विवेचन सारांश
|| প্রতি কণায় ঈশ্বরের উপস্থিতি, জ্ঞানে আনতে হবে তাঁর বিভূতি ||
সনাতন পরম্পরা অনুযায়ী সুমধুর গীত , মঙ্গল প্রার্থনা , দীপ প্রজ্জ্বলন তথা গুরু বন্দনার সাথে আজকের বিবেচন সত্রের শুভারম্ভ হলো।
শ্রীভগবানের মঙ্গলময় কৃপায় আমরা শ্রীমদভগবদগীতার চিন্তন - এই মানব জীবন কে সার্থক এবং তার পরমোচ্চ লক্ষ্য প্রাপ্ত করার জন্য, এই জীবন তথা পারলৌকিক জীবনের উন্নতির জন্য আমরা শ্রীমদভগবদগীতা অধ্যয়ন শুরু করেছি ; সংস্কৃত উচ্চারণ সঠিকভাবে শিখছি; কেউ বা শ্লোক মুখস্থ করছেন; কেউ কেউ গীতার বিবেচন শুনে, তার নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তা নিজের জীবনে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।
এই পুণ্য জ্ঞান অর্জন করা আমাদের এই জীবনের অথবা পূর্ব কোন জন্মের পুণ্য কর্মের ফল হতে পারে । আমাদের পূর্বজদের সুকর্ম অথবা কোন মহান সন্তের কৃপা দৃষ্টির কারণে হয়তো আমাদের এরূপ সৌভাগ্য লাভ হয়েছে যে আমরা গীতা পাঠ করার জন্য নির্বাচিত হয়েছি।
শ্রীভগবান অর্জুন কে অনেকরকম উপদেশ দিয়েছেন। নবম অধ্যায় রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগ এ অত্যন্ত গূঢ় এবং গোপনীয় সূত্র ও অর্জুন কে জানিয়েছেন। এক্ষণে অর্জুনের মনে সংশয় উপস্থিত হয়েছে --- যে শ্রীকৃষ্ণ কে এতদিন তিনি মহামানব বলে ভাবতেন -- তিনি স্বয়ং ঈশ্বর নন তো!?
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে চুয়ান্ন বছর ধরে শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুনের সম্পর্ক বিভিন্ন সম্বন্ধে যুক্ত হয়েছে এবং দুজনের মধ্যে সুদৃঢ় বন্ধন তৈরি হয়েছে । লাক্ষাগৃহ কাণ্ডের পরে যখন পাণ্ডবরা বনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন -- তখনই প্রথম বার শ্রীকৃষ্ণের সাথে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়। অর্জুন তাঁকে উত্তম মহাপুরুষ, শ্রেষ্ঠ বক্তা, কুশল রাজনীতিজ্ঞ, পাণ্ডবদের পরম হিতৈষী তথা অত্যন্ত প্রিয় মিত্র রূপে জানতেন। পরে যখন শ্রীভগবান অর্জুন কে বলেছেন (চতুর্থ অধ্যায়ে)
উত্তরে অর্জুন বলেছেন --- অপরং ভবতো জন্ম ..
শ্রীভগবান বলেছেন -- পূর্ব জন্মের কথা তোমার মনে নেই... কিন্তু আমরা কয়েক জন্ম ধরে একইসাথে আছি।
এরপর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্লোকের মধ্যে তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন ---
এইসব শুনে অর্জুন হতচকিত হয়ে গেছেন। আগে শ্রীকৃষ্ণ সর্বোত্তম গুণী হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন --- কিন্তু তাঁর ভগবত্ব জানা ছিল না। এখন অর্জুন চাইছেন শ্রীভগবান কে পূর্ণ ভাবে জানতে। এই দশম অধ্যায়ে তিনি শ্রীভগবান কে অনুনয় করেছেন যেন তিনি তাঁর স্বরূপে প্রকটিত হন।
শ্রীভগবান দশম অধ্যায়ে আপন বিভূতি বর্ণনা করেছেন ---
অর্থাৎ, বাসুদেব সর্বতেই বিদ্যমান। এই বার্তা সার্থক -- তা একটি সরল উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায়। আমাদের চারপাশের বায়ুতেই আগুন আছে ; কিন্তু তা প্রত্যক্ষ ভাবে প্রমাণ করতে হলে কিছু ব্যবস্থা করতে হয়। দুটো পাথরকে ঘর্ষণ করলে আগুন জ্বলে উঠবে। একইভাবে বায়ুতে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন দুই ই আছে --- কিন্তু তা তো জলের আকারে দেখা যায় না। অর্থাৎ , শ্রীভগবান প্রতিটি কোণে উপস্থিত রয়েছেন --
সনাতন পরম্পরায় মানা হয় যে ব্রহ্মই সব ; দ্বিতীয় আর কিছু নেই। সেই পরমাত্মাতেই ভগবান এবং শয়তান দুইয়ের ই দর্শন পাওয়া যায় -- শুধু সঠিক ভাবের প্রয়োজন।
শ্রীভগবানের মঙ্গলময় কৃপায় আমরা শ্রীমদভগবদগীতার চিন্তন - এই মানব জীবন কে সার্থক এবং তার পরমোচ্চ লক্ষ্য প্রাপ্ত করার জন্য, এই জীবন তথা পারলৌকিক জীবনের উন্নতির জন্য আমরা শ্রীমদভগবদগীতা অধ্যয়ন শুরু করেছি ; সংস্কৃত উচ্চারণ সঠিকভাবে শিখছি; কেউ বা শ্লোক মুখস্থ করছেন; কেউ কেউ গীতার বিবেচন শুনে, তার নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তা নিজের জীবনে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।
এই পুণ্য জ্ঞান অর্জন করা আমাদের এই জীবনের অথবা পূর্ব কোন জন্মের পুণ্য কর্মের ফল হতে পারে । আমাদের পূর্বজদের সুকর্ম অথবা কোন মহান সন্তের কৃপা দৃষ্টির কারণে হয়তো আমাদের এরূপ সৌভাগ্য লাভ হয়েছে যে আমরা গীতা পাঠ করার জন্য নির্বাচিত হয়েছি।
শ্রীভগবান অর্জুন কে অনেকরকম উপদেশ দিয়েছেন। নবম অধ্যায় রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগ এ অত্যন্ত গূঢ় এবং গোপনীয় সূত্র ও অর্জুন কে জানিয়েছেন। এক্ষণে অর্জুনের মনে সংশয় উপস্থিত হয়েছে --- যে শ্রীকৃষ্ণ কে এতদিন তিনি মহামানব বলে ভাবতেন -- তিনি স্বয়ং ঈশ্বর নন তো!?
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে চুয়ান্ন বছর ধরে শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুনের সম্পর্ক বিভিন্ন সম্বন্ধে যুক্ত হয়েছে এবং দুজনের মধ্যে সুদৃঢ় বন্ধন তৈরি হয়েছে । লাক্ষাগৃহ কাণ্ডের পরে যখন পাণ্ডবরা বনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন -- তখনই প্রথম বার শ্রীকৃষ্ণের সাথে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়। অর্জুন তাঁকে উত্তম মহাপুরুষ, শ্রেষ্ঠ বক্তা, কুশল রাজনীতিজ্ঞ, পাণ্ডবদের পরম হিতৈষী তথা অত্যন্ত প্রিয় মিত্র রূপে জানতেন। পরে যখন শ্রীভগবান অর্জুন কে বলেছেন (চতুর্থ অধ্যায়ে)
শ্রীভগবানুবাচ
ইমং বিবস্বতে য়োগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম্।
বিবস্বান্মনবে প্রাহ মনুরিক্ষ্বাকবেঽব্রবীৎ॥4.1॥
ইমং বিবস্বতে য়োগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম্।
বিবস্বান্মনবে প্রাহ মনুরিক্ষ্বাকবেঽব্রবীৎ॥4.1॥
উত্তরে অর্জুন বলেছেন --- অপরং ভবতো জন্ম ..
শ্রীভগবান বলেছেন -- পূর্ব জন্মের কথা তোমার মনে নেই... কিন্তু আমরা কয়েক জন্ম ধরে একইসাথে আছি।
শ্রীভগবানুবাচ
বহূনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন।
তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেত্থ পরন্তপ ꠱4.5꠱
বহূনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন।
তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেত্থ পরন্তপ ꠱4.5꠱
এরপর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্লোকের মধ্যে তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন ---
অজোঽপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোঽপি সন্।
প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া ꠱6꠱
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্য়হম্ ꠱7꠱
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ꠱8꠱
জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম্ এবং য়ো বেত্তি তত্ত্বতঃ।
ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোঽর্জুন ꠱9꠱
বীতরাগভয়ক্রোধা মন্ময়া মামুপাশ্রিতাঃ।
বহবো জ্ঞানতপসা পূতা মদ্ভাবমাগতাঃ ꠱10꠱
প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া ꠱6꠱
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্য়হম্ ꠱7꠱
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ꠱8꠱
জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম্ এবং য়ো বেত্তি তত্ত্বতঃ।
ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোঽর্জুন ꠱9꠱
বীতরাগভয়ক্রোধা মন্ময়া মামুপাশ্রিতাঃ।
বহবো জ্ঞানতপসা পূতা মদ্ভাবমাগতাঃ ꠱10꠱
এইসব শুনে অর্জুন হতচকিত হয়ে গেছেন। আগে শ্রীকৃষ্ণ সর্বোত্তম গুণী হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন --- কিন্তু তাঁর ভগবত্ব জানা ছিল না। এখন অর্জুন চাইছেন শ্রীভগবান কে পূর্ণ ভাবে জানতে। এই দশম অধ্যায়ে তিনি শ্রীভগবান কে অনুনয় করেছেন যেন তিনি তাঁর স্বরূপে প্রকটিত হন।
শ্রীভগবান দশম অধ্যায়ে আপন বিভূতি বর্ণনা করেছেন ---
|| বাসুদেব সর্ব ইতি ||
অর্থাৎ, বাসুদেব সর্বতেই বিদ্যমান। এই বার্তা সার্থক -- তা একটি সরল উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায়। আমাদের চারপাশের বায়ুতেই আগুন আছে ; কিন্তু তা প্রত্যক্ষ ভাবে প্রমাণ করতে হলে কিছু ব্যবস্থা করতে হয়। দুটো পাথরকে ঘর্ষণ করলে আগুন জ্বলে উঠবে। একইভাবে বায়ুতে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন দুই ই আছে --- কিন্তু তা তো জলের আকারে দেখা যায় না। অর্থাৎ , শ্রীভগবান প্রতিটি কোণে উপস্থিত রয়েছেন --
একো ব্রহ্ম দ্বিতীয় নাস্তি
সনাতন পরম্পরায় মানা হয় যে ব্রহ্মই সব ; দ্বিতীয় আর কিছু নেই। সেই পরমাত্মাতেই ভগবান এবং শয়তান দুইয়ের ই দর্শন পাওয়া যায় -- শুধু সঠিক ভাবের প্রয়োজন।
10.15
স্বয়মেবাত্মনাত্মনং(ম্) ,বেত্থ ত্বং(ম্) পুরুষোত্তম
ভূতভাবন ভূতেশ ,দেবদেব জগৎপতে॥15॥
হে ভূতভাবন ! হে ভূতেশ! হে দেবদেব! হে জগৎপতে! হে পুরুষোত্তম্ ! আপনি স্বয়ংই নিজের দ্বারা নিজেকে জানেন। ১৫ ॥
অর্জুন শ্রীভগবান কে খুব সুন্দর কিছু কথা বলেছেন। বলেছেন --- আমি তো এতো বছর ধরেও জানতে পারিনি। আপনাকে জানার ক্ষমতা ও তো আপনার থেকে প্রাপ্ত করতে হবে। আপনার কৃপাতেই শুধু আপনাকে জানা সম্ভব।
সোই জানই জেহি দেহু জনাই।
জানত তুম্হিহি তুম্হই হোই জাঈ॥
জানত তুম্হিহি তুম্হই হোই জাঈ॥
বক্তুমর্হস্যশেষেণ, দিব্যা হ্যাত্মবিভূতয়ঃ
যাভির্বিভূতিভির্লোকান্ ,ইমাংস্ত্বং(ম্) ব্যাপ্য তিষ্ঠসি॥16॥
অতএব যেসব বিভূতি দ্বারা আপনি সর্বলোকে ব্যাপ্তিস্বরূপ হয়ে অবস্থান করছেন, সেইসকল দিব্য বিভৃতি সম্পূর্ণভাবে আপনিই বর্ণনা করতে সক্ষম৷৷ ১৬ ৷৷
অর্জুন এখন বুঝতে পারছেন যে শ্রীভগবান-ই সত্য স্বরূপ। বুঝতে পারছেন যে একমাত্র শ্রীভগবানের বিশেষ কৃপায় ঈশ্বরের বাস্তবিক রূপ দর্শন সম্ভব হতে পারে ।
কথং(ম্) বিদ্যামহং(ম্) যোগিংস্ ,ত্বাং((ম্) সদা পরিচিন্তয়ন্
কেষু কেষু চ ভাবেষু ,চিন্ত্যোऽসি ভগবন্ময়া॥17॥
হে যোগী ! সর্বদা সর্বতোভাবে চিন্তারত আমি আপনাকে কেমন করে জানব ? এবং হে ভগবান ! আপনি কোন্ কোন্ ভাবের মাধ্যমে আমার দ্বারা চিন্তনীয় হতে পারেন ? অর্থাৎ সর্বাঙ্গীণ কোন্ কোন্ সাহায্যে আপনাকে আমি চিন্তা করব ? ॥ ১৭ ॥
অর্জুন শ্রীভগবান কে তাত্ত্বিক প্রশ্ন করেছেন। জ্ঞান মার্গে ঈশ্বর প্রাপ্ত করা সহজ ; কিন্তু সেই মার্গ অনুসরণ করে প্রভুর চিন্তন কিভাবে করা উচিৎ -- তা জানতে চেয়েছেন। তিনি শ্রীভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছেন যে জ্ঞানীরা ভগবানের কৃপায় কি বিশেষ চিহ্নের মাধ্যমে তাঁকে চিন্তন করেন ?
রামায়ণে শ্রী হনুমান জী লঙ্কায় বিভীষণের গৃহ দেখে বলে ওঠেন - "রামায়ুধ অঙ্কিত গৃহ সোভা বরনি ন জাই"
অর্থাৎ, ঘরের দেওয়ালে রাম নাম দেখে চেনা যায় যে এই গৃহ কোন ভক্তের। অর্থাৎ , আমরা কোন চিহ্ন দ্বারা কিছু সম্বন্ধে অনুমান করতে পারি। এজন্যই অর্জুন ঈশ্বর ভক্তির কোন চিহ্ন শ্রীভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছেন ।
রামায়ণে শ্রী হনুমান জী লঙ্কায় বিভীষণের গৃহ দেখে বলে ওঠেন - "রামায়ুধ অঙ্কিত গৃহ সোভা বরনি ন জাই"
অর্থাৎ, ঘরের দেওয়ালে রাম নাম দেখে চেনা যায় যে এই গৃহ কোন ভক্তের। অর্থাৎ , আমরা কোন চিহ্ন দ্বারা কিছু সম্বন্ধে অনুমান করতে পারি। এজন্যই অর্জুন ঈশ্বর ভক্তির কোন চিহ্ন শ্রীভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছেন ।
বিস্তরেণাত্মনো যোগং(ম্) , বিভূতিং( ঞ্) চ জনার্দন
ভূয়ঃ(খ্) কথয় তৃপ্তির্হি , শৃণ্বতো নাস্তি মেऽমৃতম্॥18॥
হে জনার্দন ! আপনি আপনার যোগ (সামর্থ্য) এবং বিভূতিগুলি বিস্তারিতভাবে পুনরায় বলুন ; কারণ আপনার এই অমৃতময় বচন শুনে আমার তৃপ্তি হচ্ছে না৷ ১৮ ৷৷
অর্জুন এখানে ভক্তের উত্তম লক্ষণ দেখিয়েছেন ।
রামায়ণে যখন ভগবান রামচন্দ্র যখন ঋষি বাল্মিকীর বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত স্থান কি তা জিজ্ঞাসা করেছেন ; বাল্মিকী জী বলেছেন --
অর্থাৎ, যেরকম শত শত নদীর জল সমুদ্রে গিয়ে পড়লেও সমুদ্রের জলস্তরে পরিবর্তন হয় না ; তেমনই, হে ভগবান ! আপনি এমন জায়গায় বিরাজ করুন যেখান থেকে শ্রোতাদের কান গুলো যেন আপনার কথা শুনতে শুনতে কখনো না ক্লান্ত হয়ে যায়। রাম জী'র পরম ভক্ত ভগবান শিব জী ও একই রাম কথা বহুবার শোনেন এবং শোনান।
যে ভক্ত শ্রীভগবানের গুণ শুনতে শুনতে কখনো ক্লান্ত হয় না, বরং সর্বদা তাঁর চিন্তায় ডুবে থাকে --- এমন ভক্তই শ্রীভগবানের অতি প্রিয়; এখানে অর্জুনের হৃদয়ে সেই ভাব জাগ্রত হতে চলেছে।
রামায়ণে যখন ভগবান রামচন্দ্র যখন ঋষি বাল্মিকীর বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত স্থান কি তা জিজ্ঞাসা করেছেন ; বাল্মিকী জী বলেছেন --
জিন্হ কে শ্রবন সমুদ্র সমানা।
কথা তুম্হারি সুভগ সরি নানা॥
ভরহিং নিরন্তর হোহিং ন পূরে।
তিহ্ন কে হিয় তুম্হ কহুঁ গুহ রূরে॥
কথা তুম্হারি সুভগ সরি নানা॥
ভরহিং নিরন্তর হোহিং ন পূরে।
তিহ্ন কে হিয় তুম্হ কহুঁ গুহ রূরে॥
অর্থাৎ, যেরকম শত শত নদীর জল সমুদ্রে গিয়ে পড়লেও সমুদ্রের জলস্তরে পরিবর্তন হয় না ; তেমনই, হে ভগবান ! আপনি এমন জায়গায় বিরাজ করুন যেখান থেকে শ্রোতাদের কান গুলো যেন আপনার কথা শুনতে শুনতে কখনো না ক্লান্ত হয়ে যায়। রাম জী'র পরম ভক্ত ভগবান শিব জী ও একই রাম কথা বহুবার শোনেন এবং শোনান।
রাম চরিত জে সুনত অঘাহিং।*
*रस विशेष जाना तिन नाहीं।।*
*रस विशेष जाना तिन नाहीं।।*
যে ভক্ত শ্রীভগবানের গুণ শুনতে শুনতে কখনো ক্লান্ত হয় না, বরং সর্বদা তাঁর চিন্তায় ডুবে থাকে --- এমন ভক্তই শ্রীভগবানের অতি প্রিয়; এখানে অর্জুনের হৃদয়ে সেই ভাব জাগ্রত হতে চলেছে।
শ্রীভগবানুবাচ
হস্ত তে কথয়িষ্যামি , দিব্যা হ্যাত্মবিভূতয়ঃ
প্রাধান্যতঃ(খ্) কুরুশ্রেষ্ঠ ,নাস্ত্যস্তো বিস্তরস্য মে॥19॥
শ্রীভগবান বললেন—আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি আমার প্রধান দিব্য বিভূতিগুলি তোমার জন্য সংক্ষেপে বলছি। কারণ হে কুরুশ্রেষ্ঠ ! আমার বিস্তারিত বিভৃতির কোনো অন্ত নেই৷৷ ১৯ ৷৷
শ্রীভগবান অর্জুন কে এখানে নিজের প্রধান বিভূতি সংক্ষেপে বলেছেন; কারণ এর বিস্তৃত বর্ণনা করতে হলে অনন্ত সময় প্রয়োজন।
শ্রীভগবান সর্বত্র বিরাজমান হয়েও অর্জুনের সামনে নিজের সত্য রূপ প্রকাশ করেছেন।
শ্রীভগবান সর্বত্র বিরাজমান হয়েও অর্জুনের সামনে নিজের সত্য রূপ প্রকাশ করেছেন।
অহমাত্মা গুড়াকেশ ,সর্বভূতাশয়স্থিতঃ
অহমাদিশ্চ মধ্যং(ঞ্)চ , ভূতানামন্ত এব চ॥20॥
হে নিদ্ৰাজয়ী অর্জুন ! সকল প্রাণীর আদি, মধ্য এবং অন্তে আমিই অবস্থিত এবং তাদের হৃদয়ে (অন্তঃকরণে ) আত্মারূপেও আমিই অবস্থান করছি। ২০ ।।
শ্রীভগবান সমগ্র জগতের আদি, মধ্য তথা অন্তের স্বামী। চিরকাল ধরে সম্পূর্ণ জগৎ তাঁর মধ্যে নিহিত এবং উল্টোদিকে তিনিও সমগ্র জগতের মধ্যে নিহিত রয়েছেন।
আদত্যানামহং(ম্) বিষ্ণু:(র্) জ্যোতিষাং(ম্) রবিরংশুমান্
মরীচির্মরুতামস্মি , নক্ষত্রাণামহং(ম্) শশী॥21॥
আমি অদিতির পুত্রদের মধ্যে বিষ্ণু (বামন), জ্যোতিষ্মান্ বস্তুর মধ্যে আমি কিরণমালী সূর্য। আমিই মরুৎদের মধ্যে তেজ এবং নক্ষত্রদের মধ্যে চন্দ্ৰ ৷৷ ২১৷৷
শ্রীভগবান বলেছেন যে বারো আদিত্যের মধ্যে তিনি বিষ্ণু ; জ্যোতির মধ্যে তিনি কিরণময় সূর্য । ঊনপঞ্চাশ বায়ুর মধ্যে তিনি তেজ এবং নক্ষত্রগণের মধ্যে তিনি দীপ্তময় চন্দ্র ।
তেত্রিশ কোটি দেবতা মানে তেত্রিশ প্রকারের দেবতা। মুখ্য তেত্রিশ প্রকারের দেবতা হলেন --
বারো আদিত্য -- ঋষি কশ্যপ এবং দেবমাতা অদিতির পুত্রেরা। ঋষি কশ্যপের আরেকজন স্ত্রী দিতির গর্ভজাত পুত্রেরা দৈত্য নামে পরিচিত। অদিতির পুত্রদের দেবতা বলা হয়।
বারো আদিত্যের নাম -
১ম - ইন্দ্র।
২য়-ধাতা বা প্রজাপতি ব্রহ্মা।
৩য়- পর্জন্য বা মেঘের শক্তি।
৪র্থ - ত্বষ্টা , যা বনস্পতির তেজ।
৫ম- পুষা, যা অন্নের মধ্যে নিবাস করে, অন্ন থেকে পুষ্টি পাওয়া যায় --একেই পুষ্টি বলে।
৬ষ্ঠ - অর্যমা ; যা বায়ু রূপ প্রাণশক্তি এবং ইনি পিতৃলোকের সঞ্চালক।
৭ম - বিবস্বান , যা জঠরাগ্নি রূপে প্রকাশিত । সূর্য কে ও বিবস্বান বলা হয়।
৮ম - ভগ ; ভাগ্য এবং সমৃদ্ধির দেবতা।
৯ম - মিত্র ; সত্য এবং ন্যায়ের দেবতা।
১০ম - অংশুমান ; বায়ুর দেবতা।
১১তম - বরুণ ; জলের দেবতা।
১২ তম - বামন ; বিষ্ণুর বামন রূপ দেবতার সহায়ক।
মহাবলি , প্রহ্লাদ -- এনারা দৈত্য বংশ জাত। শুক্রাচার্য দৈত্যদের গুরু ছিলেন এবং মহাগুরু বৃহস্পতি দেবতাদের গুরু ছিলেন। এই দুই গুরু আবার দুই ভাই ছিলেন।
দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য রাজা বলি কে ধণের মাহাত্ম্য বিষয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ নীতি বুঝিয়েছিলেন। যখন শ্রীবিষ্ণুর বামন অবতারের কাছে মহারাজ বলি নিজের ধন-সম্পদ প্রদান করতে যাচ্ছেন -- সেই সময় শুক্রাচার্য তাঁকে বোঝালেন -- কেউই নিজের সম্পত্তির পূর্ণ অধিকারী নয়। ধন কে পাঁচ ভাগে ভাগ করা উচিৎ। প্রথম ভাগ হলো ভোগের জন্য, দ্বিতীয় ভাগ পুনর্বিনিয়োগের জন্য, তৃতীয় ভাগ আত্মীয় স্বজনদের সহায়তার জন্য, চতুর্থ ভাগ ধর্ম রক্ষার জন্য এবং পঞ্চম তথা শেষ ভাগ আপৎকালের জন্য রাখা উচিত।
আধুনিক কালে রাখি বন্ধন (রক্ষা বন্ধন) উৎসব ভাই এবং বোনের মধ্যে সীমিত হয়ে গেছে। পনের শতাব্দীর আগে এই উৎসব হতো ব্রাহ্মণ এবং গৃহস্থের মধ্যে। ব্রাহ্মণ গৃহস্থের হাতে রাখি বেঁধে দিয়ে বলতেন -- যে সূত্র দ্বারা রাজা বলির বন্ধন হয়েছিল, সেই সূত্র দিয়ে আমি তোমাকে বাঁধলাম।
কৌশিক ঋষি যখন তপস্যা বলে অত্যন্ত তেজস্বী হয়ে ওঠেন, তিনি তখন বিশ্বামিত্র নামে পরিচিত হন; তিনিই সবিতা দেবীকে প্রসন্ন করে গায়ত্রী মন্ত্র সিদ্ধ করেন।
ভগবান শ্রীবিষ্ণু দিতির গর্ভ কে ঊনপঞ্চাশ টুকরো করেন -- এ থেকে ঊনপঞ্চাশ প্রকার বায়ুর সৃষ্টি হয় -- এর তেজ ছিলেন স্বয়ং শ্রীভগবান।
নক্ষত্রের মধ্যে শশী হলেন শ্রীভগবান। সাতাশটি নক্ষত্র আছেন -- এনারা সকলে দক্ষ রাজার সাতাশ জন পুত্র :--
অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিনী, মৃগশীর্ষ, আদ্রা, পুনর্বসু, পুষ্য, অশ্লেষা, মঘা, পূর্বফাল্গুনী, উত্তরফল্গুনী, হস্ত, চিত্রা, স্বাতী, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূল, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢা, শ্রবণ, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্বভাদ্রপদ, উত্তরভাদ্রপদ এবং রেবতী।
এই সাতাশটি নক্ষত্রের সাতাশ মূহুর্ত আছে। আঠাশতম মূহুর্ত হলো অভিজিৎ -- যা মাঝে মাঝে গঠিত হয় এবং খুবই শুভ বলে বিবেচিত হয়। এই সাতাশটি নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে চন্দ্র হলো শ্রীভগবানের বিভূতি।
তেত্রিশ কোটি দেবতা মানে তেত্রিশ প্রকারের দেবতা। মুখ্য তেত্রিশ প্রকারের দেবতা হলেন --
- বারো জন আদিত্য
- এগারো জন রুদ্র
- আট বায়ু
- অশ্বিনীকুমারদ্বয় ( ইন্দ্র এবং প্রজাপতি) ।
বারো আদিত্য -- ঋষি কশ্যপ এবং দেবমাতা অদিতির পুত্রেরা। ঋষি কশ্যপের আরেকজন স্ত্রী দিতির গর্ভজাত পুত্রেরা দৈত্য নামে পরিচিত। অদিতির পুত্রদের দেবতা বলা হয়।
বারো আদিত্যের নাম -
১ম - ইন্দ্র।
২য়-ধাতা বা প্রজাপতি ব্রহ্মা।
৩য়- পর্জন্য বা মেঘের শক্তি।
৪র্থ - ত্বষ্টা , যা বনস্পতির তেজ।
৫ম- পুষা, যা অন্নের মধ্যে নিবাস করে, অন্ন থেকে পুষ্টি পাওয়া যায় --একেই পুষ্টি বলে।
৬ষ্ঠ - অর্যমা ; যা বায়ু রূপ প্রাণশক্তি এবং ইনি পিতৃলোকের সঞ্চালক।
৭ম - বিবস্বান , যা জঠরাগ্নি রূপে প্রকাশিত । সূর্য কে ও বিবস্বান বলা হয়।
৮ম - ভগ ; ভাগ্য এবং সমৃদ্ধির দেবতা।
৯ম - মিত্র ; সত্য এবং ন্যায়ের দেবতা।
১০ম - অংশুমান ; বায়ুর দেবতা।
১১তম - বরুণ ; জলের দেবতা।
১২ তম - বামন ; বিষ্ণুর বামন রূপ দেবতার সহায়ক।
মহাবলি , প্রহ্লাদ -- এনারা দৈত্য বংশ জাত। শুক্রাচার্য দৈত্যদের গুরু ছিলেন এবং মহাগুরু বৃহস্পতি দেবতাদের গুরু ছিলেন। এই দুই গুরু আবার দুই ভাই ছিলেন।
দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য রাজা বলি কে ধণের মাহাত্ম্য বিষয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ নীতি বুঝিয়েছিলেন। যখন শ্রীবিষ্ণুর বামন অবতারের কাছে মহারাজ বলি নিজের ধন-সম্পদ প্রদান করতে যাচ্ছেন -- সেই সময় শুক্রাচার্য তাঁকে বোঝালেন -- কেউই নিজের সম্পত্তির পূর্ণ অধিকারী নয়। ধন কে পাঁচ ভাগে ভাগ করা উচিৎ। প্রথম ভাগ হলো ভোগের জন্য, দ্বিতীয় ভাগ পুনর্বিনিয়োগের জন্য, তৃতীয় ভাগ আত্মীয় স্বজনদের সহায়তার জন্য, চতুর্থ ভাগ ধর্ম রক্ষার জন্য এবং পঞ্চম তথা শেষ ভাগ আপৎকালের জন্য রাখা উচিত।
আধুনিক কালে রাখি বন্ধন (রক্ষা বন্ধন) উৎসব ভাই এবং বোনের মধ্যে সীমিত হয়ে গেছে। পনের শতাব্দীর আগে এই উৎসব হতো ব্রাহ্মণ এবং গৃহস্থের মধ্যে। ব্রাহ্মণ গৃহস্থের হাতে রাখি বেঁধে দিয়ে বলতেন -- যে সূত্র দ্বারা রাজা বলির বন্ধন হয়েছিল, সেই সূত্র দিয়ে আমি তোমাকে বাঁধলাম।
কৌশিক ঋষি যখন তপস্যা বলে অত্যন্ত তেজস্বী হয়ে ওঠেন, তিনি তখন বিশ্বামিত্র নামে পরিচিত হন; তিনিই সবিতা দেবীকে প্রসন্ন করে গায়ত্রী মন্ত্র সিদ্ধ করেন।
ভগবান শ্রীবিষ্ণু দিতির গর্ভ কে ঊনপঞ্চাশ টুকরো করেন -- এ থেকে ঊনপঞ্চাশ প্রকার বায়ুর সৃষ্টি হয় -- এর তেজ ছিলেন স্বয়ং শ্রীভগবান।
নক্ষত্রের মধ্যে শশী হলেন শ্রীভগবান। সাতাশটি নক্ষত্র আছেন -- এনারা সকলে দক্ষ রাজার সাতাশ জন পুত্র :--
অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিনী, মৃগশীর্ষ, আদ্রা, পুনর্বসু, পুষ্য, অশ্লেষা, মঘা, পূর্বফাল্গুনী, উত্তরফল্গুনী, হস্ত, চিত্রা, স্বাতী, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূল, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢা, শ্রবণ, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্বভাদ্রপদ, উত্তরভাদ্রপদ এবং রেবতী।
এই সাতাশটি নক্ষত্রের সাতাশ মূহুর্ত আছে। আঠাশতম মূহুর্ত হলো অভিজিৎ -- যা মাঝে মাঝে গঠিত হয় এবং খুবই শুভ বলে বিবেচিত হয়। এই সাতাশটি নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে চন্দ্র হলো শ্রীভগবানের বিভূতি।
বেদানাং সামবেদোऽস্মি ,দেবনামস্মি বাসবঃ
ইন্দ্রিয়াণাং(ম্) মনশ্চাস্মি ,ভূতানামস্মি চেতনা॥22॥
বেদাদির মধ্যে আমি সামবেদ, দেবতাদের মধ্যে আমি ইন্দ্র, ইন্দ্রিয়গুলির মধ্যে আমি মন এবং প্রাণীদের মধ্যে আমি চেতনা ৷ ২২ ৷৷
শ্রীভগবান অর্জুন কে বলেছেন যে বেদসমূহ রচিত হয়েছে -- তার মধ্যে আমি হলাম সামবেদ। দেবতাগণের মধ্যে আমি হলাম ইন্দ্রদেব। আমাদের পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়ের প্রভু হলো মন -- শ্রীভগবান ই হলেন সেই মন। ভৌতিক প্রাণীদের মধ্যে যে চেতনা রয়েছে , সেই চেতনাই শ্রীভগবান।
রুদ্রাণাং(ম্) শঙ্করশ্চাস্মি ,বিত্তেশো যক্ষরক্ষসাম্
বসূনাং(ম্) পাবকশ্চাস্মি ,মেরুঃ(শ্) শিখরিণামহম্॥23॥
একাদশ রুদ্রের মধ্যে আমি শঙ্কর ও যক্ষ-রাক্ষসদের মধ্যে কুবের, অষ্ট বসুর মধ্যে আমি পাবক বা অগ্নি এবং চূড়াযুক্ত পর্বতের মধ্যে আমি সুমেরু পৰ্বত ৷৷ ২৩ ৷৷
একাদশ রুদ্রের মধ্যে শংকর , যক্ষ এবং রাক্ষসের মধ্যে ধনের দেবতা কুবের, অষ্ট বসুর মধ্যে অগ্নি এবং শিখর পর্বতের মধ্যে সুমেরু পর্বত হলেন শ্রীভগবান।
ভগবান শিবের স্বরূপ একাদশ রুদ্র।
কপালী, পিঙ্গল, ভীম, বিরূপাক্ষ, বিলোহিত, শাস্তা, অজপাদ, অহির্বুধ্য, শম্ভু, চণ্ড এবং ভব। শ্রীহনুমান জী কে দ্বাদশ রুদ্র বলা হয়।
অষ্ট বসু - ধরা, ধ্রুব , সোম , অপ্ , অনিল , অনল, প্রত্যুষ এবং প্রভাস। এদের মধ্যে অনল অর্থাৎ অগ্নি শ্রীভগবানের বিভূতি।
ভগবান শিবের স্বরূপ একাদশ রুদ্র।
কপালী, পিঙ্গল, ভীম, বিরূপাক্ষ, বিলোহিত, শাস্তা, অজপাদ, অহির্বুধ্য, শম্ভু, চণ্ড এবং ভব। শ্রীহনুমান জী কে দ্বাদশ রুদ্র বলা হয়।
অষ্ট বসু - ধরা, ধ্রুব , সোম , অপ্ , অনিল , অনল, প্রত্যুষ এবং প্রভাস। এদের মধ্যে অনল অর্থাৎ অগ্নি শ্রীভগবানের বিভূতি।
পুরোধসাং(ঞ্) চ মুখ্যং(ম্) মাং(ম্), বিদ্ধি পার্থ বৃহস্পতিম্
সেনানীনামহং(ম্) স্কন্দঃ(স্), সরসামস্মি সাগরঃ॥24॥
হে পার্থ ! পুরোহিতগণের মধ্যে আমাকে প্রধান বৃহস্পতি বলে জেনো, সেনানায়কদের মধ্যে আমি স্কন্দ (কার্তিক) এবং জলাশয়সমূহের মধ্যে আমি সাগৱ৷৷ ২৪ ৷৷
পুরোহিতের মধ্যে বৃহস্পতি ; সেনাপতির মধ্যে স্কন্দ এবং জলাশয়ের মধ্যে সমুদ্র হলো শ্রীভগবানের বিভূতি স্বরূপ।
ভগবান বৃহস্পতির মাহাত্ম্য
বৃহস্পতি দেবতাদের আচার্য; সমুদ্র জ্যোতিষের প্রণেতা। তিনি গঙ্গাপুত্র দেবব্রত (ভীষ্মের) এবং ভগবান পরশুরামের গুরু।
স্কন্দ দেবতার মাহাত্ম্য
ভগবান শিবের পুত্র কার্তিকেয় স্কন্দ নামে পরিচিত। তাঁকে কৃত্তিকারা পালন করেন বলে তিনি কার্তিকেয় নামেও পরিচিত। তাঁর জন্ম হয়েছিল তারকাসুর কে বধ করার জন্য। দাক্ষিণাত্যে ইনি মুরুগান নামে অধিক পরিচিত। তাঁর প্রবল তেজে ধরিত্রী আকুল হয়ে উঠেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র স্কন্দ দেবকে বধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্কন্দ দেব একাই সৈন্যবাহিনী সহ ইন্দ্র কে পরাজিত করেছিলেন। পরে ইন্দ্রদেব তাঁকে দেবসেনাপতি পদে নিযুক্ত করেন। সপ্ত ঋষির মাতারা স্কন্দদেব কে দুধ খাইয়েছিলেন এবং লালন পালন করেছিলেন। তিনি হলেন ছয়টি শিরযুক্ত ষড়ানন। সবচেয়ে বড়ো পুরাণ এনাকে নিয়ে লেখা -- যা স্কন্দপুরাণ নামে পরিচিত।
ভগবান বৃহস্পতির মাহাত্ম্য
বৃহস্পতি দেবতাদের আচার্য; সমুদ্র জ্যোতিষের প্রণেতা। তিনি গঙ্গাপুত্র দেবব্রত (ভীষ্মের) এবং ভগবান পরশুরামের গুরু।
স্কন্দ দেবতার মাহাত্ম্য
ভগবান শিবের পুত্র কার্তিকেয় স্কন্দ নামে পরিচিত। তাঁকে কৃত্তিকারা পালন করেন বলে তিনি কার্তিকেয় নামেও পরিচিত। তাঁর জন্ম হয়েছিল তারকাসুর কে বধ করার জন্য। দাক্ষিণাত্যে ইনি মুরুগান নামে অধিক পরিচিত। তাঁর প্রবল তেজে ধরিত্রী আকুল হয়ে উঠেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র স্কন্দ দেবকে বধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্কন্দ দেব একাই সৈন্যবাহিনী সহ ইন্দ্র কে পরাজিত করেছিলেন। পরে ইন্দ্রদেব তাঁকে দেবসেনাপতি পদে নিযুক্ত করেন। সপ্ত ঋষির মাতারা স্কন্দদেব কে দুধ খাইয়েছিলেন এবং লালন পালন করেছিলেন। তিনি হলেন ছয়টি শিরযুক্ত ষড়ানন। সবচেয়ে বড়ো পুরাণ এনাকে নিয়ে লেখা -- যা স্কন্দপুরাণ নামে পরিচিত।
মহর্ষীণাং(ম্) ভৃগুরহং(ঙ্), গিরামস্ম্যেকমক্ষরম্
যজ্ঞানাং(ঞ্)জপযজ্ঞোऽস্মি , স্থাবরাণাং(ম্) হিমালয়ঃ॥25॥
মহর্ষিদের মধ্যে আমি ভৃগু, বাণীর (শব্দের) মধ্যে আমি একাক্ষর ওঁকার অর্থাৎ প্রণব। সমস্ত যজ্ঞের মধ্যে আমি জপযজ্ঞ এবং স্থাবর পদার্থের মধ্যে আমি হিমালয় ৷৷ ২৫ ॥
শ্রীভগবান বলেছেন, হে অর্জুন! মহর্ষি গণের মধ্যে আমি হলাম ভৃগু।
ভৃগু মুনি ছিলেন শুক্রাচার্য এবং দেবগুরু বৃহস্পতির পিতা।
একবার সমস্ত ঋষি গণের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর --এই তিন আদিদেবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কোনজন! ঋষিগণ নিজের নিজের ইষ্টদেবের সমর্থনে তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেলেন। সকলে মিলে ঠিক করলেন যে ভৃগু মুনি যাবেন এই তিন দেবের পরীক্ষা নিতে। যাতে প্রমাণ করা যায় শ্রেষ্ঠ কোন জন।
সর্বপ্রথম ঋষি ভৃগু পৌঁছালেন ব্রহ্মলোকে। সেখানে গিয়ে তিনি ব্রহ্মা জী কে প্রণাম টুকুও করলেন না ; উপরন্তু ব্রহ্মাদেবের দিকে তিরস্কারের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। ব্রহ্মা জী মুনির এই ব্যবহার বেশিক্ষণ সহ্য করতে না পেরে তাঁকে বিদায় করে দিলেন। এরপর ভৃগু গেলেন শিবের দরবারে, তাঁকে উত্যক্ত করতে। গিয়েই তিনি শিবের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করতে লাগলেন। দু -তিন মিনিট হয়তো শিব তা শুনলেন এবং তারপর যেই তিনি তাঁর তৃতীয় নয়ন খুলতে উদ্যত হলেন.... ভৃগু বুঝতে পারলেন এক্ষুনি কিছু ঘটতে পারে --- তড়িঘড়ি সেখান থেকে চলে গেলেন। তাঁর পরবর্তী গন্তব্য বিষ্ণুলোক। ভগবান নারায়ণ ক্ষীরসাগরে শয়নরত এবং দেবী লক্ষ্মী তাঁর চরণ সেবা করছেন। ভৃগু মুনি কে দেখতে পেয়ে লক্ষ্মী দেবী বলে উঠলেন পিতা এসেছেন ... বলে প্রণাম করলেন। ভৃগু সোজা নারায়ণের কাছে এসে তাঁকে ডাকতে লাগলেন। লক্ষ্মী বললেন যে উনি এখন তো ঘুমিয়ে আছেন... ওঁনাকে কে জাগাবে! হঠাৎ করে ভৃগু মুনি নারায়ণের বুকে পদাঘাত করলেন। এতে নারায়ণের ঘুম ভেঙে গেল... কিন্তু তিনি রাগ তো করলেনই না ; বরং বললেন... মহর্ষি , আপনার পায়ে আঘাত লাগে নি তো? আমার বুক তো খুবই কঠিন -- তাই জিজ্ঞাসা করছি -- আপনার কি চোট লেগেছে ? শ্রীবিষ্ণু ভৃগুর চরণ চিহ্ন চিরকালের জন্য বুকে ধারণ করে নিলেন।
যতক্ষণ এসব ঘটনা ঘটেছে, লক্ষ্মী দেবী সেখানে ছিলেন। তিনি কিন্তু সহ্য করতে পারলেন না। বললেন -- পিতা! আপনি হয়তো পরীক্ষা নিচ্ছিলেন, কিন্তু এটা সঠিক কাজ করেন নি। ভগবান বিষ্ণুর বক্ষে এভাবে আঘাত করা অনৈতিক কাজ। আজ থেকে আপনার কুলে আমি থাকবো না। লক্ষ্মীর এই বাক্য শুনে ভৃগুবংশী ব্রাহ্মণরা হাহাকার করে উঠলেন। তাঁরা ভৃগু মুনির বিরোধিতা করলেন , কারণ লক্ষ্মী দেবীকে ছাড়া তাঁদের কাজ করা সম্ভব হবে না। মহর্ষি ভৃগু তখন ভৃগু -সংহিতা রচনা করে তাতে উল্লেখ করেছেন, যে ব্রাহ্মণ এটা গ্রহণ করবে তার কখনো লক্ষ্মীর অভাব হবে না। জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাহায্য নিয়ে কোন ব্রাহ্মণ দরিদ্র থাকবে না। এতে ব্রাহ্মণরা সন্তুষ্ট হলেন। যদি কেউ মিথ্যা করে ও কারও হাত দেখে তা হলেও মানুষ তাকে টাকা দেয়। ভৃগু মুনি সেই সময় যা বলেছিলেন এবং বিধান সিদ্ধ করে দিয়েছেন, আজও তাই সত্য। ভৃগুবংশজাতরা ভার্গব ব্রাহ্মণ।
শ্রীভগবান এরপরে বলেছেন -- অর্জুন - শব্দের মধ্যে আমি একাক্ষর , অর্থাৎ , ওঁ হলাম আমি এবং স্থির বস্তুর মধ্যে আমি হিমালয়।
ওঁ হলো সমস্ত শব্দের মূল। বাণী তিন প্রকার হয় -- পরা, মধ্য এবং বৈখরী। পরা আসে ওষ্ঠ থেকে, মধ্যবর্তী থেকে আসে মধ্য এবং কন্ঠ থেকে বৈখরী বাণী উদ্ভূত হয়।
চতুর্থ অধ্যায়ে শ্রীভগবান বারোটি যজ্ঞের বিষয়ে বলেছেন। এও বলেছেন যে বেদে শতাধিক মুখ্য যজ্ঞের কথা আছে। কিন্তু, এই দশম অধ্যায়ে শ্রীভগবান ত্রয়োদশ যজ্ঞের উল্লেখ করেছেন এবং তাকেই নিজের বিভূতি বলে ভূষিত করেছেন।
সকল যজ্ঞের মধ্যে জপযজ্ঞ আমি। নাম জপ কে শ্রীভগবান নিজের বিভূতি বলেছেন। এজন্যই জপ করাকে সাধনার দৃষ্টিতে অত্যন্ত কল্যাণকারী এবং সহজ বলা হয়। প্রতিদিন এক লক্ষ বার নাম জপ করতে হয়। এতে আট ঘন্টা সময় লাগে। কেউ যদি জীবনে কিছু না করে শুধু নাম জপই করে, তাহলেও তার জন্ম সফল হয়।
হিমালয়ের বিশেষত্ব হলো তার লৌকিক রূপই অলৌকিক। স্বর্গের দ্বার ও সেখানে সমস্ত নদীর মূল স্রোত ও সেখানেই।
ভৃগু মুনি ছিলেন শুক্রাচার্য এবং দেবগুরু বৃহস্পতির পিতা।
একবার সমস্ত ঋষি গণের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর --এই তিন আদিদেবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কোনজন! ঋষিগণ নিজের নিজের ইষ্টদেবের সমর্থনে তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেলেন। সকলে মিলে ঠিক করলেন যে ভৃগু মুনি যাবেন এই তিন দেবের পরীক্ষা নিতে। যাতে প্রমাণ করা যায় শ্রেষ্ঠ কোন জন।
সর্বপ্রথম ঋষি ভৃগু পৌঁছালেন ব্রহ্মলোকে। সেখানে গিয়ে তিনি ব্রহ্মা জী কে প্রণাম টুকুও করলেন না ; উপরন্তু ব্রহ্মাদেবের দিকে তিরস্কারের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। ব্রহ্মা জী মুনির এই ব্যবহার বেশিক্ষণ সহ্য করতে না পেরে তাঁকে বিদায় করে দিলেন। এরপর ভৃগু গেলেন শিবের দরবারে, তাঁকে উত্যক্ত করতে। গিয়েই তিনি শিবের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করতে লাগলেন। দু -তিন মিনিট হয়তো শিব তা শুনলেন এবং তারপর যেই তিনি তাঁর তৃতীয় নয়ন খুলতে উদ্যত হলেন.... ভৃগু বুঝতে পারলেন এক্ষুনি কিছু ঘটতে পারে --- তড়িঘড়ি সেখান থেকে চলে গেলেন। তাঁর পরবর্তী গন্তব্য বিষ্ণুলোক। ভগবান নারায়ণ ক্ষীরসাগরে শয়নরত এবং দেবী লক্ষ্মী তাঁর চরণ সেবা করছেন। ভৃগু মুনি কে দেখতে পেয়ে লক্ষ্মী দেবী বলে উঠলেন পিতা এসেছেন ... বলে প্রণাম করলেন। ভৃগু সোজা নারায়ণের কাছে এসে তাঁকে ডাকতে লাগলেন। লক্ষ্মী বললেন যে উনি এখন তো ঘুমিয়ে আছেন... ওঁনাকে কে জাগাবে! হঠাৎ করে ভৃগু মুনি নারায়ণের বুকে পদাঘাত করলেন। এতে নারায়ণের ঘুম ভেঙে গেল... কিন্তু তিনি রাগ তো করলেনই না ; বরং বললেন... মহর্ষি , আপনার পায়ে আঘাত লাগে নি তো? আমার বুক তো খুবই কঠিন -- তাই জিজ্ঞাসা করছি -- আপনার কি চোট লেগেছে ? শ্রীবিষ্ণু ভৃগুর চরণ চিহ্ন চিরকালের জন্য বুকে ধারণ করে নিলেন।
যতক্ষণ এসব ঘটনা ঘটেছে, লক্ষ্মী দেবী সেখানে ছিলেন। তিনি কিন্তু সহ্য করতে পারলেন না। বললেন -- পিতা! আপনি হয়তো পরীক্ষা নিচ্ছিলেন, কিন্তু এটা সঠিক কাজ করেন নি। ভগবান বিষ্ণুর বক্ষে এভাবে আঘাত করা অনৈতিক কাজ। আজ থেকে আপনার কুলে আমি থাকবো না। লক্ষ্মীর এই বাক্য শুনে ভৃগুবংশী ব্রাহ্মণরা হাহাকার করে উঠলেন। তাঁরা ভৃগু মুনির বিরোধিতা করলেন , কারণ লক্ষ্মী দেবীকে ছাড়া তাঁদের কাজ করা সম্ভব হবে না। মহর্ষি ভৃগু তখন ভৃগু -সংহিতা রচনা করে তাতে উল্লেখ করেছেন, যে ব্রাহ্মণ এটা গ্রহণ করবে তার কখনো লক্ষ্মীর অভাব হবে না। জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাহায্য নিয়ে কোন ব্রাহ্মণ দরিদ্র থাকবে না। এতে ব্রাহ্মণরা সন্তুষ্ট হলেন। যদি কেউ মিথ্যা করে ও কারও হাত দেখে তা হলেও মানুষ তাকে টাকা দেয়। ভৃগু মুনি সেই সময় যা বলেছিলেন এবং বিধান সিদ্ধ করে দিয়েছেন, আজও তাই সত্য। ভৃগুবংশজাতরা ভার্গব ব্রাহ্মণ।
শ্রীভগবান এরপরে বলেছেন -- অর্জুন - শব্দের মধ্যে আমি একাক্ষর , অর্থাৎ , ওঁ হলাম আমি এবং স্থির বস্তুর মধ্যে আমি হিমালয়।
ওঁ হলো সমস্ত শব্দের মূল। বাণী তিন প্রকার হয় -- পরা, মধ্য এবং বৈখরী। পরা আসে ওষ্ঠ থেকে, মধ্যবর্তী থেকে আসে মধ্য এবং কন্ঠ থেকে বৈখরী বাণী উদ্ভূত হয়।
চতুর্থ অধ্যায়ে শ্রীভগবান বারোটি যজ্ঞের বিষয়ে বলেছেন। এও বলেছেন যে বেদে শতাধিক মুখ্য যজ্ঞের কথা আছে। কিন্তু, এই দশম অধ্যায়ে শ্রীভগবান ত্রয়োদশ যজ্ঞের উল্লেখ করেছেন এবং তাকেই নিজের বিভূতি বলে ভূষিত করেছেন।
সকল যজ্ঞের মধ্যে জপযজ্ঞ আমি। নাম জপ কে শ্রীভগবান নিজের বিভূতি বলেছেন। এজন্যই জপ করাকে সাধনার দৃষ্টিতে অত্যন্ত কল্যাণকারী এবং সহজ বলা হয়। প্রতিদিন এক লক্ষ বার নাম জপ করতে হয়। এতে আট ঘন্টা সময় লাগে। কেউ যদি জীবনে কিছু না করে শুধু নাম জপই করে, তাহলেও তার জন্ম সফল হয়।
হিমালয়ের বিশেষত্ব হলো তার লৌকিক রূপই অলৌকিক। স্বর্গের দ্বার ও সেখানে সমস্ত নদীর মূল স্রোত ও সেখানেই।
অশ্বত্থঃ(স্) সর্ববৃক্ষাণাং(ন্), দেবষীণাং(ঞ্) চ নারদ:
গন্ধর্বাণাং(ঞ্)চিত্ররথঃ(স্),সিদ্ধানাং(ঙ্) কপিলো মুনিঃ॥26॥
সমস্ত বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্বত্থ, দেবর্ষিগণের মধ্যে নারদ, গন্ধবর্গণের মধ্যে চিত্ররথ এবং সিদ্ধ ব্যক্তিগণের মধ্যে আমি কপিলমুনি ৷৷ ২৬ ৷৷
শ্রীভগবান বলেছেন সমস্ত গাছের মধ্যে আমি অশ্বত্থ গাছ ; দেবর্ষিগণের মধ্যে আমি নারদ মুনি ; গন্ধর্বদের মধ্যে আমি চিত্ররথ এবং সিদ্ধগণের মধ্যে আমি কপিল মুনি।
গীতায় শ্রীভগবান দুইবার অশ্বত্থ গাছের উল্লেখ করেছেন। একবার এই দশম অধ্যায়ে নিজের বিভূতি নিয়ে বলার সাহস এবং দ্বিতীয় বার পঞ্চদশ অধ্যায়ে -- এই ব্রহ্মাণ্ডের উপমা দিয়েছেন অশ্বত্থ গাছের সঙ্গে।
অশ্বত্থ গাছের কিছু বিশেষত্ব আছে। প্রথমত এই গাছ খুবই চঞ্চল। যখন বায়ু প্রবাহিত হয় না , তখনও এর পাতা নড়াচড়া করে। দ্বিতীয় কারণ এই গাছ চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং সেই কারণে রাত্রে ও লোকে এই গাছের নিচে ঘুমাতে পারে।
দেবর্ষিদের মধ্যে নারদ মুনি -- এই বাক্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে নারদ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন, ইন্দ্র বা অগ্নিও একজন ব্যক্তি নন। এগুলো হলো পরম্পরা বা কোন বিশেষ পদের নাম। এমনই নারদ পরম্পরা। ওই যোনির যে দেবতা ওই পদে পৌঁছাতে পারেন, তাঁকে সেই পদে নিযুক্ত করা হয়। নারদ ও অনেক প্রকার হতে পারেন ; এজন্যই শ্রীভগবান বলেছেন দেবর্ষীণাং চ নারদঃ। দেবতা ঋষিদের মধ্যে আমি নারদীয় পরম্পরার ঋষি।
পরে শ্রীভগবান বলেছেন গন্ধর্বের মধ্যে আমি চিত্ররথ। চিত্ররথ ছিলেন অর্জুনের বিশেষ মিত্র। তিনি অর্জুনের সাথে যুদ্ধও করেছেন। তাঁর বোন চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে অর্জুনের বিবাহ হয়েছিল।
শ্রীভগবান বলেছেন সিদ্ধ গণের মধ্যে আমি কপিল মুনি। দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিবেচনায় কপিল মুনির কথা বলা হয়েছিল। প্রজাপতি কন্যা দেবহুতি এবং সেই সময়ের মুনিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঋষি কর্দমের সন্তান রূপে কপিল মুনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কর্দম ঋষি কে ব্রহ্মা আদেশ দিয়েছিলেন গার্হস্থ্য জীবন যাপন করার। কিন্তু কর্দম ঋষির এই জীবনে প্রবেশ করার এতটুকুও ইচ্ছা ছিল না। ব্রহ্মা বলেছিলেন একটি পুত্রের জন্ম দেওয়া অবধি তুমি গৃহস্থ আশ্রম পালন কর। দেবহুতি কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর পিতা মাতা কর্দম ঋষির আশ্রমে পৌঁছালেন। ঋষি তাঁদের স্বাগত জানিয়ে আসন গ্রহণ করতে অনুরোধ করলেন। মনু এবং শতরূপা আসনে বসলেন; কিন্তু দেবাহুতি ভাবলেন যে কর্দম ঋষি আসন ছাড়া গাছের নিচে বসেছেন -- তাহলে তিনি কি করে আসনে বসতে পারেন !! একে তো তিনি মুনিশ্রেষ্ঠ, আবার তাঁর সঙ্গে পিতামাতা আমার বিবাহ দেবেন। আমি যদি আসনে বসি -- তাঁকে অবহেলা করা হবে। আবার তিনি আসন গ্রহণ করতে বলেছেন -- না বসলেও তাঁর আদেশ কে অবহেলা করা হবে। এসব ভেবে তিনি একটি হাত আসনের উপর রেখে আসনের কাছে মাটিতে বসলেন। দেবাহুতির এই নীতিশিক্ষা দেখে ঋষি অতি প্রসন্ন হলেন এবং তাঁকে বিবাহ করলেন। তারপর বহু বছর কেটে গেল কিন্তু ঋষি তাঁকে দেখেনও নি। ভুলেও গেছেন কি তিনি কাউকে বিবাহ করেছেন। দেবাহুতি তাঁর সমস্ত কাজ করে দিতেন এবং ঋষি তাঁর কাজ করে যেতেন। তাঁর বৈরাগ্য ছিল নৈসর্গিক। একদিন গ্রন্থ রচনার সময় প্রদীপের তেল শেষ হয়ে গিয়ে প্রদীপ প্রায় নিভে যাচ্ছিল; তখন দেবাহুতি প্রদীপে তেল ঢেলে দিলেন এবং সেই আলোতে ঋষি কর্দমের চোখ পড়ল একজন শীর্ণকায়া বৃদ্ধার দিকে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন -- আপনি কে দেবী? দেবহুতি উত্তর দিলেন -- আমি মনু এবং শতরূপার কন্যা ; আপনার স্ত্রী দেবাহুতি। ব্রহ্মার আদেশে আপনার সাথে আমার বিবাহ হয়েছিল। হঠাৎ ঋষির সবকিছু স্মরণে এসে গেল। তাঁর মনে পড়ে গেল যে বিয়ের সময় দেবহুতি খুবই সুন্দর ছিলেন। আর এখন এতো শীর্ণকায় হয়ে গেছেন! তিনি খুব আশ্চর্য এবং প্রসন্ন হলেন। প্রেমের ভাব নিয়ে তিনি স্ত্রীকে দেখলেন এবং বললেন -- তোমার তপস্যা , ভক্তি এবং সেবার ভাবে আমি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছি। তিনি দেবহুতি কে বর প্রদান করতে চাইলেন। দেবহুতির মনে হলো -- ঋষির কুটিরে আছে বা কি যে কিছু চাইতে বলছেন ! ঋষি তো অন্তর্যামী -- তিনি দেবহুতি কে বললেন সরোবরে স্নান করে আসতে । দেবহুতি যেই সরোবরের জলে ডুব দিয়েছেন ; তাঁর শরীর পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি তাঁর যৌবনের রূপ ফিরে পেলেন। সাথে রাজসিক বস্ত্র এবং আভূষণে সজ্জিত হয়ে তিনি ঋষির কাছে ফিরলেন এবং প্রণাম করলেন। কর্দম ঋষি আবার জিজ্ঞাসা করলেন -- তুমি কি চাও বলো? দেবহুতি বুঝতে পারছিলেন না যে কি চাইবেন -- এই অবস্থা দেখে ঋষি বললেন এই সংসারে এমন কিছু নেই যা আমি তোমাকে দিতে পারবো না। তাঁর হাতের ইশারায় এক বিশাল মহল তৈরি হয়ে গেল -- যেখানে প্রচুর দাস-দাসী ছিল। দেবহুতি বললেন -- এসব নিয়ে আমি কি করবো ? আমার একটি পুত্র চাই। আপনি আমাকে পত্নী রূপে স্বীকার করুন -- এটাই আমার ইচ্ছা। কর্দম ঋষি তাই স্বীকার করলেন। ঋষির সংকেতে সেখানে এক সুন্দর দিব্য বিমান এলো যা মনের গতিতে চলে। সেই বিমানে করে ঋষি এবং দেবহুতি নয় বছর ধরে নয়টি দিব্যলোকে ভ্রমণ করলেন।
ইতিমধ্যে তাঁদের নয়টি কন্যা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে ঋষি আশ্রমে ফিরে এলেন এবং দেবহুতি কে বললেন --- কন্যাদের নিয়ে তুমি নিশ্চিন্তে দিন যাপন কর। কিন্তু, দেবাহুতি পুত্র প্রাপ্তির ইচ্ছা স্মরণ করালেন। ঋষি বললেন --- তোমার বচন সত্য। কিন্তু, তোমার জানা উচিত সঠিক সময়ে ভগবান নারায়ণ তোমার পুত্ররূপে জন্ম নেবেন। এবং এই সৌভাগ্য লাভের জন্য তোমাকে সাধনা করতে হবে। তিনি এক বছর ধরে কঠিন সাধনার নিয়ম জানালেন। সেই সাধনার ফলস্বরূপ কপিল মুনির জন্ম হয়েছিল।
পুত্রের জন্মের পরে ঋষি বললেন -- এবার শর্ত পূর্ণ হয়েছে; এবার আমাকে যেতে হবে। দেবাহুতি অনুরোধ করলেন পুত্রসুখ কিছুদিন ভোগ করে তারপর যান -- কিন্তু , ঋষি তাতে সম্মত হলেন না। কাঁদতে কাঁদতে দেবহুতি বললেন --- তাহলে আমাকেও সাথে নিয়ে চলুন। আপনি তো নিজে উদ্ধার হবেন; আমি কিভাবে উদ্ধার হবো? কর্দম ঋষি বললেন -- যে পুত্রের জন্ম হয়েছে তিনি স্বয়ং নারায়ণ। তিনি সংসারে একটি নতুন যোগ রচনা করবেন বলেই আবির্ভূত হয়েছেন। এই পুত্রই তোমাকে সাংখ্য শাস্ত্রের উপদেশ দেবেন।
কপিল মুনির যখন এগারো বছর বয়স , তখন দেবহুতি ছেলের কাছে উপদেশ নিতে চাইলেন। সেই উপদেশ শুনে তিনি সমাধিস্থ হলেন। এই যোগ সাংখ্য দর্শন নামে প্রসিদ্ধ।
হরিনাম সংকীর্তনের সাথে আজকের বিবেচন সত্র সমাপ্ত হলো। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব।
নির্মল ভাইয়া
প্রশ্ন- কোন ভগবানের নাম জপ করা উচিৎ ?
উত্তর- যাঁর প্রতি আপনার শ্রদ্ধা আছে, এবং যা আপনার নিজের ঠিক বলে মনে হয়। কাউকে ছোট বা বড়ো বলা অপরাধ। যাঁর নাম নিয়ে আপনি ভগবান কে অনুভব করতে পারেন বা আপনার গুরু যে নাম দিয়েছেন -- তাই আপনার জপ করার নাম।
মনীষা দিদি
প্রশ্ন - কার্তিকেয়র নাম স্কন্দ কেন ?
উত্তর - শিবজীর বীর্য স্খলন হয়ে সরের উপর পড়ে কার্তিকেয়ের জন্ম হয়েছিল। স্খলন থেকে জন্ম -- তাই স্কন্দ নাম।
নীরু দিদি
প্রশ্ন - আমি কি ওঁ জপ করতে পারি ?
উত্তর - ওঁ কার জপের অধিকারী শুধুমাত্র সন্ন্যাসীরা। আপনি এই জপ করবেন না।
অনন্ত ভাইয়া
প্রশ্ন - চিত্ত কথার অর্থ কি?
উত্তর - মন, বুদ্ধি , চিত্ত এবং অহংকার এগুলো হলো অন্তঃকরণের অবস্থা। যখন সংকল্প করে -- তখন তাকে মন বলে , যখন নির্ণয় করে, তখন তা হলো বুদ্ধি , যখন ধারণা করে, তখন তাকে চিত্ত বলে এবং যখন অনুভূত করে তখন তাকে বলে অহংকার।
প্রশ্ন - বিভূতি মানে কি ?
উত্তর - বিভূতি অর্থ বিশিষ্টতা।
কে. কে. শ্রীবাস্তব ভাইয়া
প্রশ্ন - ক্ষীর সাগরের বর্ণনা কিরকম ?
উত্তর - যে সাগরের জল দুধের মতো। এই সাগর অনন্ত; বিষ্ণুদেব সেখানে বিরাজ করেন।
গীতায় শ্রীভগবান দুইবার অশ্বত্থ গাছের উল্লেখ করেছেন। একবার এই দশম অধ্যায়ে নিজের বিভূতি নিয়ে বলার সাহস এবং দ্বিতীয় বার পঞ্চদশ অধ্যায়ে -- এই ব্রহ্মাণ্ডের উপমা দিয়েছেন অশ্বত্থ গাছের সঙ্গে।
ঊর্ধ্বমূলমধঃ শাখম্ অশ্বত্থং প্রাহুরব্যয়ম্।
অশ্বত্থ গাছের কিছু বিশেষত্ব আছে। প্রথমত এই গাছ খুবই চঞ্চল। যখন বায়ু প্রবাহিত হয় না , তখনও এর পাতা নড়াচড়া করে। দ্বিতীয় কারণ এই গাছ চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং সেই কারণে রাত্রে ও লোকে এই গাছের নিচে ঘুমাতে পারে।
দেবর্ষিদের মধ্যে নারদ মুনি -- এই বাক্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে নারদ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন, ইন্দ্র বা অগ্নিও একজন ব্যক্তি নন। এগুলো হলো পরম্পরা বা কোন বিশেষ পদের নাম। এমনই নারদ পরম্পরা। ওই যোনির যে দেবতা ওই পদে পৌঁছাতে পারেন, তাঁকে সেই পদে নিযুক্ত করা হয়। নারদ ও অনেক প্রকার হতে পারেন ; এজন্যই শ্রীভগবান বলেছেন দেবর্ষীণাং চ নারদঃ। দেবতা ঋষিদের মধ্যে আমি নারদীয় পরম্পরার ঋষি।
পরে শ্রীভগবান বলেছেন গন্ধর্বের মধ্যে আমি চিত্ররথ। চিত্ররথ ছিলেন অর্জুনের বিশেষ মিত্র। তিনি অর্জুনের সাথে যুদ্ধও করেছেন। তাঁর বোন চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে অর্জুনের বিবাহ হয়েছিল।
শ্রীভগবান বলেছেন সিদ্ধ গণের মধ্যে আমি কপিল মুনি। দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিবেচনায় কপিল মুনির কথা বলা হয়েছিল। প্রজাপতি কন্যা দেবহুতি এবং সেই সময়ের মুনিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঋষি কর্দমের সন্তান রূপে কপিল মুনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কর্দম ঋষি কে ব্রহ্মা আদেশ দিয়েছিলেন গার্হস্থ্য জীবন যাপন করার। কিন্তু কর্দম ঋষির এই জীবনে প্রবেশ করার এতটুকুও ইচ্ছা ছিল না। ব্রহ্মা বলেছিলেন একটি পুত্রের জন্ম দেওয়া অবধি তুমি গৃহস্থ আশ্রম পালন কর। দেবহুতি কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর পিতা মাতা কর্দম ঋষির আশ্রমে পৌঁছালেন। ঋষি তাঁদের স্বাগত জানিয়ে আসন গ্রহণ করতে অনুরোধ করলেন। মনু এবং শতরূপা আসনে বসলেন; কিন্তু দেবাহুতি ভাবলেন যে কর্দম ঋষি আসন ছাড়া গাছের নিচে বসেছেন -- তাহলে তিনি কি করে আসনে বসতে পারেন !! একে তো তিনি মুনিশ্রেষ্ঠ, আবার তাঁর সঙ্গে পিতামাতা আমার বিবাহ দেবেন। আমি যদি আসনে বসি -- তাঁকে অবহেলা করা হবে। আবার তিনি আসন গ্রহণ করতে বলেছেন -- না বসলেও তাঁর আদেশ কে অবহেলা করা হবে। এসব ভেবে তিনি একটি হাত আসনের উপর রেখে আসনের কাছে মাটিতে বসলেন। দেবাহুতির এই নীতিশিক্ষা দেখে ঋষি অতি প্রসন্ন হলেন এবং তাঁকে বিবাহ করলেন। তারপর বহু বছর কেটে গেল কিন্তু ঋষি তাঁকে দেখেনও নি। ভুলেও গেছেন কি তিনি কাউকে বিবাহ করেছেন। দেবাহুতি তাঁর সমস্ত কাজ করে দিতেন এবং ঋষি তাঁর কাজ করে যেতেন। তাঁর বৈরাগ্য ছিল নৈসর্গিক। একদিন গ্রন্থ রচনার সময় প্রদীপের তেল শেষ হয়ে গিয়ে প্রদীপ প্রায় নিভে যাচ্ছিল; তখন দেবাহুতি প্রদীপে তেল ঢেলে দিলেন এবং সেই আলোতে ঋষি কর্দমের চোখ পড়ল একজন শীর্ণকায়া বৃদ্ধার দিকে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন -- আপনি কে দেবী? দেবহুতি উত্তর দিলেন -- আমি মনু এবং শতরূপার কন্যা ; আপনার স্ত্রী দেবাহুতি। ব্রহ্মার আদেশে আপনার সাথে আমার বিবাহ হয়েছিল। হঠাৎ ঋষির সবকিছু স্মরণে এসে গেল। তাঁর মনে পড়ে গেল যে বিয়ের সময় দেবহুতি খুবই সুন্দর ছিলেন। আর এখন এতো শীর্ণকায় হয়ে গেছেন! তিনি খুব আশ্চর্য এবং প্রসন্ন হলেন। প্রেমের ভাব নিয়ে তিনি স্ত্রীকে দেখলেন এবং বললেন -- তোমার তপস্যা , ভক্তি এবং সেবার ভাবে আমি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছি। তিনি দেবহুতি কে বর প্রদান করতে চাইলেন। দেবহুতির মনে হলো -- ঋষির কুটিরে আছে বা কি যে কিছু চাইতে বলছেন ! ঋষি তো অন্তর্যামী -- তিনি দেবহুতি কে বললেন সরোবরে স্নান করে আসতে । দেবহুতি যেই সরোবরের জলে ডুব দিয়েছেন ; তাঁর শরীর পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি তাঁর যৌবনের রূপ ফিরে পেলেন। সাথে রাজসিক বস্ত্র এবং আভূষণে সজ্জিত হয়ে তিনি ঋষির কাছে ফিরলেন এবং প্রণাম করলেন। কর্দম ঋষি আবার জিজ্ঞাসা করলেন -- তুমি কি চাও বলো? দেবহুতি বুঝতে পারছিলেন না যে কি চাইবেন -- এই অবস্থা দেখে ঋষি বললেন এই সংসারে এমন কিছু নেই যা আমি তোমাকে দিতে পারবো না। তাঁর হাতের ইশারায় এক বিশাল মহল তৈরি হয়ে গেল -- যেখানে প্রচুর দাস-দাসী ছিল। দেবহুতি বললেন -- এসব নিয়ে আমি কি করবো ? আমার একটি পুত্র চাই। আপনি আমাকে পত্নী রূপে স্বীকার করুন -- এটাই আমার ইচ্ছা। কর্দম ঋষি তাই স্বীকার করলেন। ঋষির সংকেতে সেখানে এক সুন্দর দিব্য বিমান এলো যা মনের গতিতে চলে। সেই বিমানে করে ঋষি এবং দেবহুতি নয় বছর ধরে নয়টি দিব্যলোকে ভ্রমণ করলেন।
ইতিমধ্যে তাঁদের নয়টি কন্যা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে ঋষি আশ্রমে ফিরে এলেন এবং দেবহুতি কে বললেন --- কন্যাদের নিয়ে তুমি নিশ্চিন্তে দিন যাপন কর। কিন্তু, দেবাহুতি পুত্র প্রাপ্তির ইচ্ছা স্মরণ করালেন। ঋষি বললেন --- তোমার বচন সত্য। কিন্তু, তোমার জানা উচিত সঠিক সময়ে ভগবান নারায়ণ তোমার পুত্ররূপে জন্ম নেবেন। এবং এই সৌভাগ্য লাভের জন্য তোমাকে সাধনা করতে হবে। তিনি এক বছর ধরে কঠিন সাধনার নিয়ম জানালেন। সেই সাধনার ফলস্বরূপ কপিল মুনির জন্ম হয়েছিল।
পুত্রের জন্মের পরে ঋষি বললেন -- এবার শর্ত পূর্ণ হয়েছে; এবার আমাকে যেতে হবে। দেবাহুতি অনুরোধ করলেন পুত্রসুখ কিছুদিন ভোগ করে তারপর যান -- কিন্তু , ঋষি তাতে সম্মত হলেন না। কাঁদতে কাঁদতে দেবহুতি বললেন --- তাহলে আমাকেও সাথে নিয়ে চলুন। আপনি তো নিজে উদ্ধার হবেন; আমি কিভাবে উদ্ধার হবো? কর্দম ঋষি বললেন -- যে পুত্রের জন্ম হয়েছে তিনি স্বয়ং নারায়ণ। তিনি সংসারে একটি নতুন যোগ রচনা করবেন বলেই আবির্ভূত হয়েছেন। এই পুত্রই তোমাকে সাংখ্য শাস্ত্রের উপদেশ দেবেন।
কপিল মুনির যখন এগারো বছর বয়স , তখন দেবহুতি ছেলের কাছে উপদেশ নিতে চাইলেন। সেই উপদেশ শুনে তিনি সমাধিস্থ হলেন। এই যোগ সাংখ্য দর্শন নামে প্রসিদ্ধ।
হরিনাম সংকীর্তনের সাথে আজকের বিবেচন সত্র সমাপ্ত হলো। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব।
।। প্রশ্নোত্তর পর্ব ।।
নির্মল ভাইয়া
প্রশ্ন- কোন ভগবানের নাম জপ করা উচিৎ ?
উত্তর- যাঁর প্রতি আপনার শ্রদ্ধা আছে, এবং যা আপনার নিজের ঠিক বলে মনে হয়। কাউকে ছোট বা বড়ো বলা অপরাধ। যাঁর নাম নিয়ে আপনি ভগবান কে অনুভব করতে পারেন বা আপনার গুরু যে নাম দিয়েছেন -- তাই আপনার জপ করার নাম।
মনীষা দিদি
প্রশ্ন - কার্তিকেয়র নাম স্কন্দ কেন ?
উত্তর - শিবজীর বীর্য স্খলন হয়ে সরের উপর পড়ে কার্তিকেয়ের জন্ম হয়েছিল। স্খলন থেকে জন্ম -- তাই স্কন্দ নাম।
নীরু দিদি
প্রশ্ন - আমি কি ওঁ জপ করতে পারি ?
উত্তর - ওঁ কার জপের অধিকারী শুধুমাত্র সন্ন্যাসীরা। আপনি এই জপ করবেন না।
অনন্ত ভাইয়া
প্রশ্ন - চিত্ত কথার অর্থ কি?
উত্তর - মন, বুদ্ধি , চিত্ত এবং অহংকার এগুলো হলো অন্তঃকরণের অবস্থা। যখন সংকল্প করে -- তখন তাকে মন বলে , যখন নির্ণয় করে, তখন তা হলো বুদ্ধি , যখন ধারণা করে, তখন তাকে চিত্ত বলে এবং যখন অনুভূত করে তখন তাকে বলে অহংকার।
প্রশ্ন - বিভূতি মানে কি ?
উত্তর - বিভূতি অর্থ বিশিষ্টতা।
কে. কে. শ্রীবাস্তব ভাইয়া
প্রশ্ন - ক্ষীর সাগরের বর্ণনা কিরকম ?
উত্তর - যে সাগরের জল দুধের মতো। এই সাগর অনন্ত; বিষ্ণুদেব সেখানে বিরাজ করেন।
||ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু ||