্রথম হয়ে, কিংবা কোন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে মনে হতে পারে.... আমাকে কেউ হারাতে পারবে না, আমি ই সবচেয়ে জ্ঞানী৷ কিন্তু, এরকম ভাবনা মনে আনা উচিত নয় ।

    শ্রেষ্ঠ ভক্তের ষষ্ঠ লক্ষণ হলো -- সুখে-দুঃখে সমান থাকা। সুখের সময় আমরা খুব আনন্দে থাকি এবং দুঃখে হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু কোন ব্যাপারে আমাদের আনন্দ হলেও তা নিয়ে অত্যন্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে নেই, আবার কখনো অংকের নম্বর কম হলে বা প্রতিযোগিতায় জিততে না পারলে দুঃখে অতি কাতর হতে নেই। বরং, ভবিষ্যতে আরও পরিশ্রম করতে হবে, এই মনোভাব রাখতে হবে।

    শ্রেষ্ঠ ভক্তের সপ্তম লক্ষণ বা ভগবানের সপ্তম প্রশ্নপত্র হলো ক্ষমাশীল হওয়া। যদি কখনও কেউ ভুল করে ফেলে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। আমাদের এটা ভাবার প্রয়োজন নেই যে সে ক্ষমা চাইলো কি না। ক্ষমা না চাইলেও তাকে ক্ষমা করে দিতে হয়। কখনো এমনও হয় যে কারও উপর প্রচণ্ড রাগ হয় --- হয়তো রাগে কেউ বেলুনের মতো ফুলে গেল ।... কিন্তু এতো রাগ করে ফুলে থাকা ভালো নয় ; কারণ সামান্য সূঁচ ও সেই বেলুন ফাটিয়ে দিতে পারে । আর একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে... কাউকে ক্ষমা করে দেওয়ার পরে তা গুণগান করে প্রচার করতে নেই । ক্ষমা করে ভুলে যেতে হয়।

12.14


সন্তুষ্টঃ(স্) সততং(য়্ঁ) য়োগী, য়তাত্মা দৃঢনিশ্চয়ঃ।
ময়্যর্পিতমনোবুদ্ধি(র্), য়ো মদ্ভক্তঃ(স্) স মে প্রিয়ঃ।।12.14।।

ক্ষমাশীল, সদা সন্তুষ্ট যোগী, সংযতদেহ, দৃঢ়চিত্ত ও আমাতে মনবুদ্ধি অর্পিত এরূপ যাঁরা আমার ভক্ত, তাঁরা আমার প্রিয়।

শ্রেষ্ঠ ভক্তের অষ্টম লক্ষণ হলো সর্বদা সন্তুষ্ট হয়ে থাকা। উদাহরণ দেওয়া যায় -- আমাদের স্কুল ব্যাগ, স্কুল ড্রেস বা জুতো -- সবকিছু ভালো অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও... নতুন ক্লাসে উঠে আবার সবকিছু নতুন কিনে দেওয়ার বায়না করা বাবা মায়ের কাছে। এটা কিন্তু ঠিক কাজ নয়। আমাদের কাছে তো সেগুলো আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত ।

  আরও একটা উদাহরণ দেওয়া যায় ... তোমরা সবাই তো ডোরেমন -নোবিতা দেখেছ। নোবিতা যখনই বাচ্চাদের কাছে নতুন কোন গ্যাজেটস দেখে, অমনি চোখ ভরে জল নিয়ে ডোরেমনের কাছে চলে আসে। আমরা এরকম হবো না। আমাদের যদি ওসবের কিছুই না থাকে, তাহলেও ঠিক আছে । আমাদের যা আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকবো৷

 অর্জুন বলেছিলেন... তাদের পুরো হস্তিনাপুর রাজ্য চাই না, অর্ধেক হলেই হবে। কৌরবরা খুবই লোভী ছিল... তারা তা মানেনি। অর্ধেক তো নয়ই; লোভী দুর্যোধন বলেছিলেন -- সূঁচের আগার সমান জমি ও দেবো না।

 আমরা দুর্যোধনের মতো লোভী হবো না, অর্জুনের মতো ভালো এবং সন্তুষ্ট থাকবো ।

 শ্রেষ্ঠ ভক্তের নবম লক্ষণ হলো যতাত্মা; অর্থাৎ, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা । কখনো কখনো আমরা টিভি তে কোন প্রোগ্রাম দেখতেই থাকি। সেই সময় হয়তো আমার ভাই বা বোন অন্য কোন প্রোগ্রাম দেখতে চাইছে। এতে দুজনের মধ্যে মারামারি ও হয়ে যায় এবং রাগে হয়তো রিমোট ছুঁড়ে ফেলে ভেঙে গেল। এরকম করতে নেই। নিজের উপর সংযম রাখতে হয়।

 শ্রেষ্ঠ ভক্তের দশম লক্ষণ -- দৃঢ় নিশ্চয় হওয়া । কিছু কিছু ছাত্র ভাবে -- আমি এটা করবো -- ওটা করবো । মানে পড়া করবো, যোগা করবো ইত্যাদি । খুব হাঁকডাক করে শুরু করে যোগা। কিন্তু ধীরে ধীরে উৎসাহ কমে যায় এবং যোগা শবাসনে এসে থেমে যায়। আস্তে আস্তে যোগা করা বন্ধ করে দেয়। আমাদের যে কোন কর্মেই দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে এবং  দৃঢ়ভাবে সেই কাজ করতে হবে। একটি প্রবাদ আছে যার অর্থ হলো জমি টলমল করবে, পৃথিবী কেঁপে উঠবে কিন্তু মানুষ নড়বে না। এখানে মানুষ মানে সেই ব্যক্তি যে সংকল্পবদ্ধ। আমাদের কোন কাজই কালকের জন্য ফেলে রাখা উচিৎ নয় । কাল মানে হলো tomorrow... এই ব্যাপারে ও একটা ঘটনা আছে। কেউ বলেছিল... tomorrow যখনই আসবে তখনই দুই গালে দুটো চড় মারবে। তোমরা ও তাই করবে । টুমরো এলেই সামনে যে থাকবে.... যদি সে সমবয়সী হয় তার গালে দুটো চড় মারবে এবং সাথে সাথে নিজের গালেও মারবে। কখনও টুমরো 'র হাতে কোন কাজ ছেড়ে দেবে না ।

 শ্রেষ্ঠ ভক্তের একাদশ ও দ্বাদশ লক্ষণ হলো -- ঈশ্বরের প্রতি মন ও বুদ্ধি সমর্পণ করে দেওয়া । এর মানে কি ?? ধর, পড়তে বসেছ... সেই সময়ই তোমার মনে পড়ে যাচ্ছে বন্ধুর সাথে ঘুরে বেড়ানোর কথা বা ভিডিও গেম খেলার কথা .... পড়তে বসলে এইসব ই মনে এসে যায় । এজন্যই মন দিয়ে ভগবানের পূজা করতে হয়। আর এসব করতে করতে মনের ওই পালিয়ে বেড়ানো স্বভাব দূর হয়ে যাবে । ভগবানে মন ও বুদ্ধি সমর্পণ করলে তাঁর প্রতি প্রেম বাড়ে।

12.15

য়স্মান্নোদ্বিজতে লোকো, লোকান্নোদ্বিজতে চ য়ঃ
হর্ষামর্ষভয়োদ্বেগৈঃ(র্),মুক্তো য়ঃ(স্) স চ মে প্রিয়ঃ।।15।।

যাঁর দ্বারা কোনো প্রাণী বিচলিত হয় না এবং যিনি নিজে কোনো প্রাণীর দ্বারা বিচলিত হন না এবং যিনি আনন্দ, অমর্ষ (হিংসা), ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত, তিনিই আমার প্রিয়।

মাদের সকলের উচিত নিজেকে বিশ্লেষণ করে যাওয়া... যে এই সব লক্ষণ মিলিয়ে দশের মধ্যে আমি কত নম্বর পেতে পারি । যেমন নোবিতার সঙ্গে যে ডেকিসুগী ছিল, সে সবসময় ফুল মার্কস পেতো এবং নোবিতা দশ বা শূন্য পেতো। এখন, আমাদের দেখতে হবে যে আমরা নোবিতা না কি ডেকিসুগী।

 এইবার শ্রীভগবান ত্রয়োদশ (১৩) এবং চতুর্দশ (১৪) নম্বর প্রশ্নপত্র খুলবেন। আর তা হলো, কাউকে কোন অসুবিধাতে না ফেলা এবং নিজেও অনুদ্বিগ্ন ( উদ্বিগ্ন না হওয়া) থাকা । সোজা কথায়... কাউকে টেনশন না দেওয়া এবং নিজেও টেনিশন না করা । যেমন -- আমাদের কেউ টিজ্ করলে আমরা উল্টে তাকে টিজ্ করি। এটা ঠিক কাজ নয়। এখন থেকে আমরা কাউকে টিজ্ করবো না এবং কেউ যদি আমাকে এভাবে বিরক্ত করে আমি সেটা ও উপেক্ষা করে চলে যাবো । গ্রাহ্য করবো না ।

সকলের সামনে   খুব বেশি আনন্দ প্রকাশ না করা হলো প্রকৃত ভক্তের পঞ্চদশ (১৫) তম লক্ষণ।

 কাউকে ঈর্ষা না করা হলো শ্রেষ্ঠ ভক্তের ষোড়শ (১৬) তম লক্ষণ । যেমন - কেউ ক্লাসে ফার্স্ট হলে অন্যদের মনে মনে জ্বলন হয় । এই ধরনের ঈর্ষা মন থেকে দূর করে দিতে হবে। তার প্রশংসা করতে হবে ।

 শ্রেষ্ঠ ভক্তের সপ্তদশ (১৭) তম লক্ষণ হলো -- কোন বস্তু বা প্রাণী কে ভয় না পাওয়া ।
 কারও টিকটিকি কে ভয় লাগে । একবার ভাবো তো... সেই টিকটিকি খুব সুন্দর একটা পিঙ্ক কালারের টুপি পরে, লাল রঙের স্কার্ট পরে, আঙুলে নেলপলিশ, ঠোঁটে লিপস্টিক মেখে সুন্দর করে সেজেছে। দেখবে, তোমার ভয় চলে গেছে । অর্থাৎ, যে ব্যাপারে আমাদের ভয় আছে, সেই ব্যাপার টা এভাবে ভাবলে ভয় চলে যায়।

 শ্রেষ্ঠ ভক্তের অষ্টাদশ (১৮) তম লক্ষণ হলো উদবেগ মুক্ত হয়ে হয়ে যাওয়া । যে কোন পরিস্থিতিতে নিরুদবিগ্ন হয়ে থাকতে হবে ।

12.16

অনপেক্ষঃ(শ্) শুচির্দক্ষ, উদাসীনো গতব্যথঃ
সর্বারম্ভপরিত্যাগী, য়ো মদ্ভক্তঃ(স্) স মে প্রিয়ঃ।।16।।

যিনি প্রত্যাশা বর্জিত (প্রয়োজন), শুদ্ধ (বাহির থেকে এবং ভিতরে), বুদ্ধিমান, উদাসীন, ব্যথামুক্ত এবং যিনি সমস্ত সূচনা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেন, অর্থাৎ নতুন কর্মের সূচনা করেন কিন্তু তাতে জড়িয়ে পড়েন না, তিনিই আমার প্রিয়  ভক্ত।

এরপর শ্রী ভগবান প্রকৃত ভক্তের উনবিংশ(১৯ তম) লক্ষণ বলেছেন... আমাদের অত্যধিক প্রত্যাশা না করা উচিৎ । যেমন - কেউ পরীক্ষায় ৯৫℅ নম্বর আশা করে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে.... সেটা খুবই ভালো ব্যাপার, কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্ট আশানুরূপ না হলে তা নিয়ে খুব ভেঙে পড়তে নেই ।

 বিংশ (২০তম) লক্ষণ হিসাবে শ্রী ভগবান বলেছেন শুচিতার কথা । এর তাৎপর্য হলো ভিতর ও বাইরের পবিত্রতা । যদি আমাদের মনে খারাপ চিন্তা আসে, তার মানে আমরা অন্তরে শুদ্ধ নই। তেমনই প্রয়োজন বাইরের শুদ্ধতার বা স্বচ্ছতার । তোমরা স্কুল থেকে ফিরে যদি হাত পা ভালো ভাবে না ধুয়ে খেতে বসে যাও... সেটা হবে স্বচ্ছতার ঘাটতি বা অপরিচ্ছন্নতা। এভাবে নিজের চারপাশের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়, রাস্তায় নোংরা ফেলতে নেই ।

 শ্রেষ্ঠ ভক্তের একবিংশ তম লক্ষণ হলো উদাসীনতা। প্রত্যেক পরিস্থিতিতে উদাসীন থাকতে হয় ।

 এরপরের লক্ষণ (২২তম) বা ভগবানের প্রশ্নপত্র হলো দক্ষতা। দক্ষতা মানে কোন কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠা । আমরা নিজেদের কাজ খুব দক্ষতার সাথে করি তো? কিছু বাচ্চা খুব সুন্দর হাতের লেখার জন্য ক্লাসে স্টার পায়, আবার কিছু বাচ্চার লেখা একদম ভালো হয় না -- তারা টিচারের কাছে বকুনি খায়.... কিন্তু নিরন্তর অভ্যাসের দ্বারা হাতের লেখা প্রশংসা যোগ্য হতে পারে । সেটাই হলো দক্ষতা।
এই বিবেচকের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছিল । শিক্ষিকা খুব বকা দিতেন। তারপর অভ্যাস করতে করতে একসময় প্রশংসা যোগ্য হয়ে উঠেছিল ।

 তোমাদের মনে হতে পারে যে পড়াতে মন বসে না, পূজা করতে ও মন বসে না। কিন্তু অভ্যাস করলে ধীরে ধীরে মন বসতে থাকবে । সবরকম পরিস্থিতিতে সমান ভাব থাকতে হবে। বেশি সুখী, বেশি দুঃখী বা অবসাদগ্রস্ত হতে নেই।

 শ্রী ভগবান ২৩ তম ও ২৪ তম লক্ষণ বলেছেন। বলেছেন - ব্যথা মুক্ত হতে। এর তাৎপর্য হলো যে আমাদের কোন কথা ধরে খুব জেদ করা উচিৎ নয় । যেমন - আমি লাল পেন্সিল পেয়েছি, আমার বন্ধু সবুজ পেন্সিল পেয়েছে । কিন্তু আমার ওই সবুজ পেন্সিল ই চাই .... এই নিয়ে হাঙ্গামা শুরু করা ঠিক নয়। ঘরে যা রান্না হয়েছে, আমি সেটা খাবো না.... মনে মনে হয়তো মনে হচ্ছে ঠিক আছে, খেয়ে নেবো... কিন্তু জেদ কিছুতে কমে না। জেদি মন সবসময় উল্টো দিকে যায় ৷ তাই মন কে ঠিক রাখতে হবে ।

12.17

য়ো ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি, ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি
শুভাশুভপরিত্যাগী, ভক্তিমান্যঃ(স্) স মে প্রিয়ঃ।।17।।

যিনি (কখনও) আনন্দ করেন না, ঘৃণা করেন না, শোক করেন না বা কামনা করেন না (এবং) ভাল ও অশুভ কর্ম থেকে উন্নীত (আসক্তি ও ঘৃণা ব্যতীত), সেই ভক্তিশীল ব্যক্তি আমার প্রিয়।

শ্রেষ্ঠ ভক্তের পঁচিশতম ও ছাব্বিশতম লক্ষণের বিষয়ে বলেছেন শ্রী ভগবান । বলেছেন -- সব পরিস্থিতিতে হাসিমুখে এবং দ্বেষহীন থাকা উচিত। না কোন ব্যাপারে বেশি হাসাহাসি করা, না মনের মধ্যে কারও প্রতি খারাপ ভাবনা রাখা ।

 সাতাশ এবং আঠাশ তম লক্ষণের বিষয়ে বলেছেন -- আমাদের কোন বিষয় নিয়ে খুব শোক করা উচিৎ নয় । আমাদের মনে কোন বস্তুর প্রতি খুব বেশি আসক্তি ও থাকা উচিত নয় । আজ মোবাইল চাই, কাল স্কুটি চাই... এরকম বাচ্চারা শ্রী ভগবানের প্রিয় হতে পারে না ।

 শ্রী ভগবানের শ্রেষ্ঠ ভক্ত হওয়ার উনত্রিশ এবং ত্রিশ তম লক্ষণ হলো শুভ এবং অশুভ কর্মের ফল ত্যাগ করা। প্রথমে তো শুভ কর্ম ত্যাগ করতে হবে। ধর, তোমাদের মিষ্টি খুব পছন্দের খাবার ; কিন্তু তাই বলে প্রচুর মিষ্টি খাওয়া তো শরীরের জন্য ভালো নয়... পেটে কৃমি হতে পারে। মিষ্টি খারাপ নয়, কিন্তু অত্যধিক মিষ্টি ভালো নয় - সেটা ও বুঝতে হবে৷৷ খারাপ কাজ করা উচিৎ নয়, এটা তো সবাই জানে... তার সাথে মিথ্যা বলা, কাউকে খারাপ কথা বলা, চুরি করা , পশুদের বিরক্ত করা... এসব থেকেও দূরে থাকতে হবে । যেসব বাচ্চা এইসব মেনে চলে -- তারা ভগবানের অত্যন্ত প্রিয় হয়।

12.18

সমঃ(শ্) শত্রৌ চ মিত্রে চ, তথা মানাপমানয়োঃ
শীতোষ্ণসুখদুঃখেষু, সমঃ(স্) সঙ্গবিবর্জিতঃ।।18।।

(যিনি) শত্রু ও বন্ধু এবং সম্মান ও অসম্মানে সমান (এবং) যিনি শীতল-উষ্ণ (শরীরের অনুকূলতা-অপ্রতিকূলতা) এবং সুখ ও দুঃখে (মন ও বুদ্ধির অনুকূলতা) সমান।

শ্রী ভগবান শ্রেষ্ঠ ভক্তের একত্রিশতম (৩১) লক্ষণের বিষয়ে বলেছেন যে শত্রু এবং মিত্রের প্রতি সমান ভাব রাখতে হবে। ধর, তোমার জন্মদিনে তুমি তোমার প্রিয় বন্ধুদের এবং তাদের বাবা মা কে নিমন্ত্রণ করেছ। কিন্তু তোমার বাবা মা এমন কাউকে নিমন্ত্রণ করেছেন -- যাদের তুমি পছন্দ কর' না... হয়তো তোমার মনে হতে পারে --- ওরা এলে তোমার আনন্দ নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু মনে এরকম চিন্তা আনা ঠিক নয়। সকলের জন্য আমাদের মনে ভালবাসা থাকা উচিত ।

 এরপর শ্রেষ্ঠ ভক্তের বত্রিশতম (৩২) লক্ষণ -- এবং ভগবানের বাক্য অনুযায়ী মান এবং অপমান-- দুটোই সমান ভাবে দেখতে হবে । কখনো আমার টিচার আমার প্রশংসা করলেন তো আমার মন অভিমানে পূর্ণ হয়ে গেল, আবার যদি টিচার কোন কারণে শাস্তি দেন... তখনই মনে হল যে আমাকে অপমান করা হচ্ছে। কিন্তু এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই । আমার ভুল হয়েছে এই ভেবে শাস্তি স্বীকার করে নেওয়া যায় ।

 এখন প্রশ্ন হলো -- বন্ধু বা মিত্র কেমন হওয়া উচিত ? অর্জুনের মিত্র কৃষ্ণের মতো -- না কি দুর্যোধনের মিত্র কর্ণের মতো ?
শ্রেষ্ঠ বন্ধু শ্রীকৃষ্ণের মতো হওয়া চাই ।

 এরপর শ্রেষ্ঠ ভক্তের তেত্রিশ তম (৩৩) লক্ষণ বলা হয়েছে -- শীতে এবং গরমে, সুখে এবং দুঃখে সম ভাব রাখা উচিৎ । কখনও খুব গরমে অথবা খুব ঠান্ডায় আমরা কাহিল হয়ে পড়ি, খুব কষ্ট হয় আমাদের। চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় যদি আমরা ভাবি... খুব কষ্ট , খুব কষ্ট --- তখন সেই তাপমাত্রা পঞ্চাশ ডিগ্রি বলে মনে হবে । আমাদের ক্যাম্পে যখন বাচ্চাদের গরম লাগতো, তখন আমরা বৃষ্টির ছন্দে হাতে তালি দিতাম , বাচ্চারা শান্ত হয়ে যেত। এর অর্থ হলো যে বেশি বেশি ভাবার দরকার নেই... গরম হোক বা ঠাণ্ডা. ... সবরকম পরিস্থিতি সমানভাবে মেনে নিতে হবে। একজন লেখক বলেছিলেন.... আমরা যদি ব্যথা কে অস্বীকার করি, তাহলে ব্যথা পালিয়ে যায়।

 এরপরের লক্ষণ... অর্থাৎ চৌত্রিশ তম(৩৪) লক্ষণ বলেছেন নিরাসক্ত হওয়া। আসক্তি হলো প্রিয় বস্তুর প্রতি আকর্ষণ। যদি আমরা দামী জামা না পাই, বা জন্মদিনে পার্টি না হয়, তাহলে নোবিতার মতো আমরাও হয়তো কান্না শুরু করে দেবো। এটা কোন কান্নার বিষয় নয়। এই লক্ষণ মিলিয়ে নিজেরা নিজেদের নম্বর দাও।

12.19

তুল্যনিন্দাস্তুতির্মৌনী, সন্তুষ্টো য়েনকেনচিত্
অনিকেতঃ(স্) স্থিরমতিঃ(র্), ভক্তিমান্মে প্রিয়ো নরঃ।।19।।

যিনি প্রশংসা ও নিন্দা কে সমান চোখে দেখেন, যা পান তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন, গৃহাসক্তিশূন্য, পরমার্থ বিষয়ে নিশ্চিত জ্ঞানযুক্ত এবং ভক্তিযুক্ত ব্যক্তিই আমার প্রিয়।

শ্রেষ্ঠ ভক্তের পঁয়ত্রিশ (৩৫) তম লক্ষণ বিষয়ে শ্রী ভগবান বলেছেন যে তোমাকে নিন্দা এবং প্রশংসায় সমান ভাব রাখতে হবে । আমাদের শিক্ষক কখনো আমাদের খুব ভালো কথা বলেন আবার হয়তো কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। কিন্তু তার জন্য যেন শিক্ষকের প্রতি আমাদের সম্মান বা শ্রদ্ধা কমে না যায়।

 তোমরা সবাই মহাভারতের একলব্যের কথা শুনেছ। যখন গুরু দ্রোনাচার্য তাঁর অঙ্গুষ্ঠ চাইলেন -- একলব্য বিনা দ্বিধায় তাঁর অঙ্গুষ্ঠ কেটে গুরু কে অর্পণ করলেন । একলব্য তো রেগে যেতে পারতেন যে, অঙ্গুষ্ঠ না থাকলে তিনি কিভাবে তীর নিক্ষেপ করবেন... কিন্তু, তিনি গুরুকে সম্মান দিয়েছেন । আমাদের মনেও এইরূপ সম্মান যেন থাকে সকলের জন্য ।


 শ্রেষ্ঠ ভক্তের ছত্রিশ তম(৩৬) লক্ষণ বিষয়ে ভগবান বলেছেন -- মনের মধ্যে সবসময় ভালো বিষয় মনন করতে হবে বা ভালো বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে ।

 সাঁইত্রিশ(৩৭) তম লক্ষণ বিষয়ে ভগবানের প্রশ্নপত্র হলো -- আমাদের যা রয়েছে, যা প্রাপ্ত হয়েছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ জি নতুন চপ্পল নিতেন না, যতক্ষণ না পুরনো চপ্পল পুরো ছিঁড়ে যায়। আমাদের ও এমনই হতে হবে ।

 আটত্রিশ তম (৩৮) লক্ষণ হলো কোন বিশেষ জায়গার প্রতি আকর্ষণ না থাকা। কিছু বাচ্চা স্কুল যাবেনা বলে বায়না করে যে পেটে ব্যথা হচ্ছে ; কিন্তু পার্কে যাওয়ার কথা বললে সাথে সাথে চলে যাবে। এরকম কিছু করা উচিৎ নয় ।

 উনচল্লিশ তম(৩৯) লক্ষণ বিষয়ে শ্রী ভগবান বলেছেন যে আমাদের বুদ্ধি স্থির রাখতে হবে। আমরা যখন পড়তে বসবো, তখন যেন আমাদের মন কার্টুনের দিকে না থাকে। বাবা মা সামনে থাকলে বাচ্চারা ভালো করে পড়ে এবং তাঁরা উঠে গেলে বাচ্চারা ভিডিও গেম খেলা শুরু করে দেয়। আমাদের বুদ্ধি স্থিতিশীল হওয়া উচিত। ভগবান বলেছেন... স্থির বুদ্ধির বাচ্চারা আমার খুব প্রিয়।

12.20

য়ে তু ধর্ম্যামৃতমিদং(য়্ঁ), য়থোক্তং(ম্) পর্য়ুপাসতে।
শ্রদ্দধানা মত্পরমা, ভক্তাস্তেSতীব মে প্রিয়াঃ।।12.20।।

কিন্তু যে ভক্তরা (আমাকে) বিশ্বাস করে এবং যারা আমার ভক্ত হয়ে উঠেছে, তারা এই ধার্মিক অমৃতকে যেমন বলা হয়েছে খুব ভালভাবে সেবন করে, তারা আমার খুব প্রিয়।

এখানে শ্রীভগবান বলেছেন... যেমন ভাবে তিনি বলেছেন ভক্ত হওয়ার কথা... বাচ্চা বা বড়ো মানুষরা শ্রদ্ধার সাথে, কোন আশঙ্কা না করে যদি এসব মেনে চলে.... সেই রকম ভক্তই আমার প্রিয় হয়। যেমন -- যে বাচ্চা ভালো ভাবে পড়া করে সে শিক্ষকের প্রিয় হয়

পুষ্পিকা
 পুষ্পিকা মানে এক ধরনের পরিচয়। যেমন, কোন গল্পের বই হাতে এলে প্রথমে আমরা লেখকের নাম দেখি, তারপর দেখি সূচনা... কি বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে ইত্যাদি। গীতায় পুষ্পিকার তাৎপর্য হলো সেই অধ্যায়ের পরিচয়। যেমন এই দ্বাদশ অধ্যায়ের নাম *ভক্তিযোগ*; এবং এটা শ্রী ভগবান ও অর্জুনের মধ্যে এক কথোপকথন ।

এই বিশেষ সত্র ছোটদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে৷ এখন তাদের সঙ্গে নিরন্তর কথা বলে বিবেচন সত্র কে অত্যন্ত আকর্ষক বানানো হয়েছে। প্রত্যেক লক্ষণের জন্য তারা নিজেদের নম্বর দিয়েছে। প্রতি লক্ষণে দশ ছিল পূর্ণ নম্বর। তাদের উত্তর অনুযায়ী নিম্নোক্ত পরিণাম পাওয়া গেছে ---

  ২৯℅ বাচ্চা নিজেকে ৩৯০ নম্বর দিয়েছে।

  ৫৫% বাচ্চা নিজেকে ৩০১ থেকে ৩৯০ এর মধ্যে নম্বর দিয়েছে।

  ৯% বাচ্চা নিজেকে ৩০০ র মধ্যে নম্বর দিয়েছে

৬% বাচ্চা নিজেকে ২০০ নম্বর দিয়েছে ।

  এর সাথে ছোটদের জন্য আয়োজিত দ্বাদশ অধ্যায়ের বিশেষ বিবেচন সত্রের অন্তিম ভাগ সম্পন্ন হলো ।

:: প্রশ্নোত্তর পর্ব ::

প্রশ্নকর্তা - প্রীতেশ ভাইয়া
প্রশ্ন - ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এতো কম সময়ের মধ্যে ভগবদগীতা কিভাবে বললেন ?
উত্তর - পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগেছিল ভগবদগীতা শোনাতে। তাঁর জন্য এটা কম সময় নয়। যুদ্ধের জন্য অপ্রস্তুত অর্জুন কে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করার জন্য ভগবদগীতা শুনিয়েছিলেন। আমরা যদি পুরো গীতা মুখস্থ করে ফেলি, পারায়ণে সেই পঁয়তাল্লিশ মিনিট ই লাগে ।

প্রশ্নকর্তা  - পরিণীতা দিদি
প্রশ্ন - অনপেক্ষঃ শুচির্দক্ষ, উদাসীনো গতব্যথঃ।
সর্বারম্ভপরিত্যাগী*, য়ো মদ্ভক্তঃ স মে প্রিয়ঃ।।
এই শ্লোকের অর্থ কি ?
উত্তর -
অনপেক্ষ'র অর্থ হলো কোন বস্তুর আশায় না থাকা বা ইচ্ছা না রাখা।
শুচি কথার অর্থ হলো পরিচ্ছন্নতা। নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখার সাথে সাথে নিজের ভিতর ও পরিষ্কার রাখা। 
দক্ষ কথার মানে -- নিজের কর্মে পারদর্শী হওয়া।
উদাসীন অর্থ পক্ষপাতী না হওয়া । গতব্যথ কথার অর্থ যে দুঃখ থেকে মুক্ত হয়ে গেছে বা যে দুঃখে ভেঙে পড়ে না। শ্রীভগবান বলেছেন সমস্ত আরম্ভ পরিত্যাগী ভক্ত আমার প্রিয় ।


প্রশ্নকর্তা - রূপালী দিদি
প্রশ্ন - বাচ্চারা গীতা পাঠ করার পরে কিভাবে জীবনে গীতা নিয়ে আসবে ?
উত্তর - ছোটদের জন্য সরল রূপে গীতার জ্ঞান প্রদান করা হচ্ছে। ছোট থেকেই যদি চেষ্টা করা হয় তাহলে গীতার জ্ঞান ধীরে ধীরে হতে থাকবে। সন্ন্যাসীরা সাধন দ্বারা বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে জ্ঞান প্রাপ্ত করেন এবং সেভাবে জীবন বাহিত করেন। বয়স অনুযায়ী ধীরে ধীরে সাধকগণ এই জ্ঞান প্রাপ্ত করেন।

প্রশ্ন - ক্রোধ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো ?
উত্তর - লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে এবং প্রাণায়ামের অভ্যাস করলে ক্রোধ আস্তে আস্তে প্রশমিত হতে থাকবে ।

।। ওঁ তৎসৎ ।।

ॐ তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসু উপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যায়াং(য়্ঁ) য়োগশাস্ত্রে
শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে ভক্তিয়োগো নাম দ্বাদশোধ্যায়ঃ।।