विवेचन सारांश
জগত সৃষ্টির রহস্য

ID: 6784
बंगाली - বাংলা
রবিবার, 06 এপ্রিল 2025
অধ্যায় 9: রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগ
2/3 (শ্লোক 7-15)
ব্যাখ্যাকার: গীতাব্রতী জাহ্নবী জী দেখনে


প্রত্যেকটি বিবেচন সত্রের মতনই আজকের বিবেচন সত্র শুরু হল প্রার্থনা, আরাত্রিক ,দ্বীপ প্রজ্জ্বলন, কৃষ্ণ বন্দনার মধ্যে দিয়ে। আজকের বিবেচনসত্রটির বিশেষ আকর্ষণ হলো এই যে ,এটির সঞ্চালক একজন বালিকা । বালিকাটি চমৎকার ভাষায় বিবেচনসত্রটি সঞ্চালন করল। সত্রটি বালক বালিকাদের জন্যই নিবেদিত তাই এই সঞ্চালন সবারই পক্ষে খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ও প্রেরণাদায়ক। বক্তা প্রথমে বালক বালিকাদের মনে করিয়ে দিলেন যে গত বিবেচন সত্রে যা কিছু তিনি তাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন অথবা বলা যায় সেটির পুনরালোচনা করে নিলেন অল্প সংখ্যক কথায়। ইতিপূর্বেই ভগবান এই অধ্যায়টি অর্থাৎ নবম অধ্যায় যেটি রাজ বিদ্যারাজগুহ্য যোগ বলে পরিবেশিত হয়েছে তার মূল কথাটি বক্তা বললেন যে এটি সকল বিদ্যার থেকে শ্রেষ্ঠ এবং গভীরতম, গোপনতম জ্ঞান হিসাবে অর্জুনকে ভগবান বলছেন। এটি একমাত্র শ্রদ্ধাশীল এবং দৈবগুণ বিশিষ্ট এবং ভগবানের প্রিয় ভক্ত যারা তাদের পক্ষেই এটি গ্রহণ করা সম্ভব। এটি প্রকৃতপক্ষে শুধু জ্ঞানই নয় এটি বিজ্ঞান ও বটে কারণ জ্ঞানের সাথে সাথে এর অনুভূতিও অনিবার্যভাবে মনে আসবে। প্রত্যক্ষ অনুভূতির সাথে এই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান ভগবান বলছেন খুবই আনন্দদায়ক।এই জ্ঞান লাভের পরে ব্রহ্ম জ্ঞানের পথ উন্মুক্ত হতে থাকবে।

9.7

সর্বভূতানি কৌন্তেয়, প্রকৃতিং(য়্ঁ) য়ান্তি মামিকাম্।
কল্পক্ষয়ে পুনস্তানি, কল্পাদৌ বিসৃজাম্যহম্॥9.7॥

হে কৌন্তেয় ! কল্পগুলি সমাপ্ত হলে মহাপ্রলয়ের সময় সমস্ত প্রাণী আমার প্রকৃতিতে এসে লয় হয়ে যায় এবং কল্পগুলির প্রারম্ভে মহাসর্গের সময় আমি আবার তাদের সৃষ্টি করি ৷

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার প্রিয় ভক্ত অর্জুনকে এই শ্লোকে জগত সৃষ্টির রহস্য বলতে চলেছেন। তিনি বলছেন তিনি প্রথম প্রকৃতিকে রচনা করেন আর প্রকৃতি এই বিশ্বের সকল জীব তথা যা কিছু সৃষ্ট বস্ত আছে তাকে নির্মাণ করে থাকে। এখন প্রশ্ন হতে পারে এগুলি জানবার কি দরকার ?বক্তা বলছেন এই সৃষ্টির রহস্য জানলে বোঝা যায় আমাদের অস্তিত্ব এই বিরাট সৃষ্টির তুলনায় কত ছোট। তাই অহংকার বা নিজেদের সম্বন্ধে বিরাট কিছু ভাবা একেবারেই উচিত নয়। বক্তা বলছেন ভগবান ষোল অধ্যায়টিতে যে দৈবি গুণ গুলির কথা বলেছেন তার মধ্যে নিরহংকার থাকা একটি দৈব গুণ বিশেষ বলে বলেছেন। এখন বক্তা বলছেন প্রকৃতির রচনা স্বয়ং ভগবান করে থাকেন আর প্রকৃতি অগ্নি, বায়ু, জল, পৃথিবী বা মাটি আর আকাশ এই পঞ্চভূত দিয়ে সকল বস্তু সৃষ্টি করে থাকে। ভগবান কল্প শুরুতে এই জগত সৃষ্টি করেন আবার কল্পশেষে এটি বিলয় করে দেন। এইভাবেই সৃষ্টি চলতে থাকে কল্প থেকে কল্পান্তরে। এই চক্র সৃষ্টির আদিতে সৃষ্টির শেষে চলতেই থাকে। আমাদের চলাও কখনোই থেমে থাকে না তাই ভগবানের নির্দেশ আমরা যেন কখনোই এই সৃষ্টির সাথে নিজেদেরকে আসক্ত করে না ফেলি। আমাদের জন্ম ও মৃত্যু চক্রাকারে হয়ে চলবে। অনেক সময়ে তাহলে প্রশ্ন আসে সৃষ্টি নির্মাণের আগে কি ভগবান ছিলেন না উত্তরে বলা যায় তিনি সর্বদাই রয়েছেন জগত নির্মাণের আগে এবং জগত লয় হয়ে যাবার পরেও এই চক্র ভগবানের হাত ধরে চলতেই থাকে। কাজেই প্রকৃতির সাহায্যে ভগবান এই সৃষ্টি নির্মাণ যেমন করছেন তেমনি এটি রক্ষা করছেন এবং কালে এটির বিনাশ সাধনও করছেন।

9.8

প্রকৃতিং(ম্) স্বামবষ্টভ্য, বিসৃজামি পুনঃ(ফ্) পুনঃ
ভূতগ্রামমিমং(ঙ) কৃৎস্নম্, অবশং(ম্) প্রকৃতের্বশাৎ।।8।।

প্রকৃতির পরবশ এই সমগ্র প্রাণীগণকে আমি (কল্পগুলির আদিতে) নিজ প্রকৃতিকে বশীভূত করে বারংবার সৃষ্টি করি ৷

এই শ্লোকটিতে ভগবান অর্জুনকে জানাচ্ছেন যে তিনি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি করে থাকেন প্রকৃতির রচনার মাধ্যমে। আর এই প্রকৃতি তিনটি গুণ দ্বারা পরিচালিত হয় ,সাত্ত্বিক রাজসিক ও তামসিক।
সাত্ত্বিক গুণের প্রভাবে জীব শুভ কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে থাকে। যেমন এখন বালক বালিকারা, তাদের মন গীতার চিন্তনে,মননে ব্যস্ত রেখেছে এরপর যখন তারা তাদের নিজের নিজের অন্যান্য প্রতিদিনকার কার্য করবে তখন তারা রাজসিক গুণের প্রভাবে কাজ করতে থাকবে , আবার যখন তারা নিদ্রা যাবে বা অলসতায় তাদের মন ভরে যাবে ,কিছুই করতে ভালো লাগবে না তখন বোঝা যাবে তাদের মন তামসিক গুণের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বক্তা বলছেন সাধারণ মানুষেরা এই গুণ গুলির বশীভূত হয়ে থাকে অর্থাৎ যখন তাদের মন সাত্ত্বিক থাকে তখন তারা শুভ কর্ম অনুষ্ঠান করে থাকে, যখন তারা প্রতিযোগিতা বা দৈনন্দিন কাজে বিশেষ করে মন দেয় তখন তারা রাজসিক গুণের প্রভাবে পড়ে আর যখন তারা অশুভ কর্মে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে তখন তারা তামসিক গুণের প্রভাবে পড়ে কাজগুলি করে থাকে কিন্তু বক্তা বলছেন যেসব গুণী ভক্ত আছেন তারা কিন্তু এই তিন গুণগুলি কে বশীভূত করে ফেলেন ফলে যখনই তাদের রাজসিক বা তামসিক গুণগুলি মনকে অভিভূত করতে চায় তখনই তারা সাত্ত্বিক গুণের প্রভাবে সেগুলিকে জয় করে ফেলেন ।এই প্রসঙ্গে বক্তা শ্রী রামের কথা বললেন। শ্রীরামচন্দ্র রাজ্যাভিষেক হওয়ার আগে এবং পরে তা যখন বিফল হল এবং তাকে বনবাসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হলো তখন রামচন্দ্রের মুখের প্রসন্নতার কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি। তিনি দুই অবস্থায় সমান ভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন কারণ তিনি শুধুমাত্র সাত্ত্বিক গুণের আধার ছিলেন। বক্তা বালক বালিকাদেরও নিজেদেরকে এমনই ভাবে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করতে বলছেন। কারণ ভগবানও অর্জুনকে এই ভাবেই তিন গুণের ঊর্ধ্বে গিয়ে গুণাতীত হিসেবে নিজেদেরকে তৈরি করতে বলছেন। ভগবান অর্জুনকে বলছেন তিনি তিনটি গুণের ধারক প্রকৃতির সাহায্যে ই জগত সৃষ্টি করে থাকেন।

9.9

ন চ মাং(ন্) তানি কর্মাণি, নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয়
উদাসীনবদাসীনম্, অসক্তং(ন্) তেষু কর্মসু।।9।

হে ধনঞ্জয় ! এই সৃষ্টি রচনাদি কর্মে আমি অনাসক্ত এবং উদাসীনের মতো থাকায় এই কর্মসকল আমাকে আবদ্ধ করে না ৷

ভগবান আরো বলছেন প্রকৃতির রচনার মধ্যে দিয়ে তিনি এই সৃষ্টি কার্য করে চলেছেন, সৃষ্টিকে রক্ষা করছেন ও সৃষ্টির বিলয় ঘটাচ্ছেন, অথচ তিনি কিন্তু কোন কর্মের সাথেই নিজেকে আসক্ত বা লিপ্ত করেন না। তিনি সর্বদাই অনাসক্ত ভাবে এই জগত সৃষ্টি,প্রতিপালন ও বিলয় করে চলেছেন।

9.10

ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ(স্), সূয়তে সচরাচরম্
হেতুনানেন কৌন্তেয়, জগদ্বিপরিবর্ততে।।10।।

প্রকৃতি আমার অধ্যক্ষতায় সমস্ত চরাচর জগৎ সৃষ্টি করে। হে কৌন্তেয় ! সেইজন্যই জগৎ বিবিধ প্রকারে পরিবর্তিত হয় ৷

ভগবান বলছেন প্রকৃতি কিন্তু তার অধীনেই কার্য করে চলে। তিনি প্রকৃতিকে চালনা করেন। বক্তা বালক বালিকাদের এই ভাবটি বোঝানোর জন্য বলছেন ধরা যাক শ্রেণীকক্ষে বালক বালিকারা কোন শিক্ষকের উপস্থিতিতে কোন কাজ করে চলেছে। হটাৎ হয়তো শিক্ষক শ্রেণীকক্ষের বাইরে গেলেন তখন তারা স্বভাবতই নিজেদের কাজ ছেড়ে চেঁচামেচি করতে থাকে আবার যখন শিক্ষক ঘরে ঢোকেন তখন তারা মনোযোগের সাথে কার্য করে। অর্থাৎ কিনা শিক্ষকের অধীনতায় তারা কাজ করে চলে তেমনি ভগবান কিন্তু সর্বক্ষণই প্রকৃতির উপর নজর রেখে চলেন এবং তার অধীনতাতে প্রকৃতি কাজ করে চলে। তিনি কোনো কাজে নিজেকে জড়িত করেন না, শিক্ষকের মতন তার উপস্থিতিটুকুই যথেষ্ট। তাই ভগবান বলছেন তিনি যেন এই জগতের অধ্যক্ষতা করছেন। তার পরিচালনাতেই জগত সৃষ্টি এগিয়ে চলেছে, শুধু এগিয়েই চলছে না এটি পরিবর্তিত হয়ে চলেছে বা বলতে পারি, বিবর্তিত হয়ে চলেছে। সৃষ্ট সকল বস্তু পরিবর্তনশীল একমাত্র ভগবান ছাড়া।

9.11

অবজানন্তি মাং(ম্) মূঢা, মানুষীং(ন্) তনুমাশ্রিতম্
পরং(ম্) ভাবমজানন্তো, মম ভূতমহেশ্বরম্।।11।।

অবিবেকী (মূৰ্খ) ব্যক্তিগণ সর্বপ্রাণীর মহেশ্বর-স্বরূপ আমার পরমভাব না জেনে আমাকে মনুষ্যদেহধারী (সাধারণ মানুষ) মনে করে আমাকে অবজ্ঞা করে থাকে ৷

এই শ্লোকটিতে ভগবান বলছেন মানুষ তাকে নানান রূপে ভজনা করে থাকে। কখনো শ্রীরাম কখনো মা দুর্গা কখনো বা গণেশ মহারাজ রূপে ভক্ত ভগবানকে দেখে থাকেন, ভগবানও বিভিন্ন রূপে ভক্তের পূজা গ্রহণ করেন। তিনি নানান অবতার রূপে পৃথিবীতে লীলা করেন কিন্তু তিনি নিজের জন্য নয় ভক্তের জন্যই এই বিভিন্ন রূপ ধারণ করে থাকেন। যারা এ সত্য ধারণা করতে পারে না তারা অজ্ঞান বা মুঢ়। এই প্রসঙ্গে বক্তা বলছেন দূরদর্শনে যখন রামায়ণ অভিনীত হতো তখন রামের চরিত্রে যিনি অভিনয় করতেন তাকে পথে-ঘাটে দেখে লোকে প্রণাম করতে ভিড় জমাতো। তারা ভুলে যেতো অভিনয়কারী শ্রীরাম নন তিনি অভিনেতা মাত্র। ভগবানও তেমনি নানা রূপে ভক্তের মন বুঝে নিজেকে প্রকাশ করে থাকেন কিন্তু তার আসল রূপটি ভক্তকে নানান সাধনা করে উপলব্ধি করতে হয়। ভগবান অর্জুনকে ভগবানের স্বরূপ টিকে চিনে নেবার পথ দেখিয়ে দিতে চলেছেন।

9.12

মোঘাশা মোঘকর্মাণো, মোঘজ্ঞানা বিচেতসঃ
রাক্ষসীমাসুরীং(ঞ) চৈব, প্রকৃতিং(ম্) মোহিনীং(ম্) শ্রিতাঃ।।12।।

যে সকল বিবেকহীন ব্যক্তি আসুরী, রাক্ষসী (হিংসা) এবং মোহিনী (বুদ্ধিভ্রংশকারী) প্রকৃতির আশ্রয় গ্রহণ করে তাদের সব আশা ব্যর্থ, সমস্ত শুভকর্ম এবং সমস্ত জ্ঞান ব্যর্থ অর্থাৎ তাদের আশা, কর্ম এবং জ্ঞান শুভ-ফল প্রদান করে না।

শ্লোকটিতে বলা হয়েছে,যে সকল মানুষ দৈবগুণ বর্জিত হয়ে অসুরসুলভ গুণের প্রভাবে ভগবানের প্রকৃত রূপের সন্ধান করতে পারেনা তাদের সকল সাধনা, সকল জ্ঞান, সকল আশা নিষ্ফল হয়ে পড়ে। আসুরি গুণের কথা ষোড়শ অধ্যায়তে দৈবি গুণের পরিচয় দেবার পরেই বিস্তৃতভাবে বলা আছে। আসুরি গুনগুলিকে ভগবান রাক্ষসী ও মোহিনী গুণ বলেও বর্ণনা করছেন অর্জুন এর কাছে। এই গুণগুলি বা বলতে গেলে এই দোষগুলি মানুষকে ভগবানের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার ফলে ভগবানকে পাওয়া এদের পক্ষে অথবা এইসব মানুষের পক্ষে দুরূহ হয়ে ওঠে। ভগবানকে অবজ্ঞা করার ফলেই তাদের প্রকৃতিতে এই দোষগুলি প্রকট হয়ে পড়ে।

9.13

মহাত্মানস্তু মাং(ম্) পার্থ, দৈবীং(ম্) প্রকৃতিমাশ্রিতাঃ
ভজন্ত্যনন্যমনসো, জ্ঞাত্বা ভূতাদিমব্যয়ম্।।13।।

কিন্তু হে পাৰ্থ ! দৈবী প্রকৃতির আশ্রিত অনন্যচিত্ত মহাত্মাগণ আমাকে সর্বভূতের আদি ও অবিনাশী জেনে আমার ভজনা করে থাকেন ৷

এই প্রসঙ্গে বলা যায়, যারা মহাত্মা ,ভক্ত ,সাধক তাদের মধ্যে কিন্তু এই দোষগুলি কখনোই দেখা যায় না। তারা জানেন ভগবানের বাস মানুষের হৃদয়ে। তিনি আমাদের সবথেকে নিকটতম স্থানে বর্তমান রয়েছেন। আমাদের ত্বক আমাদের শরীরের উপরের অংশকে ঢেকে রাখে তার থেকেও কাছে নিভৃতে, আমাদের ঠিক হৃদয়ের মাঝখানে ভগবানের বাস। তিনি আমাদের নিকটতম। বক্তা বালক বালিকাকে বুঝাবার জন্য একটি ঘটনা বললেন কারুর মা হয়তো এক বাক্স চকলেট দিয়ে বললেন এই থেকে একটি মাত্র চকলেট তারা যেন তার অনুপস্থিতিতে খায়। মা যখন নেই কাছাকাছি তখন বালক বালিকা মনে করতে পারে একের বেশি খেলে তিনি তো দেখতে পাচ্ছেন না তাই তারা একের বেশি চকলেট নিয়ে খেতেই পারে কিন্তু এক্ষেত্রে বুঝতে হবে একজন কিন্তু এই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছেন। তিনি হলেন বালক বালিকার অন্তরে বসবাসকারী ভগবান। তাই তাদের এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। মহাত্মা যারা তারা কিন্তু এই বোধ সবসময় অনুভব করে থাকেন তাই তারা কোন অন্যায়, কোন অসৎ আচরণ করতে পারে না। তারা জানেন সর্বভূতের কারণ হলেন ভগবান এবং তিনি অবিনাশী তাই অনন্য চিত্তে তারা তার ভজনা করে।

9.14

সততং(ঙ্) কীর্তয়ন্তো মাং(য়্ঁ), য়তন্তশ্চ দৃঢব্রতাঃ।
নমস্যন্তশ্চ মাং(ম্) ভক্ত্যা, নিত্যয়ুক্তা উপাসতে॥9.14॥

নিত্য-(আমাতে) যুক্ত ব্যক্তি দৃঢ়চিত্ত হয়ে যত্নপূর্বক সাধন-ভজন এবং ভক্তিপূর্বক কীর্তন করেন এবং আমাকে নমস্কার করে নিরন্তর আমার উপাসনা করেন ।

এই সকল ভক্ত সাধক তারা ব্রহ্মচর্য বা সন্ন্যাস ব্রতে দৃঢ়নিষ্ঠ এবং যত্নশীল। তারা ভগবানের কীর্তন করে থাকেন ও ভক্তিপূর্বক তাকে নমস্কার ইত্যাদি দ্বারা শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। তারা সর্বদা শান্ত হয়ে ভগবানের উপাসনায় রত থাকেন। বক্তা বালক বালিকাদের অনুপ্রাণিত করছেন, বলছেন বালক বালিকারা দৈব গুণগুলি ভালোভাবে জেনে সেগুলিকে ধীরে ধীরে আয়ত্ত করলে তাদের মনেও শান্তি আসবে,ভগবানের সম্বন্ধে শ্রদ্ধা ভক্তি উৎপন্ন হবে।  গীতার অধ্যয়ন ,চিন্তন ও মনন দ্বারা তারা নিজেদেরকে ভগবান লাভের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

9.15

জ্ঞানযজ্ঞেন চাপ্যন্যে, যজন্তো মামুপাসতে
একত্বেন পৃথক্ত্বেন, বহুধা বিশ্বতোমুখম্।।15।।

কোনো কোনো সাধক জ্ঞানযজ্ঞের সাহায্যে একইভাবে (অভেদ-ভাবে) আমার পূজা দ্বারা আমাকে উপাসনা করেন, আবার অন্য কোনো সাধক নিজেকে পৃথক বলে মনে করে আমার বিরাট রূপের বা সংসারকে আমার বিরাট রূপ মনে করে (সেবা ভাবের দ্বারা) নানা প্রকারে - আমার উপাসনা করেন ৷

শ্লোকটিতে ভগবান দুটি নির্দিষ্ট পথের কথা উল্লেখ করেছেন। যোগী পুরুষ ভগবান লাভে সমর্থ হয়ে থাকেন। এই যোগের মধ্যে কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ তিনটিই ভগবান লাভের প্রকৃষ্ট পথ বলে ভগবান অর্জুনক জানাচ্ছেন। সাধক বা যোগী পুরুষদের মধ্যে কেউ পূজা অর্চনা, যাগ -যজ্ঞ দ্বারা ভগবানকে প্রসন্ন করে থাকেন আর জ্ঞানযোগী ধ্যান ধারণা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে ভগবানকে পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। কেউ আত্ম স্বরূপে ভগবানকে চিন্তা করেন আবার কেউ কর্ম যোগ দ্বারা মানে কোন ফলের আশা না করে সকল মানুষের মধ্যে ভগবানের প্রকাশ অনুভব করে তাদের সেবার মধ্যে দিয়ে ভগবানকে পেতে চেষ্টা করেন। নিজের মধ্যে ভগবান কে উপলব্ধি করা কোন সাধকের ভগবান লাভের পথ হতে পারে আবার সমস্ত সৃষ্টির পৃথক পৃথক বস্তুর মধ্যে ভগবানের উপস্থিতি উপলব্ধি করে তাদের সেবা করে থাকেন এবং ভগবান প্রাপ্তির পথে অগ্রসর হয়ে থাকেন। বক্তা বলছেন বালক বালিকাদের কাছে এই সকল তথ্য এখন কঠিন বোধ হতে পারে কিন্তু তারা প্রতিদিন একটু একটু করে যদি গীতা অধ্যয়ন এবং এই বিবেচন গুলি বক্তব্য চিন্তা করে তবে তাদের মনেও এগুলি সম্বন্ধে খুব স্পষ্ট না হলেও একটি ধারণা গড়ে উঠবে এবং সেই আশাতেই গীতারঅধ্যয়ন ও চিন্তন তারা যেন করে চলে,এর সাহায্যে তাদের জীবনে গীতা আলোচনার সুফল আসবেই।